যদি জম্মু ও কাশ্মির-এর নতুন নাম হয় জম্মু, কাশ্মির, লাদাখ ও বিহার
লিখেছেন লিখেছেন রাজ্পুত্র ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:২০:৩১ সন্ধ্যা
ভারতের বিজেপি বিগত লোকসভা নির্বাচনে যে কৌশল গ্রহণ করেছিল, সেটিই প্রয়োগ করেছে কাশ্মির উপত্যকায়। বিজেপির ওই কৌশলের সাথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সঙ্ঘ পরিবার। বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার, লোকসভা নির্বাচনের আগে একধরনের উগ্র হিন্দু জাতীয়তা জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। বিভিন্ন উগ্র হিন্দুবাদী গ্রুপ রাজ্যটিতে একটি আগ্রাসী রাজনৈতিক কার্যক্রমের সূচনা করে। ওই রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই গত বছর কিশতওয়ারে দাঙ্গা বাধানো হয়। সঙ্ঘ পরিবারের বিভিন্ন বক্তব্য ও ঘটনাকে বিশ্লেষণ করলে রাজ্যটিকে ভারতে সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তীকরণের জন্য সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করা তাদের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। এ ব্যাপারে রামমাদভের একটি বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ২০১৪ সালের ২০ আগস্টসংখ্যায় বলেছেন, কাশ্মির রাজ্যকে সম্পূর্ণভাবে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের জন্য এবারের নির্বাচন একটি বিরাট সুযোগ। এ ধরনের বক্তব্যে বিজেপির গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডারই প্রতিফলন ঘটেছে। বিজেপির কাশ্মির নীতিতে সব সময় এই এজেন্ডাই বলবৎ ছিল। তবে বিজেপি এবার দিল্লির ক্ষমতায় বসার পর তাদের কাশ্মির নীতি বাস্তবায়নে বিশেষভাবে তৎপর হয়ে ওঠে। এর অংশ হিসেবেই বিজেপি জম্মু, কাশ্মির ও লাদাখ নামকরণ করতে চায়। এখন জম্মু, কাশ্মির ও লাদাখ এবং পরে হবে জম্মু, কাশ্মির, লাদাখ ও বিহার। এভাবে তারা উদ্বাস্তু ও বিহারিদের কাশ্মিরে এনে কাশ্মিরের মুসলিম জনসংখ্যার বিন্যাসকে পাল্টে দিতে চায়।
বিজেপির পক্ষ থেকে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের যে বিশেষ বিধানটি বাতিল করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি হলো কাশ্মিরের সীমিত স্বায়ত্তশাসনের রক্ষাকবচ। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ এবং যোগাযোগ এ চারটি বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মিরসংক্রান্ত কোনো আইন প্রণয়ন করতে হলে তাতে কাশ্মির রাজ্য সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া অথবা বাইরের আগ্রাসন ব্যতিরেকে অন্য কোনো অভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্য কাশ্মির এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করতে হলে কাশ্মির সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। ১৯৪৭ সালে একমাত্র জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এ শর্তে যে, এ রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্যই অনুচ্ছেদটি তদানীন্তন ভারতীয় আইনমন্ত্রী ড. আমবেদকরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সংবিধানে সংযোজিত হয়। এর সুবাদে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত কাশ্মিরের রাজ্যপ্রধান গভর্নরের পরিবর্তে সদরে রিয়াসত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একই সময়ে কাশ্মিরের সরকারপ্রধানকে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হতো। অন্য সব রাজ্যে সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও কাশ্মির হচ্ছে একমাত্র রাজ্য, যার সংসদের মেয়াদ হলো ছয় বছর। এই রাজ্যেরই একমাত্র স্বতন্ত্র পতাকা রয়েছে। ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের নাগরিকেরা কাশ্মিরে স্বাধীনভাবে জমি কিনতে পারেন না। এই বিশেষ মর্যাদাটি এত দিন পর্যন্ত বিভিন্ন টানাপড়েনের মধ্যেও সোয়া কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত কাশ্মিরের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে আসছে।
বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার কাশ্মিরের এই জনবিন্যাসকে পাল্টে দেয়ার জন্য সংবিধানের ৩৭০-এর রক্ষাকবচকে বাতিল করতে চায়। যদিও ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ব্যাপারে ন্যাশনাল কনফারেন্সের মতো পিডিপিরও কট্টর অবস্থান রয়েছে এর বিপক্ষে।
তথ্যসূত্র: Click this link
বিষয়: বিবিধ
২৫৮৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাশ্মির কখনই জম্মুর সাথে এক ছিলনা। প্রাকৃতিক ভাবেও তারা সর্ম্পু আলাদা ১৮৪৬ সালে বৃটিশরা এই দেশটিকে বিক্রি(!) করে জম্মুর ডোগড়া হিন্দু রাজার কাছে। জম্মু রাজ্যটি যদি যুক্ত না থাকে তাহলে কাশ্মিরে মুসলিম সংখাগরিষ্ঠতা অনেক বেশি হয়ে যাবে তাই জম্মুকে কাশ্মির এর সাথে যুক্ত রাখা হয়েছে।
আর আমিও মনে করি কাশ্মির একদিন স্বাধীন হবে ইনশাআল্লাহ্!
মন্তব্য করতে লগইন করুন