ইসলামী জীবণের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো‘ঈমান’
লিখেছেন লিখেছেন ইসলামিক দাওয়া ফাউন্ডেশন ২৩ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:৫৫:০৪ রাত
দারসুল কোরআন
ইসলামী জীবণের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো‘ঈমান’
মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমিন
رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا ۚ رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
সরল অনুবাদঃ
(১৯৩ নং আয়াত) হে আমাদের রব! আমরা একজন আহবান কারীর আহবান শুনেছিলাম। আমাদের কে ঈমানের দিকে আহবান করছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমারা তোমাদের রবকে মেনে নাও। আমরা তার আহবান গ্রহণ করেছি। কাজেই, হে আমাদের প্রভু! আমরা যেসব গোনাহ করছি তা মা করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব অসৎবৃত্তি আছে সেগুলো আমাদের থেকে দুর করে দাও এবং নেক লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করো।
برك الله لنا ولكم فى القران العظيم-
সুরা আলে ইমরান ৩য় সুরা
নামকরণঃ সুরাটিতে ‘আলে ইমরান’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। অত্র সুরার ৩৩ নম্বর আয়াতে وَآلَ عِمْرَانَ শব্দ থেকে এই সুরার নামকরণ করা হয়েছে। সুরাটির পরিচিতির জন্য এ নামে নামকরণ করা সার্থকতা ভেবেই নামকরণ হয়েছে। নামকরণের ব্যাপারে অন্যান্য সুরার ন্যায় এই সুরাটির নাম করণেও ওহীর নির্দেশ রয়েছে। কেননা রাসুলুল্লাহ সঃ নিজস্ব কোন চিন্তা থেকে সুরার নামকরণ করেন না।
সুরাটি নাযিলের সময়কাল ঃ
আলোচ্য সুরাটি সর্ব সম্মত মতানুযায়ী মাদানী সুরা। সুরাটি একসঙ্গে নাযিল না হয়ে সময়ের প্রয়োজনে মোট চারটি ভাষণে সুরাটি নাযিল হয়েছে।। প্রথম ভাষণটি বদর যুদ্ধের কাছাকাছি সময়ে সুরার শুরু থেকে চতুর্থ রুকু দ্বিতীয় আয়াত পর্যন্ত নাযিল হয়। দ্বিতীয় ভাষণটি নবম হিজরীতে নাজরানের প্রতিনিধি দলের আগমনের সময় চতুর্থ রুকুর তৃতীয় আয়াত থেকে শুরু হয়ে ষষ্ঠ রুকু পর্যন্ত নাযিল হয়। তৃতীয় ভাষণটি সপ্তম রুকুর শুরু থেকে নিয়ে দ্বাদশ রুকুর শেষ পর্যন্ত নাযিল হয়। তবে প্রথম ভাষনটির সাথে সাথেই এটি নাযিল হয় বলে ধারণ করা হয়। চতুর্থ ভাষণটি ১৩তম রুকু থেকে
সুরাটির আলোচ্য বিষয় ঃ সুরাটিতে দুটি কে সম্বোধন করা হয়েছে। একটি দল হলো আহলে কিতাব (ইহুদি ও খৃষ্টান) অপরদলটি রাসুলের অনুসারী সাচ্চা ঈমানদার মুসলমান।
সুরার শুরুতে ইহুদী এবং খৃষ্টানদেরকে জোরালো ভাষায় তাদের আকিদাগত ভ্রষ্টতা এবং চারিত্রিক দুস্কৃতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে রাসুল সাঃ এবং আল কুরআনকে মেনে নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
রাসুলের অনুসারী মুসলামানদের কে শ্রেষ্টতম দলের মর্যাদার স্মরণ করিয়ে েিদয় তাদের মহান দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। সত্যের পতাকাবাহী ও বিশ্বমানবতার সংস্কার ও সংশোধের জন্য পুর্ববর্তী উম্মতদের ধর্মীয় ও চারিত্রিক অধপতনের ভয়াবহ চিত্র দেখিয়ে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ না করে দুরে থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। একটি সংস্কারবাদী দল হিসেবে সে কিভাবে কাজ করবে এবং যেসব আহলে কিতাব ও মুনাফিক মুসলমান আল্লাহর পথে নানা প্রকার বাধা বিপত্তি সৃষ্টি করছে তাদের সাােথ কি আচরণ করবে, তাও সাচ্চা ঈমানদার মুসলমানদের কে জানানো হয়েছে। ওহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে যে দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল তা দুর করার জন্য দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে।
আলোচ্য আয়াতের মুল বক্তব্যঃ
ইসলামী জীবণের কেন্দ্রিয় চরিত্র হলো ‘ঈমান’। আর কোরআনুল কারীমের মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘ঈমানের দাওয়াত’। কোরআনের ধারক বাহক সম্পর্কে বলা হয়েছে তিনি হলেন ঈমানের আহবায়ক। ঈমান হলো চরিত্রের মানুষিক ভিত্তি। আলোচ্য আয়াতটিতে গুরুত্বপুর্ণ এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
শানে নুযুল বা নাযিলের কার্যকারণ ঃ সুরাটির ঐতিহাসিক পটভুমি হচ্ছে-
একঃ বদর যুদ্ধে ঈমানদারগণ বিজয় লাভ করলেও এ যুদ্ধটি যেন ছিল ভীমরুলের চাকে ঢিল মারার মত ব্যাপার। প্রথম সশস্ত্র এ সংঘর্ষটি আরবের সেই সব শক্তিগুলোকে আকস্মাত নাড়া দিয়েছিল যারা এ নতুন আন্দোলনের সাথে ভীষণ শত্র“তা পোষণ করতো। চতুর্দিকে প্রচন্ড ঝড়ের আলামত ফুটে উঠছিল। মুসলমানদের কলিজায় নিরন্তর ভীতি ও অস্থিরতার অবস্থা বিরাজ করছিল। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছিল মদীনার এ ুদ জনবসতিটিকে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে ফেলা হবে। মদিনার অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর এ পরিস্থিতির ব্যাপক বিরুপ প্রভাব পড়ছিল। ছোট একটি মফস্বল শহর মদিনা। জনবসতি মাত্র কয়েকশ ঘরের বেশি না। এখানে বিপুল সংখ্যক মুহাজিরদের হঠাৎ আগমনে অর্থনৈতিক ভারসাম্য এমনিতেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার উপর এই যুদ্ধাবস্থার কারণে বাড়তি বিপদ দেখা দিলো।
দুইঃ নবী কারীম সাঃ মদীনার আশপাশের ইহুদী গোত্রগুলোর সাথে যে চুক্তি সম্পাদন করেছিলো তারা সেই চুক্তির প্রতি সামান্যতমও সম্মান প্রদর্শন করেনি। বদর যুদ্ধের পর তারা কুরাইশ ও আরবদের অন্যান্য গোত্রগুলোকে প্রকাশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে প্রতিশোধ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। বিশেষ করে বনী নাযির সরদা কা’ব ইবনে আশরাফ বিরোধীতা আর অন্ধ শত্র“তার চরম নিচে নেমে গিয়েছিল। মদীনার সাথে এই ইহুদীদের শতশত বছর থেকে যে বন্ধুত ও প্রতিবেশিসুলভ সম্পর্ক চলে আসছিল তার কোন পরোয়ায় করেনি। অবশেষে তাদের দুষ্কর্ম আর চুক্তি ভঙ্গের সীমা ছাড়িয়ে গেলে নবী সাঃ বদর যুদ্ধের কয়েক মাস পর ইহুদী গোত্রের সবচেয়ে বেশি দুষ্কর্মপরায়ণ‘বণী কায়নুকা’ গোত্রে উপর আক্রমন চালান এবং তাদের কে মদীর শহরতলী থেকে বের করে দেন। এতে ইহুদীদের হিংসার আগুন আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। মদিনার মুনাফিক মুসলমান ও হিজাজের মুশরিক গোত্রগুলোর সাথে চক্রান্ত করে ইসলাম ও সাচ্চা মুসলমানদের জন্য চার দিক থেকে চরম বিপদের সৃষ্টি করে। এমনকি নবীজিকে প্রাণ নাশের জন্য রাতে দিনে সর্বণ সুযোগের অপো করতে থাকে।
তিনঃ বদরে পরাজয়ের পর কুরাইশদের মনে এমনিতেই প্রতিশোধের আগুন জলছিলো, ইহুদীর তার ওর পেট্রোল ছিটিয়ে দিলো। ফলে এক বছর পরই মক্কা থেকে তিন হাজার সুসজ্জিত সৈন্যের একটি দল মদীনা আক্রমন করলো। এ যুদ্ধ হলো ওহুদ পাহাড়ের পাদদেশে। যা ইসলামের ইতিহাসে ওহুদ যুদ্ধ নামেই পরিচিত। যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নবীজির সাথে একহাজার লোক বের হয়েছিল। কিন্ত পথিমধ্যে কপাল পোড়া তিনশো মুনাফিক হঠাৎ আলাদা হয়ে মদীনার দিকে ফিরে এলো।
চারঃ ওহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয় যদিও মুনাফিকদের কৌশলের একটি বড় অংশ ছিলো তবুও মুসলমানদের নিজেদের দুর্বলতার অংশও কম ছিলনা। তাই যুদ্ধের পর এই যাবতীয় ঘটনাবলীর ওপর বিস্তারিত মন্তব্য করা এবং তাতেই ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলমানদের মধ্যে যেসব দুর্বলতা পাওয়া গিয়েছিল তার মধ্য থেকে প্রত্যেকটির প্রতি আঙ্গুল নির্দেশ করে তা সংশোধনের জন্য নির্দেশ দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিলো। মুমিনদের করনীয় সম্পর্কে বলাও অতিব জরুরী হয়ে গেলো।
ব্যাখ্যাঃ
প্রিয় পাঠক! এতণ দারসুল কোরআনের সংশ্লিষ্ট বিষয় সংপ্তি আকারে হলে পেশ করার চেষ্টা করেছি। তুলে ধরেছি প্রয়োজনীয় তথ্যবলী এখন আলোচ্য আয়াতের সংপ্তি ব্যাখা পেশ করছিঃ
َّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا ۚ رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
হে আমাদের রব! আমরা একজন আহবান কারীর আহবান শুনেছিলাম। আমাদের কে ঈমানের দিকে আহবান করছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমারা তোমাদের রবকে মেনে নাও। আমরা তার আহবান গ্রহণ করেছি। কাজেই, হে আমাদের প্রভু! আমরা যেসব গোনাহ করছি তা মা করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব অসৎবৃত্তি আছে সেগুলো আমাদের থেকে দুর করে দাও এবং নেক লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করো।
ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস এবং তাওয়াক্কুলের বাস্তব নমুনা। ঈমান হলো কোন আহবান কে বিশ্বস্তার নিরিখে মনে প্রাণে মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী বাস্তব জীবণ পরিচালনা করা। ঈমান আনার সাথে সাথে সেই ঈমানের উপর টিকে থাকার মানসিক প্রস্তুতিই একজন মুমিনকে প্রকৃত ঈমানদার হতে সাহায্য করে। কারণ মানুষের মানুষিক ভিত্তি রচিত হয় ঈমানের দ্বারা।
ঈমানদার যখন আল্লাহার প্রতি ঈমান আনে তখন তাকে বলা হয় মুমিন। ঈমানের দাওয়াত পাওয়ার পর প্রকৃত মুসলমান সে দাওয়াত গ্রহণ করে নেয়। অর্থ্যাৎ পরিপুর্ণ ভাবে ঈমানদার হয়ে যায়। কালেমা পড়ে ঈমান গ্রহণ করার সাথে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের জন্য আকুতি মিনতি জানায়। এবং প্রকৃত ঈমানদের সঙ্গী হতে ও আল্লাহর কাছে দোয়া করে। ঈমান গ্রহণ করতে হলে শুধু মুখে মুখে ঈমান আনলাম একথা বললেই হবেনা। পুর্ব শর্ত হলো কলিজা থেকে ‘তাগুত’ কে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। তাগুত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বৈধ অধীকারে সীমা লংঘণ করা। কুরআনের পরিভাষায় তাগুত এমন বান্দা কে বলা হয় যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা ছাড়িয়ে নিজেই প্রভু ও খোদায়ী দাবী করে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে। কোন মানুষ প্রভুত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায় হলো সে নীতিগতভাবে তার শাসন কর্তত্বকে সত্য বলে মেনে নেয় কিন্ত কার্যত তার বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে একে বলা হয় ফাসেকী। দ্বিতীয় পর্যায় সে আল্লাহর শাসন কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় অথবা আল্লাহ কে বাদ দিয়ে অণ্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে। একে বলা হয় কুফরী। তৃতীয় পর্যায়ে সে মালিক ও প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার রাজ্যে এবং প্রজাদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে। এই শেষ পর্যায়ে যে বান্দা পৌছে যায় তাকে বলা হয় ‘তাগুত’। অতএব তাগুত বলা হয় সেই শক্তি কে যে নিজেই আল্লাহর দ্বীন মানেনা এবং অন্যকেউ না মানতে বাধ্য করে। কোন ব্যাক্তি এই তাগুতকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কোনদিন প্রকৃত অর্থে আল্লাহর মুমিন বান্দা হতে পারে না। ঈমান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর উপর ঈমান আনে,সে এমনকি মজবুত অবলম্বণ আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয়না। আর আল্লাহ (যাকে অবলম্বণ হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে) সবকিছু শোনেন ও জানেন। কোন মুমিন যখন প্রকৃত ঈমানদার হয় তখন তার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। ঈমানের বৈশিষ্ট্য দেখলেই বুঝা যায় যে তিনি প্রকৃত মুমিন। ইসলামী জীবণের কেন্দ্রিয় চরিত্র ঈমান। এই চরিত্র অর্জনে যে গুন বা বৈশিষ্ট্য গুলো অর্জন করা অতিব জরুরী তা কোরআনের আলোকে নিুরুপঃ
আত্মমর্যাদাবোধ সৃষ্টি হয়ঃ
যারা ঈমান আনে তাদের অভিভাবক হন আল্লাহ রাববুল আলামিন। ঈমান আনলে পরে আল্লাহ পাক তাদের কে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনেন।
إِلَى الظُّلُمَاتِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۖ
যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের অভিভাবক হয়ে যান। তিনি তাদের কে অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের বন্ধু,অভিভাবক হয় তাগুত সে তাদের কে আলো থেকে অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। (বাকারা -২৫৭)
সুতরাং একজন মানুষ ঈমান আনার আগে হীনমন্যতায় ভোগে। অর্থ্যাৎ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আগ পর্যন্ত সে ভাবে আগুনের মধ্যে মতা আছে, গাছের মধ্যে মতা আছে,পাথরের মধ্যে মতা আছে ইত্যাদি ধরণের চিন্তা করে। কিন্ত যখন সে ঈমান আনে তখন তার মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ সৃষ্টি হয়। অর্থ্যাৎ সে ভাবে আমি যে গুলোর সামনে মাথা নত করি আর শক্তি আছে বলে মনে করি আসলে তো এগুলোর মধ্যে কিছুই নেই। সকল শক্তির মুল হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ তা’য়ালা কোরআনুল কারীমের সুরা আরাফের ১৯৪ নং আয়াতে বলেছেন- إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের কে ডাকো তারা তো তোমাদের মতই গোলাম। অর্থ্যাৎ আল্লাহ বলেছেন তুমি যেমন একজন গোলাম ওরাও তোমার মতই আর একটি গোলাম সুতরাং তুমি একজন গোলাম হয়ে আর একজন গোলামের কাছে হাত পেতেছো সে তোমার কোন প্রয়োজন পুরণ করতে পারবেনা। সে তো নিজেরই কোন কল্যাণ করতে পারেনা তোমাদের কল্যাণ করবে কেমনে। নিজেকেই রা করতে পারেনা তোমাদের কে সাহায্য করবে কেমনে ? আল্লাহ পাক বলেন,
وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَكُمْ وَلَا أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ
আল্লাহকে বাদদিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাকো তারা তোমাদেরও সাহায্য করতে পারে না এবং নিজেরা নিজেদেরও সাহায্য করতে পারেনা।(সুরা আরাফ-১৯৭)
অতএব মুমিনের মধ্যে আত্মসম্ভ্রম সৃষ্টি হবে। ঈমানদার কখনও আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করবে না। মানুষ হয়ে মানুষের গোলামী করবেনা। মানুষ কোন মতা রাখেনা,সকল মতার উৎস হলেন আল্লাহ তা’য়ালা (আন্নাল কুওয়্যাতা লিল্লাহি জামিআ’)। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দেন যাকে ইচ্ছা সম্মানীত করেন-
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
বলো, হে আল্লাহ! বিশ্ব-জাহানের মালিক! তুমি যাকে ইচ্ছা রাষ্ট্রমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রমতা ছিনিয়ে নেন। যাকে চাও মর্যাদা ও ই্জ্জত দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্চিত ও হেয় করো। কল্যাণ তোমরা হাতেই নিহীত। নিঃসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী। সুরা আলে ইমরান-২৬।
একজন ঈমানদারের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ সৃষ্টি হয় সে কারো সামনে হাত পাতে না, হাত পাতবে তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে। সে তার রিযকের ব্যাপারেও পরোয়া করে না। কারণ ঈমান আনার পর মুমিনের আত্মমর্যাদা সৃষ্টি হয়েছে যে, রিযিকের মালিক কোন মানুষ নয়;রিযিকের মালিক আল্লাহ তা’য়ালা।(আল্লাহু রাজ্জাকু যুল কুওয়্যতিল মাতিন) আল্লাহ পাক কোরআনের কারীমে বলেন-
بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَٰكِن كَذَّبُوا وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم
যদি জনপদের লোকেরা ঈমান আনতো এবং খোদাভীতির নীতি অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর বরকতসমুহের দুয়ার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা তো প্রত্যাখান করেছে। (সুরা আরাফ-৯৬)
শুধু মানুষ নয় পৃথিবীতে বিচরণশীল সকল প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহ পাকের। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনের সুরা হুদের ৬নং আয়াতে বলেন-
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا
জমিনে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নাই যার রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপর বর্তায় না। অর্থ্যৎ সকল বিচরণশীল প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহ তা’য়ালার। তবে আল্লাহ রিযিকের মালিক এ কথায় বিশ্বাস করার সাথে সাথে কাজ করতে হবে। আল্লাহ রিযিক দেবেন। মুমিনের মধ্যে আত্মমর্যাদবোধ পয়দা হবে। ভালমন্দের মালিক আল্লাহ তা’য়ালা (খায়রিহী ওয়া শাররিহী মিনাল্লাহি তা’য়ালা) সে কারো কাছে কল্যাণ কামনা করবেনা। ঈমান আনার পর মুমিন কিছুতেই বিশ্বাস করবেনা কোন মাজারের কাছে গেলে আমার কল্যাণ হবে। এভাবে প্রত্যেকটি ব্যাপারে ঈমানদারের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ,আত্মসম্ভ্রব সৃষ্টি হয়।
বিনয় বিনম্রঃ
ঈমান আনার পর ঈমানদার বিনয় ও বিনম্র হবে। সে অহংকার করবেনা। কারণ সে ঈমান আনার পর বুঝতে পারে আল্লাহর রাজত্বের বাইরে কিছু নেই। আমি অহংকার করে যাবো কোথায়। যেখানেই যাবো সেখানেই তো আল্লাহর রাজত্ব। আল্লাহ পাক বলেন-
ِبِسُلْطَانٍ أَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ فَانفُذُوا ۚ لَا تَنفُذُونَ إِلَّا يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَن تَنفُذُوامِنَ
হে জিন ও মানব গোষ্টি, তোমরা যদি পৃথিবী ও আকাশ মন্ডলের সীমা পেরিয়ে কোথাও যেতে পার তাহলে গিয়ে দেখ। পারবেনা, এজন্য বড় শক্তি প্রয়োজন। (সুরা আর রহমান-৩৩)
জমীন ও আসমান অর্থ গোটা সৃষ্টি জগত। এককথায় আল্লাহর প্রভুত্ব কর্তৃত্ব। মতা থাকলে আল্লাহর প্রভুত্বধীন এলাকা থেকে চলে যেতে হবে। কিন্তু সে মতা কারো নেই। যদি এ ধরণের অহংকার কেও করে থাকে তাহলে সে সর্বশক্তি নিয়োগ করে দেখুক। সুতরাং একজন ঈমানদার যখন ঈমান আনে তখন একথা বুঝে নেবে আর সে অহংকার করবেনা। ঈমানদার ঈমান আনলে সে অহংকার করবেনা যেহেতু মানুষ হলো ফকির আর আল্লাহ হলেন গণী। (আল্লাহু গনীয়্যূন ওয়া আনতুমুল ফুকারা)। لِّلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ আল্লাহ পাক বলেন, আকাশ সমুহে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ তা’য়ালার। (সুরা বাকারা ২৮৪)
মুমিন বান্দাদের মধ্যে বিনয় বিনম্রতা সৃষ্টি হয়ে যায়। আল্লাহ পাক সুরা বণী ইসরাইলের ৩৭নং আয়াতে বলেন,
تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن
জমীনে অহংকার করে চলো না। তুমি জমিনকে চিরে ফেলতে পারবেনা আর পাহাড়ের উচ্চতা লাফ দিয়ে ছাড়িয়ে যেতে পারবেনা। আল্লাহ পাক আরো বলেন মানুষ যদি তার সৃষ্টি ব্যাপারে চিন্তা করে তাহলে তার অহংকার কিসের ? মানুষের জীবনে একটি সময় পার হয়েছে যখন সে উল্লেখ করার মতো কিছুই ছিলোনা। مَّذْكُورًا هَلْ أَتَىٰ عَلَى الْإِنسَانِ حِينٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُن شَيْئًا
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, মানুষের জীবণে কি এমন একটি সময় অতিবাহিত হয়নি যখন সে উল্লেখযোগ্য কোন জিনিষই ছিলনা। (সুরা দাহার-১)
ঈমানদার চায় আল্লাহর মুহাব্বত আল্লাহর ভালবাসা। আর আল্লাহ যেহেতু অহংকারীকে ভালোবাসেন না সেহেতু সাচ্চা ঈমানদার অহংকারী হয়না সে হয় বিনয় ও বিনম্র। অল্লাহ তা’য়ালা বলেন اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ
আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না। পৃথিবীর বুকে উদ্ধত অহংকারী ভঙ্গিতে চলো না। আল্লাহ তা’য়ালা আত্মম্ভরী ও অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সুরা লুকমান-১৮)
অতএব আল্লাহর উপর ঈমান আনলে পরে মাথা নত হয়ে যাবে। সে অহংকার করতে পারবেনা। সে হবে বিনয় ও বিনম্্র। এসব কথা জানানোর পরেও যারা অহংকার করবে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। অহংকারী ফেরাউন নমরুদের পরিণতি যেমন হয়েছিল অহংকারীদের পরিণতিও তেমনই হবে। অতএব সম্পদের অহংকার,মতার অহংকার,শিার অহংকার করা যাবেনা। মুমিন বান্দা আল্লাহর কালেমা পড়লে পরে তার মধ্যে অহংকার জায়গা পাবেনা।
নির্ভীকঃ
ঈমান আনার পর মুমিন হবে নির্ভিক। মুমিন কখনো ভয় পায় না। মুমিন মৃত্যুকে ও ভয় পায়না। সে জানে মৃত্যু থেকে পালানো যাবেনা। কোরআনে কারীমে রাব্বুল আলামীন বলেন, قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ
বলো মৃত্যু থেকে তোমরা পালাচ্ছো কিন্তু মৃত্যু তোমাদের কাছে আসবেই। সুরা- জুমআ ৮ ( মরণ থেকে পালাও তুমি মরণ তোমায় লইবে ঘিরি, যদিও সুদুর আকাশ পানে লুকাও সেথা লাগায়ে সিঁড়ি)
নির্দিষ্ট সময় আসলেই মরণ হবে। আর এ জীবণের মালিক তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আল্লাহ পাক বলেন,
لَهُمُ الْجَنَّةَ إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ
আমি আমার মুমিন বান্দার থেকে তার জান আর মাল কে খরিদ করে নিয়েছি বিনিময়ে আমার মুমিনকে আমার জান্নাত দান করেছি। অতএব জান মাল যেহেতু আল্লাহর তাহলে তিনি কী কিনে নিয়েছেন ? তিনি কিনে নিয়েছেন ইচ্ছাটা। সুতরাং ইচ্ছা মত মাল খরচ করা যাবেনা। বিক্রিত জান আর মাল যখন মালিক চাবেন তখনি মালিক কে সতস্ফুর্ত ভাবে খুশি মনে দিয়ে দিতে হবে। অতএব নিজের ইচ্ছামত মানুষের তৈরী করা মতবাদ প্রতিষ্টার আন্দোলনে জীবণ কে তিগ্রস্ত করলে জাহান্নামে যেতে হবে। মুমিনের কলিজার মধ্যে সাহস থাকবে বিশ্বাস থাকবে وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا
কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারেনা। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে। (সুরা আলো ইমরান-১৪৫) আল্লাহ পাক আরো বলেছেন,
إِلَىٰ مَضَاجِعِهِمْ قُل لَّوْ كُنتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ
হে নবী! ওদের কে বলে দাও, ভাগ্যে যদি তোমাদের নিহত হওয়া থাকে আর তোমরা যদি নিজেদের গৃহে বিছানায় ও থাক তাহলে সেখান থেকে বের হয়ে মৃত্যুর জায়গায় পৌছে যেতে হবে। (ইমারান - ১৫৪) মৃত্যুর জন্য সময় হলো আসল কথা। সময় হয়ে গেলে সে যে জায়গায় হোক মৃত্যু তাকে ছাড়বেনা। সময় হয়ে গেলে এক মুহুর্ত আগে পরে করা হবেনা। সুতরাং ঈমানদার মুত্যূকে ভয় করবেনা। জীবণ যিনি দিয়েছেন তাঁর রাস্তায় জীবণ দেয়ায় জন্য প্রস্তুত থাকবে এটায় হলো মুমিনের ঈমানের গুন বা বৈশিষ্ট। আল্লাহর মুমিন বান্দা ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাইবে জীবনের জয়গান। মুমিন কে দ্বীনের উপর অবিচল থাকার জন্য, দ্বীনের কাজ করার জন্য যদি ফাঁসি ও দেয়া হয় তাহলে মুমিন বলবে ফাঁসির দঁড়ি তো জুতার ফিতার সমতুল্য। মৃত্যু হবে কি হবে না কোন অবস্থায় হবে সব আল্লাহ জানেন। আসলে মুল ব্যাপার হলো মৃত্যুর ফায়সালা তো হয় আসমানে।
হতাশ হবেনা ভেঙে পড়বে নাঃ
মুমিন কখনো হতাশ হবেনা নিরাশায় তার মন ভেঙে যাবেনা। হতাশা মুমিনের কলিজা কে কখনও ছোট করে দেবেনা। আন্দোলন থেকে তাকে বিরত রাখবেনা। অন্ধকার দেখবে চতুর্দিকে মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার চতুর্দিক থেকে মেঘ জমে আসছে। তার পরেও মন ভেঙে পড়বে না সে জানে একটু পরে জাহালিয়াতের আকাশে ঘুটঘুটে কালো মেঘ সরে গিয়ে ইসলামের বিজয় সুর্য উদিত হবে। কারণ মুমিন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়না। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় কেবল মাত্র পথভ্রষ্টরা। (ওমায় ইয়াকনাতু মির রহমাতি রব্বিহী ইল্লাদ দল্লুন)। ঈমানদার আশায় বুক বেঁধে সাহসের সঞ্চার করে। কারণ সে জানে وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ الَّذِي خَلَقَنِي فَهُوَ يَهْدِينِ
যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি আমাকে পথ দেখিয়েছেন, আমি যখন ুধার্ত হই তিনি আমাকে খাওয়ান আমি যখন তৃঞ্চার্থ হই তিনি আমাকে পান করান, আর যখন আমি অসুস্থ হয় আল্লাহই আমাকে রোগমুক্তি করেন।(সুরা আশ শুআরা-৭৮,৭৯,৮০)।
রোগগ্রস্থ হলে অথবা বিপদে পড়লে মুমিন হতাশ হবেনা। হযরত আয়ূব আঃ ১৮ মাস রোগাক্রান্ত ছিলেন কখনও হতাশ হননি। আল্লাহর কাছে কখনও শেকায়াত ও করেননি। কারণ রোগ দিয়েছেন আল্লাহ রহমত করবেন তিনি। হযরত আয়ূব আঃ আল্লাহর কাছে বলেছিলেন,‘রব্বি আন্নি মাছ্ছানিয়াজ জুররু ওয়া আনতা আরহামুর রাহীমিন’। অনুরুপভাবে হযরত ইউনুচ আঃ মাছের পেটে থেকে আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা করে আল্লাহকে ডাক দিলেন- ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা ছুবহানাকা ইন্নিকুনতু মিনাজ জলিমিন’ আল্লাহ পাকের রহমতের দরিয়ায় জোস লেগে গেলো সাথে রব্বুল আলামিন ডাকের জবাব দিলেন, ফাছতাজাবনা লাহু ওয়া নাজ জায়নাহু মিনাল গম্মি কাযালিকা নুনজিল মু’মিনিন। আল্লাহ পাক যেনো একথায় বোঝালেন আমি শুধু ইউনুচকেই নয় আমার রহমতের প্রত্যাশা যারা করে আমি আমার মমিন বান্দাদের কে (কাযালিকা নুনজিল মু’মিনিন) এভাবেই সাহায্য করে থাকি। মমিনরা কখনও হতাশ হয়না হতাশ হয় কেবল কাফেররা। আমরা দেখতে পাই হযরত ইউছুফ আঃ যৌবণে ভরা টগবগে যুবক সৌন্দের্যের পিরামিড। সুন্দরী যুবতী নারী জুলাইখা যখন তাকে ঘরের জানালা দরজা বন্ধ করে দিয়ে কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য চাপ দিলো। পালানোর কোন জায়গা ছিলোনা ঘরের দরজা,জানালা,কঠিন ভাবে বন্ধ ছিলো। হযরত ইউছুফ আঃ হতাশ হলেন না তিনি বললেন, قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ (আমি আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি-সুরা ইউছুফ-২৩)। আল্লাহর নবী হযরত ইউছুফ আঃ আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা করে আল্লাহ কে ভয় করে আল্লাহকে ডেকে তালাবদ্ধ দরজার দিকে দৌঁড় দিলেন, আল্লাহ পাক আপন কুদরতে দরজা খুলে দিলেন। আল্লাহর মমিন বান্দারা সর্বদা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয় আর কাফিররা হয় হতাশ।
إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ وَلَا تَيْأَسُوا مِن رَّوْحِ اللَّهِ ۖ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِن رَّوْحِ اللَّهِ
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় কেবলমাত্র কাফেররাই। (সুরা ইউছুফ-৮৭)
যারা আল্লাহকে ভয় করে ঈমানদার হয় আল্লাহ তা’য়ালা তাদের জন্য রাস্তা বের করে দেন। আল্লাহ পাক বলেন, وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا
অর্থ্যাৎ যে ব্যাক্তিই আল্লাহ কে ভয় করে চলবে আল্লাহ তা’য়ালা তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রা পাওয়ার উপায় বের সৃষ্টি করে দেবেন। (সুরা তালাক-২)
অতএব আল্লাহ আমাদের কে কঠিন বিপদ মুছিবত থেকে রা করুন, আমাদের কে কল্যাণের রাস্তা বের করে দেন সাথে সাথে ঈমানের পথে আল্লাহ যেনো আমাদের কে অবিচল রাখেন। যে গুনগুলো অজর্ন করার ফলে খাটি ঈমানদার হওয়া যায় আল্লাহ পাক যেন আমাদের মধ্যে সে গুনগুলো সৃষ্টি করে দেন।
শিাঃ
১) ঈমানদার কোন সৃষ্টির সামনে মাথা নত করবেনা।
২) বিনয় ও বিনম্্রতার মাধ্যমে খাঁটি এবং নিষ্ঠাবান সাচ্চা ঈমানদার হতে হবে ।
৩) ঈমানের েেত্র কোথাও কোন দুর্বলতা, সংশয় রাখা যাবেনা।
৪) ঈমানদার কখনো ভীতু হবেনা, ভেঙে পড়বেনা।
৫) ইসলামী জীবণ যাপনের েেত্র কেন্দ্রিয় চরিত্র তৈরী করতে হবে‘ঈমান’।
উপস্থাপকঃ
চেয়ারম্যান,ইসলামিক দাওয়াহ ফাউন্ডেশন
খতিব, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ
সাংবাদিক, গবেষক, লেখক ইসলামী চিšা—বিদ
০১৭১২-৬১২৮৭৬
বিষয়: বিবিধ
১৪৮০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন