কাঞ্চণ

লিখেছেন লিখেছেন শহীদুল ইসলাম অর্ক ২০ জুলাই, ২০১৫, ০১:৩৮:২৯ দুপুর

আমি যখন দিনাজপুরে পৌঁছাই তখন রাত তিনটা। রাতের বাস আমাকে ও আর কয়েকজনকে স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। জমাট কৃষ্ণপক্ষ। টিমটিমে হারিকেন জ্বালিয়ে দুজন রিকশাওয়ালা দাড়িয়েছিল। মাঝবয়েসি লোকটা কালিতলা যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করে স্ত্রী সহ মেয়েকে নিয়ে রিকশায় উঠল। এবার আমি একা।আরেক রিকশাওয়ালা বৃদ্ধ শীতে কাঁপছিল। আমি প্রশ্ন করলাম-চাচা,পিটিআই মোড় যাবেন?

-যাব।

-আচ্ছা চলেন।

আমি রিকশায় উঠে বসলাম। আমার সাথে একটা ব্যাগ। ঢাকায় যখন আমাকে বাসে তুলে দিতে এসে কামাল বলেছিল-দিনাজপুর জায়গাটা ভাল না। ডাকাত আর ছিনতাইকারীর অভয়ারণ্য। সাবধানে থাকিস। ঐ কথা ভেবে আমি বেশ থ্রিল অনুভব করলাম। অনেকদিন আগে একটা বিদেশী হরর নভেলের কাহিনী মনে পড়ল। গল্পের নায়ক শেষরাতে অচেনা একটা জায়গায় এসে এরকম রিকশা ভাড়া করে যাচ্ছিল। কিন্তু সেই রিকশাওয়ালা তাকে পিশাচের আস্তানায় নিয়ে যায়। শহরের মধ্য দিয়ে রিকশা চলছিল। সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। লোডশেডিং চলছে মনে হয়। আলোহীন শহরটাকে বড় রহস্যময় বলে মনে হয়।

রিকশা বাম দিকে টার্ণ নিল। এটা গলিপথ। রিকশাওয়ালা আমাকে শেষমেষ ছিনতাইকারীর হাতে তুলে দেবে না তো? অনেক সময় এরকম ঘটনা ঘটে। একটু এগিয়েই বামে নজরে এল সাইনবোর্ড। “সূঁইহাড়ি কবরস্থান”। সর্বনাশ! আমি ভাল করে তাকালাম। সত্যিই বিরাট এক কবরস্থান। রিকশাওয়ালা চাচাকে জিজ্ঞাসা করলাম,“চাচা,পিটিআই মোড় কতদূর? রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে নেমে পড়ল।

-এটাই পিটিআই মোড়।

-তো, চাচা, অরিজিন ছাত্রাবাসটা কোনদিকে? আমি ওখানে যাব। ওখানে আমার এক মামা থাকে।

-তাতো বলতে পারব না বাবা। এখানে অনেক মেস। কোনটা যে অরিজিন, কেমনে বলব?

-তা ঠিক। তো চাচা আপনি ধীরে ধীরে চালান। আমি একটু দেখি।

-আচ্ছা।

প্রায় পৌনে এত ঘন্টা খোঁজাখুজির পর মেস পেলাম। বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা আমাকে অনেক সাহায্য করল মেস খুঁজে পেতে। আমি তাকে বকশিশসহ ভাড়া দিলাম।

২.

-এত রাতে কিভাবে আসলা তুমি!

মামা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন। উত্তরে আমি হাসলাম।

ধরমর করে ঘুম থেকে উঠে তিনি বিছানায় বসেছেন। লুঙ্গিটাও ঠিকমত পড়তে পারেননি। তার চোখে বিস্ময়।

-না, মানে জাগয়াটা ভাল না। প্রায়ই ছিনতাই হয়।

তার কথায় আমি আবারও মৃদু হাসলাম।

মামা বিছানা থেকে উঠলেন। আড়মোড়া ভেঙ্গে আমাকে রাতে ভিজিয়ে রাখা ছোলা খাব কিনা তা জিজ্ঞাসা করলেন। কাঁচা ছোলা আমি কখনও খাইনি। কেমন স্বাদ জানিনা। একটি নিয়ে মুখে দিলাম। কামড় দিতেই হড়বড় করে বমি আসতে চাইল। আমি তৎক্ষণাত মুখ থেকে ফেলে দিলাম। আমার বাবার জন্মে এত খারাপ জিনিস আমি মুখে দিয়েছি বলে মনে হয় না। মামা নির্বিকারভাবে ছোলা খাচ্ছেন। আমাকে বললেন-এখন ঘুমাও, নয়টার সময় ক্যাম্পাসে যাব”।

আমি দিনাজপুর এসেছি মূলত ভর্তি পরীক্ষা দিতে। মামা এখানে পদার্থবিজ্ঞানে পড়ছেন। আমারও ইচ্ছা পদার্থবিজ্ঞানে পড়ার। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাবিব। সে এখানে একাউন্টিং এ ভর্তি হয়েছে। সেই মূলত আমাকে এখানে ভর্তি হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আর মামা আসলে হাবিবের। মামার সাথে আজই আমার এভাবে সাক্ষাত ও পরিচয়।

৩.

ক্যাম্পাসে এসে জানলাম আজ পরীক্ষা হবে না। এক সপ্তাহ পর হবে। তখন সকাল ১০ টা। এখন কী করি? ইতোমধ্যে কয়েকজন পরীক্ষার্থীর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। ঠাকুরগাঁর এক ছেলের সাথে আমার বেশ খাতির জমে গেল। সেই প্রস্তাব করল-চল, কোথাও ঘুরতে যাওয়া যাক। প্রস্তাবটা চমৎকার। আমি মামাকে জিজ্ঞাসা করলাম-মামা, কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়?

মামা বললেন-পশ্চিমে একটা নদী আছে, পূবে আছে রাজবাটি, উত্তরে আছে কান্তজীর মন্দির, আর দক্ষিণে রামসাগর। কোথায় যাবে তোমরা?

আমার তো সবখানে যেতে ইচ্ছে করছে। ভাবলাম যেহেতু ভর্তি হবই, সবখানেই যাওয়া যাবে। আজ কাছাকাছি যেটা হবে সেটাতেই যাই।আমি বললাম-

-এখান থেকে সবচেয়ে কাছে কোনটা?

মামা বললেন, নদী।”

-তবে চলেন, নদী দেখতে যাই।

হাটতে হাটতে আমি জীবনানন্দ আবৃত্তি করলাম-

নদী,তুমি কোন কথা কও?

অশ্বথের ডালপালা তোমার বুকের পরে পড়েছে যে

জামের ছায়ায় তুমি নীল হলে

আরও দূরে চলে যাই

সেই শব্দ, সেই শব্দ পিছে পিছে আসে।

নদী না কি?

নদী, তুমি কোন কথা কও?

নদী দেখতে যাওয়া দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মামা। বাকিরা সবাই নতুন এ শহরে। আমি প্রশ্ন করলাম-

এ নদীর নাম কি?

ভীড় থেকে কেউ একজন বলল-কাঞ্চণ”

আহ্‌ কাঞ্চণ, মানে সোনা। নদী তো সোনাই। আমার সারা সত্তায় তখন গুঞ্জরিত নাম- কাঞ্চণ, কাঞ্চণ। গ্রামের পথ ধরে হাটতে হাটতে দূর থেকে উঁচু, দীর্ঘ বাঁধ রাস্তা ও তার উপরে সারিবদ্ধ গাছপালা দেখে মন আকুল হয়ে উঠছিল। রাস্তায় উঠে পড়লাম। দুধারে সবুজায়ন। ডানে নদী। শীর্ণা স্রোতস্বীনি| এ যেন পাতলা কিশোরী এক। মনে মনে ডাকলাম তাকে।

কেমন আছ কাঞ্চণ?

লজ্জা পেল যেন সে। মৃদু হাওয়ায় নৌকার পাল ফুলে উঠল। পূর্বাহ্নের রোদে ঝিকমিক করছে জল। নদীর পাড়ে বড় বড় পাথর ফেলান। কোন কোন পাথর রঙিন। দু’চারটে নৌকাও দেখলাম বেশ নকশা করা, রংচঙে।

বিষয়: সাহিত্য

৯৯৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330788
২০ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০১:৫৫
হতভাগা লিখেছেন :
আমি দিনাজপুর এসেছি মূলত ভর্তি পরীক্ষা দিতে।


০ দিনাজপুরে কি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে ? কবে থেকে চালু হয়েছে ?

কান্চন কি ফারাক্কা বা তিস্তার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File