মানসিক রোগ ভাবনা- পর্ব-২ (সিজোফ্রেনিয়া)

লিখেছেন লিখেছেন রাজ্পুত্র ১৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৮:৩০ রাত



এ তীব্র জটিল মানসিক অসুখটিতে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপ যথেষ্ট বিঘ্নিত হয়, যাতে করে সিজোফেন্সনিকরা তাদের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনে ও তাদের দৈনন্দিন ব্যক্তিজীবনে পর্যন্ত বিপর্যস্ত ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে।



এদের চিন্তা, চেতনা, অনুভূতি, কাজকর্ম বাস্তবতার সাথে কেমন যেন খাপছাড়া। সিজোফেন্সনিকরা নিজস্ব মনোজগত ভুবন তৈরি করে নেয়, যার মাঝে বাস্তবতার লেশমাত্র নেই। বাস্তবতার সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি আর বোধশক্তির এত বেশি ফারাকের জন্যই এটিকে আমরা সাইকোসিস বলে থাকি। সাইকোটিক রোগীরা তারা নিজেরা যে অসুস্খ সেটি পর্যন্ত বুঝতে পারে না।

কি হয় এরোগ হলে-

সিজোফেন্সনিয়ার উপসর্গ হ্যালুসিনেশন বা অলীক শ্রবণ

সিজোফেন্সনিয়া রোগীদের অনুভূতি বা ইন্দ্রিয় স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি শাণিত ও তীক্ষîরূপ ধারণ করে। যেসব তথ্য পঞ্চইন্দ্রিয়ের সাহায্যে মস্তিষ্কে পৌঁছায়, মস্তিষ্কে এক্ষেত্রে সেসব তথ্যকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ-ব্যাখ্যা করতে পারে না। তাই এসব তথ্যের তাড়নায় ব্যক্তি যে সাড়া দেয় তা থাকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অসংলগ্ন। সিজোফেন্সনিকরা এমন কথাবার্তা শুনতে পান যে, তাকে বলা হচ্ছে ‘তুমি এটা কর ওটা কর’। অথচ আশপাশে কেউ নেই বা আশপাশে কেউ থাকলেও তারা কিন্তু কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।

ডিলিউশন বা ভ্রান্ত বিশ্বাস

সিজোফেন্সনিকদের অস্বাভাবিক বিশ্বাস থাকতে পারে। এতে তারা তাদের বিশ্বাসগুলোতে সব সময় অবিচল থাকে­বিশ্বাসগুলো ব্যক্তির সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও কালচারাল বা সংস্কৃতিগত এবং শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী, তথাপি রোগী এতে বিশ্বাস স্খাপন করে।

নিজ সম্পর্কে নিজস্ব ভাবনা

সিজোফেন্সনিকরা অনেকাংশে নিজের আমিত্বের অনুভূতিটি বুঝতে পারে না। নিজেকে অর্থাৎ নিজ সম্পর্কে নিজস্ব অনুভূতির বিলুপ্তি ঘটে। কতক ক্ষেত্রে তারা মনে করে বা চিন্তা করে তাদের দেহ বা শরীর নিজ থেকে আলাদা বা ব্যক্তি থেকে আলাদা।

ভোঁতা বা আবেগহীন অনুভূতি

সিজোফেন্সনিকদের আবেগ, অনুভূতিতে কতক পরিবর্তন আসে। চোখ-মুখে আবেগের তেমন কোনো প্রকাশ স্পষ্ট নয়। কেমন যেন মেঘাচ্ছন্ন ভাব। তাদের শরীরের নানা অংশের নড়াচড়াও সীমাবদ্ধ থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই আবেগ এতটাই অবদমিত থাকে যে, বিশেষ পরিস্খিতিতে পর্যন্ত তারা আবেগশূন্যতায় ভোগে। তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে, ব্যক্তির আবেগ অনুভবের ক্ষমতা একেবারেই নেই। অনেক ক্ষেত্রে সিজোফেন্সনিকরা ভেতরে ভেতরে তীব্র আবেগ অনুভব করে। কিন্তু তা বাইরে প্রকাশ করলেই যত সমস্যা। সিজোফেন্সনিয়ার প্রাবল্য যত বাড়ে আবেগহীনতাও তত সামনের দিকে অগ্রসর হয়।

সিজোফেন্সনিয়া ও আত্মহত্যার ঝুঁকি

নানা ধরনের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সিজোফেন্সনিয়ার রোগী ও আত্মহত্যার মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এ অসুখটির সাথে ডিপ্রেশন বা বিষণíতা, ভ্রান্ত বিশ্বাস, অলীক প্রত্যক্ষণ, গায়েবি আওয়াজ ইত্যাদি জড়িত থাকায় রোগী আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে। এরা অনেকটা বাধ্য হয়েই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। মনোবিজ্ঞানী টরি অবশ্য বলেছেন যে, সিজোফেন্সনিয়া রোগীদের শতকরা ১০ ভাগ কোনো না কোনো উপায়ে নিজেদের ক্ষতি করে থাকে। রোগীর আচরণ দেখে কীভাবে বুঝবেন সে আত্মহত্যা করতে পারে কি না।

আপনার রোগী যদি ঘনঘন আত্মহত্যার কথা বলে রোগী যদি আত্মহত্যার পরিকল্পনার কথা বলে রোগীর যদি ত্মসম্মানবোধ না থাকে বা নিজের সম্পর্কে হীনম্মন্যতা থাকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যদি আশাহত অনুভূতি থাকে রোগী যদি গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায় বা কোনো অলীক প্রত্যক্ষণ দেখতে পায় যা তাকে আত্মহত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করে।

সিজোফ্রেনিয়ার একটি বাস্তব উদাহরন দেখুন-

সাভারের ‘গেছো-মানবী’ রহস্য;



আসলে তিনি আসলে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন, রাত হলেই এলাকার কোনো না কোনো গাছ থেকে নারীকণ্ঠ শুনতে পান তারা। গাছের মগডালে বাস করা ওই নারীর ভয় দেখিয়েই সন্তানদের ঘুম পাড়ান ওই এলাকার মায়েরা। অনেকে রোগ-ব্যাধি থেকে সেরে ওঠার জন্য তার কাছে মিনতিও করছেন। অদ্ভুত এই নারীকে ঘিরেই গত বৃহস্পতিবার নির্ঘুম রাত কাটাতে হলো সেনা, পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যদের। এলাহিকাণ্ড বাঁধিয়েও শেষ পর্যন্ত তাকে নামানো যায়নি গাছ থেকে। শত শত মানুষের উপস্থিতিতে গেছো-মানবী উদ্ধারের ব্যর্থ প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে ওই এলাকায় তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে সাভারের সামরিক খামারের একটি গাছের নিচ দিয়ে এক রাস্তা অতিক্রম করার সময় গাছ উপর থেকে নারীকণ্ঠ শুনেই চমকে যান কেরামত আলী। তিনি বলেন, গল্পে অনেক ভূত-প্রেতের কথা শুনেছি। মনে হচ্ছিলো বাস্তবে আমিও ভূতের পাল্লায় পড়েছি।

কেরামত আলী বলেন, মনে মনে আমি আল্লাহকে ডাকতে থাকি, আর জোর কদমে পা চালাই। যতই পায়ের জোড় বাড়ে ততই যেন কাছে আসে নারীর কণ্ঠস্বর। ভাবছি এই বুঝি আমাকে ধরে ফেলে। দৌড়ে কোনো মতে রেডিও কলোনির কাছাকাছি পৌঁছে বিষয়টি নিকটজনদের জানাই। এরপর এ-কান ও-কান হয়ে প্রশাসন পর্যন্ত গড়ায়।

কেরামত আলী আরো বলেন, পরে আরেক পথচারীর একই অভিজ্ঞতার খবর শুনে প্রথমে পুলিশ, পরে দমকল বাহিনিকে খবর দেন। পরে সেনা সদস্যরাও যান ঘটনাস্থলে। টর্চের আলোতে দেখি এক নারী বসে আছে গাছের মগডালে। আর তাকে নিচে নামিয়ে আনতে কতই না তত্পরতা প্রশাসনের।

বিষয়: বিবিধ

১৩০১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

286058
২০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৪৮
কাহাফ লিখেছেন :
আপনার লেখা পর্বগুলু পড়ে নিজেই শংকায় পড়ে যাই!আমিও কি এই রোগে আক্রান্ত কি-না!!! Praying Praying
২১ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৯
230098
রাজ্পুত্র লিখেছেন : ভাই সন্দেহ বেশী হলে ভাল একজন মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
286077
২০ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:১১
জোনাকি লিখেছেন : অসংখ্য ধন্যবাদ।
২১ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০০
230099
রাজ্পুত্র লিখেছেন : কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File