প্রিয় নেতা কামারুজ্জামান এবং কিছু সৃতি...

লিখেছেন লিখেছেন nirvik sottobadi ০৬ মে, ২০১৫, ০২:৩৩:০৬ দুপুর

অনেকদিন থেকেই ভাবছি কাছ থেকে দেখা সম্মানিত জামায়াত নেতাদের সম্পরকে কিছু লিখব। আবার ভাবি কি হবে লিখে?

এত অপপ্রচার আর মিথ্যা আর ভাল লাগেনা। কিন্ত মন মানেনা এভাবে ভাল ও ইমানদার মানুস গুলো কে যখন একেরপর এক ফাশিতে ঝুলিয়ে হত্যা করছে এই জালিম সরকার। আমার প্রিয় বাংলার মাটিতে যে একদিন এধরনের জুলুম দেখতে হবে তা কল্পনাতেও আসেনি।

যাক আসল কথায় আসি; ছোট বেলাথেকে মগবাজার থাকায় অনেক ছোট বড় জামায়াত নেতাদের পরিবারগুলোর সাথে আমাদের জীবনধারা ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে আছে। সাধারন সৃতি গুলো আজ যেন এক অসাধারন অবস্থায় রুপ নিয়েছে! চাচি ও তাদের মেয়েদের সাথে চলাফেরার সুযোগ হলেও চাচাও ছেলেদের সাথে পর্দা রক্ষায় তেমন কথা হত না। আর আল্লাহতায়ালা বিয়ের পর চাচাদের কেও কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। সেজন্য আল্লাহতালার কাছে অশেষ শোকরিয়া আদায় করছি।

বিদেশের মাটিতে অনেক নেতাদের মাঝে আমাদের বাসায় সবচাইতে বেশি মেহমান হয়েছেন এই কামারুজ্জামান চাচা। উনি আমাদের বাসায় থাকতে খুবই পছন্দ করতেন। আমার সাহেব কে বলতেন কি দরকার খামাখাই সংগঠনের টাকা খরচ করে হোটেলে থাকার? তারচেয়ে বরং তোমার বাসাই আমার জন্য ভালো। আহ কত আন্তরিকতা ও ভালবাসায় ভরা সেই কথাগুলো আজ শুধুই সৃতি!

আজ অনেকেই যেখানে সংগঠনের টাকা খরচে ভাবেনই না আর সেখানে তারা ছিলেন আমানতের ব্যপারে কতইনা সতর্ক! তবে হাদিস অনুসারে কখনো তাকে ২/৩ দিনের বেশি থাকতে দেখিনি।

আর কোনদিন শোনবনা পর্দার আড়াল থেকে নরম সুরের ডাকঃ মা কেমন আছ? কেন এত কস্ট করে এতকিছু রান্না করেছো? ছোট মেয়ে তুমি,বিদেশের বাড়িতে একাইতো সব করো মা! আমার জন্য আলাদা কিছু করতে হবেনা, তোমরা যা খাও তাই আমার জন্য যথেষ্ট!

আর বিদায়ের সময় বলতেন তোমার আব্বু আম্মুকে কিছু বলতে হবে?

কতো আদরমাখা সেই কথাগুলো আর কোনদিন চাচা বলবেননা ! আমার আপন চাচা না থাকলেও মনে হত তাদের চেয়ে আর আপন কারা আছেন? দবীনি সম্পর্ক যেন আপন রক্তের সম্পর্কেও হার মানায়।একমাত্র কামারুজ্জামান চাচাকে সময় দেয়ার জন্যই আমার সাহেব কে দেখতাম মাঝে মাঝে ক্লাশ পোসপন্ড করতে, পরে অবশ্য উনি চলে গেলে মেকাআপ ক্লাশ নিতেন।

কামারুজ্জামান চাচা কথা বলতেন ঠান্ডা মাথায় ধীর স্থির ভাবে। কখনো উচ্চস্বর বা অস্থিরতা দেখতাম না। আর যেখানে অনেকেই বাইরে আসলে ঘুরে বেড়ানোকে ফার্স্ট প্রায়রিটি দিতেন অন্যদিকে উনাকে সব সময় দেখতাম বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দলের নেতাদের সাথে যোগাযোগকেই টপ প্রায়রিটি দিতে।

যেখানে জার্নি করে সবাই ফজর পরে একটু বিস্রাম চায় আর উনাকে দেখতাম প্রতিদিন ফজর পরে নামাযের পর আমাদের লিভিং রুমের মাটিতে জায়নামায পেড়ে কোরান স্টাডি বা লেখাপড়া করতে।

আর মাঝেমধ্যে আমি পর্দার আড়াল থেকে ডেকে বলতাম চাচা, কিছু লাগবে? উনি বলতেন না মা’ লাগবেনা। ডাইনিংয়ের দিকে চেয়ে বলতেন, লাগলে আমিই টেবিল থেকে নিয়ে নিব। তুমি রেস্ট নাও মা।

মা ছাড়া কখনো কথাই বলতেন না। একবার আসলেন যেখানে তার ফেরার কথা তার একদিন পর অন্য এক দেশে। সেদিন রাতে খেয়ে নামাজের পর জায়নামাজে বসেই আমার সাহেব বললেন ভাই; টিকেট টা দেখি, আগে টাইমটা দেখে আগামীকালের প্রোগ্রাম ঠীক করি।ওদিকে টিকেট চেক করেই মাথা খারাপ; আরে ফ্লাইট তো আজ রাতেই! ১২ টার পর ফ্লাইট হলে অনেকেরই যে ভুলটা সাধারনত হয়। যারা দেখা করতে আসছিলেন, সবাই অস্থির হয়ে গেল যে এখনি রেডি হতে হবে, কিন্ত চাচা ঠান্ডা মাথায় রেডি হলেন কোন অস্থিরতাই দেখালামনা তার মধ্যে!

বিদায়ের সময় আমিও মন খারাপ করলাম যে আরো একদিন থাকবেন বলে আমিতো তেমন কিছুই খাওয়ালাম না। চাচা বললেন, সবসময় ত খেতেই থাকি আর কি খাওয়াবে?

সবচাইতে স্মরণীয় হলো তার লাস্ট সফর, সম্ভবত ২০০৮ এর শেষ বা ২০০৯ এর প্রথম দিকের। শেষের দিকে চাচার ছেলে থাকার ফলে ছেলেসহ হোটেলেই থাকতেন নিজ খরচে। আর আমারও উয়িকেন্ডে সকাল বিকাল ক্লাশ থাকার ফলে দেখা হয়নি। আমার চিন্তায়ই আসেনি যে হোটেলে যেয়ে দেখা করে আসবো, যেহেতু আমার সাহেব দেখা করে এসেছেন। হঠাৎ একদিন রাত ১০ টার দিকে চাচা ফোন দিয়ে উনাকে জানালেন আমরা তো কাল চলে যাচ্ছি তাই তোমাদের বাসায় আসতেছি এখন। মা’য়ের সাথে দেখা না করে চলে যাব ভাবতে পারছিনা । তবে অস্থির হয়োনা আমরা ডিনার করেই আসছি। আমিতো অবাক আমার সাহেবের সাথেতো দেখাই হয়েছে, এত রাতে উনারা কস্ট করে আসবেন শুধু আমাকে দেখতে আমি মেনেই নিতে পারছিলামনা। আমি লজ্জায় বার বার আফসোস করছিলাম কেন যে চাচা চাচির সাথে হোটেলে যেয়ে দেখা করলাম না। আমার জন্য তারা এতো রাতে কস্ট করে আসবেন!

উনারা সব গুছিয়ে আসতে রাত ১.৩০ বেজে গেলো।আর চাচীর সাথে গল্প করতে প্রায় ৩.৩০ বেজে গেলো।

যতই টাইম দেখছিলাম আর লজ্জা পাচ্ছিলাম এত সম্মানিত মানুস টা কাল জার্নি করবেন আর আমার জন্যই এই কস্ট। আর আমি আড়াল থেকে চাচার কাছে বারবার মাফ চাচ্ছিলাম। উনি বললেন তাতে কি হয়েছে? তুমি ভাবলে কি করে যে তোমার সাথে দেখা না করেই চলে যাব? আমি আর কি বলব, শুধু শোকর আদায় করলাম এ ধরনের নেতাদের কর্মি হয়ার তাওফিক আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। তখন ভাবছিলাম এরাই প্রক্‌ত নেতা যার উদাহরন রাসুল (সাঃ) দিয়ে গেছেন!

আর তার উত্তরসূরি রা তো এরকমই হবেন এটাই বাস্তবতা!

চাচার সাথে শেষবারে কথা হয় ফাশির রায়ের পর এখন থেকে কয়েকমাস আগে।আমাকে বললেন মা কেমন আছো? আমি ভালো আছি বলেই কান্নায় ভেংগে পড়লাম।আমাকে খুব শান্তভাবে বললেন কেদোনা মা; দোয়া কর। কান্না থামলে বললাম; চাচা মাফ করে দিয়েন। উনি বললেন কি বল মা? আমাকেই বরং তুমি মাফ করে দিও তোমাদের অনেক কস্ট দিয়েছি। আমি কল্পনাও করতে পারিনা উনার মতো মানুস আমার কাছে কেন মাফ চাইবেন? আমি আবারও কাদলাম।উনি শান্তনা দিলেন আবারো। ওই অবস্থায় ই আমার পরিবার ও বড় ভাইয়ার খোজ নিলেন, যেকিনা ওয়ামি ভাইদের খেলার সাথি ছিল ছোটবেলায়। আমি এখনও ভাবতে পারিনা কত বড় নেতা ও ভালো মানুস হলে ম্‌ত্যুপুরি থেকে আরেকটা সাধারন পরিবারের খোজ নিতে পারেন!

যেখানে আমরা দু একটা দেশ ভ্রমন বা একটু পয়সা হলে এমনকি অল্পকিছু শিক্ষা অর্জন করলেই অন্যের কথা ভুলে যাই আর সেখানে উনি ম্‌ত্যু নিশ্চিত জেনেও অন্যের খোজ নিচ্ছেন!

আমি আবেগাপ্লুত হয়ে যাই, যখন ভাবি যে, আল্লাহ বাংলাদেশের এই দুই শ্রেষ্ঠ শহীদদের কে আমার ছোট্ট বাসায় মেহমান হিসেবে কবুল করেছেন।

তারাতো তাদের ঈমানী পরিক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে গেছেন আশা করছি। কে জানে কিয়ামতের কঠিন দিবসে আমার কি হবে? তখন ভাবি, কোন কাজ কবুল নাহলেও আল্লাহ কে বলতে পারব এই মহান শহীদে্র জন্য এক গ্লাস পানি পান করানোর বিনিময়েও যেন আল্লাহ আমাকে জান্না্তুল ফেরদাউস দান করেন!

আরো যে কত স্‌তি ভেসে ওঠে মাঝে মাঝে,আর তা যেন কলিজা ফেটে অস্রু হয়ে ঝড়ে পড়ে...

এ অশ্রু কিসের? না তিনি, তাঁরাতো আমার কোন আত্মীয়? না আছে কোন রক্তের সম্পর্ক? তাহলে এর নামই কি দবীনি ভালবাসা?

যে ধরনের ভালবাসার কারনে সাহাবিগন বিলিয়ে দিতে পেরেছিলেন তাদের স্ত্রী, সম্পদ, ঘর,ব্যবসায় ইত্যাদি?

হে আল্লাহ আপনি তাঁদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন এবং জান্নাতুল ফেরদাউস দান করে আপনার ওয়াদা পুরন করুন...

আর আমদেরকেও দিন তাদের মত অটল ঈমান ও জান্নাতের পানে ছুটে চলার অদম্য বাসনা।

“ তোমরা সেই পথে তীব্র গতিতে ছূটে চল, যে পথ চলে গেছে বিস্ত্‌ত সুমহান জান্নাতের দিকে...” (আল কোরআন)

বিষয়: বিবিধ

২০২৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

318448
০৬ মে ২০১৫ দুপুর ০২:৪৮
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৬ মে ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৫
259695
nirvik sottobadi লিখেছেন : ধন্যবাদ
318463
০৬ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৬
লেন্দুপ দর্জি লিখেছেন : সময় থাকতে আমার দলে আসুন...নয়ত বেঘোরে... Whew!
০৬ মে ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৭
259696
nirvik sottobadi লিখেছেন : বিশবাসঘাতক লেন্দুপ দর্জী হওয়ার চেয়ে শহিদের পথই শ্রেয় মনেকরি।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
০৭ মে ২০১৫ সকাল ১০:৫২
259799
লেন্দুপ দর্জি লিখেছেন : যুগে লেন্দুপদের জয় হয় আর অন্যরা মৃত্যুর সুখ খোঁজে Tongue
০৭ মে ২০১৫ সকাল ১০:৫২
259800
লেন্দুপ দর্জি লিখেছেন : যুগে যুগে লেন্দুপদের জয় হয় আর অন্যরা মৃত্যুর সুখ খোঁজে Tongue
318502
০৬ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
318520
০৬ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪২
nirvik sottobadi লিখেছেন : ধন্যবাদ
318525
০৬ মে ২০১৫ রাত ০৮:০৮
খান জুলহাস লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
318562
০৭ মে ২০১৫ রাত ১২:২১
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আপু, আপনার চাচা মিশিগান/নিউইর্য়ক এখানে
বেশী থাকতেন। ওনার জেল জীবনের ঘটনা জান উচিৎ। তাই কে,এম, আমিনুল ইসলামের
লেখা, "আমি আলবদর বলছি" বইটা পড়া উচিৎ। তা না আপু।
১২ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
271989
nirvik sottobadi লিখেছেন : জাজাকাললাহ।
318572
০৭ মে ২০১৫ রাত ০১:৫২
আফরা লিখেছেন : আপু আসসালামু আলাইকুম ।
হে আল্লাহ আপনি তাঁদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন এবং জান্নাতুল ফেরদাউস দান করে ।আর আমদেরকেও দিন তাদের মত অটল ঈমান ও জান্নাতের পানে ছুটে চলার অদম্য বাসনা।আমীন ।

জাজাকাল্লাহ খাইরান আপু ।

318838
০৮ মে ২০১৫ দুপুর ০২:২৭
nirvik sottobadi লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
320686
১৮ মে ২০১৫ রাত ০১:৫৮
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ভাই। ভালো লাগলো, ধন্যবাদ ।
১০
359203
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:৫২
nirvik sottobadi লিখেছেন : ধন্যবাদ
১১
375377
২৭ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০৩:৫৩
ইসলাম কখনো মাথা নত করেনা লিখেছেন : লেখাটি দেখে ভালোলাগলো আবার এমন কিছু লেখার অভিজ্ঞতা হোক এই দোয়া করি।
ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File