শায়খ আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদের দারস
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ১২ মে, ২০১৫, ০১:১৬:০৮ রাত
মসজিদে নাবাবীতে যতগুলো দারস হয় তার মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং তালেবে ইলমদের ভীড়ে প্রাণবন্ত দারস হচ্ছে শায়খ আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদের দারস। আমি তার নাম মদীনা আসার অনেক আগেই শুনেছিলাম। তার বই পড়ার মাধ্যমে তার ছাত্র হওয়ার সুযোগ হয় গত বছর। দারুল উলুম দেওবান্দে আবু দাউদ পড়ার সময় আমি তার আবু দাউদের শারাহ বা ব্যাখ্যগ্রন্থ থেকে অনেক হেল্প নিতাম। সংক্ষিপ্ত ও সাবলীল ভাষায় তিনি প্রতিটি হাদিছের সানাদ ও মাতানের সার র্নিযাস তুলে ধরতেন।
মদীনাতে আসার পর তার দারসে বসার মাধ্যমে তার সরাসরি ছাত্র হওয়ার সুযোগ হয়েছে কিন্তু এখনো তার দারসে নিয়মিত হতে পারেনি। আমরা কুল্লিয়াতুল হাদিছের কোনও এক সেমিস্টারে অবশ্যই তার ক্লাস পাব ইনশাআল্লাহ তারপরেও মসজিদে নাবাবীর দারসের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আমরা ক্লাসের দারসে পাবনা।
শায়খ আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদ এখন অন্ধ। তাই দারস দেওয়ার সময় তার সামনে কোনও কিতাব থাকেনা। তিনি নিজের হিফজ বা মুখস্থ শক্তির সাহায্যে দারস দেন।
এখন তিনি মুসলিম শরিফের কিতাবুল ইমারাতের দারস দিচ্ছেন। তার দারসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তার দারসে যিনি হাদিছের ইবারাত পড়েন তিনিও আমাদের কুল্লিয়াতুল হাদিছের প্রথিতযশা উস্তাদ শায়খ রুশায়দান। শায়খ রুশায়দান সর্ম্পকে বলা হয় তিনি শায়খ আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদের যা ইলম আছে সব তিনি নিয়ে ফেলেছেন। ফলত এই দারসে ছাত্ররা এক সাথে দুই মহান শায়খ থেকে উপকার হাছিল করার সুবর্ণ সুযোগ পায়।
শায়খ রুশায়দান প্রথমে হাদিছের ইবারাত পড়েন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে থেমে থেমে। এখানে একটু বলে নিই হাদিছের ইবারাত পড়া সম্পর্কে আমার দুই ধরণের অভিজ্ঞতা আছে। আব্বুর কাছে যখন মিশকাত বা বুলুগুল মারামের ইবারাত পড়তাম তখন ইবারত কারচুপি করার কোনও সুযোগ ছিলনা। স্পষ্টভাবে সব হরফে যের যবর পেশ লাগিয়ে পড়তে হত। শেষের দিকে অলায য-লিনের মত কোনও লম্বা টান দিয়ে ইবারাত গোপন করার কোনও সুযোগ ছিলনা বরং অলায য-লিনা বলার মাধ্যমে নুনের ইবারাত স্পষ্ট করে পড়তে হত। এই জন্য তার দারসে ইবারাত ভালভাবে ঠিক করে যেতে হত। আব্বুর এই দৃষ্টি ভঙ্গিটা প্রায় সকল ছাত্রের ভয়ের কারণ ছিল, ইবারাত ভুল হলেই যে, মহাবিপদ....। আর সত্যি বলতে কি আজ যতটুকু যের যবর পেশ ছাড়া ইবারাত পড়তে পারি তা সেই সময়েরই চেষ্টার ফসল। সেই সময় আমাদের মধ্যে ইবারাত পড়ার জন্য প্রতিযোগিতা চলত। টিচার ক্লাসে আসতেই একসাথে চার পাচ জন পড়া শুরু করত .. এক দেড় মিনিট চলার পর যার হিম্মত একটু বেশী থাকত সেই বেচারাই টিকে যেত। তারপর আস্তে আস্তে সে ছাড়লে আরেক জন ধরত...এই রকম। দারুল উলুম দেওবান্দে আসার পর এর সম্পূর্ণ উল্টা ধরণ। ছাত্ররা সুর করে হাদিছের ইবারাত পড়ত। ইবারাত পাঠকদের নামের লিস্ট হত। যার যেই দিন নাম আসত সে সেই দিন পড়ত। দারূল উলুম দেওবান্দে সুর করেই হাদিছের ইবারাত পড়েছি। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন বুখারির উস্তাদ মুফতী সাঈদ আহমাদ পালানপুরী তিনি নিজেই হাদিছের ইবারাত পড়তেন। তার দৃষ্টিতে এটাই আগের যুগের মুহাদ্দিসদের ছুন্নাত তারা হাদিছের ইবারাত পড়ে ছাত্রদের শুনাতেন।
আর শায়খ আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদের দারসে শুধু একজনই ইবারাত পড়েন এবং সুর ছাড়াই থেমে থেমে।
যাইহোক শায়খ রুশায়দানের ইবারাত পড়া হলে শায়খ আব্বাদ হাদিছের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করেন। ব্যাখ্যা শেষ হলে শায়খ রুশায়দান আবার হাদিছ থেকে শুধু সানাদ পড়েন। এবং প্রত্যেক অপরিচিত রাবীর নামের সামনে থেমে যান, তখন শায়খ আব্বাদ তার স্মৃতি শক্তি থেকেই বলে দেন এই রাবীটা কে? তার পিতার নাম কি? তিনি কোথাকার অধিবাসী ছিলেন? এরপর আবার নতুন হাদিছ শুরু হয়।
তার মুখস্থ শক্তি থেকে দারস দেয়া দেখে আমি যারপর নাই আশ্চর্য হয়েছি। মহান আল্লাহ এই মহান মুহাদ্দিছের হায়াতে আরো বরকত দিন! এবং আমার মত অধমকে তার থেকে পরিপূর্ণ উপকার হাছিলের তাওফিক দান করুন!
বিষয়: বিবিধ
১১৪৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন