ভারতে এভাবে মুসলমানদেরকে হত্যা করা কেন?
লিখেছেন লিখেছেন রাজ্পুত্র ০৯ মার্চ, ২০১৫, ১০:৪৬:১৯ রাত
তীব্র ঘৃনা জানা্ই এরকম কাপুরুষোচিত হত্যাকান্ডের।ভারতের নাগাল্যান্ডে মুসলমান যুবককে পাশবিকভাবে পিটিয়ে হত্যা; আসামে জানাজায় মানুষের ঢল!
সেই মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষায় আদৌ ধর্ষণের অভিযোগের যথার্থতা প্রমাণিত হয়নি।
নাগাল্যান্ডে চলছে মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ: কারফিউ জারি!
ভারতের নাগাল্যান্ডে কারাগারের ভিতরে ঢুকে একজন মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে প্রদেশটিতে। বিক্ষোভ যাতে ব্যাপক আকার ধারণ করতে না পারে এজন্য প্রদেশটিতে ইন্টারনেট ও মোবাইলে বার্তা প্রদানের সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। শনিবার রাত থেকেই ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে সেখানে। রোববার ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে সেখানকার মুসলিমরা।
নাগা নারীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে শরিফউদ্দিন খানকে এমন পাশবিক কায়দার হত্যা করা হলেও ডিমাপুরের হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যাকে নিয়ে অভিযোগ সেই মেয়েটির আদৌ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি! ডাক্তারি পরীক্ষায় তার অভিযোগের যথার্থতা প্রমাণিত হয়নি।
ধর্ষণের গুজবে পাশবিক হত্যাকাণ্ডের শিকার মুসলিম যুবক শরিফউদ্দিন খানের লাশ অবশেষে নাগাল্যান্ড থেকে আসামে এনে দাফন করা হয়েছে। এর আগে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মানুষের ঢল নামে। জানাজা পরিচালনা করেন উত্তর-পূর্ব ভারতের আমীরে শরিয়ত মাওলানা তৈয়ীবুর রহমান বড়ভুইয়া। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা নাগাদ শরিফের লাশ নাগাল্যান্ড থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে আসামের করিমগঞ্জে পৌঁছায়। সেখান থেকে রাজ্যের সাবেকমন্ত্রী ও দক্ষিণ করিমগঞ্জের বিধায়ক সিদ্দিক আহমেদ খান লাশবাহী গাড়িতে করে শরিফ উদ্দিনের কফিন নিয়ে বসলায় তার বাড়িতে পৌঁছান। ব্যাপক জনজোয়ার সামলাতে স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে তার লাশ রাখা হয়। রাতে সেখানে হাজার হাজার মানুষ তার লাশ দেখার জন্য ভিড় জমান।
গতকাল করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির পাশাপাশি বরাক উপত্যাকায়ও বনধ-এর ডাক পালিত হয়। অল আসাম যুব পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন আসামের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ করে। শরিফ উদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ১২ ঘণ্টার বন্্ধে বরাক উপত্যকার তিনটি জেলায় জনজীবন স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। দোকানপাট, বাজারহাট বন্ধ ছিল। যানবাহন চলাচল করেনি।
রোববার বলে এমনিতেই স্কুল-কলেজ সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ ছিল। বনধের ডাক দিয়েছিল একাধিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও ব্যবসায়ী সংগঠন। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর পক্ষ থেকে এই হত্যাকা-ের নিন্দা করা হয়েছে। অ্যামনেস্টির মুখপাত্র শেমির বাবু বলেছেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করতে হবে নাগাল্যান্ডকে। সে কাজে ব্যর্থ হলে যে কেউ জঘন্য কাজকর্ম করে পরে জনরোষের যুক্তি দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে পারে।’
অন্যদিকে, দোষীদের বিরুদ্ধে নাগাল্যান্ড সরকার ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত সেখানে ট্রাক নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছে আসামের ট্রাক চালকদের ১৭টি সংগঠন। নাগাল্যান্ড সরকারের পুলিশ শরিফ হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে আগেই এই ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছে নাগাল্যান্ড সরকারকে।
গত শনিবার আসাম বিধানসভায় শরিফউদ্দিনকে নৃশংসভাবে হত্যা প্রসঙ্গে বিরোধীরা সোচ্চার হন। রাজ্যের মন্ত্রী রকিবুল হোসেন জানান, ‘এক নাগা নারীকে ধর্ষণের কথিত অভিযোগ এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে শরিফউদ্দিন খানকে। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াংকে চিঠি দিয়ে দোষীদের গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া নাগাল্যান্ডে কর্মরত আসামের বাসিন্দাদের জীবন-সম্পত্তি নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন।’
তরুণ গগৈকে লেখা জবাবি চিঠিতে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং শরিফ হত্যাকে জঘন্য বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়া ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নাগাল্যান্ডে বসবাসকারী আসামের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলিয়াং।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈই বলেছেন, ‘যেভাবে জেল ভেঙে শরিফ উদ্দিনকে বের করে নিয়েছে জনতা, তার দায় কেন্দ্র এড়াতে পারে না। কারণ কারাগারে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফ-এর হাতে। তাই কেন্দ্র সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।’
আসাম প্রদেশ কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট অঞ্জন দত্ত এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাজ্যসভায় মোদি সগর্বে বলেছিলেন, ‘নাগাল্যান্ডে আমাদের সরকার রয়েছে।’ অঞ্জন দত্ত’র দাবি, তাদের সরকার থাকা সত্ত্বেও ডিমাপুরে কীভাবে এমন নারকীয় ঘটনা ঘটেছে তা স্পষ্ট করা উচিত কেন্দ্রের।
এর মধ্যেই গত শনিবার রাত থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখেছে সরকার। আজ সোমবার পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবার পাশাপাশি মোবাইল ফোনের এসএমএস সেবাও বন্ধ থাকবে। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলিতে গতকাল এ খবর বেরিয়েছে। ধর্ষণে অভিযুক্তকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। লোকের হাতে হাতে মোবাইলে সেই ফুটেজ দেখা যাচ্ছে। তা থেকে নতুন করে কোনও অশান্তি যাতে না ছড়ায়, সেজন্যই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার পদক্ষেপ। পাশাপাশি এসএমএস, এমএমএস পরিষেবা ব্লক করে দিতেও মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এদিকে ডিমাপুরে গত দুদিন বহাল থাকা নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপ গতকাল সকালে কিছুক্ষণের জন্য শিথিল করা হয় যাতে রাজ্যবাসী গির্জায় প্রার্থনা করতে যেতে পারেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ডিমাপুরে এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল শরিফকে। পরদিনই তাকে ডিমাপুর কেন্দ্রীয় জেলে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। সেখান থেকেই গত ৫ মার্চ তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় উন্মত্ত জনতা। তাকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘুরিয়ে মারধর করে। পাথর দিয়ে থেঁতলে মারা হয় তাকে। তারপর মোটরসাইকেলের পিছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে সাত কিলোমিটার রাস্তা টেনে নিয়ে ডিমাপুর শহরের মূল কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। জনতার ক্রোধের শিকার হয় সে। তারপর তার লাশ একটি ঘড়ি টাওয়ারে ঝুলিয়ে দেয় তারা।
নাগা নারীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে শরিফউদ্দিন খানকে এমন পাশবিক কায়দার হত্যা করা হলেও ডিমাপুরের হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যাকে নিয়ে অভিযোগ সেই মেয়েটির আদৌ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি! ডাক্তারি পরীক্ষায় তার অভিযোগের যথার্থতা প্রমাণিত হয়নি।
সূত্র : জি নিউজ, এবিপি আনন্দ, পিটিআই।
বিষয়: বিবিধ
১১৯১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন