বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: পাহাড়ের অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে বিশ্ব শান্তির অগ্রকপোত
লিখেছেন লিখেছেন আমি অরন্য ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:০৭:২৪ বিকাল
শুরু সত্তর দশকের শেষার্ধে। নিজ দেশের এক দশমাংশ ভূখণ্ড বিদেশী ষড়যন্ত্রে পরিচালিত বিচ্ছিন্নতাবাদের আঘাত থেকে রক্ষা করা, জাতিগত দাঙ্গার হাত থেকে নিজ দেশের মানুষের নিরাপত্তা বিধান, অনগ্রসর এলাকায় উন্নয়ন ও অগ্রগতির আলোর মশাল প্রজ্জলনের মিশন নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পাঠানো হয়েছিল দূর্গম, বিপদ সঙ্কুল, মৃত্যু উপত্যকা পার্বত্য চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও সেবা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম দিয়ে একদিকে অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির অভয় পরিবেশ সৃষ্টি করে, অন্যদিকে সেবা ও শান্তির মিশনে সেখানে উন্নতি ও অগ্রগতির আলোয় উদ্ভাসিত করে। অনেক ঘামে, অনেক শ্রমে, এমনকি বহু জীবনের বিনিময়েও দেশের সার্বভৌমত্বক অটুট রাখতে শান্তি ও সেবার মিশন থেকে বিরত হয়নি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যার প্রমাণ, আজও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম। যার প্রমাণ এক সময়ের বাংলাদেশের সবচেয়ে দূর্গম ও অনিরাপদ পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ পর্যটকদের প্রবল আকর্ষণীয় স্থান। ফলে তাদের সেই সাফল্যের সংবাদ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও। অশান্ত বিশ্বের কোণে কোণে শান্তির কপোত হওয়ার ডাক আসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সংবিধান ও সরকরের সম্মতিতে দেশে অর্জিত অভিজ্ঞতা বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্জিত শান্তিরক্ষা ও সেবার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, দীক্ষা কাজে লাগিয়ে জয়লাভ করে বিশ্ববাসীর মন। ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে সবচয়ে বড় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশ। তারপরও এ মাসে আরো ৬০০ নতুন সৈন্য সরবরাহের আহ্বান এসেছে জাতিসংঘের কাছ থেকে। শুরুটা ১৯৮৮ সালে। শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সব সময়ই বিশ্ব নিরাপত্তা ও শান্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ দেশের সংবিধানকে সামনে রেখেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় বিশ্বশান্তি ও সংহতি জোরদার করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের প্রতিটি ডাকে সাড়া দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যদের পদচিহ্ন সারা বিশ্বে। পূর্ব তিমুর থেকে হাইতি, ক্রোয়েশিয়া থেকে নামিবিয়া, এমনকি শীতার্ত ইউরোপ থেকে উষ্ণ পূর্ব এশিয়া এবং সাহারার মরুপ্রান্তরেও এ দেশের শান্তিরক্ষীরা বিচরণ করেছেন। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন এ দেশের সেনারা। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ১৯৮৮ সাল থেকে। ওই বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ জন অফিসার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইরান-ইরাক (UNIMOG)-এ সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে মিশন সম্পন্ন করেন। এরপর অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সুনামের সঙ্গে জাতিসংঘের সবচেয়ে বেশি সেনা প্রদানকারী দেশের স্বীকৃতি লাভ করে। বিশ্বের ৪০টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক লাখ সাত হাজার ৪৮৭ জন সদস্য অংশ নেন। শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা মোতায়েনের সংখ্যার বিচারে প্রায় এক যুগ ধরেই বাংলাদেশ শীর্ষ চারটি দেশের মধ্যে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। বর্তমানে ছয় হাজার ১৬৩ জন সেনা শান্তিরক্ষী নিয়ে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বর্তমানে সাতটি দেশে চলমান সাতটি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত। প্রতিটি মিশনে এ দেশের নারী অফিসাররা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় অংশ নিচ্ছেন। ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা নীল হেলমেট মাথায় নিয়ে প্রচণ্ড সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অসামান্য সাফল্যের ইতিহাস তৈরি করেছেন।
বিষয়: বিবিধ
১০২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন