ইলমে হাদীছ : হাদীছের রাবীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে হাদীছের প্রকারভেদ

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:৩৫:০০ দুপুর

হাদীছ আমাদের নিকটে কতজনের মাধ্যমে পৌছল, এর উপর ভিত্তি করে মুহাদ্দিসগণ হাদীছকে দুইভাবে ভাগ করে থাকেন। যেমন-

১. খবারে মুতাওয়াতির ২. খবারে ওয়াহিদ

খবারে মুতাওয়াতির:

সংজ্ঞা: যদি কোন হাদীছ আমাদের নিকটে অগণিত ব্যক্তির মাধ্যমে পৌঁছে তাহলে তাকে মুতাওয়াতির হাদীছ বলা হয়।

আরবীতে প্রদত্ত সংজ্ঞাগুলোর অনুবাদ করলে দাড়ায়, ‘যে হাদিসের বর্ণনা কারী প্রতি যুগে এত বেশী যে, মানুষের স্বভাবজাত সত্ত্বা এত লোকের একসাথে মিথ্যা বলাকে অসম্ভব মনে করে সেই হাদীছকে ‘খবারে মুতাওয়াতির’ বলে’।

র্শতাবলী: মুহাদ্দিসগণ হাদীছ মুতাওয়াতির হওয়ার কিছু র্শত র্নিধারণ করে থাকেন যেমন-

১. রিওয়ায়েতটি বিপুল সংখ্যক রাবী কতৃক বর্ণিত হওয়া।

২. প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সানাদের সকল স্তরে এই সংখ্যাধিক্য বিদ্যমান থাকা।

৩. রাবীগণের মিথ্যা বিষয়ে একমত হওয়া স্বভাবত অসম্ভব মনে হওয়া।

৪. রিওয়ায়াতটি ইন্দ্রিয় নির্ভর হওয়া। যেমন আমরা শুনেছি, আমরা দেখেছি ইত্যাদী শব্দ দ¦ারা বর্ণিত হওয়া। তথা ছাহাবী হাদীছ বর্ণনার সময় ‘রাসূল ছাঃ বলেছেন’ এই জাতীয় শব্দ ব্যবহার করবেনা। যে হাদীছে এই রকম শব্দ রয়েছে সে হাদীছ মুতাওয়াতির হিসেবে গণ্য হবেনা। বরং ছাহাবী বলবেন ‘আমি রাসূলকে বলতে শুনেছি’ বা ‘আমি রাসূলকে করতে দেখেছি’।

প্রকারভেদ: হাদীছে মুতাওয়াতির দুই প্রকার শব্দগত ও অর্থগত।

১. মুতাওয়াতির লাফযী বা শাব্দিক মুতাওয়াতির: যে হাদীছের শব্দ ও ভাব একইরুপে সকল যুগে বহু সংখ্যক রাবী কতৃক বর্ণিত হয়েছে তাকে মুতাওয়াতির লাফযী বলা হয়।

উদাহরণ: রাসূল ছাঃ বলেন যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করবে তার থাকার জায়গা জাহান্নাম। সত্তরের অধিক ছাহাবী এই হাদীছকে হুবহু এই শব্দে বর্ণনা করেছেন। এই হাদীছের মুতাওয়াতির হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিস একমত পোষণ করেছেন।

২. মুতাওয়াতির মা‘নাবী বা সমষ্টিগতভাবে মুতাওয়াতির: যেই হাদীছের মূলভাবটা অনেক হাদীছে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণিত হয়েছে সেই হাদীছকে মুতাওয়াতিরে মানাবী বলা হয় ।

উদাহরণ: রাসূল (ছাঃ) এর মুজিযা। রাসূল (ছাঃ)-এর মুজিযা ছিল এই মর্মে সরাসরি কোন হাদীছ মুতাওয়াতির ভাবে বর্ণিত হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাসূল ছা: থেকে যত মুজিযার প্রমাণ পাওয়া যায় তার সমষ্টি অবশ্যই মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌছবে। সুতরাং রাসূলের মুজিযা ছিল এটা মা‘নাবী মুতাওয়তির।

নির্ধারিত সংখ্যা: অনেকেই মুতাওয়াতির হাদীছের মানদন্ড হিসেবে কিছু সংখ্যা র্নিধারণ করেছেন। কেউ জিনার সাক্ষীকে সামনে রেখে প্রতি স্তরে ৪ জন রাবীর কথা বলেছেন। কেউ মূসা আঃ এর সত্তর জনকে সাথে নিয়ে তূর পাহাড়ে যাওয়ার ঘটনাকে সামনে রেখে সত্তরকে মানদন্ড র্নিধারণ করেছেন। মুতাওয়াতির হাদীছ র্নিণয়ের ক্ষেত্রে এই জাতীয় মানদন্ডের কোন গুরুত্ব নাই। মুহাদ্দিসগণ তাদের বিশেষ যোগ্যতা বলে হাদীছের রাবীর সংখ্যাধিক্য দেখে মুতাওয়াতির হাদীছ নির্ণয় করবেন।

হুকুম: মুতাওয়াতির হাদীছের মাধ্যমে যে ইলম হাছিল হয় তা ইলমে জরুরী বা ইলমে ইয়াকিনী।

নোট: ইলমে জরুরী একটি মানতিকী পরিভাষা। মানুষ যে বিষয়ে কোন রুপ চিন্তা ও গবেষণা ছাড়াই জানতে পারে তাকে ইলমে জরুরী বলা হয়। যেমন মানুষ কোন রুপ চিন্তা ও গবেষণা ছাড়াই আগুন ও পনিকে চিনতে পারে। সুতরাং আগুন ও পানির জ্ঞান জরুরী ও বাদিহী জ্ঞান। অনুরুপ মুতাওয়াতির হাদীছের সানাদের বিষয়ে কোন রুপ চিন্তা ও গবেষণা করার প্রয়োজন হয়না। কোন হাদীছ মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছা মাত্রই সেটা যে রাসূলের কথা তা কোনরুপ দ্বিধা ছাড়াই জানা যায়।

মুতাওয়াতির হাদীছের সংকলন: মুতাওয়াতির হাদীছ জমা করে কয়েকটি বই সালাফে ছলেহীনগণ লিখেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, অল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) প্রণীত ‘আল আজহার আল মুতানাছিরাহ ফিল আহাদিছিল মুতাওয়াতিরাহ’।

(চলবে)

আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক

মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব

১০ যুলকা'দা, ১৪৩৬ হি.।

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

339022
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০৯
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : যয়ীফ হাদীস এর হুকুম কি ?
339079
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
339746
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খইর । পরবর্তী লেখাগুলোতে চোখ রাখুন ইনশাআল্লাহ ! সব উত্তর পাবেন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File