হাদীসের সানাদ সহিহ হলেই কি হাদীস সহিহ হয়ে যায়?
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ১৬ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৩:২৭ সকাল
উত্তরঃ হাদিস সহিহ হওয়ার জন্য মোট পাঁচটি শর্ত।
১, রাবি ন্যায়পরায়ণ হওয়া
২, রাবি শক্তিশালী হওয়া
৩, সানাদ মুত্তাসিল হওয়া তথা সানাদে বিচ্ছিন্নতা না থাকা।
৪, হাদীস শায না হওয়া
৫, হাদীসে কোন গোপন ইল্লাত না থাকা।
বর্তমানে বই পুস্তক পড়ে শুধু এর মধ্যে থেকে তিনটি বিষয় জানতে পারা যাবে।
রাবী শক্তিশালী কিনা, রাবি ন্যায়পরায়ণ কিনা, এবং সানাদ মুত্তাসিল না মুঙ্কাতি। এছাড়া বাকী যে দুটি শর্ত আছে ইল্লাত না থাকা এবং শায না হওয়া। তা জানা যার তার পক্ষে সম্ভব নয়। ইমাম বুখারি ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু হাতিম, ইমাম আবু যুরা, দারাকুতনী, বায়হাকী রাহঃ দের মহান মুহাদ্দিসদের পক্ষেই কেবল সম্ভব। এই জন্য বর্তমান জামানার কোন মুহাদ্দিসের জন্য এটা শোভনীয় নয় যে সে কোন হাদিসকে সহিহ বলে বা জঈফ বলে। হ্যাঁ সে এটা বলতে পারে যে এই হাদীসের সানাদ সহিহ এই হাদীসের সানাদ দুর্বল। কেননা এমন অনেক হাদীস আছে যার সানাদ তো সহিহ কিন্তু তার মধ্যে এমন গোপন ইল্লাত আছে যার কারনে হাদিসটি মাতান গত ভাবে জঈফ হবে এবং তার উপর আমল শুদ্ধ হবেনা।যা জানা যেন তেন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার কখনো হাদিসের সানাদ সহিহ হলেও তা তার চাইতে কোন শক্তিশালী রাবীর বর্ণিত হাদীসের বিরোধিতা করে তখন এই হাদীসের উপর আমল শুদ্ধ হবেনা।
এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় মুহাদ্দিস গণ যখন বলেন এই হাদিসের সানাদ সহিহ তার মানে এই নয় যে এই হাদীস সহিহ বরং এই হাদীসের মধ্যে সহিহ হওয়ার মোট ৫টি শর্তের তিনটি পাওয়া গেছে এবং বাকী দুটি সম্পর্কে মুহাদ্দিস নিশ্চিত হতে পারেন নি তাই বলছেন এই হাদিসের সানাদ সহিহ। তখন দেখতে হবে অন্য মুহাদ্দিস গণ কি এই হাদীসের কোন ইল্লাত বর্ণনা করেছেন বা এই হাদীস কি শায? যদি না হয় তাহলে তার উপর আমল শুদ্ধ হবে।আর যদি পাওয়া যায় তাহলে সানাদ সহিহ হওয়ার পরেও এর উপর আমল শুদ্ধ হবেনা।
অতএব গবেষক ও পাঠকদের এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিৎ। বিষয়টি অতান্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন না বর্তমান জামানায় কিছু জাহেল জেনারেল শিক্ষিত নামধারী মুহাদ্দিস নিজে থেকেই হাদীসের সহিহ জঈফ বের করতে যায় এবং মুহাদ্দিসদের পক্ষ থেকে কোন রাবীর উপর দুই তিনটা কথা নকল করে দিয়ে হাদিসকে জঈফ বলতে চায় অথচ তার ইল্লাতের ব্যাপারে কোন ইলম নাই। সুতরাং এই জাতীয় ফিতনা বাজ থেকে সাবধান!
এখানে একটা কৌতূহল জাগতে পারে ইল্লাত বা গোপন দোষ কেমন বিষয় যা শুধু মহান মুহাদ্দিসদের পক্ষেই জানা সম্ভব?এর জবাবে আমি সংক্ষিপ্ত ভাবে কিছু উদাহরণ দিচ্ছি যা আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে। মনে করেন ইবনু শিহাব জুহরি ইনি মহান মাপের মুহাদ্দিস, ন্যায়পরায়ণ এবং শক্তিশালী। ইনার বর্ণিত হাদীস সহিহ হবে। কিন্তু ইনিও তোঁ মানুষ এনার পক্ষ থেকেও তো মাঝে মাঝে ভুল হতে পারে। এখন ইমাম বুখারী রাহ বা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহঃদের মত হাফেজে হাদীসদের ইবনু শিহাব জুহরি থেকে বর্ণিত প্রায় সব হাদীস জানা আছে। সে কেমন হাদীস বর্ণনা করে? কোন কোন তাবেয়ী বা কোন কোন সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করে?এবং তার কাছ থেকে কে কে হাদীস বর্ণনা করে?যারা হাদীস বর্ণনা করে তারা তাঁর কাছে কত দিন থেকেছে, তাদের সাথী কে কে?সব তাদের জানা আছে।অন্যদিকে রাসুল ছাঃ এর হাদীস পড়ে পড়ে এবং মুখস্থ করে তাদের একটা অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে যে রাসুল ছাঃ এর হাদীসের শব্দ এই রকম হয়। এখন এমন একটা হাদীস তারা পেলেন যা ইবনু শিহাব জুহরি রাহঃ বর্ণনা করছেন কিন্তু এমন সাহাবী থেকে যার কাছ থেকে সাধারণত তিনি বর্ণনা করেন না। আবার তার কাছ থেকে শুধু মাত্র একজন ছাত্র হাদিসটি বর্ণনা করছে। ঐ ছাত্রের অন্য কোন সাথী হাদিসটি বর্ণনা করেনা। এবং তারা জানেওনা যে ইবনু শিহাব জুহরি রাহঃ এই ধরণের হাদীস বর্ণনা করেছেন। অন্য দিকে হাদীসের শব্দ এমন যা দেখে মনে হচ্ছে রাসুল ছাঃ তো এই ধরণের শব্দ ব্যাবহার করেন না। তখন মুহাদ্দিসগন বলেন এই হাদীসের মধ্যে ইল্লাত আছে এই জন্য হাদিসটি সহিহ নয়।
এখন আরেকটা উদাহরণ দেখেন
মনে করেন ক= একজন শক্তিশালী রাবি
খ= একজন মিথ্যুক রাবি
গ= একজন শক্তিশালী রাবি
এবং এদের সবার সাথে সবার মুলাকাত প্রমাণিত। এবং একজন আরেকজনের কাছ থেকে রিওয়ায়েত করে। এখন ক একটা হাদীস বর্ণনা করছে খ থেকে সে গ থেকে।তাহলে এই সানাদ জঈফ হবে, কেননা সানাদের মধ্যে একজন মিথ্যুক রাবি আছে তথা খ। কিন্তু যে বাক্তি এই হাদিসটি ক থেকে শুনছে সে জানে যে এই হাদীসের মধ্যে একজন মিথ্যুক রাবি আছে এবং এই কারনে এই হাদিসকে মানুষ গ্রহণ করবেনা। তখন সে মাঝখান থেকে খ কে বিলুপ্ত করে দিয়ে বলে যে আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছে ক সে গ থেকে। এখন বর্তমান জামানার নামধারী মুহাদ্দিস মনে করবে এই হাদীস সহিহ কেননা সবাই শক্তিশালী এবং ক ও গ এর মুলাকাত সাবিত আছে সুতরাং সানাদ ও মুত্তাসিল। অথচ হাদিসটি মুলত জঈফ। এবং এই হাদীসের গোপন ইল্লাত বের করা যে এই হাদীস থেকে একজন মিথ্যুক রাবীকে বিলুপ্ত করা হয়েছে শুধু ইমাম বুখারী যেমন হাদীসের পাহাড়দের পক্ষেই সম্ভব।
এখন বর্তমান জামানার কারো পক্ষে সম্ভব নয় যে সে ইল্লাত বের করে। কেননা এখন তো আর হাদীসের রাবিরা বেঁচে নাই যে তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে। তবে হ্যাঁ বই পুস্তকে মুহাদ্দিসগন যে ইল্লাত উল্লেখ করে গেছেন তাই আমরা বলতে পারি বা লিখতে পারি। সুতরাং অল্প বিদ্যা নিয়ে হাঁটুতে লাঠি মারতে যেয়ে মাথাতে মেরে দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।
লেখক
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক
ফাজেল দারুল উলুম দেওবান্দ
বিষয়: বিবিধ
১১৭৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাংলা অনুদিত কয়েকটা ধর্মীয় পুস্তকাদি অধ্যয়ণ করেই কিছু মানুষ বর্তমানে মুজতাহিদ-মুফতির মত আচরণ করে!
যে কোন বিষয়েই 'সহিহ হাদীস,সহিহ আক্বিদা' লকমা লাগায়!
মুসলিম সমাজের বিভক্তি ও অধঃপতনের জন্যে এরাই অধিকাংশে দায়ী।
তথ্য বহুল যুক্তিময় ও সাবলীল বোধগম্য উপস্হাপনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ এবং জাযাকুমুল্লাহু খাইরান জানাই....
মন্তব্য করতে লগইন করুন