ইলমে হাদীছ: দুর্বল ও সঠিক হওয়ার দিক দিয়ে হাদীছের প্রকারভেদ

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:৩২:৫৯ দুপুর

গ্রহণযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য হওয়ার দিক দিয়ে হাদীছ দুই প্রকার যেমন মাকবুল তথা গ্রহণীয় ও মারদুদ তথা পরিত্যাজ্য।

নোট: গ্রহণযোগ্য অগ্রহণযোগ্য হওয়ার আলোচনা শুধু মাত্র খবারে আহাদের সাথে সম্পর্কিত। মুতাওয়াতির হাদীছ এই আলোচনার অর্ন্তভূক্ত নয়।

মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য হাদীছ মোট চার প্রকার:

১. ছহীহ লি-যাতিহী ২. হাসান লি-যাতিহী ৩. ছহীহ লি-গইরিহি ৪. হাসান লি-গইরিহি

ছহীহ লি-যাতিহি:

সংজ্ঞা: যে হাদীছের মধ্যে হাদীছ ছহীহ হওয়ার ৫ টি শর্ত পূর্ণরুপে পাওয়া যায় তাকে ছহীহ লি যাতিহি বলে।

হাদীছ ছহীহ হওয়ার শর্তাবলী:

১. রাবি ন্যায়পরায়ণ হওয়া

২. হাদীছ সংরক্ষণে রাবি মজবুত।

৩. সানাদ মুত্তাসলি হওয়া তথা সানাদে বচ্ছিন্নিতা না থাকা ।

৪. হাদীস শায না হওয়া ।

৫. হাদীসে কোন গোপন ইল্লাত না থাকা ।

যখন এই ৫ টি শর্ত কোন হাদীছের মাঝে পূর্ণরুপে পাওয়া যাবে তখন সেই হাদীছকে ছহীহ লি যাতিহি বলা হবে।

ন্যায়পরায়ণ: পাপী নয়, মিথ্যুক নয়, অপরিচিত নয় বরং পরিচিত, তাক্বওয়াবান, পরহেজগার ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিকে আদিল বা ন্যায়পরায়ণ বলা হয়। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বলতে ভারাত্বকে বুঝায়। চায়ের স্টলে, দোকান-পাটে আড্ডা না দেয়া, ছোট খাট বিষয় নিয়ে ঝগড়াতে লিপ্ত না হওয়া ইত্যাদী।

হাদীছ সংরক্ষণে মজবুত: হাদীছ দুইভাবে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। মুখস্থ শক্তির মাধ্যমে ও লিখে নেওয়ার মাধ্যমে। মুখস্থ শক্তিতে মজবুত অর্থ হচ্ছে, স্মৃতি শক্তি ভাল, অত্যাধিক ভুল করেনা, তার চেয়ে অত্যাধিক শক্তিশালী রাবীদের সাথে বৈপরীত্য সম্পন্ন হাদীছ বর্ণনা করেনা, হাদীছ শ্রবণ ও বর্ণনার সময় অমনযোগী থাকেনা।

লিখিত সংরক্ষণে মজবুত অর্থ হচ্ছে, লিখে নেওয়ার পর থেকে নিয়ে বর্ণনা করা পর্যন্ত কিতাবটি নিজের কাছেই থাকা, অন্য কারো কাছে হস্তান্তরিত না হওয়া, পুড়ে বা হারিয়ে না যাওয়া।

শায: যখন কোন বিশুদ্ধ হাদীছ তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশী বিশুদ্ধ হাদীছের বিরোধিতা করে তখন এই নিম্নতর হাদীছকে শায বলা হয়। এই কারণে সানাদ ছহীহ হলেও হাদীছকে ছহীহ বলা হয়না।

ইল্লাত: ইল্লাহ হচ্ছে হাদীছের গোপন দোষ-ত্রুটি। বাহ্যিকভাবে হাদীছকে ছহীহ মনে হবে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে হাদীছ ছহীহ নয়। হাদীছের ভিতরে এমন দোষ ত্রুটি আছে যা কেবল ইমাম বুখারি ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু হাতিম, ইমাম আবু যুরা, দারাকুতনী, বায়হাকী (রহঃ)-দের মত মহান মুহাদ্দিসদের পক্ষেই সম্ভব। এই ধরণের দোষ ত্রুটিকেই উসূলে হাদীছের পরিভাষায় ইল্লাত বলে।

ইল্লাতের উদাহরণ: ইবনু শিহাব জুহরি ইনি মহান মাপের মুহাদ্দিস, ন্যায়পরায়ণ এবং মজবুত । ইমাম বুখারী (রাহঃ) বা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ)-দের মত হাফেজে হাদীসদের ইবনু শিহাব জুহরি থেকে বর্ণিত প্রায় সব হাদীস জানা আছে। সে কেমন হাদীস র্বণনা করে? কোন কোন তাবেয়ী বা কোন কোন সাহাবী থেকে হাদীস র্বণনা করে? এবং তার কাছ থেকে কে কে হাদীস র্বণনা করে? যারা হাদীস র্বণনা করে তারা তাঁর কাছে কত দিন থেকেছে, তাদের সাথী কে কে? সব তাদের অবগতিতে আছ। অন্যদিকে রাসুল ছাঃ এর হাদীস পড়ে পড়ে এবং মুখস্থ করে তাদের একটা অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে । রাসুল ছাঃ এর হাদীছের শব্দ শুনলেই তারা বুঝতে পারেন হদীছটি রাসূলের কিনা । এখন এমন একটা হাদীস তারা পেলেন যা ইবনু শিহাব জুহরি রাহঃ র্বণনা করেছেন কিন্তু এমন সাহাবী থেকে যার কাছ থেকে সাধারণত তিনি র্বণনা করেন না। আবার তার কাছ থেকে শুধু মাত্র একজন ছাত্র হাদিছটি র্বণনা করেছে। ঐ ছাত্রের অন্য কোন সাথী হাদীছটি র্বণনা করেনা । অন্য দিকে হাদীছের শব্দ দেখে মনে হচ্ছে রাসুল ছাঃ তো এই ধরণের শব্দ ব্যাবহার করেন না। তখন মুহাদ্দিছগণ বলেন এই হাদীছের মধ্যে ইল্লাত আছে এই জন্য হাদীছটি ছহীহ নয়।

ছহীহ লি-যাতিহীর উদাহরণ: আমাদের নিকটে মাহমুদ নামের একজন ছাত্র শায়খুল হাদীছের বরাতে দিয়ে বলল, তিনি বলেছেন ‘টিভিতে বিভিন্ন খেলা দেখা হারাম’।

এক্ষণে আমরা দেখব অত্র খবরের মধ্যে ৫টি শর্ত পূর্ণরুপে পাওয়া যাচ্ছে কি না।

১মত: মাহমুদ ৫ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে, মুখে তার সুন্দর দাড়ি, সে হাটে-বাজারে দোকানে আড্ডা দেয়না, সুযোগ পেলেই কুরআ‘ন তিলাওয়াত করে। সুতরাং মাহমুদ একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি।

দ্বিতীয়ত: মাহমুদ একজন অত্যন্ত মেধাবী নামকরা ছাত্র। কোন বিষয় একবার শুনলেই তার মনে থাকে। সুতরাং তার স্মৃতিশক্তি প্রখর।

তৃতীয়ত: সে শায়খুল হাদীছের দারসে নিয়মিত বসে। সুতরাং শায়খুল হাদীছের বরাত দিয়ে কোন কথা নকল করা তার জন্য অসম্ভব নয়। অতএব সানাদ মুত্তাছিল।

চতুর্থত: মাহমুদের চেয়ে মেধাবী শায়খুল হাদীছের অন্য কোন ছাত্র তার এই কথার বিরোধিতা করছেনা। সুতরাং তার কথা শায নয়।

পঞ্চমত: স্বাভাবিক বিবেক অনুযায়ী আমরা জানি শায়খুল হাদীছ গুনাহের কাজের বিষয়ে খুব কঠোর সুতরাং এই জাতীয় ফতোয়া তার পক্ষ থেকে হওয়া অসম্ভব নয়। অতএব মাহমুদের কথার মধ্যে কোন ইল্লাতও নাই।

উপরোক্ত ৫ টি শর্ত পূর্ণ রুপে পাওয়ার কারণে মাহমুদের প্রদত্ত খবরটি ছহীহ লি-যাতিহী।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১২৯৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

340118
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৫৫
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খায়র। অনেক ইনফরমেটিভ।
340194
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২২
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকাল্লাহ..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File