ফোনে হুমকি পেলে কি করবেন? শুনুন বাংলাদেশের সাহসী একজন পুলিশ অফিসারের মুখে

লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ মাহমুদ ১৩ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:০০:০৮ রাত



বাংলাদেশের পুলিশ সরকারের অন্য অনেক সংস্থার মত নানা কারনে আলোচিত সমালোচিত। তবে পুলিশকে জনগনের সঙ্গে সবাসরি সম্পৃক্ত থাকতে হয় বলে সমালোচনার পাল্লাটা ভারী। বৃটিশ আমল থেকে চলে আসা আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতি যেমন শত বছর ধরে তৈরি হয়েছে সেটা ভেঙ্গে দেয়া এক দুই বছরে সম্ভব না। তবে যে কয়জন মানুষ সেই সংস্কৃতি ভেঙ্গে দিয়ে পুলিশকে মানুষের বন্ধু করার প্রত্যয় নিয়েছেন তাদের একজন হলেন সহকারী পুলিশ সুপার জনাব মাসরুফ হোসেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ পুলিশ একদিন বিশ্বের সেরা পুলিশ বাহীনি হবে। ফেসবুকের জনপ্রিয় নেটওয়ার্কিং ব্যবহার করে প্রযুক্তি ও মেধার সমন্বয়ে তিনি প্রথম চালু করেন উত্তরা পুলিশ পেট্রোলের একটি ফেসবুক পেজ। পেজটি জনসাধারনের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। মানুষ সরাসরি তাদের অভিযোগ, পরামর্শ পুলিশের উর্দ্ধতন অফিসারদের জানাতে পেরে নিজেদের প্রকৃত নাগরিক ভাবতে শুরু করে। উত্তরায় থাকাকালীন তিনি সেখানকার সবচেয়ে অপরাধপ্রবন এলাকাগুলোকে পরিবর্তন করে ‘ডিজিটাল সেইফ জোন’ করেন। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে সরকারী চাকুরীজীবীরা ‘স্যার’ সম্বোধন শুনে অভ্যস্থ। তিনি এই সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে করদাতা জনগনকে ‘স্যার’ সম্বোধন করেন। পরবর্তীতে তিনি উত্তরা থেকে চলে আসেন গুলশান সার্কেলে। আপোষহীন ভূমিকা রাখেন তিনি ফরমালিন বিরোধী অভিযানে। মানুষের পাশে ছুটে গেছেন তিনি একটি ফোন পেয়েই। তার অফিসে লেবু চায়ের দাওয়াত ছিল সবার জন্য। এরপর তাকে বদলী করা হয় খাগড়াছড়ি এপিবিএন এ। এই বদলিকে সাধারন মানুষ ভালভাবে নেয়নি। সবাই ধারনা করেছিলেন তার ভাল কাজে ক্ষমতাধর কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তাকে এই বদলি করেছে, যেটা ফেসবুকে তার ফলোয়াররা জানিয়েছিলেন তাদের মন্তব্যের মাধ্যমে। বর্তমানে তিনি উচ্চশিক্ষার্থে জাপান অবস্থান করছেন। সেখান থেকেও তিনি তার নিজস্ব ফেসবুক পেজের ( facebook.com/tahsinmashroofhossain ) মাধ্যমে আগের মতই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগনের সঙ্গে থাকার। মানুষের জন্য এখনো তিনি তার সহযোগীতার হাত সম্প্রসারিত রেখেছেন।

বর্তমানে মোবাইল ফোনে অনেকেই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কাছ থেকে হুমকি পান। তাদের জন্য তিনি যে পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ার নিউজের পাঠকদের জন্য সেটা হুবুহু তুলে দেয়া হল।

প্রিয় সদস্যবৃন্দ,

ইদানীং বেশ কিছু মেইল পেয়েছি যেখানে আপনারা আমাকে ফোনে পাওয়া হুমকির ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন।হুমকিগুলো সাধারণত এরকম হয়ঃ

“হ্যালো, আমি টপ রংবাজ /শীর্ষ সন্ত্রাসী মুন্ডুকাটা কুদ্দুছ (বা তার সহযোগী বেগুনী মমিন) বলছি।আপনার ছেলে ওমুক জায়গায় পড়ে, বিকাশে শিজ্ঞিরি ২ লক্ষ টাকা না দিলে তাকে কিডন্যাপ করব।আমাদের বস ধরা পড়সে, তারে ছাড়াতে টাকা লাগবে।হেল্প করেন, নাইলে কিন্তু রাত আটটার বাংলা সংবাদ স্টাইলে খবর আছে”।

হুমকি পেয়ে আপনার হাত পা কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেল, তখন হুমকির দ্বিতীয় লাইনঃ

“খবরদার, ঠোলামামাদের জানাবেন না কিন্তু!”

আপনি যদি বড়লোক এবং ভীতু হন, তক্ষুনি ছুটবেন টাকা বিকাশ করতে এবং টাকা দিয়ে “বাইচা গেছি” টাইপ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন।আর যদি গরীব এবং সাহসী হন, মিনমিন করে বলবেন, “ইয়ে, এত টাকা তো নাই, আমি ২০০ টাকা ফ্লেক্সি করে দেই?”

নেগোসিয়েশনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২ লাখ থেকে নেমে টাকার অংক হাজার খানেকে সেটেল হয়।

এবার আসল ঘটনা বলিঃ

এই কাজগুলো বেসিকালি করে ছোটখাটো বাটপারের দল, রিয়েল লাইফে যাদের দেখলে থাপ্পড় মারতেও ঘেন্না হবে আপনার।এরা নেশা ইত্যাদির টাকা যোগাড় করতে এই রিস্ক নেয়।২ লাখ দিয়ে শুরু, যা পাওয়া যায় তাতেই লাভ।আমার পুলিশি অভিজ্ঞতা বলে, ফোনে/মেইলে যারা থ্রেট দেয় এরা মূলতঃ একেবারেই ভ্যান্দা টাইপের লোক।সত্যিকারের বিপজ্জনক ক্রিমিনালেরা সাধারণত ঘটনা ঘটিয়ে তারপরে ফোন দেয়, দ্যাট ইজ আ ডিফারেন্ট বল গেইম।

এর পরে এধরণের থ্রেট কেউ দিলে নিম্নোক্ত স্টেপসমূহ অনুসরণ করুনঃ

১) থ্রেট পুরোটা শুনুন

২) এক্সপার্ট গালিবিদ বন্ধু থাকলে তাকে ফোন ধরিয়ে দিন এবং রুম ছেড়ে বাইরে গিয়ে তাদের “একান্ত সময়” কাটাতে দিন।ভুলেও রুমে থাকবেন না, আমার এক বন্ধুকে এরকম ফোন ধরিয়ে দেবার পর আমার আরেক দুর্বলচিত্ত বন্ধু তিন দিন খাবার খেতে পারেনি অরূচির কারণে!

৩) বারবার ফোন করলে ফোন অন করে পাশে রাখুন, ওর বিল উঠতে থাকুক।

৪) বেশি ভয় পেলে নিকটস্থ থানায় জিডি করুন।জিডিতে যে অফিসারের নাম নম্বর দেয়া থাকে তার সাথে যোগাযোগ রাখুন।যে মুহূর্তে জিডি করলেন, সে মুহূর্তে আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব ওই অফিসারের।আপনার গায়ে ফুলের টোকা পড়লেও সে জবাবদিহি করবে।

৫) এই ফেসবুকের যুগে আপনি দুপুরে কি দিয়ে ভাত খান এটা জানাটাও কঠিন না(আমি কি খাই ফুডব্যাংক গ্রুপেই দেখতে পাবেন!) , তাই “অয়ি অপরিচিতে, মম তথ্য কোথা হতে পেলে গো সখে” টাইপ রাবীন্দ্রিক চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকুন।

বুকে সাহস রাখুন, জীবনকে ভীতিপ্রদভাবে দেখার কোনই কারণ নেই।হলিউড মুভির একটা সংলাপ বলিঃ

“No matter what we do, how hard we try, none of us are going to make it alive in the end of this life.The question is, when the time comes, we will be on our feet or on our knees”

ছেলেবেলায় খুব দুষ্ট ছিলাম, স্যারেরা প্রায়ই কান ধরে নীল ডাউন করিয়ে রাখতেন রোদের মধ্যে।সেই থেকে নীল ডাউনের প্রতি আমার খুব অনীহা,ঠিক করেছি দুপায়ের উপরেই থাকতে চেষ্টা করব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত, আমার সাধ্যে যেটুকু কুলায়।

আপনি?

(পুনশ্চঃ সিরিয়াস রকমের বিপদে পুলিশি পরামর্শের স্টার্টিং পয়েন্ট না পেলে এই অধমকে ইমেইল করতে পারেন )

আওয়ার নিউজ ডেস্ক | নভেম্বর ১০, ২০১৪

বিষয়: বিবিধ

২২০৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

284087
১৪ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:০১
কাহাফ লিখেছেন :
অনাকাংখিত ঝামেলা নিয়ে সুন্দর সচেতন মুলক পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!! Rose Rose
284122
১৪ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৪১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পুলিশ সম্পর্কে বাংলাভাষার পুরান সাহিত্যের নিদর্শন "হুতুম পেঁচার নকশা" এর একটি লাইন। "দারোগা ভাল মানুষ ছিলেন (অতি কম পাওয়া যায়)।
284192
১৪ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:১২
আবদুল্লাহ মাহমুদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File