হাদীছের মূলনীতি শিক্ষা ৫ম পর্বঃ খবারে আহাদের প্রকারভেদ ও পরিচয়
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৪৪:১৪ সকাল
খবারে ওয়াহিদ তিন প্রকার।
১. মাশহুর ২.আযীয ৩. গরীব
মাশহুরঃ শাব্দিক অর্থে প্রত্যেক যে হাদীছ মানুষের মাঝে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে যদিও সে হাদীছ জাল হয় তাই মাশহুর বা প্রসিদ্ধ হাদীছ। যেমন ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’। অত্র হাদীছটি প্রচুর প্রসিদ্ধ কিন্তু হাদীছটি জাল।
পারিভাষিক অর্থে যে হাদীছকে প্রতি স্তরে তিন বা ততোধিক রাবী বর্ণনা করে তাকে হাদীছে মাশহুর বলে।
গ্রন্থাবলীঃ মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ ও প্রচলিত হাদীছকে অনেক মুহাদ্দিছ জমা করেছেন।
১. আল মাকাসিদুল হাসানা ফি মাশতাহারা আ‘লাল আলসিনাহ- আল্লামা সাখাবী রহঃ।
২. কাশফুল খফা ও মুযিলুল ইলবাস ফি মাশতাহারা মিনাল হাদীছ আলা আলসিনাতিন নাস- আল্লামা আজুলুনী রহ:।
উল্লেখ্য যে, পারিভাষিক অর্থে যে হাদীছগুলো মাশহুর সে হাদীছগুলোকে আলাদাভাবে কোন মুহাদ্দিছ জমা করেছেন কিনা তা জানা যায়না।
আযীযঃ শাব্দিক অর্থ শক্ত হওয়া। পারিভাষিক অর্থে, যে হাদীছের বর্ণনাকারীর সংখ্যা কোন যুগে দুইজন এর কম ছিলনা তাকে হাদীছে আযীয বলা হয়। দুইজন রাবী থেকে আসার কারণে হাদীছটি গরীবের চেয়ে শক্তি সম্পন্ন হয় তাই তাকে আযীয বলা হয়।
নোটঃ
১. মুতাজিলা ফিরকার অন্যতম গুরু আবু আলী আল জুব্বায়ীর মতে হাদীছ ছহীহ হওয়ার জন্য আযীয হওয়া শর্ত। তথা প্রতি স্তরে নিম্নপক্ষে দুইজন রাবী থাকা জরুরী। এই মূলনীতির মাধ্যমেই খবরে ওয়াহিদকে অস্বিকার করার যাত্রা শুরু হয়। এটি একটি ভ্রান্ত মূলনীতি। হাদীছ ছহীহ হওয়ার জন্য সংখ্যা কোন মানদন্ড নয়। রাবীদের ন্যায়পরায়ণতাই হল অন্যতম মানদন্ড।
২. ইবনু হিব্বান রহ: মুতাজিলাদের প্রতিবাদে মন্তব্য করেন, ‘হাদীছের ভান্ডারে আযীয হাদীছের কোন অস্তিত্ব নাই’। হাফেয ইবনু হাজার রহ: তার এই কথাকে খন্ডন করে আযীয হাদীছের উদাহরণ পেশ করেছেন।
উদাহরণঃ
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ - رضى الله عنه - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ ্র فَوَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ গ্ধ
তথাঃ আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সেই সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। ততক্ষণ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি মু‘মিন হতে পারবেনা যতক্ষণ না আমি তার নিকটে তার পিতা ও মাতার চেয়ে ভালবাসার পাত্র না হই’। (বুখারী হা/১৪)
গ্রন্থ: আযীয হাদীছকে জমা করে আলাদাভাবে কোন কিতাব মুহাদ্দিছদের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়না। আযীয হাদীছের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে।
গরীবঃ শাব্দিক অর্থ অপরিচিত। পারিভাষিক অর্থে, যে হাদীছের কোন এক স্তরের রাবী একজন সেই হাদীছকে গরীব বলা হয়।
ব্যাখ্যাঃ গরীব হওয়ার জন্য হাদীছের সকল স্তরে একজন রাবী হওয়া শর্ত নয়। বরং সকল স্তরে যদি বহু সংখ্যক রাবী হয় কিন্তু কোন এক স্তরে একজন রাবী তাহলেই তা গরীব বলে গণ্য হবে। অনূরুপই আযীয হাদীছের ক্ষেত্রে। কোন এক স্তরে দুইজন রাবী থাকলেই তা আযীয বলে গণ্য হবে। যদিও অন্য স্তরে শত রাবী থাকে।
উদাহরণঃ মনে করুন! আমাকে আব্দুর রহমান এবং ফরিদ নামের দুইজন এসে বলল, ‘আপনি কি জানেন আজ না কাশিমপুর গ্রামের মাহমুদ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে’ ? আমি বললাম, ‘তোমরা কিভাবে জানলে’? তারা বলল, ‘আমাদেরকে আল আমিন বলেছে। তাকে নাকি মাহমুদের দুই বন্ধু জুবায়ের ও আকরাম বলেছে’ ।
এই ঘটনাটার সকল স্তরে দুইজন করে রাবী রয়েছে। শেষ স্তরে আব্দুর রহমান ও ফরিদ। প্রথম স্তরে জুবায়ের ও আকরাম। কিন্তু মাঝখানে শুধু আল-আমিন। এখন এই ঘটনাকে আমরা কি হুকুম লাগাব? অবশ্যই গরীব। কেননা, সকল স্তর আমাদের লক্ষ্য নয়। কোন এক স্তরে একজন রাবী হলেই তা গরীব বলে বিবেচিত হবে। তেমনি এই উদাহরণের সকল স্তরে যদি রাবীর সংখ্যা দুই-এর বেশী হয় কিন্তু কোন এক স্তরে গিয়ে শুধু দুই জন রয়েছে তাহলে তা আযীয বলে বিবেচিত হবে।
যে সব গ্রন্থে গরীব হাদীছ বেশী পাওয়া যায়ঃ
১. মুসনাদে বাযযার।
২. মুজামুল আওসাত- তাবারানী।
৩. গরায়েবে মালিক- দারাকুতনী।
নোটঃ
১. কোন হাদীছ মাশহুর বা আযীয হলেই সে হাদীছ গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে এমনটি নয়। বরং মাশহুর ও আযীয হাদীছের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে সানাদের ছহীহ ও জঈফ হওয়ার উপর। তবে হ্যা, মাশহুর হাদীছ যদি ছহীহ হয় তাহলে খবারে আহাদের অন্য প্রকার গুলোর উপর প্রাধান্য পাবে।
২. এমনও হাদীছ পাওয়া যায় যার মূল টেক্সট বহু সানাদ থেকে আসলেও কোন একটা নির্দিষ্ট সানাদ গরীব হয়। এই রকম সময়ে ইমাম তিরমিযী বলে থাকেন, ‘এই হাদীছ এই সানাদে গরীব’। এর অর্থ এই নয় যে, হাদীছের মূল টেক্সটও গরীব। যেমন কোন একটা হাদীছ ইবনে মাসউদ ও ইবনু আব্বাস রাঃ থেকে বহু সানাদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এই একই হাদীছটি আবু হুরাইরা রাঃ থেকে শুধু একজন বর্ণনা করেছেন। এখন আবু হুরাইরা রাঃ এর সানাদ উল্লেখ করার পর ইমাম তিরমিযী বলবেন এই হাদীছ এই সানাদ থেকে গরীব।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন