৭২ এ গোলাম আজম ১৫তে তারেক
লিখেছেন লিখেছেন আমি অরন্য ১২ মার্চ, ২০১৫, ০৮:২৮:০৯ রাত
৭২ সালে পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযম লন্ডনে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশবিরোধী সকল কাজের নেতৃত্ব দিত। কুখ্যাত এ যুদ্ধাপরাধী শেষ অবধি সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে জেলখানায় মরলেও সে বাংলাদেশের সীমাহীন ক্ষতি করে গেছে। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং ওই সময়ে পশ্চিমা মিডিয়ায় বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুবিরোধী প্রচারে সে অনেক বড় নেতৃত্ব দেয়। যদিও জাতি হিসেবে আমাদের জিনগত কিছু সমস্যা রয়েছে বলে তার জানাজাও বাংলাদেশে হয়, আবার সেখানে কয়েক হাজার মানুষরূপী কিছু জীব অংশগ্রহণ করে। যাহোক সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। এখন সেই একই লন্ডনে বাংলাদেশবিরোধী কাজের নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে অবস্থান নিয়েছে তারেক রহমান। ১৯৭২-এ বাংলাদেশ ছিল একটি সদ্য স্বাধীন দেশ, তার সরকারও তখন ঠিক ওইভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর উদারতার কারণে বাংলাদেশের প্রশাসনে তখন পাকিস্তানপন্থীরা ৭৫ সাল আসতে আসতে বেশ জেঁকে বসে। ৭২ বা ৭৫ সালের থেকে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার অনেক বেশি সুসংগঠিত সরকার। শেখ হাসিনাও অনেক পোড় খাওয়া সরকার প্রধান। তাছাড়া আরও একটি কথা উল্লেখ করতে হয়, পাকিস্তানপন্থীদের ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর বাবা মারা যাননি। কিন্তু শেখ হাসিনা হারিয়েছেন তাঁর বাবা-মা, ভাই-বোনসহ সবই। তাই শেখ হাসিনা অনেক বেশি করে উপলব্ধি করতে পারেন, পাকিস্তানপন্থীরা কত বড় ভয়ঙ্কর। এক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে বঙ্গবন্ধুর মতো উদার হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বরং রবীন্দ্রনাথই তাঁর পথ, ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা, হে রুদ্র নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা তোমার আদেশে।’ বর্তমান সরকারের ভেতর শেখ হাসিনার আশপাশেও যে পাকিস্তানপন্থীরা নেই তা নয়, আছে। তারপরও তাদের প্রতি সেই দৃষ্টিই শেখ হাসিনাকে রাখতে হবে। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশে যা ঘটছে, সবই কিন্তু আন্তর্জাতিক জঙ্গীচক্র বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থীদের মাধ্যমে ঘটাচ্ছে। আর গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে এ দেশে যে গণহত্যা খালেদা, তারেক ও জামায়াতের নেতৃত্বে চলছে তার ভেতর দিয়ে এটাও স্পষ্ট, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গীচক্রের নেতৃত্ব কারা দিচ্ছে। পাকিস্তানী আইএসআইয়ের নির্দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গীচক্র আইএসের কায়দায় কারা জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে। এদের নেতা হিসেবে খালেদা, তারেক ও জামায়াত এখন চিহ্নিত। জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। আইনী প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া দুই-ই চলছে। খালেদা সম্পর্কে শেখ হাসিনা ৭ মার্চের জনসভায় স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘খালেদা খুনের আসামি, খুনের আসামির যেভাবে বিচার হয়, খালেদারও সেইভাবে বিচার হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই স্পষ্ট বক্তব্যের পরে খালেদার ভবিষ্যত কী বা খালেদা সম্পর্কে সরকার কী ভাবছে এ সব নিয়েও কোন দ্বিধা কারও থাকার কথা নয়। পশ্চিমা কূটনীতিক, জাতিসংঘ, উত্তরপাড়া, ভারতের অবস্থান এ সব নিয়েও মিডিয়া বা অনেক বিশ্লেষক অনেক জল্পনা-কল্পনা প্রায়ই করেন। কিন্তু এ বিষয়গুলোও স্পষ্ট হয়ে গেছে। পশ্চিমা কিছু কূটনীতিক নানা কারণে বিভ্রান্ত হলেও, তারা যতটুকু উদ্যোগ নিয়েছে এর পরে তারা আর এগোবে না। কারণ এর পরে এগোতে গেলে তাদের নিজেদের জন্যেও বিপদ আছে। এক. খালেদা ও আইএস জঙ্গীনেতা বাগদাদীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাই পশ্চিমা কূটনীতিকরা বেশি এগোলে তাদের নিজ দেশের মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। দুই. শেখ হাসিনার সরকারের শক্ত অবস্থান সম্পর্কে তাদের ইতোমধ্যে অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। সকলের সামনে মজিনার দৃষ্টান্ত আছে। কোন ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাটের জন্যে মজিনা হওয়া যে কত দুর্ভাগ্যের সেটা তারা জানে। তিন. বাংলাদেশের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে তাদের কাজ করতে হবে। এর বাইরে তারা যেতে পারবে না। তাই তাদের তরফ থেকে নতুন করে আর কোন উদ্যোগ সরকার না চাইলে তারা নেবে না। এক্ষেত্রে সরকারও তার অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে, জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোন সংলাপ নয়। তাই বার্নিকাটকেও তার কথা সংযত করতে হবে। এছাড়া বিকল্প নেই। উত্তরপাড়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জনসভায় জানিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া বর্তমান সেনাবাহিনী অনেক বেশি পেশাদার, তারা আর ১/১১-এর মতো ভুল করবে না; সে পরিবেশও নেই। এখন সর্বশেষ জল্পনা-কল্পনা ভারতের অবস্থান পরিবর্তন হবে কিনা? আমাদের দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার নির্বাচন থেকে বোঝা উচিত। ইশারাতেই তাদের জ্ঞান লাভ করা উচিত যে ভারতের অবস্থান কী হবে? ভারত এখন এ এলাকার বড় শক্তি। তাই তাদের দেশের নিরাপত্তা ও আর্থিক উন্নয়নের ক্ষতি হয় এমন কোন সরকার তার চারপাশে বা বেলি স্টেটে গঠিত হবে না। বিএনপির কয়েক বুদ্ধিজীবী দিল্লী গিয়েছিলেন, কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে কথাও বলেছেন। তারাও এর বেশি কিছু পাননি। তারা না বুঝতে পারলেও তাদের এটা বোঝা উচিত, ভারতে সরকার পরিবর্তন হলেও সেখানে ধারাবাহিকতা থাকে। সেই ধারাবাহিকতাই আছে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের নীতিতে। যেহেতু কংগ্রেস সরকারের থেকে কেন্দ্রে মোদি সরকার এককভাবে বেশি শক্তিশালী। তাই বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি মোদি সরকারের সমর্থন কংগ্রেসের থেকেও আরও শক্ত। এ নিয়ে এর বেশি বিশ্লেষণ বা তত্ত্ব হাজির করার কোন জায়গা নেই। অন্যদিকে ৭২ সালে পাকিস্তানী নাগরিক হিসেবে লন্ডনে থাকাতে গোলাম আযমের সে অবস্থান ছিল, তারেক এখন রিফুজি- তাই তার সে অবস্থান নেই। সে দেশের আইনের দৃষ্টিতে তারেক কোনরূপ রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে না। বাংলাদেশের সরকারও এ বিষয়ে সজাগ। তারাও অনেক আগেই ব্রিটিশ সরকারকে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের দেশে বসে একজন রিফুজি কীভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষতি করছে। লন্ডনে তারেকের প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার, তারেক পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা এবং ভারতের কুখ্যাত দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ। পাশাপাশি পরেশ বড়ুয়াসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালানকারীর সঙ্গে সংযুক্ত। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে এ বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা ও তাদের অবহিত করা। রিফুজি হিসেবে লন্ডনে বসে তারেক প্রকাশ্যে রাজনীতি না করতে পারলেও এই জঙ্গী তৎপরতায় গোপনে জড়িত থাকবে। জড়িত থাকবে আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালানে। যে অস্ত্র বাংলাদেশের ও ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘেœর কাজে ব্যবহার হবে। এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের কালক্ষেপণের কোন সময় নেই। দ্রুতই তাকে কাজ করতে হবে। ব্রিটিশ সরকার যাতে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয় সেই ব্যবস্থাই সরকারকে করতে হবে। এ মুহূর্তে যে পথে এগোলে ভাল হয়, সে পথে সরকারকে এ বিষয় নিয়ে এগুতে হবে। সরকার যদি মনে করে আপাতত ওখানে তারেক রিফুজি হিসেবে থাকুক, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তার সকল কর্মকা- কঠোরভাবে মনিটর করবে। সরকার সে পথে এগোতে পারে। যদি মনে করে যে, তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দ্রুত ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন সেটাও করতে পারে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, ৭২-এ গোলাম আযম লন্ডনে বসে যে কাজ করেছে ’১৫-তে তারেক লন্ডনে বসে যেন সেই কাজ না করতে পারে। অন্যদিকে, গত দুই মাসে দেশে গণহত্যা চালানোর ফলে এখন বিএনপির অবস্থা কি সেটা বিএনপি নেতাকর্মীদেরও সহজে বোঝা উচিত। এখন তারেক রিফুজি, লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করা ছাড়া তার আর কিছু করার নেই। অন্যদিকে নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, এখন খালেদা শুধু জনবিচ্ছিন্ন নয়, স্বেচ্ছাবন্দী। কিন্তু এতে সরকারের উৎসাহিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ, সরকারের ঘাড়ে এখন গুরুদায়িত্ব। সরকারকে অবিলম্বে অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করার ও মানুষের জীবনযাত্রা শতভাগ স্বাভাবিক করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পশ্চিমা কূটনীতিকরা এখন একটিই অজুহাত দেখাচ্ছে, তাদের দেশের অর্থায়নে যে সব প্রকল্প চলে গত দুই মাস তারা সঠিকভাবে তা পরিদর্শন করতে পারছে না। যদিও বিষয়টি শতভাগ সঠিক নয় তারপরেও কোন কোন ক্ষেত্রে কিছুটা সত্যও বটে। তাই এ অবস্থার দ্রুত অবসান ঘটাতে হবে। যদিও সরকারের জন্য একটু সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশ এত বড় জঙ্গীবাদের কবলে এই প্রথম পড়েছে। তবে বাস্তবে এটা কিন্তু প্রথম নয়, ২০১৩-তে নির্বাচন ঠেকানোর নামে তারা এ কাজই করেছিল। নির্বাচনের পর পরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আজ দেশ এখানে আসতো না। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম তাদের সংশোধন হবে, তাই আমরা উন্নয়ন কাজে মন দিয়েছিলাম।’ প্রধানমন্ত্রীকে শতভাগ বিশ্বাস করতে হবে- খালেদা, তারেক ও জামায়াত আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদের বাংলাদেশের অংশ। এরা কোন রাজনৈতিক শক্তি নয়। এই জঙ্গীদের বাইরে এ দেশে নতুন ডানপন্থী রাজনৈতিক শক্তি তৈরি হতে হবে। বিদেশীদের কাছেও এ সত্যটি তুলে ধরতে হবে। দেশের মিডিয়া যাতে এ সত্য উপলব্ধি করতে পারে সে পথেই এগোতে হবে। ভবিষ্যতের জন্যে সরকারকে কাউন্টার টেরোরিজম অর্গানাইজেশন ও ফোর্সগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্যে আন্তর্জাতিক এক্সপার্টের সহায়তা নিতেই হবে। তবে এ মুহূর্তে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্যে আর বেশি কালক্ষেপণ উচিত হবে না। যত দ্রুততম সময়ে হোক স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্যে যা যা করা দরকার সেগুলো করার সময় মনে হয় এখন এসে গেছে। বেশি দীর্ঘায়িত করা সঠিক হবে না। লোহা তপ্ত থাকতে থাকতেই প্রয়োজনীয় অস্ত্র গড়তে হয়।
বিষয়: বিবিধ
৬৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন