★★★ অভিমান ★★★ _______ মানসূর আহমাদ
লিখেছেন লিখেছেন জেলপেন ০৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৬:২২:৩০ সকাল
বড় একজন ব্যবসায়ী। ধনকুবের বলা যায়। নাম সাজ্জাদ হোসেন। গম্ভীর প্রকৃতির খুব ভালো একজন মানুষ। আলিম-উলামাদের সাথে উঠা-বসা তাঁর। গ্রামের বাজারে ছয়টি দোকান আছে তাঁদের। এরমধ্যে সবচে' বড়টা তিনি নিজে দেখাশোনা করেন। বাজারের পাশেই এক মাদরাসা। মাদরাসার শিক্ষকদের সাথে সাজ্জাদ সাহেবের খুব ভালো সম্পর্ক।
বাড়ি থেকে খাবার আসে। তিনি মাদরাসার শিক্ষকদের সাথে মাদরাসায় বসেই খেয়ে নেন।
ফায়িয। শিক্ষকদের খেদমত করে ছেলেটি। খাবারের সময় শিক্ষকদের সাথে সাজ্জাদ সাহেবেরও খেদমত করা হয়ে যায়। সাজ্জাদ সাহেবকে ফায়িযের ভালো লাগে। গড়ে ওঠে সখ্যতা। সে ক্লাসের ফার্স্ট বয়। সবাই তাকে ভালোবাসে।পারিবারিকভাবে ছেলেটি তেমন স্বাবলম্বী নয়। সাজ্জাদ সাহেব তা জানলেন। একসময় তিনিই তার পড়াশোনার খরচ দিতে থাকেন।
একদিন ফায়িয না বুঝে সাজ্জাদ সাহেবের মোবাইল দিয়ে তার এক শিক্ষককে মিসড কল দিয়ে বসে। কিছুক্ষণ পর ওই শিক্ষক সাজ্জাদ সাহেবের দোকানে আসেন।
তিনি মিসড কলের কারণ জানতে চান। সাজ্জাদ সাহেব বলেন, মোবাইল তো ফায়িযের কাছে!
-ফায়িয কোথায়?
-দোতলায়।
শিক্ষক প্রচণ্ড রাগ করলেন। দ্বিতীয় তলা থেকে ফায়িযকে ধরে আনা হলো। তাকে ভীষণভাবে মারা হলো।
বিকেলে ছাত্ররা হাঁটতে যায়। সে কোথাও গেলো না। রুমে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলো। দুঃখে অভিমানে তার নিজের চুল টেনে ছেঁড়ার ইচ্ছে করছে।
একসময় কোনো এক কারণে প্রিন্সিপাল সাহেবের সাথে সাজ্জাদ সাহেবের মনোমালিন্যতা দেখা দেয়। সব ছাত্রের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায় সাজ্জাদ সাহেবের দোকানে যাওয়া। তিনি কাউকে নিজের দুঃখের কথা বলেন না। বলার মানুষ পান না। ফায়িযও তাঁর দোকানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে গোপণে তাদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হয়।
একসময় অন্য এক কারণে ফায়িযও তাঁর সাথে অভিমান করে বসে। সে আর তাঁর দোকানে যায় না।
সময় চলে যেতে থাকে। সাজ্জাদ সাহেব একসময় বিয়ের কথা ভাবেন। বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। তারিখও ঘনিয়ে আসে। তিনি ফায়িযসহ সকল শিক্ষককে দাওয়াত করেন। একসময় শিক্ষকদের মনোমালিন্যতা কাটলেও ফায়িযের অভিমান ভাঙে না। সে সাজ্জাদ সাহেবের বিয়েতে যায় না।
এক রমজানের পর সে মোবাইল কেনে। সাজ্জাদ সাহেব তাকে ফোন করেন। আস্তে আস্তে তার অভিমান ভাঙে। তবুও কোনো সময় ফোন ধরে, কোনো সময় ধরে না। আবার মাঝেমধ্যে নিজেও কল করে।
একরাতে সাজ্জাদ সাহেব ফায়িযকে ফোন করে কান্নামেশা কণ্ঠে বলেন, 'তোর কী হয়েছে রে? তুই আমার সাথে কথা বলিস না কেনো? প্লিজ! তুই আমার সাথে কথা বল!' কিন্তু ফায়িয কোনো কথা বলে না। ওপাশে শুধু কান্নার ফুঁপানো আওয়াজ শোনা যায়।
একদিন সাক্ষাতে ফায়িযের গলা জড়িয়ে ধরে ছোট্ট শিশুর মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন সাজ্জাদ! বলেন, 'ফায়িয! আর সবাই ভুলে গেলেও তুই কিভাবে আমাকে ভুলে যাস বল? তুই কেনো আমাকে এড়িয়ে চলিস?'
ফায়িয কিছু বলে না। সেও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। সাজ্জাদ সাহেব বাধা দেন না। কেঁদে কেঁদে ছোট্ট ভাইটার মন যদি একটু শান্ত হয়!...
________________________
পুনশ্চঃ আমরা তখন শহরের এক মাদরাসায় পড়ি। একদিন আমি আর ফায়িয গিয়েছিলাম তার পুরনো সেই মাদরাসায়। মাদরাসা দেখলাম। ঘুরেফিরে বাজার দেখলাম। সাজ্জাদ সাহেবের দোকান দেখলাম। আলাপ আলোচনা হলো। চা-পর্ব শেষ করে চলে আসলাম।
উৎসর্গ- হাফিয শাহজামাল। আমার বন্ধু ও পুরনো ক্লাসমেট। সে এখনো মাঝেমধ্যে ফোন করে। আর আমি করি অভিমান!
বিষয়: বিবিধ
৯৫৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন