পীর ও সুফিবাদের শিরোমণি হুসাইন বিন মানসুর হাল্লাজ কে ছিলেন, জেনে নিন! javascript:void(0);

লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ মাহমুদ ১১ নভেম্বর, ২০১৪, ০৩:২৩:১৫ দুপুর

Skull Skull Skull

পীরপন্থীদের মাথার মুকুট সূফীকুল শিরোমণি মানসুর হাল্লাজ সম্পর্কে সমাজেঅসংখ কল্পকাহিনী প্রচলিত । যেগুলো সর্ব সাধারণের ঈমান-আকীদায় প্রভাব ফেলছে ।ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ইবনে কাসীর (রঃ) প্রণীত “আল বিদায়া ওয়াননিহায়া” , খতীব বাগদাদী (রঃ) এর তারিখে বাগদাদ, ইবনুল জাওজী (রঃ) এর আলমুন্তাজেম ও ইমাম আয যাহাবী (রঃ) এর সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে হাল্লাজের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মজীবনের উপর আলোচনা এসেছে।সেখান থেকে সামান্য কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্‌ ।

মানসুর হাল্লাজ ২৪৪ হিঃ/৮৫৮ খ্রিঃ জন্ম গ্রহণ করে। তার দাদা পারস্যেরঅধিবাসী ও একজন অগ্নি উপাসক ছিল। সে ইরাকের ওয়াসেত শহরে জীবনের একটি অংশঅতিবাহিত করার পর বাগদাদে গমন করে । হজ্জ পালনের জন্য কয়েকবার মক্কায়ও গমনকরে । বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত, সে যাদু শিখার জন্য ভারতে আসে । সে বলতঃأدعو به الى الله –আমি যাদুর মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ্‌র দিকে দাওয়াত দেই । (“আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”)

ইবনুল জাওযী বলেন,

-মানুষকে ধোঁকাদেওয়ার নানা কৌশল তার আয়ত্তে ছিল। সে তার বেশভূষা পরিবর্তন করে এক শহর থেকেঅন্য শহরে যেত । মানুষ তার ব্যপারে দ্বিধা বিভক্ত ছিল। সে Pantheism (সর্বেশ্বরবাদ) ও Zoroastrianism (জরাথ্রুস্ট প্রবর্তিত ও জেনদ্-আবেস্তায়বর্ণিত প্রাচীন পারস্যবাসীর অগ্নি উপাসনার ধর্ম) ইত্যাদি দর্শন দ্বারাপ্রভাবিত হয়েছিল । সে সূফীবাদী দর্শন হুলুল ( আল্লাহ্‌ তায়ালা কোন ব্যক্তিবিশেষের মাঝে প্রবিষ্ট হওয়া ) ও ওয়াহদাতুল ওজুদ ( স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝেকোন পার্থক্য নেই, স্রষ্টার আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই, সকল সৃষ্টির মাঝে তাঁরঅস্তিত্ব বিরাজমান ) এর অন্যতম প্রবক্তা । ওয়াহদাতুল ওজুদ তথা এককঅস্তিত্ব এই দর্শনে প্রভাবিত হয়ে সে বলতঃ ما في جبتيي الا الله.- আমারজুব্বার মাঝে যে স্বত্বা রয়েছে তা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কেউ না । أنا الحق -আমি আল্লাহ্‌ ইত্যাদি ।

হাল্লাজের কবিতা সংকলন ديوان الحلاج- থেকে কয়েক লাইন তুলে ধরলাম ।

فإذا أبصرتني أبصرته/وإذا أبصرته أبصرتنا

أنا أنت بلا شـــــــــك فسبحانك سبحاني

وتوحيدك توحـــــيدي وعصيانك عصيانـــي

كفرت بدين الله والكفر واجب

لديَّ وعـنـد المسلمين قبيـح

مُزِجت روحك في روحي كما

تمزج الخمرة بالماء الزلال

فـإذا مسَّـك شيء مسّنــي

فإذاً أنت أنا في كلّ حـال

মানুষকে সম্বোধন করে হাল্লাজ বলছে:

—তুমি আমাকে দেখার অর্থ তাঁকে (আল্লাহ্‌) দেখা

আর তাঁকে (আল্লাহ্‌) দেখার অর্থ আমাকে দেখা ।

আল্লাহকে সম্বোধন করে বলছে

—নিঃসন্দেহে আমি হচ্ছি তুমি (আল্লাহ্‌)

তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করা আমারই পবিত্রতা ঘোষণা করা ।

তোমার তাওহীদ ঘোষণা করা আমারই তাওহীদ ঘোষণা করা ।

তোমার নাফরমানী করা আমারই নাফরমানী করা ।

আমি তোমার দ্বীনের সাথে কুফরী করেছি, কারণ কুফরী আমার জন্য

ওয়াজিব হয়েছে । যদিও মুসলিমদের নিকটে তা নিন্দনীয় ।

তোমার আত্মা আমার আত্মার সাথে মিশে গেছে

যেরূপে মদ সুপেয় পানির সাথে মিশে যায় ।

তোমাকে কিছু স্পর্শ করলে তা আমাকে স্পর্শ করে,

কারণ সর্বাবস্থায় আমিই তো তুমি।

আব্দুর রহমান সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেনঃ আমর বলেন,

-হজ্জের মৌসুমে আমি হাল্লাজের সাথে মক্কার এক গলিতে হাঁটছিলাম আর কোরআনতেলাওয়াত করছিলাম। হাল্লাজ আমার তেলাওয়াত শুনে বললঃ আমার পক্ষেও এই ধরণেরকথা বলা সম্ভব। একথা শুনে আমি তার সঙ্গ ত্যাগ করলাম । (প্রাগুক্ত)

আমর বিন উসমান হাল্লাজকে লানত করত আর বলত, আমার ক্ষমতা থাকলে তাকে নিজ হাতে কতল করতাম । (প্রাগুক্ত)

আবু জুর’য়া আত তাবারী বলেনঃ আমি আবু ইয়াকুব আল আকতা’য় কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ

-হাল্লাজের প্রতি মুগ্ধ হয়ে আমি আমার বোনকে তার সাথে বিবাহ দেই। কিছু দিনপর আমার নিকট পরিষ্কার হয়ে যায়,সে একজন যাদুকর, প্রতারক, খবীস ও কাফের। (প্রাগুক্ত)

আব্দুর রহমান সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনাকরেনঃ আবু বকর বিন মিনশাদের নিকট এক ব্যক্তি আসল। যার সাথে একটি থলে ছিল ।রাতে-দিনে কক্ষনো সে থলেটি নিজের কাছ থেকে দূরে রাখত না । লোকেরা কারণঅনুসন্ধানের জন্য থলেটি খুললে মানসুর হাল্লাজ প্রেরিত একটি চিঠি পেল । যারশিরোনাম ছিল- من الرحمن الرحيم الى فلان ابن فلان- রাহমান রাহীমের পক্ষ হতে .........। হাল্লাজ চিঠিটির সত্যতা স্বীকার করল। লোকেরা তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কি নিজেকে আল্লাহ্‌ দাবী কর ? জবাবে সে বললঃ না, তবে আল্লাহ্‌ ও আমিতো একই সত্ত্বা । (প্রাগুক্ত)

হাল্লাজ তার খাস মুরিদদের মাধ্যমে পাহাড়ীএলাকার সহজ-সরল মূর্খ মানুষদের প্রতারিত করে হাজার হাজার স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা উপার্জন করেছে । তার মিথ্যা কারামতির কৌশল জেনে ফেলায় একজনকে গুপ্তঘাতক পাঠিয়ে হত্যার হুমকিও দিয়েছে । এসব প্রতারণার কাহিনী ইবনে কাসীর আলবিদায়া ওয়ান নিহায়াতে উল্লেখ করেছেন।

বাগদাদের আলেমরা হাল্লাজ কাফের ওমুরতাদ হওয়া ও তাকে হত্যার ব্যপারে একমত পোষণ করেন । তখন বাগদাদ ছিলপৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলেমদের আবাস । (প্রাগুক্ত)

৩০৯ হিঃ/৯২২ খ্রিস্টাব্দে হাল্লাজকে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হয় ।

ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ যে আকীদা পোষণ করার কারণে হাল্লাজকে হত্যা করা হয়েছে, সেই আকীদা যদি কেউ পোষণ করে সে মুসলিমদের ঐক্যমত অনুযায়ী কাফের ও মুরতাদ ।মুসলিমরা হুলুল, ওয়াহদাতুল ওজুদ ইত্যাদি আকীদা পোষণ করার কারণে তাকে হত্যাকরেছে । যেমন সে বলতঃ আমি আল্লাহ্‌, আসমানে এক প্রভু রয়েছে ও জমিনে আরেকপ্রভু রয়েছে । তার কিছু যাদুকরী ক্ষমতা ছিল । যাদুর উপর কয়েকটি বইও লিখেছিল। (মাজমুয়ুল ফাতওয়া)

তিনি আরও বলেনঃ

-আমি মুসলিমদের কোন আলেম ওমাশায়েখ সম্পর্কে জানিনা, যারা হাল্লাজ সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে । তবে কিছুলোক হাল্লাজের আকীদা সম্পর্কে না জানার কারণে তার প্রশংসা করেছে । (প্রাগুক্ত)

বর্তমানেও অনেক পীর-মাশায়েখ ও বক্তাকে দেখা যায়, যারাহাল্লাজের মর্যাদা বর্ণনায় অনেক গাজাখোরি কাহিনী বর্ণনা করে থাকে। তারা হয়হাল্লাজের আকীদা সম্পর্কে জানে না অথবা একই আকীদা পোষণ করে গোমরাহিতে লিপ্তরয়েছে।

বেদাতি নুরূল ইসলাম ওলীপুরী তার এক ওয়াজে মনসুর হাল্লাজকেআল্লাহ্‌র বড় ওলী বলেছিলেন। তিনি ঐ ওয়াজে বলেছিলেন 'আনাল হক্ব' বলে মনসুরহাল্লাজ কোন ভুল করেন নি। 'আনাল হক্ব' আকিদার কারনে যেই ব্যাক্তিরমুত্যুদন্ড হয় 'মুরতাদ' হিসাবে সেই ব্যক্তিরে ওলীপুরী বলেন বড় ওলী, আশ্চার্য্য। দেশে বিদেশে যিনি ওয়াজ করে বেড়ান তার আকিদায় এরুপ গলদ থাকলেতিনি কিসের দ্বীন প্রচার করছেন? শিরক আর বিদাত নয়তো?

উৎস : https://www.facebook.com/azamtow/posts/10152410867884301:0

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

284784
১৬ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৪৮
পরবাসী লিখেছেন : নুরুল ইসলাম ওলীপুরী বিদাতি র নামের শুরুতে আবার আল্লামা কেন ?
১৭ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২৮
228438
আবদুল্লাহ মাহমুদ লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই। মিস্টেক। বেদাতি লাগাইয়া দিছিRolling on the Floor

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File