হাদীছের মূলনীতি শিক্ষা : সানাদ ও মাতান, ছাহাবী ও তাবেয়ী
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ২৯ আগস্ট, ২০১৫, ১২:৪৯:৪৩ দুপুর
#সানাদ ও মাতান*
সানাদ: ছাদ পর্যন্ত পৌছার জন্য যেমন সিঁড়ি লাগে তেমনি রাসুলের হাদীছ পর্যন্ত পৌছার জন্য মানব সিঁড়ি লাগে । মানুষের এই সিঁড়িকেই সানাদ বলে।
উদাহরণ: মনে করুন! আমাকে আব্দুর রহমান নামের একজন এসে বলল, ‘আপনি কি জানেন আজ না কাশিমপুর গ্রামের মাহমুদ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে’ ? আমি বললাম, ‘তুমি কিভাবে জানলে’? সে বলল, ‘আমাকে আল আমিন বলেছে। তাকে নাকি মাহমুদের পাশের বাড়ী ওয়ালা জুবায়ের বলেছে’ ।
এই যে সংবাদটা আব্দুর রহমান, আল-আমিন ও জুবায়ের নামের তিনজন ব্যক্তির মাধ্যমে আমার নিকট পৌছল এই তিনজন ব্যক্তির সমষ্টিকে সানাদ বলে ।
মাতান: মানব সিঁড়ির উপর ভিত্তি করে আমরা যে সংবাদ পাই তাকেই মাতান বা মূল টেক্সট বলে। যেমন উপরিউক্ত উদাহরণে ‘কাশিমপুর গ্রামের মাহমুদ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে’ এই অংশটুকু মাতান।
সারর্মম: ইমাম বুখারী ইমাম মুসলিম সহ হাদীছের সংকলকদের নিকটে হাদীছটা যেই সমস্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে পৌঁছেছে তাদের সমষ্টিকে সানাদ বলে এবং তাদের প্রত্যেককে আলাদা ভাবে রিজাল বা রাবী বলে। সানাদ যেখানে শেষ হয় সেখান থেকে মাতান শুরু হয়।
#সাহাবী ও তাবেয়ী*
সাহাবী: যিনি রাসূলের সাথে মুমিন অবস্থায় সাক্ষাত করেছেন এবং মুমিন অবস্থায় মারা গেছেন।
উদাহরণ: আবু বাকার (রাঃ), উমার (রাঃ), উসমান (রাঃ), আলী (রাঃ) ও অন্যন্য সাহাবীগণ ।
ব্যাখ্যা: যারা রাসূলের সাথে মুমিন অবস্থায় দেখা করার পর মুরতাদ হয়ে গেছেন এবং মুরতাদ অবস্থায় মারা গেছেন তারা সাহাবী নন। কিন্তু যারা মুরতাদ হওয়ার পর আবার ঈমান নিয়ে এনেছেন তারা সাহাবী হিসেবে গণ্য হবেন।
উদাহরণ: আব্দুল্লাহ বিন আবিস সারহ, তুলায়হা আল আসাদী। এনারা মুরতাদ হওয়ার পর আবার তাওবা করে ঈমান আনয়ন করেছেন।
হুকুম: ছাহাবীগণ সবাই ন্যায়পরায়ণ। তারা জেনে বুঝে রাসূলের উপর কোনও মিথ্যারোপ করতে পারেন না।
তাবেয়ী: যিনি মুমিন অবস্থায় সাহাবীর সাথে দেখা করেছেন এবং মুমিন অবস্থায় মারা গেছেন।
উদাহরণ: নাফে‘, মুজাহিদ, তউস।
মুখাজরাম: যিনি একাধারে জাহিলী যুগ ও ইসলামী যুগ পেয়েছেন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত হয়নি।
উদাহরণ: বাদশাহ নাজ্জাশী, আবু উসমান আন নাহদী, আবু আমর আশ শায়বানী।
হুকুম: মুখাজরামগণ উঁচু পর্যায়ের তাবেয়ী হিসেবে গণ্য হবেন। সাহাবী হিসেবে গণ্য হবেন না। যদিও তারা রাসূলের জীবদ্দশায় ঈমান আনয়ন করে থাকেন।
মুখাজরামগণের সংখ্যা: মুখাজরাম রাবীগণের সংখ্যা বিশের অধিক।
নোট: আমর বিন আস (রাঃ) মহান ছাহাবীদের একজন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তিনি যার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তিনি সাহাবী ছিলেন না বরং তাবেয়ী বা মুখাজরাম ছিলেন তথা বাদশাহ নাজাশী। বাদশাহ নাজাশীর মুসলিম হওয়ার ব্যপারে হাফেজ ইবনু হাজার আসকালানী তার ইসাবা গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ।
(চলবে)
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক
মদিনা বিশ্ব বিদ্যালয়, সউদি আরব
৯ যুলকাদা, ১৪৩৬ হি.।
বিষয়: বিবিধ
১৬১৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন