সেনাবাহিনীর অজানা কথা (পর্ব – ১)
লিখেছেন লিখেছেন আমি অরন্য ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৫:২২:১৩ বিকাল
“বাংলাদেশ সেনাবাহিনি সব খেয়ে ফেলল। দেশের মানুষের ট্যক্সের টাকায় উনারা ফুর্তি করে বেড়াচ্ছেন। জাতিসংঘ মিশনে গিয়ে টাকা আর টাকা। এই দেশে সেনাবাহিনি দিয়ে কি হবে”? বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। যার মধ্যে অনেক কিছু কিছু আমরা জেনে বলি, আবার অনেক কিছু না জেনে বলি। আজকের আমার লেখাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের প্রচলিত ভুল ধারনা গুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা:
১। আমাদের অনেকেরই ধারনা আছে সেনাসদস্যরা বেসামরিক লোকজনকে ব্লাডি সিভিলিয়ান বলে গালি দেয়। আমি হলফ করে বলতে পারি এটা সেনাবাহিনি সম্মন্ধে জানা আমাদের প্রথম ভুল ধারনা। সেনাকর্মকর্তারা কোন বেসামরিক নাগরিককে ব্লাডি সিভিলিয়ান বলে গালি দেয় বলে আমি আজ পর্যন্ত শুনিনি। আপনাদের কাউকে কখনও দিয়েছে? তবে হ্যাঁ তারা ব্লাডি সিভিলিয়ান যে বলেনা তা নয়, বলে নিজেদেরকেই বলে। একটু খোলাসা করে বলি; যখন কোন সেনাসদস্য প্রশিক্ষন বা কোন কর্মকাণ্ডে ইচ্ছাকৃত দূর্বলতা বা ফাঁকিবাজি প্রদর্শন করে তখন তাকে অনেক রকম গালি দেওয়া হয়। ব্লাডি সিভিলিয়ান হল তার মধ্যে একটি। যা একান্তই তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এতে আমাদের সিভিলিয়ানদের কিছু যায় আসেনা। যেমন আমরা কোন সেনাসদস্যদের হাটুর বুদ্ধির লোক বললে তাদের কিছু আসে যায়না।
২। আমাদের অনেকের ধারনা আছে সেনাকর্মকর্তারা খুব একটা শিক্ষিত না, তারা এইচ এস সি পাশ করে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে, তাই তাদের বুদ্ধি বা জ্ঞান হাটু স্থানীয়। এখানে উল্লেখ্য যে ছাত্রটি বুয়েট বা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয় সেও কিন্তু এইচ এস সি পাশ করার পরে আমাদের প্রথাগত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহন না করে প্রফেশনাল শিক্ষা গ্রহন করে। তাই বলে কি একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারকে আমরা শুধুমাত্র এইচএসসি পাশ বলব? সেনাকর্মকর্তারা অনেকেই আছে যারা বুয়েট বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ভাল সাবজেক্ট এ সুযোগ পেয়েও সেনাবাহিনীতে যোগদান করে থাকেন। সেনাসদস্যদের ৩ বছর মেয়াদী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করতে হয়। সাফল্যের সাথে সামরিক শিক্ষা ও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরেই কেবল একজন সদস্য অফিসার হিসাবে কমিশন লাভ করে। এখনেই শেষ নয়। সেনাসদস্যরা তাদের কর্মজীবনে দেশে ও বিদেশে অসংখ্য কোর্স বা প্রশিক্ষনে অংশগ্রহন করে থাকেন। ই এম ই, ইঞ্জিনিয়ার্স, সিগন্যালস কোরের অফিসার গন বুয়েট, বি আই টি বা এম আই এস টি থেকে যথাক্রমে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পুর কৌশল এবং কম্পিঊটার কৌশলে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। অর্ডন্যন্স কোরের অফিসারগন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা লেদার টেকনোলোজিতে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে। তাছাড়া অসংখ্য সেনাকর্মকর্তা নিজ চেষ্টায় নিজের টাকা খরচ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসন, অর্থনীতি,ইংরেজী, রাষ্ট্র বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে থাকেন। অনেক সেনাকর্মকর্তাকে জানি যারা বিভিন্ন বেসরকারী বিশববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। হাটুতে বুদ্ধি থাকলে এগুলো সম্ভব হতো বলে আমার মনে হয়না। তাই সেনা অফিসারদের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের পূর্বে এ ব্যাপারে আমাদের নিজেদের শিক্ষাটা ভাল করে যাচাই করে নেওয়ার দরকার আছে।
৩। সেনানিবাসের হাইরাইজ বিল্ডিং গুলো দেখে অনেকের ধারনা সেনাসদস্যরা বুঝি খালি সরকারী বাড়ী পান। মোটেও না। বাংলাদেশে সকল সরকারী চাকরীজীবীরাই সরকারী বাসস্থান পান। অনেকেই সেনাবাহিনীতে অফিসার আর সৈনিকের মাঝে বৈষম্যের কথা বলেন। আমিও বলতাম। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি যার যেমন যোগ্যতা সে অনুযায়ীই সে সুযোগ সুবিধা পাবে। এটা নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কোন কারন নেই। সব খানেই এ ব্যাপারটা আছে। গ্রামীন ফোনের একজন এন্ট্রী লেভেল অফিসার আর একজন মিড লেভেল অফিসার কি সমান সুবিধা পেয়ে থাকেন? বা একটি ব্যাংকের ম্যানেজার আর সিকিউরিটি গার্ড কি সমান সুযোগ সুবিধা পায়? তাই এসব নিয়ে কথা বলার আগে আমাদের আরও জানার দরকার আছে।
বিষয়: বিবিধ
২৯৬৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন