পিলখানার অজানা কাহিনী।।

লিখেছেন লিখেছেন তাহেরা ফারুকি ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৪:৩৫:২৫ বিকাল

February 25, 2015 ·

(পিলখানায় নিহত এক অফিসারের মোবাইল মেসেজ থেকে, তার স্ত্রীর জবানীতে পাওয়া)

পরস্পরের বোঝা -পড়ার মাঝে ওদের বিয়ে হয়েছিল। স্ত্রী ডাক্তার -কর্নেল। মাহমুদ নিজেও এবার কর্নেলের ব্যাজ পরবে।

বিয়ের এক বছর পর একসাথে তিনটি সন্তানের মা-বাবা হয়। দুটি মেয়ে, একটি ছেলে। পত্রিকার পাতায় এসেছিল সেই খবর বড় ছবিসহ।

কি কষ্ট হয়েছিল বাচ্চাগুলিকে নিয়ে। এখন ওরা ঝরঝরে। তিনটি বাচ্চা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে।

সেদিন সকালে সব কিছুতেই তাড়াহুড়া লাগিয়ে দেয়। স্ত্রী বার বার বলে বসো আমার সাথে এক কাপ চা খেয়ে যাও। মাহমুদ রাজি হয়না। বলে দরবার হলে আজ বড় খানা আছে,সকালেরে নাস্তা ওখানে গিয়েই করবো ।

দরবার হলের অনুষ্ঠান শুরু হবার পূর্বেই কি যে হয়ে গেল কিছুই বুঝা গেলনা। হঠাৎ হুঁশে এলে দেখল পায়ে গুলি লাগ , হাত-পা, বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে আরও অনেকের সাথে। এক জায়গাতে ফেলে রাখা হয়েছে ঠিক যেমনি করে গুদামে চালের বস্তা রাখা হয়। তবে তার চেয়েও করুন তাদের অবস্থা। এমন পরিপাটি লোকগুলিকে বেওয়ারিশের মত ফেলে রাখা হয়েছে। কিছু লোক মুখ বাঁধা হাতে অস্ত্র নিয়ে বার বার টহল দিচ্ছে। ওরা কারা? আমাদের পরিচিত BDR এর ভাইয়েরা? তোরা কি করে পারলি এমন আচরন করতে আমাদের সাথে? আমরা কি তোদের ভাই না? স্বজাতি ,স্বদেশী না? তবে কেন এই নিষ্ঠুরতা আমাদের সাথে? কতো প্রশ্ন মনের মাঝে উঁকি- ঝুঁকি মারে।

খুব কষ্টে একটা হাত মুক্ত করে মোবাইল বের করে। প্রথমে সাইলেন্ট করে, এরপর সন্তানদের কাছে ম্যাসেজ দিয়ে বর্তমান অবস্থার কথা জানায়। দোয়া চায়।

পাশ থেকে ভেসে আসছে সহকর্মী ভাইদের আর্তনাদ! আহারে! এরা তো ইয়াজিদ-সিমার-হালাকু-চেঙ্গিশ খানদেরই আত্মা। না হলে কেন মন গলেনা, কি অপরাধ করেছিল তারা?

শোনা যায় ডিজি শাকিল আহমেদ বেঁচে নেই। স্যারকে যেন কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাটি চাপা দিতে মনে হয়। কেউ কেউ বলে মাঠের মাঝে আগুন জালানো হয়েছে। কাকে পোড়াবে কে জানে? অভুক্ত অবস্থায় চলে যায় দিনটি। বার বার মনে পড়ে সন্তানদের মুখ, প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখ, মা-বাবা, ভাইবোনের মুখ। বেশ কিছু জওয়ান আসে তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে কেউ জানেনা। তবে ভাল যে কিছু ভাগ্যে নেই তা বুঝতে পেরেছে সবাই। বিকাল পাঁচটায় একটা মেসেজ দেয় ঠিক এমনি ছিল সেই ভাষা- ''আম্মুরা, আব্বু, আমাকে মাফ করে দিও। এই জীবনে তোমাদের সাথে আর দেখা হবেনা''। তোমার দাদা- দাদুকে দেখ।

সাভার ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত মাহমুদের স্ত্রী ছুটে আসে বিদ্রোহের খবর পেয়ে কিন্তু ধারে কাছে যেতে পারেনা ভিতরে। বাসায় অবুঝ তিনটি বাচ্চা রয়েছে, বোনের বাচ্চা বেড়াতে এসেছিল। পাগলের মতো ছুটছুটি,অপেক্ষমান আরও অনেকের সাথে আর্তনাদ জুড়ে দেয়।

ভিতরে এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। কারেন্টের লাইন মনে হয় কেটে দিয়েছে। মাহমুদের কাজের মেয়েটি চারটা বাচ্চাকে নিয়ে জুবুথুবু হয়ে বসে আছে। হঠাৎ দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢোকে কিছু BDR. হাতে টর্চ ওদের। মাহমুদের বাচ্চাদের বলে বের হয়ে আয় কুত্তার বাচ্চারা............ ওরা স্যান্ডেল পায়ে দিতে গেলে বলে খালি পায়েই আয় সেই সাথে গালির বৃষ্টি !

চারদিক থেকে নারী কণ্ঠের আর্ত চিৎকার ভেসে আসে। বুঝতে বাকি থাকেনা কি হচ্ছে সংরক্ষিত এই এলাকায়।

মাহমুদের মৃতদেহ দুইদিন পর পাওয়া যায় ডিজি শাকিল আহমেদের স্ত্রীর লাশের সাথে থাকা আরও পাঁচটি গলিত দেহের সাথে। মা সনাক্ত করতে পারেনা। স্ত্রী পায়ের আঙুল দেখে জানায় তার স্বামী কর্নেল মাহমুদ।

দুইদিন ধরে চলে এই তাণ্ডব। মারা পড়ে ৫৭ জন সেনা অফিসার। কোন হিসাবে আরও বেশী। পৃথিবীর কোন দেশে যুদ্ধকালীন সময়ে এতো অফিসার মারা পড়েনি। কিন্তু আজ অবধি জানা গেলনা কেন এই নারকীয় আর নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল সেদিন পিলখানাতে? তা কি শুধুই BDR বিদ্রোহ নামেই পরিচিত? নাকি দেশের স্বাধীনতা, সার্বোভৌমত্ব শেষ করে দেবার যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে তার শুরু হয়েছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি তে?

আমরা ৭১এ হানাদারদের কথা বলি।

কিন্তু স্বদেশে,স্বজাতির উপর এই যে হামলা তা কারা করেছিল তা একবার হলেও জানতে চাই।-

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360805
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৯
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : খুবই হৃদয়বিদারক। নিশ্চয় একদিন সত্য উদ্ঘাটন হবে।

ধন্যবাদ অজানাকে জানানোর জন্য।
360809
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:১৭
মোহাম্মদ ওমর ফারুক লিখেছেন : সরকার যদি প্রকাশ না করে আমরা কী ভাবে জানবঁ?
360813
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৩৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : পিলখানার কাহিনী অজানা থাকবেনা প্রকাশ হবেই জাতির জনগণ এর বিচার একদিন এই মাটিতেই করবে ইন্সা'আল্লাহ এই নারকীয় নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই জাতির কল্যাণ হবেনা। সে দিন যা ঘটেছিল পিলখানাতে তা কোন বিদ্রোহ নয় দেশের স্বাধীনতা সার্বোভৌমত্ব শেষ করে দেবারই ষড়যন্ত্র মাত্র। আপনাকে ধন্যবাদ
360830
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:২৮
শেখের পোলা লিখেছেন : কোন সত্যই চাপা থাকেনা৷ একদিন তা প্রকাশ হবেই৷ধন্যবাদ৷
360860
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:২৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সত্য প্রকাশ এর অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আমাদের আর কোন রাস্তা নাই।
360861
০১ মার্চ ২০১৬ রাত ১২:০০
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : পুরান খবর নতুন করে।
০১ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০১:১৩
299096
তাহেরা ফারুকি লিখেছেন : পুরান খবর? ৫৭ অফিসারের মৃত্যু আপনার কাছে পুরানো ?
360865
০১ মার্চ ২০১৬ রাত ১২:৩৩
তাহেরা ফারুকি লিখেছেন : গত বছর লিখেছিলাম, উনি আমার কাজিন। সারাদিন আপনজনেরা চেষ্টা করেও কথা বলতে পারেনি। পরে স্বজনদের কাছ থেকে শোনা কথা নিজেই লিখতে চেষ্টা করি। দুঃখজনক লেখাটা প্রচুর সংখ্যক পাঠক পড়ার পাশাপাশি চুরি করে নিজের নামে চালান, প্রতিবাদ করে খুব একটা লাভ হয়নি।
360888
০১ মার্চ ২০১৬ সকাল ১১:২৯
হতভাগা লিখেছেন : যারা এটা করিয়েছে এদের বিচার দুনিয়াবাসী করতে পারবে না ।

আল্লাহই পরকালে এদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন । দুনিয়াতে করলে হয়ত ভাল মানুষও আযাবের মধ্যে পড়ে যাবে ।

(আল্লাহই ভাল জানেন)

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File