তাওহীদ বনাম তাগুত
লিখেছেন লিখেছেন কাজী আবু নাবিল ২০ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:৪৫:৩৮ দুপুর
সকল প্রশংসা শুধুই আল্লাহর জন্য যিনি সমস্ত বিশ্বের প্রতিপালক।আমরা কেবল তারই ইবাদাত করি এবং কেবল তারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোনো হিদায়াতকারী নেই।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ(সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে চাইলে ও চিরস্থায়ী জান্নাতের একজন সদস্য হতে চাইলে “তাওহীদ” ও “তাগুত” সম্পর্কে জ্ঞান থাকার পাশাপাশি তাদের পারস্পারিক সম্পর্ক কি সেটা জানা সবচেয়ে বড় ওয়াজিব কেননা তা আপনার সামনে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর প্রকৃত ছবি অংকন করে।শুধু মুখে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বললেই মুসলিম হওয়া যায় না কেননা তা একজন চাইনিজ লোকও বলতে পারে।তাই আপনাকে বুঝতে হবে “লা ইলাহা ইল্লালাহ” এর গভীরতা বা সীমারেখা কিংবা বেড়িয়ে পড়তে হবে পরকালে মুক্তির সনদ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর প্রকৃত অর্থের খোঁজে।কিন্তু মনে রাখবেন খুঁজতে হবে কেবলই দুটি রাজ্যে ঠিক সাহাবীদের পথের অনুকরন ও অনুসরনে যার একটি আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি সহীহ বা গ্রহনযোগ্য হাদীস।
ইসলামের মূল শিক্ষা হল তাওহীদ।অন্যভাবে বলা যায়, তাওহীদই হলো ইসলামের মূল ভিত্তি।আর এ মূল ভিত্তি যদি স্বীয় হৃদয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তবে আকীদা ও ইবাদাতসহ ব্যক্তিগত ও সামাজিক সার্বিক জীবন ব্যবস্থা বিশুদ্ধ ও ত্রুটিমুক্ত হবে।
প্রথমে বলে নেওয়া উত্তম মনে করছি,তাওহীদ শব্দটি কুরআন বা হাদিসের কোথাও সরাসরি পাওয়া যায় না।
তবে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মুয়ায বিন জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে এ বানী সহকারে প্রেরন করেন যে, “নিশ্চয়ই তুমি এক আহলে কিতাব প্রাপ্ত জাতির নিকটে যাচ্ছ,কাজেই তুমি সর্বপ্রথম তাদেরকে আল্লাহর একত্বের(ইউ ওয়াহহিদূল্লাহ)দিকে আহবান জানাবে”
(সহীহ আল-বুখারী, সহীহ মুসলিম)
এই হাদিসে ব্যবহৃত ক্রিয়াটির বর্তমান কাল থেকে ক্রিয়া বিশেষ্য “তাওহীদ” শব্দটির উৎপত্তি,যা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক ব্যবহৃত হয়েছে।
আরবি ভাষায় তাওহীদ শব্দের অর্থ কোন কিছুকে এক করা,এক বানানো,এক এ পরিনিত করা,একত্বে বিশ্বাস করা,Unification.ইসলামী পরিভাষায় তাওহীদ শব্দের অর্থ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার বিশেষত্বের ক্ষেত্রে তাকে এককভাবে বাছাই করা।এখানে বিশেষত্ব বলতে আল্লাহর কর্তৃত্ব,আইন,রাজত্ব,ক্ষমতা তথা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব,আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুনাবলিসমূহ,আল্লাহই একমাত্র ইবাদাতের যোগ্য সত্তা ইত্যাদি বুঝায়।
তাই হে পাঠক!“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর প্রকৃত অর্থ কি এটাই ফুটে উঠে না?
“আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য কোন উপাস্য নেই”
“আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই”
“আল্লাহ সাত আসমান ও সাত জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর মালিক”
“আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আইন প্রনয়নের কিংবা বিধান দেওয়ার অধিকার নেই”
“আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানে না”
এছাড়া কুরআনের দুটি আয়াত যা আল্লাহকে চিনতে বা আল্লাহর মর্যাদা বুঝার জন্য বিশেষভাবে সহায়ক তা হলঃ
“ তার সমতুল্য কোন কিছুই নেই ”(সূরা ইখলাসঃ৪)
“ কোন কিছুই তার সদৃশ নই” (সূরা শুরাঃ ১১)
So it is Strongly proven that “There is Nothing like Him (Allah)” .So Hey Brother! Know about Allah and worship of Allah alone.
এবার তাগুতকে চেনার পালা,
তাগুত শব্দের অর্থ হচ্ছে সীমালংঘনকারী, আল্লাহদ্রোহী, বিপথে পরিচালনাকারী। তাগুত শব্দটি আরবী(তুগইয়ান) শব্দ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ সীমালংঘন করা, বাড়াবাড়ি করা, স্বেচ্ছাচারিতা।
এখন আমরা আলোচনা করব তাগুত শব্দের শার’য়ী অর্থ নিয়ে তা এজন্য যে কোরআন-সু্ন্নাহয় যখন কোন শব্দ ব্যবহৃত হয় তখন তার একটা নির্দিষ্ট শার’য়ী অর্থ দাড়ায়। তাগুত শব্দটি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত ওহী দ্বারা সাব্যস্ত, যা আক্বীদার সাথে সম্পৃক্ত। তাগুত’ এর ভাষাগত মূল (ত্বা-গি-ন) এর মত একই রকম মূল হলেও তাগুত হচ্ছে সীমালংঘনের সুনির্দিষ্ট ধরণ।
সীমালংঘন করলেই ত্বাগুত হয়ে যায় না, যেমন আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন পবিত্র (হালাল) খাবার খাওয়ার জন্য এবং এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বা সীমালংঘন না করার জন্য (সূরা, ত্ব-হা ২০:৮১), এখন কেউ যদি হারাম খায় তাহলে সে ত্বাগুত হয়ে যাবে না, বরং সে অবাধ্য হবে। এরকম অন্যান্য পাপের ক্ষেত্রেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের পাপ বা সীমালংঘন কুফর, শিরক্, নিফাক্ পর্যন্ত পৌছতে পারে কিন্তু এ কারণে কেউ ত্বাগুত হয়ে যায় না।
বরং ত্বাগুত হবে ঐ রকম সীমালংঘনের ক্ষেত্রে যখন কোন ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর সাথে শরীক্ করে।সুতরাং একথা সুস্পষ্ট, যে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করে সে মুশরিক কিন্তু সে ত্বাগুত নয়। আল্লাহ তাকে ত্বা-গি-ন বলেছেন। আর তাগুত হচ্ছে সে যে নিজেকে (মিথ্যা) রব এবং ইলাহ (অর্থাৎ ইবাদতের যোগ্য) বানিয়ে নেয়। এজন্যই সব তাগুতেরা ত্বা-গি-ন কিন্তু সব ত্বা-গি-নেরা তাগুত নয়।
যে ব্যক্তি আল্লাহর অধিকার, গুনাবলী, কার্যাবলী ও সত্তার দাবীতে সীমালংঘন করে সে তাগুত। আল্লাহ ব্যতীত যে কেউ ইবাদত গ্রহন করে বা দাবী করে সে তাগুত এবং যে কেউ আল্লাহর গুনাবলী দাবী করে সেও ত্বাগুত। তাগুত হচেছ সেই ব্যক্তি যে নিজের প্রতি আল্লাহর অধিকার,কার্যাবলী বা গুনাবলী আরোপ করে। যেমন ফেরাউন আল্লাহ দ্রোহী হয়েছিল এবং সীমালংঘন করেছিল, আল্লাহ সার্বভৌমত্বের মালিক অথচ সে নিজে মিসরের সার্বভৌমত্ব দাবী করেছিল।সে লোকদেরকে জড়ো করে ভাষণ দিয়েছিল যা কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছেঃ “ফেরাউন তার জাতির উদ্দেশ্যে (এক) ভাষণ দিলো। সে বললো, মিশরের সার্বভৌমত্ব কি আমার নয়? তোমরা কি দেখছো না যে,এই নদীগুলো আমার (রাজত্বের) অধীনেই বয়ে চলছে--------।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:৫১)
আল্লাহতা‘য়ালা তাকে ‘ত্বাগা’ বলেছেন সূরা ত্বাহার ২৪ নং আয়াতে এবং মুসা (আঃ) কে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার কাছে যাওয়ার জন্য-“ফেরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালংঘন করেছে।” শরীয়তের পরিভাষায়, এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই তাগুত যে, আল্লাহদ্রোহী হয়েছে এবং সীমালংঘন করেছে, আর আল্লাহর কোনো হককে নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছে এবং এমন বিষয়ে নিজেকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ বানিয়েছে, যা একমাত্র আল্লাহর জন্য খাস।
সুস্পষ্ট ভাবে তাগুত এর অর্থ হচ্ছে, কোন মাখলুক (সৃষ্টি) নিন্মোক্ত তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি বিষয়কে (আল্লাহর স্থলে) নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করাঃ-কোন মাখলুক (সৃষ্টি) কর্তৃক আল্লাহতা‘য়ালার কার্যাবলীর যে কোন কার্য সম্পাদনের বিষয়টি নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করা। যেমন সৃষ্টি করা, রিজিক দান অথবা শরীয়ত (বিধান) রচনা। এসব বিষয়গুলো সম্পাদনের ব্যাপারকে যে ব্যক্তি নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করবে (অর্থাৎ কেউ যদি বলে, আমি সৃষ্টি করি,আমি রিজিক দেই,আমি বিধান দেই) সেই তাগুত।
কোন মাখলুক (সৃষ্টি)আল্লাহতা‘য়ালার কোন নাম কিংবা সিফাত বা গুন কে নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করা। যেমন ইলমে গায়েব জানা। যদি কেউ তা করে (অর্থাৎ বলে আমি এলমে গায়েব জানি) তাহলে তাকে তাগুত হিসেবে গন্য করা হবে।
যে কোন ইবাদত মাখলুক কর্তৃক (বা সৃষ্টির) এর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা । যেমনঃ দোয়া, মানত, নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই অথবা বিচার ফায়সালা চাওয়া। যদি (কোন মাখলুক) এসব ইবাদত গ্রহন করে, দাবী করে, আকাঙ্খা করে অথবা (নিজের জন্য) সম্পাদন করে, তাহলে সেই তাগুত।
এমনকি কেউ তার জন্য ইবাদত নিবেদন করলে যদি সে নীরব থাকে তাহলেও সে ত্বাগুত বলে গন্য হবে, যতক্ষন পর্যন্ত না সে নিজেকে এ থেকে পবিত্র ও মুক্ত করে নেয় এবং এ হক্ আল্লাহর একথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন