ধর্মত্যাগী নাস্তিক লোকদের সৎকারের বিধান কি?

লিখেছেন লিখেছেন একটি সকাল ০৪ মার্চ, ২০১৫, ০১:৫৬:০০ দুপুর

অভিজিৎ রায়ের লাশ ঢাকা মেডিকেলে দিয়ে ভালই করেছে , নয় তো আবার ঝামেলা হয়ে যেত। একে তো হিন্দু তার উপরে হিন্দু ধর্ম মোতাবেক মুখে আগুন দিতে হত, অন্যথায় চাপা মাটি দিতে হত। নতুন আলচনা সমালোচনা হত। অন্তত রাজিব হায়দারের মতো উটকো ঝামেলা হয়নি। সারা জীবন ইসালামের বিরোধিতা করে, নবি রাসুল (সঃ) কটূক্তি করে জীবন শেষ করলো, কিন্তু মরার পর সেই ইসলামের কাছে মাথা নত করে জানাজার ব্যবস্থা করেছে। সেক্ষেত্রে বাচাগেল। লাশে আগুন অথবা গর্তে চাপামাটি কোনটায় দেওয়া লাগলো না, বরং মানব সেবায় দান করে সৎকার করা হলো।

আমাদের সমাজে মাঝে মাঝে এমন লোকের কথাও শোনা যায়, যারা নিজেদেরকে ধর্মে অবিশ্বাসী বলে ঘোষণা করেন, কিন্তু লোকগুলো যেহেতু মুসলমান পরিবারের তাই এদের মৃত্যুর পর মুসলমানদের মতোই তাদেরও জানাযা-দাফনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখন জানার বিষয় হল-

১. ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের, মুশরিক তথা বিধর্মীদের জানাযার বিধান কি?

২. ধর্মে অবিশ্বাসী তথা নাস্তিকদের জানাযা পড়া হবে কি না? কিছু লোককে দেখা যায়, তারা জন্ম নিয়েছে মুসলমানের ঘরে কিন্তু তারা নিজেদের কথায় ও লেখায় আল্লাহ, রাসূল ও শরীয়তের বিধিবিধানকে কটাক্ষ করে। তাদের জানাযার ব্যাপারে শরীয়তের নির্দেশ কী?

৩. মুসলিম-এলাকায় বসবাসকারী বিধর্মীদেরকে কাদের কবরস্থানে সমাহিত করা হবে? এক্ষেত্রে ধর্মত্যাগী তথা মুরতাদ-নাস্তিকের ব্যাপারে ভিন্ন কোনো হুকুম আছে কি?

প্রথম প্রশ্নের জবাব : জানাযা পড়া হবে একমাত্র মুসলমানের। কাফের, মুশরিক তথা বিধর্মীর জানাযা পড়া হারাম।

দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব : শুধু ঐ মৃতের জানাযা পড়তে হবে, যিনি মুসলমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। মুসলমান পরিবারের কোনো সদস্য যদি নাস্তিক হয়, যদি সে আল্লাহ-রাসূলকে অস্বীকার করে অথবা আল্লাহ রাববুল আলামীন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কুরআন মজীদ বা শরীয়তের অকাট্য অন্য কোনো বিধিবিধান নিয়ে কটূক্তি, কটাক্ষ করে তবে সে কাফের; বরং মুসলিম-পরিবারে জন্মগ্রহণকারী বা জীবনের একটি অংশে মুসলমান থেকে পরবর্তীতে অবিশ্বাসী হওয়ায় সে নিকৃষ্টতম কাফের। শরীয়তের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘মুরতাদ।’ এদের শাস্তি কাফেরদের চেয়েও বেশি। এ সকল অবিশ্বাসী ও মুরতাদের জানাযায় অংশ গ্রহণ করা, তাদের জানাযায় ইমামতি করা সুস্পষ্ট হারাম। এমনকি তাদের নিকটতম মুসলমান আত্মীয়দের জন্যও এদের জানাযা পড়া জায়েয নেই। এমনিভাবে যারা প্রকাশ্যে নিজেদেরকে মুসলমান বলে, কিন্তু বাস্তবে সে কাফের ও অবিশ্বাসী, এরা হল মুনাফিক। আর মুনাফিকের অবিশবাসের বিষয়টি যদি প্রকাশ পেয়ে যায় তবে তার জানাযা পড়ারও সুযোগ নেই।

কাফের, মুশরিক, অবিশ্বাসী নাস্তিক, মুরতাদ তথা অমুসলিমের জানাযার নামায হারাম হওয়ার বিষয়টি শরীয়তের সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلَا تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا وَلَا تَقُمْ عَلَى قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ فَاسِقُونَ.

(তরজমা) কখনো তাদের কেউ মারা গেলে তুমি তার জানাযা পড়ো না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়িও না (দুআ-ইস্তিগফারের জন্য বা দাফন-কাফনের জন্য)। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং না-ফরমান অবস্থায় মারা গেছে।-সূরা তাওবা (৯) : ৮৪), তরজমা : তাফসীরে উসমানী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

তৃতীয় প্রশ্নের জবাব : মৃত ব্যক্তির লাশ তার স্বধর্মীয় লোকদের কবরস্থানে দাফন করতে হবে। ইহুদীকে ইহুদীদের গোরস্থানে, খৃষ্টানকে তাদের গোরস্থানে এবং অন্য ধর্মের লোকদেরকে তাদের নিজ নিজ গোরস্থানে সমাহিত করতে হবে। এক ধর্মের লোককে অন্য ধর্মের গোরস্তানে সমাহিত করা যাবে না। আর মুসলমানদের কবরস্তানে একমাত্র মুসলমানদেরকেই দাফন করতে হবে। কোনো অমুসলিমকে সেখানে দাফন করা যাবে না।

ধর্মত্যাগী নাস্তিক লোকদের সৎকারের বিধান কি?

আর মুসলিম পরিবারে বড় হওয়া ধর্মত্যাগী নাস্তিক লোকদের বিধান আলাদা। যাদের কোনো ধর্ম নেই, তাদেরকে কোনো ধর্মের কবরস্থানেই জায়গা দেওয়া যাবে না। বরং আলাদা কোনো জায়গায় গর্ত করে মাটিচাপা দিবে।

অমুসলিমের জানাযা নিষিদ্ধের বিধানের মতো এ বিধানেও উম্মতের ঐকমত্য রয়েছে।

ফকীহ ইবনে নুজাইম মিসরী বলেন-

وإذا مات أو قتل على ردته لم يدفن في مقابر المسلمين، ولا أهل ملته، وإنما يلقى في حفرة كالكلب.

অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি মুরতাদ অবস্থায় মারা যায় বা নিহত হয় তবে তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না এবং ইসলাম ত্যাগ করে যে ধর্ম সে গ্রহণ করেছিল ঐ ধর্মের কবরস্থানেও না; বরং ... কোনো গর্তে নিক্ষেপ করে মাটিচাপা দেওয়া হবে।-আশআশবাহ ওয়ান নাযাইর ২/১৯৫

তাই যারা নাস্তিক অথবা ইসলামের কটূক্তি কারী বলে যাবেন কি।

মরার পর কোথায়, কোন জায়গায়, কোন গর্তে সৎকার করা হবে ? তাহলে মৃত্যু পরবর্তী ব্যাবস্থা নিতে সকলের সুবিধা হতো।

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

307198
০৪ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৯
হতভাগা লিখেছেন : এদের শরীরকে এনাটমী ডিপার্টমেন্টের ফরমালিন পুকুরে কাটাতে হবে
০৪ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:০৩
248513
একটি সকাল লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, ধন্যবাদ।
307205
০৪ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:২৯
পললব লিখেছেন : আমার মতে এদের ভাগাড়ে ফেলে দিতে হবে।তাতে উপকার অনেক-ধর্মীয় নেতাদের উদ্ভট ঝামেলা বেঁচে যাবে, রাষ্ট্রীয় কিংবা পরিবারের অর্থ সাশ্রয় হবে, ভাগাড়ে কেউ ফুল কিংবা পুজা দিতে যাবে না, পরিশেষে শকুনের খাবার হবে যাতে শকুনেরা খেয়ে আরো কিছুদিন খেয়ে বেঁচে থাকবে এবং পরবর্তীতে আরো নাস্তিক খাওয়ার বাসনা নিয়ে পশু প্রেমিকদের স্মরনীয় হয়ে থকবে!!!
০৪ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৪
248515
একটি সকাল লিখেছেন : পরিবেশের দিকে চিন্তা করলে ভিন্ন মত। আর পশুপাখির খানাদানা হিসাবে মন্দ হয় না।
307211
০৪ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:২০
248808
একটি সকাল লিখেছেন : ধন্যবাদ
307241
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:২২
অষ্টপ্রহর লিখেছেন : পড়ে ভাল লাগলো।অনেক ধন্যবাদ জানবেন|
০৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:২১
248809
একটি সকাল লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
307257
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:৪৯
শেখের পোলা লিখেছেন : ফেরাউনের লাশ সংরক্ষণের ওয়াদা আল্লাহ করে ছিলেন তা তিনি করেছেন৷ আর অভিজিত নিজের কঙ্কালটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে গেছে, যাতে যুগ যুগ ধরে মেডিকেল পড়ুয়ারা ঘৃণা জানাতে পারে৷ এটাই মঙ্গল৷
307787
০৮ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:৫৬
একটি সকাল লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, তবে ঢাকা মেডিকেল হয়তো আর কিছু লাশ পাবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File