আপনি আরবী না জেনে শুধু বাংলা পড়ে কিভাবে ফতওয়া দেন ?
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ১১ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:০১:৫১ দুপুর
আজ কাল আমরা অনেককে দেখতে পাই যারা আরবী না জেনেই বাংলা অনুবাদ পড়ে ফতওয়া দেয়। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি। আপনি চরম বিভ্রান্তির মধ্যে আচ্ছেন। কেননা আজও লাখ লাখ বই এর বাংলা হয়নি। আপনি সেগুলো এড়িয়ে কিভাবে ফতওয়া দিবেন? নিচে আমি কিছু বইয়ের নাম দিলাম যেগুলোও আমার জানা মতে বাংলা অনুবাদ হয়নি অথচ সেগুলো বাদ দিয়ে ফতওয়া দিলে অবশ্যই তা ভুল হবে।
তাফসীরঃ
তাফসীর ইবনে কাসীর ছাড়া সালাফে সালেহীন এর লেখা এই বিষয়ে আর কোনও বইয়ের বাংলায় অনুবাদ হয়নি। অথচ তাফসীরের জগতে সালাফে সালেহীন এর কত বই আছে তার ইয়ত্তা নাই। তাফসীরে কুরতুবি, তাফসীরে তাবারী, দুররে মানসুর, তাফসীরে ইবনিল কাইয়ুম। এছাড়া কুরআনের অলংকার, যুক্তি, আরবী গ্রামার, কিসসা কাহিনী, ইত্যাদি নিয়ে লেখা আরও হাজারো বই আছে যার বাংলা অনুবাদ হয়নি। যেমন তাফসীরে কাশশাফ,বায়যাভী,রাযী ইত্যাদি।
উসুলে তাফসীর বা তাফসীর করার মূলনীতিঃ
এই বিষয়ে শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহ ল্ভী রহঃ লিখিত আল ফাউযুল কাবীর ছাড়া অন্য কোনও বইয়ের বাংলা অনুবাদ হয়নি। অথচ এই বিষয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মুকাদ্দামা উসুলুত তাফসীর, সুয়ুতী রাহঃ এর আল ইতকান সহ আরও অনেক বই আছে। যা না পড়লে উসুলে তাফসীরের গভীর পানিতে লাফ দেওয়ার সাহস এক প্রকার হটকারী।
হাদীসঃ
হাদীসের এমন অনেক গ্রন্থ আছে যেগুলোর আজও বাংলা অনুবাদ হয়নি। যেমন নিচে কয়েকটা দেওয়া হল।
১,মুস্নাদে আহম্যাদ
২,মুস্নাদে তায়ালিসি
৩,সুনানে বায়হাকী
৪, সুনানে দারাকুত্নী
৫, মুজামুল কাবীর
৬, মুজামুস সাগীর
৭,মুজামুল আওসাত
৮, মুস্তাদ্রাকে হাকেম
৯, শারহুস সুন্নাহ,
১o, সহিহ ইবনে হিব্বান
11, ইবনে খুজায়মা
12. শুয়াবুল ঈমান
13.শারহু মাআনিল আসার
14,মুস্নাদে আবু আওয়ানা
15.মুস্নাদে আবু ঈয়ালা
16,মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা
17,মুস্নাদে বাজ্জার
18,মুস্নাদে শামীন
19.মুস্নাদে আব্দ ইবনু হুমায়দ
2o,মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক
21, মুস্কিলুল আসার
22, মুস্নাদে শাফেয়ী
২৩, মুস্নাদে ইসহাক বিন রাহোয়াইহ।
২৪, মুস্নাদে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক।
এছাড়া আরও কত হাদিসের বই আছে যেগুলোর বাংলা অনুবাদ হয়নি। তাহলে এই বইয়ে যে হাদীস গুলো আছে সে গুলো বাদ দিয়ে কোনও ফতওয়া দেওয়া অবশ্যই গুনাহের কাজ। আবার কেউ যদি এই বইগুলো দেখে ফতওয়া দিতে চায় তাহলে তাকে হাদীসের সহিহ জঈফ যাচাই করা জানা লাগবে কেননা এর মধ্যে অনেক হাদীস আছে যেগুলোর এখনও তাহকীক হয়নি।তাহলে যারা শুধু বাংলা পড়ে ফতওয়া বাজী করে তারা মানুষকে কোন পথে ডাকছে বিবেকবান মানুষ মাত্রই তা বুঝতে পারবেন।
এছাড়া যেই হাদীস গ্রন্থগুলোর বাংলা হয়েছে সেগুলোর ব্যাখ্যা গ্রন্থের বাংলা হয়নি যেমন
১,বুখারী শরীফের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা গ্রন্থ হচ্ছে ফাতহুল বারী। যার এখনও বাংলা অনুবাদ হয়নি। এছাড়া আল্লামা আইনী, আল্লামা ইবনে বাত্তাল, আল্লামা কিরমানী, আল্লামা ইবনে রজব রাহঃ সহ অনেক বড় বড় মুহাদ্দিসদের লেখা বিশেরও অধিক বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা আছে। এগুলো না পড়েই বুখারী শরীফের হাদীসের ব্যাখ্যা করা এবং ফতওয়া দেওয়া এক প্রকার বেয়াদবী।
২, মুসলিম শরীফের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা গ্রন্থ হচ্ছে ইমাম নববীর লেখা ব্যাখ্যা।যার বাংলা অনুবাদ হয়নি। এছাড়া আল্লামা সুয়ুতী, আবুল আব্বাস কুরতুবী, ছফিউর রহমান মুবারকপুরী, শাব্বির আহ্মাদ উসমানীরাহঃ সহ আরও অনেক আলেমের লেখা মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা রয়েছে। যেগুলোর আজও বাংলা অনুবাদ হয়নি। এগুলো না পড়েই মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা দিলে অবশ্যই তা ভুল হবে।
৩, তিরমিজির অন্যতম ব্যাখ্যা গ্রন্থ হচ্ছে তুহফাতুল আহোয়াজী যার লেখক হছেন আব্দুর রহমান মুবারক পুরী যিনি জমীয়তে আহলে হাদীসের একসময় অর্থ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া ইউসুফ বিন্নউরী রাহঃ সহ আরও অনেক আলেমের লেখা তিরমিজির ব্যাখ্যা রয়েছে যেগুলোর একটারও বাংলা অনুবাদ হয়নি।
৪, আবু দাউদের অন্যতম ব্যাখ্যা গ্রন্থ হচ্ছে গয়াতুল মাক্সুদ যা প্রায় ৩৩ খণ্ডে সমাপ্ত । যার সংক্ষিপ্ত রুপের নাম
হচ্ছে আউনুল মাবুদ। এছাড়া রয়েছে বাজলুল মাঝুদ এবং আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদ, আল্লামা আইনী, আল্লামা খত্তাবী রাহঃ সহ অনেক মহান মুহাদ্দিসদের লিখিত আবু দাউদের ব্যাখ্যা গ্রন্থ রয়েছে। যার একটারও বাংলা অনুবাদ হয়নি।
উসুলে হাদীস বা হাদীসের মূলনীতিঃ
এর মধ্যে নুখবাতুল ফিকার ছাড়া অন্য কোনও বইয়ের বাংলা অনুবাদ হয়নি। যেমন আল্লামা সুয়ুতীর লেখা তাদ্রীবুর রাবি, আহ্মাদ শাকের রহঃ এর লেখা আল বায়িসুল হাসিস, আল্লামা ইবনে সালাহের লেখা মুকাদ্দামা ইবনে সালাহ ।
এছাড়া জারাহ ও তাদীলের কোনও বইয়ের বাংলা অনুবাদ হয়নি। আর বাংলা ভাষাভাষী কোনও আলেম জারাহ ও তাদীল ভালভাবে বুঝেন বলে আমার জানা নাই।
হাদীসের তাহকীকঃ এই বিষয়ে আল্বানী রহঃ এর লিখিত সিলসিলা সহিহা ও জঈফা যার কোনটার সম্পূর্ণ বাংলা অনুবাদ হয়নি। এছাড়া রয়েছে ইলালে দারাকুত্নী, ইলালে ইবনে আবি হাতেম, ইলালে তিরমিজি, ইলালে আলি বিন মাদিনি এবং আল্লামা হায়ছামী সহ অনেক মুহাদ্দিসদের লিখিত অগনিত বই যার একটারও বাংলা অনুবাদ হয়নি।
ফিকাহঃ
আল্লামা শাওকানী রহঃ এর লিখিত নায়লুল আওতার, ইবনে হাজাম এর লিখিত মুহাল্লা, আল্বানী রহঃ এর লিখিত ইরোয়াউল গালীল সহ কত শত ফিকাহের বই আছে যার একটারও বাংলা অনুবাদ হয়নি।
উসুলে ফিকাহঃ
ইবনে হাজাম রহঃ এর লিখিত আল ইহকাম ফি উসুলিল আহকাম আল্লামা শাওকানী রহঃ এর লিখিত ইরশাদুল ফুহুল, ইবনুল কাইয়ুম রহঃ এর লিখিত ইলামুল ময়াক্কিয়িন সহ কুরআন হাদীস থেকে মাস্লা মাসায়েল বের করার কত মূলনীতি রয়েছে যার একটারও বাংলা অনুবাদ হয়নি।
আমি যদি ধরেই নেই এই বই গুলোর একদিন বাংলা অনুবাদ হয়ে যাবে তারপরেও বাংলা অনুবাদ পড়ে ফতওয়া দেওয়া নাজায়েজ।
কেননা বাংলা অনুবাদে ভুল থাকতে পারে। ইংরেজীতে যেমন প্রিপজিশন পরিবর্তন হলে অর্থের পরিবর্তন হয় আরবীতেও তেমনি সিলার পরিবর্তন হলে অর্থের পরিবর্তন হয়। যেমন রাগাবা ক্রিয়ার সাথে যদি ইলা সিলা আসে তাহলে অর্থ হবে আগ্রহী হওয়া আর যদি আন সিলা আসে তাহলে অর্থ হবে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। এছাড়া আরবীতে বাব এর পরিবর্তন হলে অর্থের পরিবর্তন হয় যেমন নাসারা শব্দের অর্থ সাহায্য করা এইটাকে যদি বাবে ইস্তিফালে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে অর্থ হবে সাহায্য চাওয়া। এছাড়া আরও কত কায়দা কানুন রয়েছে যেগুলো না জানলে আরবী বই পড়ে বুঝা অসম্ভব।
কেননা কুরআন ও হাদীস হচ্ছে ঐ ঘরের তালা যার মধ্যে মানব জীবনের সমাধান আছে আর সেই তালার চাবি হচ্ছে আরবী ভাষা।তাইতো বলা হয় একজন ব্রিনিয়ান ছেলের আলেম হতে অন্তত দশ বছর টানা মাদরাসাতে বা বড় কোনও আলেমের পাশে পড়া শোনা করা লাগবে। আর মুজতাহিদ হতে গেলে অন্তত পক্ষে ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর পড়াশোনা করা লাগবে।
তাই হে বাংলা পড়ে ফতওয়া দান কারী আমার প্রিয় ভাই ! এখনও সময় আছে তাওবা কর! নাহলে হতেও তো পারে তুমি বুখারী শরীফের ঐ হাদীসের মধ্যে পড়ে যাবে যেখানে আল্লাহর নবী বলেছেন তারা ইল্ম ছাড়াই ফতওয়া দিবে এবং নিজেও পথ ভ্রষ্ট হবে অন্যকেও করবে। [বুখারী হা/১o1]
হে আল্লাহ তুমি আমাদের ক্ষমা কর। আমীন!
লেখকঃ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক
ফাযেল, দারুল উলুম দেওবান্দ
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন