দাজ্জালের বাম ও ডান চোখ এবং দাজ্জালের কপালে 'কাফের' শব্দের রূপকার্থ

লিখেছেন লিখেছেন রাজ্পুত্র ২৬ মে, ২০১৬, ১১:৩৫:০৪ রাত



প্রাথমিক ভাবে দাজ্জালকে উপস্থাপন করার পর, আমরা এখন দাজ্জাল এবং তার প্রতীকি বা সংকেত সম্পর্কে আলোচনা করি। দাজ্জাল যে বিশ্ব শাসন করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে, তার সেই কৌশল সম্পর্কে জানতে হলে, এই হাদীস সম্পর্কে জানতে হবে।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,

“প্রত্যেক নবী তাদের উম্মতদের দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। হযরত নূহ (আঃ)-ও তাঁর উম্মতদের দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি এমন কিছু বলবো যার সম্পর্কে এর আগে কেউ বলেননি। দাজ্জাল তার বাম চোখ দিয়ে দেখে। তার ডান চোখ অন্ধ, দেখতে ফোলা আঙ্গুরের মতো মনে হবে। তবে তোমাদের প্রভু এক চোখা নন।

তার দু’চোখের মাঝখানে, কপালে লেখা থাকবে ‘কাফের’ (অবিশ্বাসী)। প্রত্যেক মুমিন এই ‘কাফের’ শব্দ পড়তে পারবে; এই মুমিন শিক্ষিত হোক বা অশিক্ষিত হোক”।

(সহীহ্ মুসলিম)

এই মুমিন লেখা-পড়া জানুক বা নাই জানুক, তবু সে ‘কাফের’ শব্দটি পড়তে পারবে। আমরা এই হাদীসের রূপকার্থ সম্পর্কে অনেকবার ব্যাখ্যা দিয়েছি। যেহেতু অনেকেই এ সম্পর্কে এখনও সরাসরি আমার কাছ থেকে শুনেনি, তারা কেবল ইউটিউব এর মাধ্যমে আমার লেকচার দেখেছেন। আমাকে আবারও এই হাদীসের ব্যাখ্যা দিতে হবে।

শুধু একজন মুমিন (ধরে নেয়া যাক) হযরত আলী (রাঃ) এই ‘কাফের’ শব্দটি পড়তে পারবেন কেন? এবং (ধরে নেয়া যাক) আবু জেহেল ‘কাফের’ শব্দটি পড়তে পারবে না। আবু জেহেলের চোখে কি কোন সমস্যা রয়েছে যার কারনে সে ‘কাফের’ পড়তে পারছে না? আমরা তাকে চোখ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়ে দেই। তার চোখ পরীক্ষা করে চোখের ডাক্তার রিপোর্ট দিলেন যে, তার দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক। কিন্তু তার দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হয়ে থাকলে কেন সে দেখতে পায় না? কেন হযরত আলী (রাঃ) দেখতে পান, অথচ আবু জেহেল দেখতে পায় না? এর কারন কি হযরত আলী (রাঃ) বাইরের চোখ দিয়ে দেখছেন না? আমাদের কি বাইরের চোখ ছাড়াও অন্য চোখ রয়েছে? আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলবে, ‘এসব একদম বাজে কথা’। অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, হার্ভাড, স্ট্যানফোর্ড এর মতো বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বলবে, ‘এসব বাজে কথা, বাইরের চোখ দু’টিই আমাদের একমাত্র চোখ। এগুলিই একমাত্র চোখ যার মাধ্যমে আমরা বাহ্যিক দৃষ্টির জ্ঞান লাভ করতে পারি। এই দু’চোখ ছাড়া আমাদের অন্যকোন চোখ নেই। তাই এই পথ ধরে জ্ঞান অর্জন ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই’। জ্ঞানের এই বিভাগকে বলা হয় 'এপিস্টিমলোজি'। লম্বা শব্দ শোনে আপনারা ভয় পাবেন না। আর এটা হচ্ছে পাশ্চাত্যের 'এপিস্টিমলোজি', বাইরের চোখই একমাত্র চোখ।

কিন্তু কোর’আন বলে, বাইরের দু’চোখ ছাড়াও, অন্তর ও দেখতে পায়। অতএব কোর’আন এর রয়েছে ভিন্ন 'এপিস্টিমলোজি'। অন্তর দেখতে পায়। কিন্তু অন্তর তখনই দেখতে পায় যখন আল্লাহ্ অন্তরে নূর ঢেলে দেন। এবং এ সম্পর্কে আগেও বলেছি যে, স্টক মার্কেট থেকে নূর কেনা যায় না।

“আল্লাহ্ তাকেই নূর দিয়ে পথ প্রদর্শন করেন যাকে তিনি পছন্দ করেন।”

আল্লাহ্ যখন অন্তরে নূর ঢেলে দেন, অন্তর তখন দেখতে পায়। আর যখন অন্তরে নূর থাকে না, কোর’আন এ সম্পর্কে কি বলে শুনুন, বেশ কঠিন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন,

“ তাদের চোখ থাকলেও তা দিয়ে তারা সত্যকে দেখে না, তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা সত্য বাণী শোনে না। ওরা পশুর মতো; বরং তার চেয়েও বেশী পথভ্রষ্ট; নিশ্চয়ই তারা উদাসীন।" (৭:১৭৯)

এটা কঠিন ভাষা। “বরং তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট”। যারা চোখ থাকতেও অন্ধ, তারা পশুর চেয়েও পথভ্রষ্ট। তাই এখন অন্তত আমি এই সিদ্ধান্তে পৌছতে পারবো আর আপনাদের ভেবে-চিন্তে দেখতে হবে কোন্ সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেন,

যখন দাজ্জাল তার বাম চোখ দিয়ে দেখে, সে বাহ্যিক দৃষ্টি থেকে দেখছে। আর দাজ্জাল যখন ডান চোখ থেকে অন্ধ, অন্ধ ডান চোখটি রূপকার্থে অভ্যন্তরিন অন্ধত্ব। এটাই আমার ব্যাখ্যা। আপনাদের তা গ্রহণ করতে হবে না। গ্রহণ করার পূর্বে আপনারা আস্বস্ত হতে হবে যে, আসলেই এটা সঠিক কিনা। তাই আপনাদের আরেকবার সতর্ক করে দিলাম।

এখন আমরা মুখোমুখি হয়েছি দাজ্জালের রূপক বা প্রতিকীর এক জগতে। যারা দাজ্জালকে অনুসরণ করবে, তারা হবে ভেতরের দিক থেকে অন্ধ। পৃথিবী জুড়ে আজ অনেক গবাদি পশু, এটুকু বলতে পারি। আর আজকের লেকচার থেকে কিছু প্রমাণও আপনারা পাবেন। দাজ্জালের বাম চোখ বলতে, এপিস্টামলোজি বোঝায়। তার বাম চোখ হচ্ছে বাইরের চোখ। তার অন্ধ ডান চোখ হচ্ছে, ভেতরের অন্ধত্ব। যারা চোখ দিয়ে দেখতে পারে কারন তাদের অন্তরে নূর রয়েছে, তারা দাজ্জালের কপালে ‘কাফের’ লেখাকে চিনতে পারবে।

যখন দাজ্জাল জেরুজালেম থেকে মানুষের আকৃতিতে ২০ থেকে ৩০ বছর পর উপস্থিত হবে, এবং ঘোষণা দেবে যে ‘আমি সেই মসীহা’, আপনারা যদি তার কাছে যান, তার কপালে কি ‘কাফের’ লেখা দেখতে পাবেন? না পাবেন না। তাই যারা প্রটেস্টান্ট ইসলামকে অনুসরণ করেন, তারা সবকিছুর আক্ষরিক অর্থকেই মেনে নেন, তারা হয়তো দাজ্জালের খুব কাছে গিয়ে তার কপালে টর্চ লাইটের আলো দিয়ে চেক করবে সেখানে কোন ধুলো আছে কিনা, তার কপাল মুছে বলবে, “না আমরা তো কোন ‘কাফের’ লেখা দেখতে পাচ্ছি না। তুমি দাজ্জাল হতে পারো না। আর তুমি দাজ্জাল নও, কারণ তোমার দু’চোখ রয়েছে”। আমি বা আপনারা কেউই প্রটেস্টান্ট ইসলামকে উপহাস করছি না। আমরা শুধু তাদের বার বার একই কথা বলার চেষ্টা করছি, তাদেরকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছি যে, আপনাদের তরিকা ভুল, আপনাদের ভ্রান্ত ধারনা।

এই ‘কাফের’ লেখাটি আক্ষরিক নয় বরং এটি হচ্ছে প্রতিকী। এটি হচ্ছে; দাজ্জাল যা কিছু সৃষ্টি করে, একজন মুমিনকে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। উদাহরণ সরূপ, সে সৃষ্টি করেছে একটি সভ্যতা, যার নাম হচ্ছে, আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা। এবং একজন মুমিন এই আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা দেখে চিনতে পারবে যে, এই সভ্যতার ভিত্তি হচ্ছে ‘কুফর্’, ঠিক যেভাবে কাফের লেখা থাকার কথা তার কপালে।

-আল্লামা ইমরান নযর হোসেন

অনুবাদ: দ্বীনুজ্জামান চৌধুরী

আবু মুনতাহা-Click this link

বিষয়: বিবিধ

১৮৫০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370232
২৭ মে ২০১৬ সকাল ০৮:২৮
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ভালোই বলেছেন আলোচক, কিন্তু বলার ধরনটা দাওয়াতী কাজের জন্য সহায়ক নয়
370237
২৭ মে ২০১৬ সকাল ১০:০০
হতভাগা লিখেছেন : আমার মনে হয় না যে পশ্চিমা সভ্যতাই দাজ্জালের প্রতীকী রুপ। পশ্চিমে তো বেশ অনেকেই ইসলামকে গ্রহণ করছে - এই সভ্যতার বিরুপ অবস্থাতে থেকেও ।

কিয়ামতের আগমনের অব্যহতি পূর্বেই তো এরকম কিছু ঘটনা ঘটতে থাকবে : ইয়াজুজ - মাজুজদের বের হয়ে আসা , পশ্চিম দিক হতে একটা হলুদ রংয়ের অদ্ভুত জানোয়ারের আগমন .... দাজ্জালের আগমন , ঈসা (আঃ) এর পুনরাগম যিনি দাজ্জালকে পরাজিত করবে ।

এসব সুষ্পষ্ট নিদর্শন আসা শুরু করলে কি তখন তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File