প্রত্যেক আলবদরই যুদ্ধাপরাধী। তারা ছিল পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী শক্তি, আলবদরদের জন্য ফাঁসিও যথেষ্ট নয়
লিখেছেন লিখেছেন আমি অরন্য ১৮ জুন, ২০১৫, ০৩:১৯:০৭ দুপুর
‘যুদ্ধাপরাধ আবার কী? বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই।’ ২০০১ সালে মুজাহিদ এ রকম ঔদ্ধত্যভরেই কথা বলতেন। খালেদা জিয়া মুজাহিদকে খুব পছন্দ করতেন। কখনও নির্বাচনে না জিতলেও খালেদা ২০০১ সালে মুজাহিদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। একটি বিষয় লক্ষণীয়, খালেদা জামায়াতের যে দু’জনকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন নিজামী ও মুজাহিদ তারা দু’জনই ছিলেন ১৯৭১ সালে আলবদর কমান্ডার ও উপ- কমান্ডার। রক্তের প্রতি খালেদার এক অদম্য আসক্তি আছে। তার প্রমাণ ২০০১-২০০৬ ও ২০১৩-২০১৪ সালের ঘটনাবলি। কত মানুষ যে পুড়িয়েছেন তিনি! রক্তের প্রতি আসক্তির কারণেই ঐ দু’জনকে মন্ত্রী করেছিলেন। মুজাহিদ সমাজকল্যাণমন্ত্রী হয়ে সারাদেশে সরকারী টাকায় জামায়াতী প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করেছিলেন। বদর বাহিনী যা করেছে তার জন্য মৃত্যুদন্ডও যথেষ্ট শাস্তি নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী হিসেবে বদর বাহিনীর সৃষ্টি হয়। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ রূপান্তরিত হয় আলবদর বাহিনীতে। মুজাহিদ ছাত্র সংঘের হোমরা চোমরা ছিলেন। ১৯৭১ সালেই তিনি পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রধান হন, সে হিসেবে আলবদরদের উপকমান্ডার। বস্তুত মাঠে মুজাহিদের দাপটই ছিল বেশি। বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত। আলবদর নেতা হিসেবে হত্যার পরিকল্পনা পন্থা সবই তার নির্দেশে হতো। মুজাহিদের মতো হিংস্র মানুষ খুব কমই দেখা মেলে। তার সেই হিংস্রতা বয়সের কারণেও হ্রাস পায়নি। প্রত্যেক আলবদরই যুদ্ধাপরাধী। তারা ছিল পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী শক্তি, ১৯৭১ সালের খুন, ধর্ষণ, হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতির দায়দায়িত্ব তাদের ওপরও বর্তায়। পাকিস্তান বাহিনীর ওপর নির্ভরতা ও তাদের হয়ে কাজ করার প্রমাণ এখনও পাওয়া যাচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত যাদের বিচার হয়েছে তাদের অধিকাংশই আলবদর বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন আলবদর প্রধান, মুজাহিদ উপ-প্রধান, কামারুজ্জামান ছিলেন শেরপুরের কমান্ডার। নয়াদিগন্ত পত্রিকার মালিক মীর কাসিম ছিলেন চট্টগ্রামের, কাদের মোল্লা ছিলেন মিরপুরের। সশস্ত্র আলবদররা রাজাকার, শান্তি কমিটি থেকেও ছিল বেশি সংগঠিত, অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও বেশি হিংস্র। বস্তুত, যুদ্ধাপরাধী যতজন গ্রেফতার হয়েছেন তার মধ্যে মুজাহিদ ছিলেন সবচেয়ে হিংস্র। আলবদরের সর্বোচ্চ শাস্তিও যথেষ্ট নয় তার একটি কারণ আছে। একজন মানুষ আরেকজনকে খুন করতে পারে গুলি করে, ছুরিকাঘাত করে ও নানাভাবে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আলবদর হোক, রাজাকার হোক, মানুষ কি মানুষের ওপর এমন অত্যাচার করতে পারে? ১৯৭১-৭২ সালের দৈনিক পত্রপত্রিকাগুলো দেখলে আলবদরদের নিষ্ঠুরতার অনেক খবর জানা যাবে। হানাদারদের সহযোগী এই বদর বাহিনী শুধু ইসলামের শত্রু নয়। এরা হলো জালেম।
বিষয়: বিবিধ
৬১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন