“বাবার ব্লগে সন্তানের কলাম” (মায়ের গর্ভে থাকাকালীন কিছু স্মৃতি)
লিখেছেন লিখেছেন একটি সকাল ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:৩৯:৫৫ দুপুর
শুরুতে ব্লগে অঙ্কেল আন্টিদের সালাম, আসসালামু আলাইকুম,ও শুভেচ্ছে। আমি আফলাহ, ওয়াসিফা নুজহাত আফলাহ। আম্মু অনেক বই ঘাটা ঘাটি করে আমার নাম রেখেছে, আমার নামের অর্থ অধিকতর পূর্ণতাকারী। আজ আমার বয়স প্রায় ৪ মাস ২৫ দিন, আমি পিতামাতার এক মাত্র সন্তান। এই কিছু দিন হলো আমি এই পৃথিবীতে এসেছি, ৩/৪ জন ডাক্তার অস্ত্র পাতি দিয়ে আমাকে মায়ের পেট থেকে বের করলো। প্রথমে আমি ভঁয় পেয়ে কান্না করেছিলাম, তার পর আমার বাবার কোলে এসে কান্না থামিয়ে ঠোট ফুলিয়ে অভিযোগ করলাম। “কেন তুমিই আমাকে আগে কোলে নিলেনা”? বাবা আগেই আলহামদুলিলাহ বলেছে, তবে কেন বলল জানিনা, তয় মনে হয় আমার পৃথিবীতে আগমনের জন্য।
প্রথম প্রেসক্রিপশন ও এক মাস পর আল্ট্রা সোনোগ্রাফি
আমার পিতা মাতা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আমার মা উত্তরাতে একটা স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা, আমি গর্ভে থাকাকালীন আমার মায়ের অনেক কষ্ট হয়েছে। প্রথম ১ মাস তো স্কুলেই যেতে পারেনি, ছুটি চায়ছিল কিন্তু ছুটি দিলেও বেতন দেয়নি স্কুলের প্রিন্সিপাল, আমি মাইন্ড করছি, এর পর সরকার মাত্রিকালীন ছুটি ৬ মাস দিলেও প্রিন্সিপাল ৪৫ দিনের ছুটি দিয়েছে। ওই স্কুলে যদি পড়ি তাহলে প্রিন্সিপাল কে ধরবো।
যে ওষুধ গুলো আমার মা নিয়মিত খেয়েছিল এবং দুই মাস পর আল্ট্রা সোনোগ্রাফি।
প্রথম দিকে আমার মা অনেক অসুস্থ ছিল, মা কিছুই খাইতে পারত না, শুধুই বমি হত, একভাবে চলতেই থাকতো, বাবা ও মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে বলতো “এ ভাবে মানুষ বাচে নাকি?” আমি বুঝতাম কিন্তু কিছুই করার ছিলনা। আমার নানী এসেছিল দিন ১৫ মতো ছিল, মায়ের আবস্থা দেখে নানী বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আর্জি করলো, স্কুল হতে ১ মাসের ছুটি নিয়ে বাবা মাকে নিয়ে নানী বাড়ি রেখে আসে। ট্রেনে উঠতে কিযে কষ্ট তা আমি প্রথম বুঝলাম, প্রায় সারা দিন জার্নি করলাম। বাবার কোলের উপর মাথা দিয়ে মা জার্নি করলো। নানী বাড়ীতে ২০ দিনের মত ছিলাম, সপ্তাহ দুয়েক পর মা আর বেশি অসুস্থ হয়ে যায়, মাকে শামিমা ক্লিনিকে ভর্তি করতে হয়, প্রায় সপ্তাহ খানেক হাসপাতালে ছিলাম ৭/৮ ব্যাগ সিলাইন দিতে হয়, এ সময় ফুল চাচু অনেক হেল্প করে, এরপর মা একটু সুস্থ হয়। তয় আমি নানীর একটা কথায় মাইন্ড করছি, নানী বলছে “ আমার বড় মেয়ের চেয়ে ছোট মেয়ের জীবন বড়” আমার মা তার বড় মেয়ে, আর ছোট খালা তখন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা ছিল। আমি আসতেছি আর নানীর কাছে ছোট খালা বড় হয়ে গেলো ?
নানুর বাড়ি আমারা প্রায় মাস খানেক ছিলাম, তার পর আবার ঢাকায় আসি। আমার বাবা সারাদিন অফিস সেরে সন্ধ্যা ৭/৮ টায় বাসায় আসত, কাপুড় চোপড় খুলেই রান্না ঘরে ঢুকতো রান্না করার জন্য। মা তখন ও রান্না করতে পারতো না। রান্না করে খাবার দাবার খেয়ে রাতে ঘুমাইতে যাইত। ঘুমানোর আগে আমার সাথে অনেক আলাপ করতো। আমি বিরক্ত হয়ে উড়া মুড়া ছাড়তাম তখন বাবা হেসে বলতো “ওই যে সায় দিচ্ছে”। সকালে উঠে রান্না ঘরে যায়তো। মায়ের জন্য সকাল ও দুপুরের খাবার রান্না করে রেখে ৭ টায় বের হতো অফিসের বাস ধরার জন্য। আমি বুঝতাম, কারন বাবা সারা দিন আমার সাথে কথা বলত না। এরপর আবার যখন সন্ধ্যায় বাবার কণ্ঠ শুনতাম তখন আমি মায়ের পেটে নড়ে চড়ে উঠতাম।
আমার জন্মের প্রথম দিনের ছবি ও দুই দিন আগের আল্ট্রা সোনোগ্রাফি।
ঢাকায় এসে মা স্কুলে জয়েন্ট করে। মা একাএকা স্কুলে যাই তে পারতো না। একজন মিস এর হাত ধরে স্কুলে যায়তো। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে অনেক কষ্ট হতো। আমার মনে হতো আমি নেমে দাড়ায় কিন্তু সম্ভাব ছিল না, এই সময় কি নামা যায়। এই সময় কেউ না কেউ আমার মায়ের কাছে থাকার দরকার ছিল, কিন্তু কেউ আসে নাই, আমি খালা, ফুফু দের উপর মাইন্ড করছি। মা স্কুল শেষে বাসায় এসে বাবা কে ফোন দিতো এখন আমি কি খাবো? কি খাবো? বলে খুঁতখুঁত করে কাঁদত। আমি বলতাম গ্লুকস খাও কিন্তু মা শুনত না। কিছু একটা করত অথবা অমন করেই শুয়ে থাকতো। এমন করে কেটে গেলো ১০ মাস ১০ দিন।
দেখতে দেখতে ৪টি মাস পার হয়ে গেল। আমার বয়স যখন ১ মাস
আমার বয়স যখন ২ মাস
আমার বয়স যখন ৩ মাস
এবং আমার বয়স যখন ৪ মাস
এই তো সেদিন ২৫ শে অক্টোবর ২০১৫, তে আমি ভূমিষ্ঠ হইয়েছি, ভেবেছিলাম বাবা হয়ত রেগে চাপড় দিবে কিন্তু দেয়নি, আলহামদুল্লিলাহ বলে বাবা ও কেঁদেছে আমিও কেঁদেছি।
আপনার আমার ও আমার পিতা-মাতার জন্য দোয়া করবেন। আমিন ।
বিষয়: বিবিধ
৩৪২৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্যিই সকল শহুরে শিশু ও পিতা মাতার জীবনটা এমনই হয়ে থাকে।
অবশ্য গ্রামের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির হয়। ভুমিষ্টের পর মা সবসময়ই বাচ্চাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।
প্রবাসী বাবাদের মত অসহায় আর কেউ নয়, শুধু ভিড়িও কলেই সীমাবদ্ধ, উপায় যে নেই।
তোমার পিতা মাতা ও তোমার জন্য রইল অনেক অনেক সালাম, ভালোবাসা ও দোয়া। ইসলামী রীতিনীতিতে নিজের জীবনটা সাজাও এটাই প্রত্যাশা।
আল্লাহ তোমার ও তোমার মা,বাবার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল করুন । আমীন ।
আমারে খালি ঐ মানুষগুলারে চিনায়ে দিও, যারা তোমার মায়েরে হেল্প করে নাই। আঁই একেকটারে হিডি হাড্ডি গুড়া করি লাইম!
সোনাবাবু, আইয়ো, আমিও খাই তুমিও খাও ক্যান!
মন্তব্য করতে লগইন করুন