দারসুল কোরআন জাহালিয়াতি সমাবেশে মুমিনেরা ভয় পায়না

লিখেছেন লিখেছেন ইসলামিক দাওয়া ফাউন্ডেশন ২৭ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:১৯:২৫ রাত

এই দারসুল কুরআনটি শাহাবাগীর যখন সমাবেশ করে মুসলমান তথা ইসলামী আন্দোলনকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল ঠিক ঐ মুহর্তে ইসলামিক দাওয়াহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, ভারত বাংলার আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ,প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন ও মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব -

আল্লামা হযরত মাওলানা রুহুল আমিন যশোর মনিরামপুর তাফসির মাহফিলে তাফসির পেশ করেছিলেন সেই তাফসিরটি দারসুল কোরআন আকারে ইসলামিক নিউজ সহ কয়েক জায়গায় ছাপা হয়েছিল সেটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

দারসুল কোরআন

জাহালিয়াতি সমাবেশে মুমিনেরা ভয় পায়না

মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমিন

الذين قال لهم الناس ان الناس قد جمعوا لكم فاخشوهم فزادهم ايمانا وقلوا حسبناالله ونعم الوكيل-

সরল অনুবাদঃ

(১৭৩ নং আয়াত) যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; তাদেরকে ভয় কর। তখন তাদের ঈমান আরও বেড়ে (দৃঢ়তর হয়ে) যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট;কতই না চমৎকার কামিয়াবী দানকারী।

برك الله لنا ولكم فى القران العظيم-

সুরা আলে ইমরান ৩য় সুরা

নামকরণঃ সুরা আলে ইমরানের ৩৩ নং আয়াতে আলে ইমরান (ال عمران)শব্দ হতে এই সুরার নাম করণ করা হয়েছে। যেখানে ‘আরে ইমরান’ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। একেই সুরার পরিচিতির জন্য নামকরণ করা হয়েছে।

নাযিলের সময়কালঃ

আলোচ্য সুরাটি সর্ব সম্মত মতে মাদানী। তবে একই সময় সম্পূর্ণ সুরাটি নাযিল হয়নি মোট চারটি ভাষনে সুরাটি শেষ হয়েছে। সুরাটির প্রথম থেকে চতুর্থ রুকুর দ্বিতীয় আয়াত পর্যন্ত অর্থ্যাৎ প্রথম ভাষনটি নাযিল হয়েছে বদর যুদ্ধের কাছাকাছি সময়ে। দ্বিতীয় ভাষনটি নবম হিজরীতে নাজরান প্রতিনিধি দলের আগমনের সময় চতুর্থ রুকুর তৃতীয় আয়াত থেকে শুরু হয়ে ষষ্ঠ রুকুর শেষে গিয়ে শেষ হয়েছে। তৃতীয় ভাষনটি সম্পত রুকুর শুরু থেকে থেকে নিয়ে দ্বাদশ রুকুর শেষ পর্যন্ত চলেছে। প্রথম ভাষনের সাথে সাথেই এটি নাযিল হয়। চতুর্থ ভাষণটি ১৩ তম রুকু থেকে শুরু করে সুরার শেষ পর্যন্ত ওহুদ যুদ্ধের পর এটি নাযিল। এ বিষয়ে আল্লাহই বেশি ভাল জানেন ।

সুরার বিষয় বস্তু বা আলোচ্য বিষয়ঃ সুরায় দুটি দলকে সম্বোধন করে নাযিল হয়েছে। একদল হলো আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খৃষ্টান। এবং অপর দল হলো রাসুল সঃ এর অনুসারী মুসলমান।

শানে নুযুল বা অবতরণের কারণঃ

ওহুদ যুদ্ধের ঘটনা বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে আলোচ্য সুরায়। কিছু ত্র“টি বিচ্যুতির কারণে ওহুদ যুদ্ধে প্রথম দিকে জয়লাভ করার পরও মুসলমানরা সাময়িকভাবে পরাজয় বরণ করে। এতে ৭০ জন সাহাবী শহীদ হন। সয়ং রাসুল সঃ সহ অনেকে চরম ভাবে আহত হন। তথাপিও আল্লাহ তায়ালা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিলে শত্র“রা পরাজয় বরন করে পিছু হটে যায়।

আলোচ্য আয়াতের শানে নুযুলঃ

মক্কার কাফের রা যখন ওহুদের ময়দান থেকে ফিরে এলো তখন পথে এসে তাদের আফসোস হলো যে আমরা বিজয় অর্জন করার পরিবর্তে অনর্থকই ফিরে এলাম সবাই মিলে একটা কঠি আক্রমন চালিয়ে সমস্ত মুসলানকে খতম করে দেযঅই উটিত ছিল। আর এ কল্পনায় মদিনা আক্রমনের সিদ্ধান্ত নিল কিন্ত মনে অনেক ভয় হলো। তাতে তারা সোজ মক্কার পথে ফিরে এলো এবং হামরাউল আসওয়াদের কাছে একটি চত্বরে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে আরো সৈন্য সংগ্রহ করে বিরাট সবাবেশ ঘটালো। এবং মদিনা পথ যাত্রিদের কে মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করলো। মদিনা যাত্রী পথিকদের কাছে বলে দিলো যে তোমরা সেখানে গিয়ে আমাদের সমাবেশের খবর দিয়ে মুসলমানদের মনে আমাদের ভয় বিস্তার করাবে। এই বলে যে, তারা আবার মুসলমানদের আক্রমন করার জন্য ফিরে আসছে। একথা ওহীর মাধম্যে নবীর কাছে আগেই আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন। কাজেই মুসলমানদের ভীতি তৈরী তো দুরের কথা তারা সামান্যতম প্রভাবন্বিত হলেন না; বরং হামরাউল আসওয়াদ পর্যন্ত এগিয়ে এলো এবং তাদের পিছু ধাওয়া করার জন্য। এই সমাবেশে মুশরিক সৈন্যদের মনোরঞ্জন করার জন্য হিন্দার নেতৃত্বে নৃত্য গান কবিতা পরিবেশন হচ্ছিল। (ইবনে জারির রুহুল বয়ান) উল্লেখ্য মুসলমানদের পে কেউ মিডিয়া হিসেবে কাজ করেনি তবে বনী খোযয়া গোত্রের মা’বাদ ইবনে খোযআহ নামক একব্যাক্তি মদিনা থেকে মক্কার দিকে যাচ্ছিল। যদিও তিনি মুসলমান ছিলেন না কিন্ত মুসলমানদের হিতার্থী ছিলেন। তাই আবু সুফিয়ান কে বললো তোমরা ধোকায় পড়ে আছ যে, মুসলমানরা দুর্বল হয়ে পড়েছে না আমি তাদের বিরাট বাহীনিকে হামরাউল আসওয়অদ নামক স্তানে দেখে এসেছি তারাই পরিপুর্ন সাজ সরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে আছে তোমাদের পিছু ধাওয়া করার জন্য। এতেই আবু সুফিয়ান দুর্বল হয়ে গেল।

ছহীহ বোখারীতে আছে হামরাউল আসওয়াদ পর্যন্ত যে ৭০ জন সাহাবী প্রস্তুতি নিয়ে মুশরিকদের কে ধাওয়া করলো তাদের মধ্যে এমন লোকও ছিল যারা গত কালকের যুদ্ধে কঠিন ভাবে আহত হয়েছেন অনেকে ছিলেন আহতের কারণে অন্যের সাহায্যে চলাফেরা করছিলেন। নুয়াইম ইবনে মাসউদ খবর দিলো যে আবু সুফিয়ান নিজের সাথে আরও সৈন্য সংগ্রহ করে মুসলমানদের মদিনা আক্রমন করবে। এসংবাদ পেয়ে আহত দুর্বল সাহাবীরা এই ভীতি জনক সংবাদ শুনেও সমস্বরে বলে উঠলেন আমরা আবারো তৈরী মুশরিকদের সাথে মোকাবেলার জন্য আর আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ঠ এবং তিনিই উত্তম সাহয্যকারী।

ব্যাখ্যাঃ

প্রিয় পাঠক এতণ দারসুল কোরআনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ার পর এখন আলোচ্য আয়াতের সংপ্তি ব্যাখা পেশ করছিঃ

-

الذين قال لهم الناس ان الناس قد جمعوا لكم فاخشوهم فزادهم ايمانا وقلوا حسبناالله ونعم الوكيل-

যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; তাদেরকে ভয় কর। তখন তাদের ঈমান আরও বেড়ে (দৃঢ়তর হয়ে) যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট;কতই না চমৎকার কামিয়াবী দানকারী।

এই আয়াত দ্বারা অতীত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে যে সমাবেশ করে মিথ্যা অপপ্রচার করে ইসলামী আন্দোলন তথা মুসলমানদের কে দুর্বল করা যায়না। মুসলমান কখনো মাথা নত করতে জানেনা। বাতিলের হুংকার রক্তচু ভয় পাবার কিছু নেই। কারণ মুসলমানদের অভিভাবক হলো আল্লাহ। মুসলমানদের নেতা হলোব নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সঃ। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘ যারা ঈমান এনঠেম আল্লাজ কাতের অ।ি।াক্ষ। কিরি কাতেরবে র্অথবার কভে আলোর দিকে বের করে আনেন । আর যারা কুফুরী করে, তাগুত (শয়তান) তাদের অভিভাবক।তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে বের করে আনে। এরাই হলো জাহান্নামী সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (বাকার-২৫৭) সুতরাং আল্লাহ অভিবাবক হলে মুসলামানদের ভয় কিসে।

বর্তমান সময়ে এ আয়াতের আলোকে ল করলে দেখা যায় শয়তানের প্ররোচনায় যারা আল্লাহ কোরআন নবী সঃ কে নিয়ে অশ্রব্য ভাষায় কথা বলছে তারা নবীর ওয়ারিশ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কে শয়তানি সমাবেশের মাধমে ভয় দেখাতে চাচ্ছে। ঈমানদের কাছে এসব কিছুই না তারা এর পরোয়া করে না। তারা বিশ্বাস করে এক আল্লাহর।

তবে একথা সত্য যে, সমাবেশ থাকবে হামলা মামলা থাকবে এ অবস্থা সৃষ্টি হলেই প্রকৃত মুমিন চেনা যায়। আল্লাহ বলেন,‘‘ এসময় ও অবস্থাটি তোমাদের উপর এজন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে? আর তিনি তোমাদের শহীদ েিহসেবে কবুল করতে চান। আল ইমারন ১৪১)

মুমিনরা সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা করেন কারণ বান্দার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আলাইছাল্লাহু বি কাফ্ফিন আবদাহ।

মুমিন যখনই কোন বিপদ দেখে তখন সে আল্লাহর উপর ভরসা করে তাই তাকে কেই পরাজিত করতে পারে না।

শিাঃ

১) জাহালিয়াতি সমাবেশে ভয় করার কিছু নেই

২) নাস্তিকরা কখনও সফল হবে না

৩) কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে

উপস্থাপকঃ

চেয়ারম্যান,ইসলামিক দাওয়াহ ফাউন্ডেশন

খতিব, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ

সাংবাদিক, গবেষক, লেখক ইসলামী চিšা—বিদ

০১৭১২-৬১২৮৭৬

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

289030
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:০১
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : খুব সুন্দর লিখা ,পড়ে ভালো লাগলো
289045
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০১:০৪
ইসলামিক দাওয়া ফাউন্ডেশন লিখেছেন : ধন্যবাদ
289065
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:০৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
290639
০২ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৩
ইসলামিক দাওয়া ফাউন্ডেশন লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File