টেলিপ্‌যাথির টানে (ছোটগল্প)

লিখেছেন লিখেছেন অবাক মুসাফীর ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:১৬:৫০ রাত



স্বপ্ন তো স্বপ্নই, কিন্তু তা সত্‌যের এতো কাছাকাছি! এই মাত্র অপু-র ডাক শুনে ঘুম থেকে উঠে বসলাম। মা বলে ডেকেছে ... একবার নয়, দু'বার। আমি পরিষ্কার শুনেছি। এতোটাই পরিষ্কার যে মনে হচ্ছে ঠিক আমার পাশে শুয়েই আমায় ডাকছে, ''মা, ও মা।'' আমি লাফিয়ে উঠলাম, কেউ নেই। থাকার কথাও না। ... আগেও কয়েকবার হয়েছে এমন। একবার তো ওকে আদরও করেছিলাম; মাথা ভর্তি একঝাক লম্বা লম্বা চুল, চুল গুলো নেড়ে খেলা করছিলাম। কাছে নিয়ে একটা চুমু খেতে গেলাম, অমনি ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

শুধু স্বপ্নে নয়, আমি স্বজ্ঞানেও ওর ডাক শুনেছি। খুব কাছ থেকেই ডাকে, কিন্তু কখনোই দেখতে পাই না। আজ যেভাবে ডেকেছে, স্বপ্নে এভাবে আর কোনো দিন ডাকে নি। এতোটাই স্পস্ট ভাবে ডেকেছে যে সেই শব্দ এখনো আমার কানে লেগে আছে। ''মা, ও মা।'' ... ওর তো আমাকে ডাকার কথা না, ও তো সব নিয়মের বাইরে। তবু টেলিপ্‌যাথিক যোগাযোগ সম্পর্কে আমি একটু-আধটু জানি। অন্‌য জগৎ থেকেও কি টেলিপ্‌যাথিক যোগাযোগ সম্ভব?

বাড়ির সামনে বেশ খোলা জায়গা, পশ্চিমে পাশাপাশি দুইটা আম গাছ। গাছ দুটির মাঝে সেই অল্প একটু উচু জায়গা, সে দিনের পর থেকে অপু এখানেই ঘুমায়। ও একদিন আমায় বলেছিলো আমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমাবে, ঐ দিনই সবচেয়ে বেশি কথা হয়। বলেছিলাম, ''বড্ড দেরি হয়ে গেছে যে বাবা।''

ঐ দিন খুব কেঁদেছিলাম। যে দিন অপু চলে গেলো, সে দিন আমি কাঁদতে পারি নি। মনে হয়েছিলো আমার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। সেই দিন অঝোরে কেঁদেছিলাম।

ওরা আমাকে শেষ বারে মত দেখতে দেয় নি, বলেছে, ''মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?'' কি লাভ যদি ওরা বুঝতো তাহলে ওরাও মা হবার ক্ষমতা নিয়েই জন্মাত। সেই ক্ষমতা ওদের নেই। ঐ জাতটাই রাক্ষসের জাত, রাক্ষসের বংশধর!

রাত ৩টে। যেদিন মনটা খুব বেশি খারাপ হয়, অপুর জন্‌য, সে দিন অপুর মাথার কাছে এসে আমি বসে থাকি। আজ সারা দিন তেমন বেশি মন খারাপ ছিলো না, নিজেকে এখন কিছুটা হলেও ব্‌যাস্ত রাখতে শিখেছি। কিন্তু একটু আগে অনেক দিন পর মা ডাকটি শুনে মনে হল অপু আমার খুব কাছেই আছে। বিছানা ছেড়ে চলে এসেছি, ওর মাথার কাছে বসে ওর সাথে গল্প করছি।

আগে আরো পাগলামি করতাম, এজন্‌য দুই মাস পাবনায় থেকেও এসেছি। বলেছিলাম, আমি পাগল হই নি। তখন কেউ বিশ্বাস করে নি, দু'মাস পর করেছে।

আগে মাঝে মাঝে ওর সাথে কথা বললে দুই-একটা উত্তর পেতাম, 'হু', 'না' এইরকম। এখন আস্তে আস্তে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। আজ আবার একটু একটু হু হা বলছে বোধ হয়, খুব আস্তে আস্তে। এমন সব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে দুই হাটুর মাঝে মুখ গুজে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

(জ্ঞানী মানুষের সব ভাবে খুব সুন্দর করে, সাজিয়ে গুছিয়ে। আমার মাথায় সামান্‌য সমস্‌যা, তোমাদের ভাষায় আমি পাগল, তাই আমি গুছিয়ে ভাবতে পারি না। যা ভাবি সবই এলোমেলো।)

হঠাৎ অপু বললো,

-''মা আমি তোমার কাছে যাবো।''

আমি কোনোরকমে হুশ ফিরিয়ে বললাম,

-''আয় বাবা, আমি তো এখানেই।''

-''কিন্তু ওরা যে আসতে দেয় না, মা।'' ...

... আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। আমি জ্ঞান হারাচ্ছি। যখন অপুর সাথে কথা হয়, তার পরপরই আমি জ্ঞান হারাই, এটাই নিয়ম হয়ে গেছে। পেছনে কার যেনো পা ঘোষে ঘোষে হাঁটার আওয়াজ পাচ্ছি, আমার দিকেই আসছে। অপু নয় তো? নাকি অপুর বাবা? বিছানায় না পেয়ে হয়তো খুঁজতে এসেছে। আমার কাছে এসে পায়ের শব্দটি থামল। জ্ঞান হারাবার এই মুহূর্তেও আমি কিছুটা উত্তেজিত। কিন্তু আমার পেছনে তাকাতে ইচ্ছা করছে না। ... যেই হোক না কেন, এমন অপেক্ষাও আনন্দের।

বিষয়: সাহিত্য

১৩২৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

291114
০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৫৭
কাহাফ লিখেছেন :
মায়ের মমতার তুলনা হয় না!
সন্তানের প্রতি অগাধ ভালবাসাই এমন পরিস্হিতি সৃষ্টি করেছে!
০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০৭
234870
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : সহমত কাহাফ ভাই। :-)
291154
০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২৯
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : ভাষা ভাল, বর্ণনা ভাল, কিন্তু কিছুই বুঝিলাম না, বুঝিবা আমার বুঝিবার সীমাবদ্ধতা Worried Worried Worried
০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১১
234809
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : গল্পের কথকের ছেলে অপু কিছু দিন আগে মারা যায়। তারপর থেকে কথক মাঝে মাঝে তার ডাক শুনতে পান, মনে করেন যে তার ছেলে আসেপাশেই আছে ... কিন্তু সবই তার মাথার মধ্‌যে ঘটতে থাকে, সন্তান হারানোর শোকে মেনটালি কিছুটা ডিসোর্ডার হয়ে পড়েছিলেন। এমনই প্রেক্ষাপট নিয়ে থেকে লেখা গল্পটা।
.
.
.
দুঃখিত, পাঠকের বোধগম্‌য না হওয়া লেখকের সীমাবধ্‌যতা। ইনশা-আল্লাহ আগামীতে আরো ক্লিয়ার করার চেষ্টা করবো। অনেক ধন্‌যবাদ মন্তব্‌যের জন্‌য।
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:৫৮
235024
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : বুঝিলাম Happy
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৬
235173
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : হুম্ম ... শুকরিয়া Happy
291169
০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:১০
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : ওহ!খুবই টাচ করলো ওই মায়ের সন্তান হারানো পরবর্তী অবস্থান পড়ে। গল্পটা যেন গল্পের মাঝেই আটকে থাকে এমনটা যেন বাস্তবে কোন মায়ের না হয়।

ধন্যবাদ হৃদয় স্পর্শ করা গল্প লেখার জন্য। আশা করছি আপনার কাছ থেকে আরো পাবো এমন গল্প।
০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:১১
234871
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ, দোয়া করবেন আশরাফ ভাই।
291192
০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৫
ভিশু লিখেছেন : খুব মানসম্পন্ন লেখা।
ভালো লাগ্লো... Good Luck
Rose
০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৪
234924
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : Thanks for your compliment ... ভিশু ভাই ...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File