ওমর রাঃ এর ইসলাম গ্রহণের প্রসিদ্ধ কাহিনি হাদিসের মূলনীতির কষ্টিপাথরে কতটুকু ঠিক ?

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ১৬ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:২৮:২৮ সন্ধ্যা

ওমর রাঃ এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী যদি একটা হত তাহলে জঈফ হলেও না হয় কোনও মতে উল্লেখ করা যেত। কিন্তু তার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী প্রায় তিনভাবে প্রসিদ্ধ । এছাড়া অপ্রসিদ্ধ আরো অনেক ঘটনা আছে।

১ম- তার ইসলাম গ্রহণের কাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে তিনি তার বোন ও ভগ্নিপতিকে প্রহার করেন এবং তার বোনের মুখ থেকে কুরআনের তিলাওয়াত শুনে ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা করেন। দেখুন ! তারিখুল মাদিনা, আখাবারে ওমর অধ্যায়, হা/ ৯৯৬।

তাহকিকঃ এই হাদিস জঈফ। কেননা এই হাদিসের একজন রাবী হচ্ছে

আল কাসেম বিন উসমান আল বাসারি

যার বিষয়ে মুহাদ্দিসদের মন্তব্য নিম্নরূপ

ইমাম দারাকুতনী বলেছেন সে শক্তিশালী নয় ।

ইমাম ইবনে হিব্বান বলেছেন সে ভুল করে থাকে।

ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন তার এমন অনেক হাদিস আছে যার মুতাবাত করা হয়না।

আর ইমাম বুখারীর এই কথার উদ্দেশ্য সাধারণত কি হয়ে থাকে সেই বিষয়ে ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহঃ বলেন ইমাম আহমাদের কোনও রাবীর হাদিসকে মুনকার বলার সমপরিমাণ।

এর দ্বারা ইমাম বুখারী রহঃ জঈফ হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে থাকেন।

ইমাম উকাইলী বলেছেন তার হাদিসের মুতাবাত করা হয়না

দেখুন! লিসানুল মিযান, বৈরুত, রাবী নং ১৪৩৪ পৃষ্ঠা ৪/৪৬৩

২য় – আরেকটি ঘটনা হচ্ছে হামযা রাঃ ওমর রাঃ এর ইসলাম গ্রহণের তিনদিন পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিল । হামযা রাঃ এর এই ইসলাম গ্রহণ তার অন্তরে পরিবর্তন ঘটায় এবং তিনি ইসলামের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েন। এই হাদিসে আরও আছে যে, তিনি তার ভগ্নিপতি ও বোনকে জিজ্ঞেস করে রাসুল ছাঃ এর অবস্থান জেনে নেন এবং সেখানে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই হাদিসে ওমর রাঃ তার বোনদের সাথে দেখা করলেও তার বোনের কাছ থেকে তিয়ালোয়াত শুনা এবং তার বোনকে মারার কোনও কথাই নাই। দেখুন ! হুলিয়াতুল আওলিয়া, পৃষ্ঠা ১/৪০,

তাহকিকঃ এই সানাদেও ইবনে আবি ফারোয়া নামের একজন রাবী আছে যে দুর্বল। বিস্তারিত দেখুন!! সিলসিলা জইফা হা/ ৬৫৩১।

৩য়- ওমর রাঃ ইসলামে গ্রহণের পূর্বে একদিন মুহাম্মাদ ছাঃ এর পিছু নেন এবং তার মসজিদের পাশে দাড়িয়ে তার তিলাওয়াত শুনতে থাকেন ঐ দিন রাসুল ছাঃ সূরা হাক্কা তিলাওয়াত করছিলেন। রাসুল ছাঃ এর এই তিলাওয়াত শুনে তার অন্তরে এটা নিশ্চিত বিশ্বাস হয়ে যায় যে, এই কালাম মানুষের বানানো নয় বরং আল্লাহর কালাম এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। দেখুন!! জামিউল হাদিস, হা/ ২৯৮৮৯।

তাহকিকঃ উপরের তিনটির মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ হচ্ছে এটি কেননা এই সানাদে কোনও দুর্বল রাবী নাই সবাই শক্তিশালী । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই সানাদের একজন রাবি শুরাইহ এর ওমর রাঃ থেকে শ্রবণ প্রতিষ্ঠিত নয়।

এই তিনটি ছাড়া আরো অনেক অপ্রসিদ্ধ ঘটনা আছে ওমর রাঃ এর ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী নিয়ে।

সঠিক কাহিনীঃ আর এবং ওমর রাঃ এর ইসলাম গ্রহণের আসল কারণ এবং সবচেয়ে বিশুদ্ধ রিওয়ায়েত হচ্ছে রাসুল ছাঃ দুয়া করেছিলেন আল্লাহর কাছে এই বলে যে, হে আল্লাহ তুমি ওমর দ্বারা ইসলামকে সম্মানিত কর। অন্য রিওয়াতে আছে হে আল্লাহ তুমি আবু জাহাল এবং ওমরের মাঝে একজনের ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামকে সম্মানিত কর। দেখুন ইবনু মাজাহ, হা/১০৫, সিলসিলা সহিহা হা/ ৩২২৫।

মূলত রাসুল ছাঃ এর এই দুয়াই তার অন্তরে পরিবর্তন সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট অন্য কোনও ঘটনার মুখাপেক্ষী হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। রাসুল ছাঃ এর এই দুয়ার কারণেই ওমর রাঃ ইসলাম গ্রহণ করেন।

আর এটা স্পষ্ট ভাবে একটি হাদিস দ্বারা বুঝা যায়

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুল ছাঃ বললেন, হে আল্লাহ! ইসলামকে ওমর বা আবু জাহেলের ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে সম্মানিত কর! রাসুল ছাঃ এর এই দুয়া করার পরের দিন ওমর রাঃ সকাল করলেন এবং সকাল সকাল রাসুল ছাঃ এর কাছে চলে আসলেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন।

দেখুন! ফাযায়েলে সাহাবা, ইমাম আহমাদ হা/৬৪৫, মিশকাত হা/৬০৪৫। আলবানী রহঃ এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।

দেখুন! এখানে মাঝখানে কোনও ঘটনা উল্লেখ নাই । রাসুল দুয়া করলেন আর উমর রাঃ পরের দিন গিয়ে ইসলাম কবুল করলেন। আপনি আরবী টেক্সট গুলো দেখতে পারেন সেখানে রাসুলের দুয়ার পর ফাআসবাহা এই শব্দে ফা ব্যবহার করা আছে যা রাসুলের দুয়া এবং ওমরের ইসলাম কবুলের মাঝে যে কোনও বিরাট ব্যবধান এর পথ বন্ধ করে দেয়। আর রাসুলের দুয়া সাধারণত সাথে সাথে কবুল হয় । তাহলে সাথে সাথে কবুল হওয়ার পর কিভাবে ওমর রাঃ তিলাওয়াত শুনে একজনকে মারতে পারেন???

প্রথম ঘটনাটি তথা ওমর রাঃ তার বোনকে মেরেছিলেন এই ঘটনাটি পরবর্তীতে উল্লেখিত তার চেয়ে শক্তিশালি হাদিসগুলির বিরোধি হওয়ার জন্য অবশ্যই মুনকার। এবং তার মুনকার হওয়ার চেয়ে মিথ্যার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে আরেকটি হাদিস, যেখানে প্রথমে উল্লেখিত মারার ঘটনার প্রসিদ্ধ রাবি আল কাসেম বিন উসমান নিজে হাদিস বর্ণনা করছেন কিন্তু সেখানে এই জাতীয় কোনও ঘটনা উল্লেখ করেন নি । তিনি আনাস রাঃ থেকে বর্ণনা করছেন রাসুল ছাঃ বললেন হে আল্লাহ! ইসলামকে ওমর বা আবু জাহেলের ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে সম্মানিত কর। রাসুল ছাঃ এর এই দুয়া করার পরের দিন শুক্রবার সকাল সকাল ওমর রাঃ রাসুল ছাঃ এর কাছে চলে আসলেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন। দেখুন! আল আহাদিসুল মুখতারা হা/২৫৭৬।

যাইহোক শেষ কথা হচ্ছে প্রসিদ্ধ এই ঘটনা সানাদ্গত ভাবে জঈফ এবং মাতানগত ভাবে মুনকার। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, এই ঘটনাকে একদম ডাহা মিথ্যা বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত আমি এর জবাবে বলতে চাই। মিথ্যা এবং জঈফ এর মধ্যে পার্থক্য না করার একটা ভুল প্রবণতা আমাদের আলেম ওলামার মাঝে দেখা যায়। আর এটা শুরু হয়েছে আলবানি রহঃ এর একই বইয়ে জাল ও জঈফ হাদিস জমা করার ফলে তিনি যদি জাল হাদিসগুলো এক বইয়ে এবং জঈফ হাদিস গুলো আলাদা বইয়ে জমা করতেন তাহলে এই ভুল প্রবনতা তৈরী হতনা। এই বিষয়ে বিস্তারিত একদিন লিখব।

যাইহোক দুঃখ জনক হলেও সত্যি যে, প্রথম ঘটনা তথা ওমর রাঃ তার বোনকে প্রহার করেছিলেন এই ঘটনা আমাদের মাঝে এত প্রসিদ্ধ যে, অনেক ভাল আলেমো অসচেতনতা বশত এই কিসসা মানুষকে শুনিয়ে থাকেন এমনকি কলমেও লিখে থাকেন। আর আফসোস!! আমাদের সমাজের কিছু আলেম ওলামা নামের কলংকের জন্য যারা, এই সমস্ত আজিব গরিব কিসসা কাহিনী উচ্ছেদ করা তো অনেক দুরের কথা এগুলো কে কিভাবে সমাজে আরো প্রতিষ্ঠিত করা যায় তার পিছনে নিজের ইলমি পরিশ্রম সম্পূর্ণ টাই ব্যয় করছেন।

আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করুন!!!

বিষয়: বিবিধ

১৩৫২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

284929
১৬ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
এস এম আবু নাছের লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইর। আব্দুল্লাহ ভাই, অনেক মোবারকবাদ গ্রহন করবেন।
১৬ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫০
228188
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেন : ওয়ানতুম ফাজাযাকাল্লাহ খায়র Happy Happy Happy Talk to the hand Talk to the hand
285231
১৭ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫০
আবদুল্লাহ মাহমুদ লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ Rose Rose Rose
১৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩১
228636
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেন : Happy Happy Happy Talk to the hand Talk to the hand Talk to the hand ওয়ানতুম ফাজাযাকাল্লাহ খায়র
320327
১৬ মে ২০১৫ দুপুর ১২:০৫
আহসান সাদী লিখেছেন : চমৎকার লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
১৬ মে ২০১৫ দুপুর ০১:৩১
261425
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেন : বারাকাল্লাহ ফিক

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File