চিন্তার সাফল্য-ব্যর্থতা
লিখেছেন লিখেছেন আরিফিন আল ইমরান ২৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:৪৭:০৪ বিকাল
জয়-পরাজয় বা জনপ্রিয়তার মানদন্ডে চিন্তাকে বিবেচনা করা যায়না। সমাজের অন্তর্গত স্রোতে যত চিন্তাই আবির্ভূত বা বিলুপ্ত হোক না কেন, যদি তার সত্যিই কোনো জ্ঞানগত ও মানবিক দাবি থাকে; তবে তার উত্থান অনিবার্য। হয়তো তার ব্যাপ্তি আজ সাধারণ জনতার মননকে স্পর্শ করবেনা। হয়তো তার প্রতি অগণিত মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন থাকবেনা। কিন্তু কালের চক্রে সেই চিন্তা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই, সমাজে নিজের ভূমিকা নিয়ে হাজির হবে। ফ্রেডরিখ নীটশে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার গতি-প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমালোচনা করেছেন, এর অতি লঘূত্বের দিকে ইংগীত করে। তার জীবনীতে লেখা হয়েছে- ‘‘Friedrich Nietzsche held a pessimistic view on modern society and culture. His views stand against the concept of popular culture. He believed the press and mass culture led to conformity and brought about mediocrity. Nietzsche saw a lack of progression, leading to the decline of the human species.’’ মানুষ সেসময় তার সেই চিন্তাকে মূল্য দেয়নি বটে; কিন্তু আজ সমস্বরে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আমরা শুনছি চলমান সমাজ-সভ্যতার একই সমালোচনা-যা নীটশের চিন্তার সমার্থক। একইভাবে আপনি ইসলামের ২৩ বছরের বিপ্লবী চিন্তার বিভিন্ন পর্যায়গুলো লক্ষ্য করুন। দেখবেন শুরুতে তার আওতা ও পরিধি ছিল- সমাজের অবহেলিত অংশের কাছে সীমাবদ্ধ। পরে তা সমাজের সব অংশে বিপুল বিক্রমে প্রসারিত হয়। বুদ্ধের চিন্তা ও দর্শনও প্রাচীন ভারতে প্রায় এক যুগ পর্যন্ত অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়। কৌলিন্য জর্জর সমাজে তার উদারতাবাদী দর্শন- উঁচু পর্যায় থেকে অনেক ব্যাপক সমালোচনা মোকাবেলা করেই, নিজের পথ করে নেয়। সম্রাট বিম্বিসার ও অশোকের সময়ে সেই চিন্তা ও দর্শন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। একইভাবে সক্রেটিসের চিন্তাও প্রাথমিক পর্যায়ে, কঠোর সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপত্তি মোকাবেলা করেই গ্রীক দর্শনের যুগান্তকারী ভিত্তি স্থাপন করে। সুতরাং চিন্তা হয়তো আপাতভাবে সার্থক বা অর্থবহ রূপ পরিগ্রহ করতে সক্ষম হয়না। কিন্তু তাই বলে তার মূল্যমান কিন্তু আপেক্ষিকভাবে বিশ্লিষ্ট হবার নয়। মানুষের জীবন পদ্ধতি, সমাজ কাঠামো, সংস্কৃতি বা বুদ্ধিবৃত্তিকে প্রভাবিত করতে সক্ষম, এমন সব চিন্তাই কালক্রমে নিজের জায়গা অবশ্যই করে নেবে। ইতিহাসের দীর্ঘ পর্যালোচনায় এই সত্য আমাদের কাছে আজ দৃশ্যমান। চিন্তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হেগেলের মূল্যায়ণ হল - ‘‘Thinking allows humans to make sense of, interpret, represent or model the world they experience, and to make predictions about that world. It is therefore helpful to an organism with needs, objectives, and desires as it makes plans or otherwise attempts to accomplish those goals.’’ তাই নতুন চিন্তকদের হতাশ হবার কিছু নেই। চিন্তা কোনো জনপ্রিয়তা লাভের উপায় নয়। এতে সমাজের বৃহত্তর মানুষের প্রত্যক্ষ সমর্থন নাও থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে আপোষকামীতার কোনো সুযোগ নেই। চিন্তা আপোষ করলেই অজ্ঞানতার যুগপৎ বিস্তার ঘটে। নিরন্তর লড়াই করে যাওয়াতেই- এর অন্তর্নিহিত সার্থকতা।
বিষয়: বিবিধ
১২১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন