মৃত্যুর আগে এক রোগীর লেখা চিরকূট ও কিছু প্রশ্ন: কি হচ্ছে এসব স্কয়ার হাসপাতালে

লিখেছেন লিখেছেন রাজ্পুত্র ৩০ মে, ২০১৫, ১১:১৫:৫৩ রাত



কী হচ্ছে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে? সে প্রশ্ন তুলেছে এই হাসপাতালে ১৭দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত বুধবার মৃত্যুবরণকারী এক ব্যক্তির পরিবার।

কেবল পরিবারই নয়, এই প্রশ্ন তুলে গেছেন মৃত ব্যক্তি নিজেই। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে চিকিৎসার অব্যবস্থাপনা নিয়ে নিজেই ছোট ছোট নোট লিখে যান এই রোগী।

ঠাণ্ডাজনিত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ভর্তি হওয়ার পরপরই তাকে লাইফ সাপোর্টে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য ছিলো তাকে বাঁচাতে হলে লাইফ সাপোর্ট দিতে হবে। কিন্তু এরপর ১৭দিন ওই সাপোর্টে থেকে ইন্তেকাল করেন রোগীটি।

৫১ বছর বয়সী টিঅ্যান্ডটি কর্মকর্তা ওই রোগীর মেয়ে, যিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী, বাংলানিউজের কাছে তারা বাবার লেখা ছোট ছোট চিরকূটগুলো তুলে ধরেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, তার বাবার চিকিৎসার সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা তিনি নিজেও প্রত্যক্ষ করেছেন। বারবারই তিনি বিষয়টিতে ডিউটি ডক্টর বা অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও প্রতিকার পাননি। উপরন্তু তার সঙ্গে ধমকাধমকি ও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।

বাবার মৃত্যুশয্যার পাশে থেকে তার সকল কষ্ট দেখে, চিকিৎসকদের কাছ থেকে সামান্য সেবাটুকু না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ এই তরুণী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি, একটি নামকরা, দামী হাসপাতালে স্রেফ অবজ্ঞা, অবহেলা ও অযোগ্যতার কারণে তাকে ধীরে ধীরে মরে যেতে দেখেছি। কিন্তু আমি চাই আর কারো বাবার ক্ষেত্রে, আর কারো রোগীর ক্ষেত্রে যেনো এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

অবজ্ঞা ও অবহেলার কথা বলতে গিয়ে বাবার লেখা চিরকূটগুলো দেখান এই ক্ষুব্ধ তরুণী। তিনি বলেন, বাবার লেখা চিরকূটগুলো পড়লেই বুঝা যাবে ওখানে তিনি পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছিলেন না।

অভিযোগের পাশাপাশি যারা তাকে সহযোগিতা করেছিলেন, তাদের ভালো চেয়েও চিরকূট লিখেছেন আমার বাবা। এতে নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায় তিনি যা লিখেছেন তা সত্য, বলেন তিনি।

একজন মৃত্যু পথযাত্রী রোগীর এই অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত বলেই সংবাদমাধ্যমের কাছে তুলে ধরতে চাই, বলেন ওই তরুণী।

একটি চিরকূটে তার বাবা লিখেছেন:

‘আজকি আপনাদের বন্ধ: লোক কম কেনো?

শ্বাসকষ্ট হলে কাকে জানাবো, কীভাবে জানাবো।

অন্য যেকোনো সমস্যা হলেও বা কিভাবে জানাবো।

মুখ বন্ধ থাকার কারণে আমি কথা বলতে পারি না কিন্তু আপনাদের কথা বুঝি’

আরেকটি নোটে তিনি লিখেছেন:

গতকাল ডাঃ দেখে বললো অনেক সুস্থ।

সিটিস্ক্যান রিপোর্ট ভালো।

কিন্তু আজ যে ডিউটি ডক্টর দেখলো সে ওষুধ দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ি।’

আরেকটি চিরকূটে লেখেন:

শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ছাকিং করতে হবে।

প্রতিদিন আপনারা ফিনিশিং দেওয়ার পর ঘুম হয়, আজ হচ্ছে না।

অপর একটি চিরকূট, ‘বমিটিং ভাব হচ্ছে। জরুরি ছাক করা দরকার।’

এসব চিরকূট লিখে রাখলেও কোন চিকিৎসক কিংবা অ্যাটেন্ডেন্ট তা গুরুত্ব দেয়নি। পরে মৃত্যুর আগে সেগুলো পরিবারের সদস্যদের কাছে দেন এই রোগী।

একটি চিরকূটে তিনি নিজের কিছু ব্যক্তিগত দেনা-পাওনার কথাও লিখে যান। এছাড়া হাসপাতালের তিন জনের নাম উল্লেখ করে লেখেন তারা খুব ভালো। সুস্থ হলে তাদের সাহায্য করবেন। তাদের জন্য দোয়া করেন।

রোগীর মেয়ে জানান, একদিন তিনি নিজেই কাচঘেরা কক্ষের দূর থেকে তার বাবাকে দেখতে পান হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছেন। কিন্তু কেউ সেদিকে লক্ষ্য করছে না। বাইরে দুই জন অ্যাটেন্ড্যান্ট হাসি-গল্প করছেন। তিনি ছুটে গিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তারা প্রথমে ভ্রুক্ষেপ করেননি। কয়েক মিনিট পর আবারও একইভাবে ‍হাত পা ছোড়াছুড়ি করলে আবার তাদের গিয়ে বলেন। তখন একজন ভেতরে যান এবং ফিরে এসে জানান কৃত্রিম শ্বাসের মেশিন কাজ করছিলো না, ঠিক করে দিয়ে এসেছেন।

এতক্ষণ কেনো করলেন না? সে প্রশ্ন করে পাল্টা ধমক খেয়েছেন রোগীর ছোট্ট মেয়েটি। অ্যাটেন্ড্যান্টরা তাকে বলেছেন, এটা তার দেখার বিষয় নয়।

আরেক দিন চিরকূটে শ্বাসকষ্টের কথা লেখা দেখে তিনি ছুটে যান ডিউটি চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক চিরকূট হাতে নিয়ে বলেন, ‘কিছুই পড়তে পারছি না, যান আবার লিখিয়ে নিয়ে আসেন।’

‘একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে নিয়ে চিকিৎসকের এই আচরণ স্রেফ মসকরা,’ বাংলানিউজকে বলেন মারিয়া নামের এই তরুণী।

তিনি আরও বলেন, স্কয়ার হাসপাতালে তার বাবাকে ভর্তির পরের মিনিটেই লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়। তবে প্রথম দিন ব্রিফিংয়ে জানানো হয় তার বাবার অবস্থা স্ট্যাবল। আশঙ্কার কিছু নেই। তাকে কৃত্রিম শ্বাস দিয়ে ফুসফুস বিশ্রামে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা চলছে, ফুসফুস ঠিক হলে তাকে আবার নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসে আনা হবে।

প্রথম দিকে চিকিৎসকরা তাদের সকল কনফিডেন্টের প্রকাশ দেখালেও পরে তারা আমার বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চালিয়েছেন। এমনকি তাকে সোয়াইন ফ্লুর চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে। এর কী কারণ থাকতে পারে আমি জানি না, বলেন মারিয়া।

চিকিৎসা নিয়ে আমি কোনও প্রশ্ন তুলতে চাই না, কারণ আমি চিকিৎসা জানি না, কিন্তু সেবার মান নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলতে চাই কারণ এই হাসপাতালে মৃত্যুর আগের ১৭ দিন আমার বাবা সেবা পাননি। আর আমি সেটা বুঝতে পারি, বলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের লাখ লাখ টাকার বিল আদায় করতে যতটা সক্রিয় ও সতর্ত চিকিৎসা ও সেবার বেলায় ততটাই নিষ্ক্রিয় ও অসতর্ক, বলেন তিনি।

এই হলো বড় হাসপাতালের অবস্থা। নিশ্চিতভাবে বলা যায় এদের কোন শাস্তি হবেনা!

তথ্যসূত্র:Click this link

বিষয়: বিবিধ

১৪১৮ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

323517
৩০ মে ২০১৫ রাত ১১:৩৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : তারাতো মানুষ নয়, কসাই বলতে পারেন।
৩১ মে ২০১৫ সকাল ০৯:১১
264958
রাজ্পুত্র লিখেছেন : ঠিক কইছেন ভাই।Good Luck
323522
৩১ মে ২০১৫ রাত ১২:০৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আরেক দিন চিরকূটে শ্বাসকষ্টের কথা লেখা দেখে তিনি ছুটে যান ডিউটি চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক চিরকূট হাতে নিয়ে বলেন, ‘কিছুই পড়তে পারছি না, যান আবার লিখিয়ে নিয়ে আসেন।’

রোগীরা হল মুরগী....অনেকে তাই মনে করেন
৩১ মে ২০১৫ সকাল ০৯:১৩
264959
রাজ্পুত্র লিখেছেন : চিকিতসা এখন বানিজ্য হয়ে গেছে ভাই। তাই এখানে লাভ লোকসানের হিসাব বড়। মানবতা বলতে কিছু নেই।
323583
৩১ মে ২০১৫ দুপুর ১২:৩২
হতভাগা লিখেছেন : ব্যাপারটা খুবই মর্মান্তিক ।
এসব হাসপাতাল যতটা না চিকিতসা দেয় তার চেয়ে ব্যবসা করে বেশী । রোগীর রোগের চিকিতসার সাথে আরও কিছু রোগ বাঁধিয়ে আইসিইউ তে নিয়ে গিয়ে বিল উঠায় ।

কিছু করার নেই এজন্য যে , এসব রোগের চিকিতসা আপনাকে সরকারী হাসপাতালে করাও যেত । সেখানে আপনি যাবেন না কারণ সেখানের পরিবেশ নোংরা এবং দালালের দৌরাত্ম অনেক বেশী । টাকা খরচ করে এসব হাসপাতালে আসবেন কারণ এখানে পরিবেশ সরকারী হাসপাতালের চেয়ে ভাল । তবে এটা মনে রাখবেন যে সরকারী হাসপাতালের চিকিতসা ব্যবস্থার বাইরে ওরাও আপনার চিকিতসা করতে পারবে না ।

এসব লাক্সারীয়াস হাসপাতাল আসার ফলে বাংলাদেশ থেকে বাইরে রোগী যাওয়া বেশ কিছু কমেছে । বিশেষ করে হার্টের চিকিতসা এখন ভালই হচ্ছে বাংলাদেশে ।

এমন বেশ কিছু চিকিতসা ফ্যাসিলিটি আছে যা এক্সপেনসিভ এবং তা সরকারী হাসপাতালে নেই বলেই এসব বেসরকারী হাসপাতালগুলো মানুষকে পেয়ে বসে।

লাইফ সাপোর্টে থাকা রুগী কিভাবে চিরকুট লিখতে পারে ? এটা ব্রেইনের ফাইন টিউনিংয়েরই একটা অংশ এবং সাথে হ্যান্ড মুভমেন্ট।

লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগী কোমায় তথা সেন্সলেস থাকে ।
৩১ মে ২০১৫ রাত ১০:০৪
265110
রাজ্পুত্র লিখেছেন : এসব লাক্সারীয়াস হাসপাতাল আসার ফলে বাংলাদেশ থেকে বাইরে রোগী যাওয়া বেশ কিছু কমেছে ।- এই চিকিতসা পাবার জন্য মানুষ বিদেশ যাওয়া কমিয়েছে?
০১ জুন ২০১৫ সকাল ০৯:০১
265195
হতভাগা লিখেছেন : পয়সা বেশী নিলেও লোকবল কিন্তু সেই সরকারী থেকেই আসা যারা সব সময়ই গা আলগা ভাব দিয়ে চলে তা সে যেখানেই হোক না কেন । তাই স্বভাব যাবে না মলেও ।

কোট করে যে লেখা দিলাম তার জবাব না পেলে এই বিষয়ে কোন কাহিনীই ধোপে টিকবে না ।

আপনি নিজেই ব্যাপারটা বুঝে গেছেন যে লাইফ সাপোর্ট তথা কোমায় থাকা একজন রোগী দিনের পর দিন চিরকুট লিখতে পারে না ।
323609
৩১ মে ২০১৫ দুপুর ০২:৪৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই হাসপাতালগুলি হচ্ছে ব্যবসা কেন্দ্র।
৩১ মে ২০১৫ রাত ১০:০৬
265111
রাজ্পুত্র লিখেছেন : শুধু টাকার ব্যবসা । মানবিকতা বলতে কিছূ নেই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File