হাসান লি- যাতিহি, হাসান লি গইরিহি, ছহীহ লি গইরিহি
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ১৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৩২:৪৪ দুপুর
হাসান লি যাতিহি: যে হাদীছের মাঝে হাদীছ ছহীহ হওয়ার ৪টি শর্ত পূর্ণ রুপে পাওয়া যায় কিন্তু রাবীর স্মরণশক্তির মধ্যে কোন ত্রুটি বা দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয় তবে তাকে হাসান লি-যাতিহী বলা হয়।
উদাহরণ: আমরা গত র্পবে ছহীহ লি যাতিহীর উদাহরণে মাহমুদ নামটি ব্যবহার করেছিলাম। মনে করি মাহমুদের প্রদত্ত সেই খবরটি শায়খুল হাদীছের পক্ষ থেকে নাঈম আমাদেরকে দিল। তার মধ্যে সকল গুণ পূর্ণরুপে পাওয়া যায়। তথা সে একজন ন্যায়পরায়ণ তাক্বওয়াবান ব্যক্তি। শায়খুল হাদীছের ছাত্র । শায়খুল হাদীছের পক্ষ থেকে তার কোন খবর বর্ণনা করা অসম্ভব নয়। অতএব সানাদ মুত্তাছিল তথা বিচ্ছিন্ন নয় বরং সংযুক্ত। তার চেয়ে ভাল তার কোন ক্লাস ফ্রেন্ড তার এই কথার বিরোধিতা করছেনা। অতএব শায নয়। তার বর্ণিত কথায় কোন ইল্লাতও নাই। কিন্তু সব ঠিক থাকলেও তার স্মৃতিশক্তি হালকা দুর্বল। একটা পড়া যেখানে মাহমুদের একবার দেখলেই মুখস্থ হয়ে যায় সেখানে নাঈমের অন্ততপক্ষে দশ বার দেখা লাগে। কিন্তু সে আবার এতই দুর্বল নয় যে দশবার দেখার পর যা মুখস্থ হয় তা কিছুক্ষণ মনে থাকে তারপর আবার ভুলে যায়। বরং দশবার দেখার পর যা মুখস্থ হয়ে যায় তা আর ভুলেনা। নাঈমের এই স্মৃতি শক্তির হালকা দুর্বলতার কারণে তার প্রদত্ত খবরকে হাসান লি যাতিহী বলা হবে।
ছহীহ লি গইরিহি: শাব্দিক অর্থে যে নিজে নিজে ছহীহ হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা বরং অন্যের সাহায্য নিয়ে ছহীহ হয় তাকে ছহীহ লি গইরিহি বলা হয়।
পারিভাষিক অর্থে, যে হাদীছ রাবীর স্মরণশক্তির হালকা দুর্বলতার কারণে হাসান লি-যাতিহি হাদীছে পরিণত হয়েছে। সেই হাদীছ যখন বিভিন্ন সূত্র থেকে আসে তখন হাদীছের দুর্বলতা দূরীভূত হয়ে যায় এবং হাদীছকে ছহীহ লি-গইরিহি বলা হয়।
উদাহরণ: নাঈমের মত হালকা দুর্বল স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছাত্র আমাদেরকে যে খবরটা দিল সেই খবরটাই তার মত আরো দশটা ছাত্র দিচ্ছে। তাই আমাদের এটা বলার কোন অবকাশ নাই যে, নাঈম তো দুর্বল। তার কথার কোন ভরসা নাই। কেননা তার মত আরো দশজন একই খবর দেয়ার কারণে খবরটি আর দুর্বল নেই। বরং গ্রহণীয় হয়ে গেছে। নাঈম হয়তো ভুলে যেতে পারে বা ভুল করতে পারে। তাই বলে কি দশজনই ভুলে যাবে? তারাও ভুল করবে? এটা সম্ভব নয়। সুতরাং এই রকম বিভিন্ন সূত্র থেকে আসা খবরকে ছহীহ লি গইরিহি বলা হবে।
হাসান লি গইরিহি: শাব্দিক অর্থে যে নিজে নিজে হাসান হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা বরং অন্যের সাহায্য নিয়ে হাসান হয় তাকে হাসান লি-গইরিহি বলা হয়।
পারিভাষিক অর্থে যখন কোন জঈফ হাদীছ বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে বর্জনের স্তর থেকে গ্রহণের যোগ্যতা লাভ করে তখন তাকে হাসান লি-গইরিহী হাদীছ বলা হয়।
নোট:
একটি জঈফ হাদীছ দু‘টি শর্তে হাসান লি গইরিহি হয়।
ক. হাদীছটির য‘ঈফ হওয়ার কারণ অবশ্যই যেন রাবীর পাপীষ্ঠ হওয়া বা মিথ্যাচার না হয়। বরং হাদীছটি যেন রাবীর স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা নতুবা সানাদ বিচ্ছিন্ন হওয়া কিংবা রাবী মাসতুর হওয়া এই জাতীয় ত্রুটির কারণে জ‘ঈফ হয়ে থাকে।
খ. জঈফ হাদীছের অন্যন্য সূত্র গুলো যেন তার চেয়ে দুর্বল না হয়। বরং তার সমপর্যায়ের বা তার চেয়ে শক্তিশালী হয়।
সর্তকতা: বিভিন্ন সানাদ থেকে আসার কারণে জঈফ হাদীছকে ‘হাসান’ বলা কাজটি অনেক কঠিন। এই ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য দক্ষ মুহাদ্দিছদের শরণাপন্ন হওয়াই শেষ সমাধান।
বি: দ্র: মাসতুর ও মাজহুলের পরিচয় নিয়ে পরের নোট গুলোতে চোখ রাখুন!
(চলবে)
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক
মসজিদে নববী, মদীনা।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন