একই দিনে ঈদ না করার ব্যাপারে এক নতুন দলীল

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ১১ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:০১:৪৮ সন্ধ্যা

একই দিনে ঈদ করা ও না করা নিয়ে আমার জানামতে প্রায় তিন চার বছর থেকে আলোচনা পর্যালোচনা বাহাস মুবাহাসা বক্তব্য লেখালেখি চলে আসছে। এবং আস্তে আস্তে উভয় পক্ষের মাঝে দূরত্ব ও বেপরোয়া দোষারোপ বেড়েই চলেছে। আমার এই বিষয় নিয়ে কোনও গবেষণা নাই। এই জন্য আমি কোথাও এই বিষয় নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কমেন্ট করেনি। কিন্তু এখন উভয় পক্ষের অনড় অবস্থান দেখে নতুন করে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহবোধ করছি। লক্ষ্য শুধু শুধু নিজের আমল ঠিক আছে কিনা এটা দেখা।

এই কাজে পা দিতে গিয়ে আমি দেখলাম সকল পক্ষের দলীল প্রায় একই। একই হাদিসকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাই নিজের দলীল বানাচ্ছে বিশেষ করে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ এর হাদীসের কথা তো বলার অবকাশই রাখেনা। তাই আমি ভাবলাম এমন কিছু দলীল পাওয়া যায় কিনা, যা এ পর্যন্ত আমার চোখে কোথাও পড়েনি। সেই হিসেবে আজ পবিত্র কুরআন থেকে একই দিন ঈদ না হওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহর ইশারা পেশ করতে যাচ্ছি। দলীলটি কুরআনের গভীর থেকে ইস্তিদলাল করা এই জন্য আমি একই দিনে ঈদ করার পক্ষের ভাইদের কাছে অনুরোধ করব তাদের কাছে আমার ব্যাখ্যা ভুল মনে হলে তারা যেন এর সুন্দর জবাব পেশ করার চেষ্টা করে।

মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র কুরআন মাজীদে বলেন

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ

তথাঃ তারা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি তাদের বলে দিন নতুন চাঁদ মানুষের সময় নির্ধারণ ও হজের সময় নির্ধারণ মূলক। [2/149

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ চাঁদের দুইটি কাজ এর কথা উল্লেখ করেছেন।

১, মানুষের সময় নির্ধারণ মূলক

২, হজের সময় নির্ধারণ মূলক।

প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের সময় নির্ধারণ এর মধ্যে তো হজের সময় নির্ধারণ চলে আসে কেননা হজ্বও মানুষের কাজ। তারপরেও কেন মহান আল্লাহ হজকে আবার আলাদা করে উল্লেখ করলেন? মহান আল্লাহর মত সর্বজ্ঞানী বিনা প্রয়োজনে হজের কথা আলাদা করে অবশ্যই নিয়ে আসেন নি। এর পিছনে লুক্কায়িত রয়েছে অবশ্যই কোন ও না কোনও রহস্য। সেই রহস্য আসলে কি??

কেউ যদি বলতে চান যে, হজের সাথে চাঁদের সম্পর্ক বেশী এই জন্য মহান আল্লাহ তাকে আলাদা ভাবে উল্লেখ করেছেন। আমি বলব বিন্দু মাত্র ভাবলেই বুঝতে পারা যায় যে, হজের সাথে নয় বরং সিয়ামের সাথেই চাঁদের সম্পর্ক বেশী। এই জন্যই তো প্রত্যেক ফকীহ ও মুহাদ্দিস তাদের কিতাবে চাঁদের আলোচনা সিয়ামের সাথে করেছেন হজের সাথে নয়। কেননা রমজান মাসে চাঁদ অনুযায়ী দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম শুরু হয় আবার শেষ হয় এবং সাথে সাথে ঈদও এর উপর নির্ভর করে। তাহলে গুরুত্বের দিকে খিয়াল করলে তো আলাদা ভাবে সিয়ামের কথা উল্লেখ করার কথা ছিল। কিন্তু ছিয়ামের কথা উল্লেখই করেনি নি। বরং মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ মূলক এর অধীনে করে ছেড়ে দিয়েছেন।

মূলত মহান আল্লাহ যত ইবাদাত মানুষের উপর ফরজ করেছেন তাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন একভাগ ইবাদাত কে মহান আল্লাহ সূর্যের সাথে সম্পর্কিত করে দিয়েছেন যেমন সালাত, ইফতার, সেহেরী ইত্যাদি । আর যেই ইবাদাত গুলিকে বছরে একবার নিয়ে আসতে চান সেগুলোকে চাঁদের সাথে সম্পর্কিত করেছেন। ইবাদাত সমুহের মধ্যে অন্যতম ইবাদাত হজ ও সিয়াম কে চাঁদের সাথে সম্পর্কিত করেছেন।

এক্ষণে আলোচ্য আয়াতে চাঁদের সাথে সম্পর্কিত দুইটি ইবাদাতের মধ্যে একটিকে আলাদা ভাবে উল্লেখ করা এবং অন্যটিকে মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ মূলক এর অন্তর্ভুক্ত করে ছেড়ে দেয়ার মধ্যে নিহিত সব চেয়ে সুন্দর কারণ এটি হতে পারে যে, মহান আল্লাহ বলতে চাইছেন হজ হবে এক চাঁদ অনুযায়ী। তথা হজের জন্য একটাই চাঁদ। সারা দুনিয়ার মানুষ একই চাঁদ অনুযায়ি হজ করবে। যদি সারা দুনিয়ার মানুষ বিভিন্ন চাঁদ অনুযায়ি হজ করত তাহলে চাঁদকে হজের জন্য সময় নির্ধারণ মূলক বলা যুক্তিসঙ্গত হতনা। কেননা তখন এক ইবাদাতের জন্য অনেক চাঁদ হয়ে গেল তাহলে আবার চাঁদ কেমনে হজের সময় নির্ধারণ করল। আর এটা ছাড়া হজের আলাদা কোনও বৈশিষ্ট্য নজরে পড়েনা যার জন্য হজকে আলাদা ভাবে চাঁদের সাথে উল্লেখ করার প্রয়োজন রয়েছে।

এক্ষণে যখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল যে, হজকে আলাদা ভাবে উল্লখ করার কারণ হচ্ছে হজ নামক ইবাদতের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত প্রতি বছরে একটি চাঁদই খাস। তাহলে হজের আরেক সঙ্গী সিয়াম যেটাও চাঁদের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় তাকে উল্লেখ না করার কারণ অবশ্যই এটা যে, হজ নামক ইবাদাতের মধ্যে একই চাঁদ অনুযায়ি সারা মুসলিম বিশ্বের পালন করার যে বৈশিষ্ট্য আছে তা সিয়ামের মধ্যে নাই। কেননা সিয়াম সারা দুনিয়ার মানুষ এক জায়গায় একত্রিত হয়ে পালন করে না বরং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পালন করে তাই চাঁদ তাদের কাছেও স্থান ভেদে বিভিন্ন সময়ে পৌঁছে।

একই দিনে ঈদ পালন করতে ইচ্ছুক ভাইদের কাছে অনুরোধ করব। এই ব্যাখ্যা আপনাদের কাছে ভুল মনে হলে আপনারা হজকে আলাদা ভাবে উল্লখ করার পিছনে কোণও উপযুক্ত কারন পেশ করুন। আর যেই আল্লাহর কাছে আমার প্রান তাঁর শপথ করে বলছি আমি শুধু নিজের আমল ঠিক আছে কি না এটা দেখার জন্য এই বিষয়ে গবেষণা শুরু করলাম, আগামি কুরবানীর আগ পর্যন্ত শেষ করার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ । হে আল্লাহ তুমি আমাকে হেদায়েত দান কর।

লেখক: আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক

ফাযেল, দারুল উলুম দেওবান্দ

বিষয়: বিবিধ

১৭১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File