কাঞ্চণ ( বাকি অংশ)

লিখেছেন লিখেছেন শহীদুল ইসলাম অর্ক ২০ জুলাই, ২০১৫, ০২:১০:৪৯ রাত

পাল তুলে যাচ্ছে নৌকা। শূণ্যে বিহঙ্গের ডানা ঝাপটানো। একটা বড় পাথরে বসলাম।ঐ দূর দিগন্তে কিশোরীর চলে যাওয়া। বুকের মধ্যে হাহাকার করে উঠে। আমি তাকে ডাকলাম-কাঞ্চণ, কাঞ্চণ।” বেনী দুলিয়ে চলে যায় সে। আমার ডাক শোনে না। আকাশের স্বচ্ছ নীলে সাদা মেঘ। মৃদু হাওয়া। পৃথিবীটাকে বড় সুন্দর বলে মনে হয়। মনে মনে বললাম- তোমাকে পেয়েছি কাঞ্চণ। আমার আর কোন দুঃখ নেই। সেই দিন থেকে স্বপ্নে ঘুমে জাগরণে আমি কাঞ্চণকে দেখি। লাল মাটির পথ হেটে গিয়ে তাকে ছুঁয়ে আসতে ইচ্ছে করে সারাক্ষণ। জলের শব্দে সে আমাকে কী যেন বলে। আমি তার সবটুকু বুঝিনা। আমি তাকে ভালবাসার কথা বলি। কিন্তু সে শুধু খিলখিলিয়ে হাসতে ভালবাসে, বেনী দুলিয়ে চলে যেতে ভালবাসে। আর আমি হৃদয় দিয়ে ডাকি সমস্তদিন। কাঞ্চণ, কাঞ্চণ।

৪.

আমি ভর্তি হলাম পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে কলেজ যাই। বিকেল হলেই মনটা শুধু কাঞ্চণের কাছে যেতে ইচ্ছে করে। এখন বেশিরভাগ সময় আমাকে সঙ্গ দেয় হাবিব। সে আমার রুমমেটও। মামার সাথে আর বেশি যাওয়া হয় না কোথাও। মামা আমাকে কাঞ্চণের সাথে পরিচয় করে দিয়েছেন। তাই মাঝে মাঝে মামাকে ডাকি। মামা ব্যস্ততা দেখান। এরপর হঠাৎ একদিন মামা রাজি হলেন। মামা বললেন-এবার চল, অন্য রাস্তায় তোমাদের নিয়ে যাই। আমি এ পথে যাইনি কখনও। তাই খুব উৎসাহী হলাম। আমি মামা আর হাবিব হাটতে হাটতে বহুদূর পথ পেরিয়ে শেষমেশ ছোট্ট একটা বাজারে পৌঁছলাম। এরপর উঁকি দিয়ে দেখি নদী। বুকটা ভরে গেল কাঞ্চণকে দেখে। কিন্তু আমরা খুব ক্লান্ত ছিলাম, ক্ষুধার্তও। হাবিব প্রস্তাব করল জলখাবারের। আমরাও সাড়া দিলাম। খাওয়া শেষ করে পা বাড়ালাম। উঁচু বাঁধ রাস্তায় উঠেই চোখে পড়ল মাইলফলক। আমার দৃষ্টি আটকে গেল মাইলফলকে। দেখার সাথে সাথে আমার মাথা ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল। আমি চিৎকার করলাম। হাবিব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল- কি সমস্যা? আমি তাকে মাইলফলকটি দেখালাম। সেখানে লেখা- নদীর নাম পূণর্ভবা” প্রিয়াকে হারানোর বেদনায় প্রেমিক যেমন শোকে কাতর হয়, আমার অবস্থা ছিল তেমনি। হাবিব আর মামা আমাকে শান্তনা দিতে লাগলেন। আমি বেশ কয়েকজনকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম-ভাই এ নদীর নাম কি? সকলে উত্তর দিল পূণর্ভবা। তাহলে আমি তাকে কাঞ্চণ বলে জানলাম কেন? আমার খাতায় অসংখ্য প্রেমপত্র কাঞ্চণকে নিয়ে লেখা। কাঞ্চণ তুমি কোথায়? সেই রাতে আমার ঘুম ভাল হল না। সারা রাত নদীটিকেস্বপ্নে দেখলাম। তার জলের শব্দ শুনলাম। একা একা হাটলাম তীরে। তাকে ভালবাসার কথা বলতে গিয়ে কাঞ্চণ বলেই ডাকলাম। সে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। আর তখনই ঘুম ভেঙ্গে গেল। জানলা দিয়ে বাইরে তাকাই। দেখি পূবের আকাশ ফর্সা হয়ে উঠেছে। পাখি ডাকছে। বুকের উপর চেপে বসা গতকালের সেই ব্যথাটি আর নেই।

বিষয়: সাহিত্য

৯৬৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330736
২০ জুলাই ২০১৫ রাত ০২:৩২
মাটিরলাঠি লিখেছেন : নদীটির দিনাজপুর শহরের অংশের নাম কাঞ্চন। মূল নাম পূণর্ভবা। ঢেপা ও পূণর্ভবা নদী একত্রে মিলিত হয়ে, এই মিলিত ধারা দিনাজপুর শহরের উত্তর-পশ্চিম পাশ থেকে দক্ষিণে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত কাঞ্চন নামে বয়ে গেছে। কাঞ্চন নদীর উপরে সড়ক সেতু (দিনাজপুর শহর ও পার্শ্ববর্তী বিরল থানা সংযোগ সেতু) পশ্চিম পাড়ের নাম কাঞ্চন ঘাট (ব্রীজ তৈরীর আগে এখানে বর্ষা কালে নৌকা দিয়ে পারাপার করতে হতো)। ধারণা করা হয়, এই কাঞ্চন ঘাট থেকেই নদীটির নাম কাঞ্চন হয়েছে।

পূর্বের পর্বে এ শহরে চুরি ছিনতাই হয় বলে একটা নেগেটিভ ইম্প্রেশন দিয়েছেন। দিনাজপুর শহর এখনো অত নেগেটিভ হয় নাই ভাই।

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck


মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File