স্বাধীনতা !!!
লিখেছেন লিখেছেন তাহেরা ফারুকি ১১ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:৫১:০২ সকাল
সকাল থেকেই লাভলুর বউ আলতা খুব ক্ষেপে আছে আজ। আর কেনইবা সে রাগ করবেনা? মাত্র তিন হাজার টাকা চেয়েছে ওমুক সিরিয়ালে দেখা একটা শাড়ি কিনবে তাও দেবেনা। লাভলু পড়ালেখা জানেনা। বাপের কিছু যায়গা আছে তাতেই ওর চলে যায়। সংসারে বউ আর একটি ছেলে।‘’ছেলে হোক মেয়ে হোক একটি সন্তান যথেষ্ট’’ এই মন্ত্রে সেও দিক্ষা নিয়েছে।
ছেলেটিকে লেখাপড়া করাতে হবে এটা বুঝেনা। বউ আলতা অনেক যুদ্ধ করে ছেলেকে স্কুলে দেয়। তার কথা ছেলে কৃষক হবেনা। একটিমাত্র ছেলেকে অনেক লেখাপড়া শিখাবে।
সেই মোতাবেক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। আলতা নিজে অল্প লেখাপড়া জানে। ছেলের পড়ার সামনে গিয়ে বসে মাঝে মাঝে হাতে কাজ না থাকলে।
লাভলু ঐ সব নিয়ে মাথা ঘামায় না, সে আছে সারাদিন তার টাকার হিসাব নিয়ে। খুব কৃপণ স্বভাবের। নগদ টাকা খরচ করতেই চায়না, কিন্তু বউ আলতা এবার তিন হাজার টাকা চেয়েছে কি নাকি শাড়ী কিনবে।
মাঝে মাঝে আলতার কৌশলের কাছে লাভলুর কৃপণতা কাজে আসেনা। ঘরে একটা রঙিন টিভি কিনিয়েছে আবার ডিশের লাইনও আনাল। যদিও মাস গেলে লাভলু খুব চেচামেচি করে বিল দিতে গেলে। কিন্তু আলতা অনড় ঘরে ‘হরতাল’ করে অচল করে দেবে সব! স্ত্রীর এই হুমকিকে খুব ভয় পায়, তাই তিন হাজার টাকা বের করে দেয়।
সেদিন লাভলু বারান্দায় বসে নতুন কেনা মোবাইলে কি সব দেখছিল। সরকার নাকি ডিজিটাল বাংলাদেশ করছে। মোবাইলে সব পাওয়া যায় তাই তো এতো দাম দিয়ে কেনা, কিন্তু লেখাপড়া না জানা লাভলু তেমন কিছুই করতে পারেনা, বসে থাকে ছেলের পড়া শেষ হলে তাঁর কাছ থেকে জেনে নেবে। ছেলে পড়ছে ‘’শায়েস্তা খাঁর আমলে টাকায় আট মন চাল, তিন টাকায় একটা আস্ত গরু...........!!! এরপর আসে ওমুকের শাসন। লাভলুর মাথায় আর কিছুই আসেনা সে কেবল ভাবতে থাকে ১ টাকায় আট মন চাল! আর এখন কিনা এক টাকায় কিছুই হয়না? আবার ও কান দেয় ছেলের পড়ার দিকে সে তখন পড়ছে ‘’এরপর ৯মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আসে আমাদের স্বাধীনতা যার জন্য আজ আমরা স্বাধীন’’।
লাভলু ঘরে গিয়ে টিভি চালু করে। শুনে সরকারের মন্ত্রী বলছে আমরা আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা ঠিক রেখেছি। সব কিছুই জনগনের হাতের নাগালে। অল্প দামে কৃষক সার পায়। চালের দাম কম! এই ভাবেই হবে ... স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক কি করে সার পায় আর চালের কেজি কয় টাকা তা কি লাভলুর চাইতে বেশী জানে ঐ মন্ত্রী? মিথ্যা কথ বলা কি ডিজিটাল বলে, ওর মাথায় ঘুরপাক খায় এই কথাটা।
ছেলেকে ডাকে ও বাপ দেখত এটা কি করে ব্যাবহার করে? ছেলে হাতে নিয়ে বাপকে একের পর এক দেখায় সব কিছু। খুব অবাক লাগে লাভলুর। আলতা ও আলতা দেখে যাও কি আনছি সাড়া না পেয়ে ছেলেকে বলে তোর মা কই? ছেলে জানায় মা সিরিয়াল দেখে কি একটা শাড়ি কিনতে গেছে! মানে কার সাথে? ছেলে বলে ওমুক চাচার সাথে। একমনে বসে থাকে আলতার ফেরার অপেক্ষায়। কিন্তু সহজ-সরল আলতা কি আর ফিরবে......... ঐ সর্বনাশের পথ থেকে? ঘরের বউ পরের হাত ধরে বের হওয়াকে তবে স্বাধীনতা বলে। একটু আগে ছেলের পড়ার লাইন বার বার কানে বাজতে লাগলো।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু উপলব্ধি করার মত আজ এ সমাজে কেউ আছে বলে মনে হয় না। আমাদের মনের সুক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটাটে এসব সিরিয়াল ধারুণভাবে ভূমিকা রাখছে।
অনেক ধন্যবাদ
জাযাকিল্লাহ!
স্বাধিনতার নামে আমরা সত্য হারিয়ে ফেলেছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন