কবরের কাছে গিয়ে কী কী করা যাবে আর কী কী করা যাবে না!
লিখেছেন লিখেছেন রাজ্পুত্র ২৪ মে, ২০১৬, ১০:৩১:১৮ রাত
মানুষের জীবনে মৃত্যুর আগমন সুনিশ্চিত। ‘মৃত্যু অবশ্যই আসবে’ এই চিরসত্য বিষয়ে কেউ দ্বিমত প্রকাশ করেনি বা মৃত্যুকে কেউ অস্বীকার করেনি। এমনকি কাফের সম্প্রদায় আল্লাহর একত্ববাদ অস্বীকার করেছে, আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসুলদের অমান্য করেছে। আসমানি কিতাবকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। কিন্তু মৃত্যু যে সবার জন্য অবধারিত তা
অস্বীকার করতে পারেনি। তাই বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী প্রত্যেকেই এ কথায় বিশ্বাসী যে, দুনিয়ায় যে ব্যক্তির আগমন হয়েছে, একদিন না একদিন সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। মৃত্যু-বিশ্বাসী প্রত্যেকেই এ বিষয়েও একমত। এই মৃত্যু কখন কোথায় কীভাবে আসবে তা কেউ জানে না। যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যুর ডাক এসে যেতে পারে। শিশু- যুবক-বৃদ্ধ সবার তরে এ বাস্তবতা চিরসত্য, মৃত্যুর সমন কোনো অনুমতি চেয়ে এবং সময়সূচি বলে দিয়ে আসবে না। বরং মৃত্যুর খোদায়ি হুকুম সুনির্ধারিত সময়ে অতর্কিতে এসে যাবে। সুতরাং কার মৃত্যু কখন হবে, এ সম্পর্কে কোনো সঙ্কেত বা সতর্কবাণী কোনো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিতে পারেনি এবং কোনো অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীও বলতে পারেনি। এখন জানব কবরের পাশে কি করা যাবেনাঃ
@ মাজারকে সিজদা করা,
@ চুমু দেওয়া,
@ মাজারকে ভক্তি দেখিয়ে পিছন হয়ে বের হওয়া,
@ মাজারে গিলাফ চড়ানো এবং মাজারের মধ্যে টাকা-পয়সা ফেলা,
@ মাজারের সামনে গাছের গোড়ায় মোমবাতি জ্বালানো,
@ আগরবাতি জ্বালানো,
@ গোলাপ জল ছিটানো শরীয়তসম্মত কি না? কবর ইবাদত বা উপাসনার স্থান নয়। কবর সংক্রান্ত যে সব বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন (যথা যিয়ারত, সালাম ও দুআ) সেগুলো ছাড়া অন্য কোনো কিছু করা বৈধ নয়।
@ কবরকে সিজদা করা, চুমু খাওয়া, তাতে বাতি জ্বালানো-এগুলো বড় গুনাহ ও শিরকী কাজ। এ বিষয়ে শরীয়তের অনেক দলীল রয়েছে। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস বরাতসহ পেশ করা হল। সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী কতক উম্মত নিজ নবী ও বুযুর্গদের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। সাবধান! তোমরা কবরকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করছি। (সহীহ মুসলিম ১/২০১)
অন্য এক হাদীসে কবরের উপর যারা বাতি জ্বালায় তাদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (সুনানে তিরমিযী ১/৭৩)
আরেক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রা. কে এই ফরমান দিয়ে পাঠালেন যে, কোনো উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দিবে এবং কোনো মূর্তি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। (জামে তিরমিযী ১/২০৩)
ফিকহে ইসলামীর প্রসিদ্ধ কিতাব তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৪১ বলা হয়েছে, কবর মুছবে না, কবরে চুমু দিবে না এবং কবরকে স্পর্শ করবে না। কেননা, এটা নাসারাদের রীতি। (সামনে এ সংক্রান্ত আরো বরাত উল্লেখ করা হয়েছে।)
উল্লেখ্য কবরে চুমু খাওয়া, সিজদা করা, তাওয়াফ করা, কবরের উপর ইমারত বানানো, গিলাফ চড়ানো, মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো ইত্যাদি একদিকে যেমন শরীয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ, অপরদিকে তা কবরবাসী ওলীদের প্রতি চরম অবিচার। কেননা, তাঁরা পুরো জীবন শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন অথচ মৃত্যুর পর তাদরে প্রতি ভক্তি নিবেদনের নামে ওই সব কাজ-ই করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সাহাবা, তাবেয়ীন এবং ওলি-বুযুর্গদের পথ-নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের ঈমান-আমল ঠিক করা, তাওহীদ ও সুন্নাহ্কে আঁকড়ে ধরা এবং শিরক-বিদআত ও সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমেই তাদেরকে প্রকৃত সম্মান করা যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।
গ্রন্থনা ও সম্পদানা :মাওলানা মিরাজ রহমান
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন