“ বাল্যকালে ডিরেক্টরি ”

লিখেছেন লিখেছেন নারী ২১ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:২০:৫৯ সন্ধ্যা



বাল্যকালে সবাই-ই কম বেশী ডিরেক্টরি করে।তবে নায়ক নায়িকাও কম হয় না।ডিরেক্টরি মানে কাহিনি বানিয়ে বানিয়ে খেলা।যেমন-ও তোমাকে একটা থাপ্পোড় দিবে আর তুমি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবে।তারপর আমি দৌড়ে আসব।

আবার ছোটবেলায় সবার একবার একবার বিয়েও করে।বউ-জামাই সাজানো হয়।তেমিন আমিও সেজেছিলাম।ধুমধাম করে একবারই আমার বিয়ে হয়।(এখানে ধুমধাম বলতে বুঝানো হয়েছে মুড়ির টিন পিটিয়ে বিয়ে)।এই নিয়ে কয়েকবার আমার মামত বোন এশার সাথে বিয়ে হয়(যদিও মেয়ে মেয়ে)।

খেলার মত কাউকে না পেলে বেশীর ভাগ সময় আমরা একটা খেলাই খেলতাম।“ছেলে-মেয়ে”(মানে প্রেমিক-প্রেমিকা)।আমাকে মেয়ে খুব কমই হতে দিত এশা।বড় মামার খাটের উপরে যত কাহিনি।খেলাটা ছিল এরকম,দুইজন ভার্সিতিটে পড়ি।ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রেম।বাপ মা রাজি না।(আসলে বাপ মা কেউ না,হাওয়া বাতাস)।তারপর পালিয়ে বিয়ে করি।যাই হোক একদিন আমরা সেইরকমই খেলছিলাম।হঠাৎ মার্জিয়া আসলো ।ও খেলবে।ওকে বানালো হলো আমার ননদ।লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি আমি।যেভাবে ভাবি ভাবি ডাকছে।ঠিক আগের মতই খেলছি।এবারে বাপ মা রাজি হয়।এরপর বাচ্চা হলো।বাচ্চা হচ্ছে “হট ব্যাগ”।নানুর খাটের থেকে হট ব্যাগটা চুরি করে আনলাম।ঐ মুহুর্তে আবার আসলো মার্জিয়ার ছোট বোন জান্নাত।ছোট বলে জোরা জোরি করছে খেলার জন্য।ওকে না নিলে আবার খালামনির কাছে বিচার দিবে।ওকে বলা হলো,তুমি আরেকটু পরে আসো।তোমাকে খেলায় নিব।হট ব্যাগ(বাচ্চা)বড় হয়ে জান্নাত হয়।ওকে বানালাম আমাদের মেয়ে।

মজার ব্যাপার হলো,খেলার কোন ভালো সমাপ্তি না পেলে তখন শেষ করি এভাবে একদিন সবাই কক্সবাজারে ঘুরতে যাই।সাগরে ডুবে সবাই মারা যাই(এটা করি তখন যখন কোন কারণে তাড়াতাড়ি খেলা শেষ করতে হবে)।এরকম ঠিক আরেকটা খেলা,

প্রজাপতি-প্রজাপতি।কাঁথা দিয়ে ডানা বানালো হলো।আবার সেটা দিয়েই ঘর।তিন জন খেলছিলাম।কাহিনি মেলানোর জন্য আরকজন লাগবে।কিন্তু কেউ নেই।না পেয়ে কোল বালিশকে আরেকজন হিসেবে ধরি।কাহিনিটা ছিল এরকম,

আমাদের আয়ু অনেক কম।আমরা কে কখন মরব সেটা আমরা আগে থেকেই জানি।তাই আগে ভাগে আমাদের কবর খুড়ে রাখি।মাঝখানে পুরাই সিনেমাটিক কাহিনি।শেষটা ছিল এরকম,

মৃত্যুর কাছাকাছি এখন সবাই।সবাই কান্নাকাটি করছে।সবার আগে মরবে কোল বালিশ।হায়রে কোল বালিশ ধরে কি কাঁন্দা!

এরপর মরবে ঐশী,এরপর আমি,সবার শেষে এশা।সেই আবার কাঁথা দিয়েই কবর।

সবগুলা কাঁথা মুড়ি দিয়ে মরার অভিনয়।হুট করে বড় মামা রুমে ঢুকে এইরকম দেখে জিজ্ঞেস করে,

মামাঃ কি ব্যাপার?তোমরা কি সবাই ঘুমাচ্ছো?

আমিঃ মামা আমরা মরে গেছি!

এশাঃ না জেঠা!আমরা খেলতেছি!

মামাঃ ঐশী কোনো কথা বলেনা কেন?

আমরা দুইজন ঐশীর দিকে তাকালাম।মরার এক্টিং করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল।কিছুক্ষণ পর আমরাও এক্টিং করতে করতে ঘুমিয়ে যাই।

সন্ধ্যায় খেলতাম হরতাল।হরতাল কি সেটা আমরা জানতামও না।এশা বেচারি খেলতে পারত না।মামি ওকে পড়াত।তখন ওর ভাই,আমি আর ঐশী খেলতাম।হরতালের টপিক হল “হরতাল”।ঘরের এই মাথা থেকে ঐ মাথা হরতাল হরতাল বলে দৌড়াতাম।আসলে হরতালটা কি সেটা আমরা জানতাম না।টিভিতে দেখতাম।হরতাল হরতাল বলে মারামারি করে,দৌড়াদৌড়ি করে।বড়রা কেউ চিল্লা চিল্লির জন্য ধমক দিলে ৫ মিনিটের জন্য অতি ভদ্র পোলাপান।আবার শুরু!

ছোটবেলাটা আসলেই অন্যরকম।বার বার কেন জানি হারিয়ে যেতে মন চায়…… 

বিষয়: বিবিধ

১১৬৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

286583
২১ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২৯
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২১ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩৮
230119
নারী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদধন্যবাদ Happy
286773
২২ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২৯
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : হাহাহাহা...মন খোলে কিছুক্ষন হাসলাম আপনার ছোট্ট বেলার বাদরামিপূর্ন খেলার বর্ননা পড়ে...বহুত মজারু ছিল আপনার ছোট্টবেলা।
২২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:০২
230456
নারী লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে। Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File