ইমাম আল-আওযাঈ (রহ) এর একটি ঘটনা
লিখেছেন লিখেছেন ছালসাবিল ০১ জুন, ২০১৫, ০৫:২০:৩৮ বিকাল
হে ব্লগ বাসী! আসুন নির্ভিক মুসলিমের জীবনি শুনে যান।
আব্দুল্লাহ ইবন আলী সিরিয়া থেকে বনু উমাইয়াকে বিতাড়িত করেন এবং তাদের রাজত্ব তার হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়। তিনি যখন দামেশকে প্রবেশ করেন আল-আওযাঈ (রহ) কে তলব করেন।
আল-আওযাঈ (রহ) তার থেকে তিনদিন অনুপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি তার সামনে হাজির হন। আল-আওযাঈ (রহ) বলেন, যখন আমি তার কাছে প্রবশে করলাম তখন তাকে একটি চৌকির উপর উপবিষ্ট দেখলাম। তার হাতে ছিল একটি ছড়ি। তার ডানে ও বামে ছিল কৃষ্ঞ বর্ণের দারোয়ান। তাদের সাথে ছিলো খোলা তরবারি ও লোহার গদা। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামরে উত্তর দিলেন না। তার হাতের ছড়িটি দিয়ে মাটিতে খোচা দিলেন।
এরপর বললেন, হে আওযাঈ! শহর ও শহরবাসীদের থেকে এসব যালিমদের প্রতিপত্তি ধ্বংস করার জন্য আমারা যা কিছু করলাম এ সম্মন্ধে আপনি কী বলেন? এটা কি জিহাদ না সীমান্ত রক্ষার প্রচেষ্টা?
আল-আওযাঈ (রহ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আমীর! আমি ইয়াহিয়া ইবন সাঈদ আল-আনসারী (রহ) থেকে শুনেছি তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আত-তায়মী (রহ) কে বলতে শুনেছি, আমি আলকামা ইব আবু ওয়াক্কাস (রহ) কে বলতে শুনেছি, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) কে বলতে শুনেছি:
নিশ্চই আমল নিয়তের উপরই নির্ভর করে। প্রত্যেক ব্যাক্তির জন্য রয়েছে তা্ যা সে নিয়ত করেছে। সুতরাং যার হিজরত আল্লাহ্ ও তার রাসূল (সা) এর জন্য নিবেদিত তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসুলে (সা) এর জন্যই গণ্য। যার হিজরত হবে দুনিয়া অর্জন করার জন্য কিংবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য তার হিজরত হবে তারই নিয়তে যার নিয়তে সে হিজরত করেছে।
আল-আওযাঈ (রহ) বলেন, এরপর তিনি পূর্বের চেয়ে অধিক জোরে ছড়িদিয়ে মাটিতে খোচা দিলেন। আর তার পাশে যারা তরবারি হাতে নিয়ে বসেছিল তাদেরকে তরবারি সুদৃঢ়ভাবে ধরতে বললেন। তারপর বললেন, হে আওযাঈ! আপনি বনু উমাইয়ার রক্তপাতের ব্যাপারে কি বলেন?
আল-আওযাঈ (রহ) বলেন, তখন আমি বললাম: রাসুল (সা) বলেন: তিনটি কারণ ব্যাতিত কোন মুসলিম ব্যাক্তির রক্তপাত হালাল নয়। ১) জানের পরিবর্তে জান ২) বিবাহিত ব্যাভিচারী ৩) দ্বীনের প্রত্যখ্যান কারী ও মুসলিম জামাআত বর্জন কারী।
তিনি আরো জোরে ছড়ি দিয়ে মাটিতে খোচা দিলেন এবং বললেন, তাদের সম্পদ সম্মন্ধ্যে আপনি কি বলেন?
আল-আওযাঈ (রহ) বলেন, তখন আমি বললাম, তাদের হাতে থাকাকালীন যদি এগুলা তাদের জন্য হারাম হয়ে থাকে তাহলে আপনার জন্য এগুলো হারাম। আর যদি তাদের জন্য হালাল হয়ে থাকে তাহলে এগুলো আপনার জন্য শরীয়তের নিয়ম ব্যাতিত হালাল নয়।
পূর্বের চেয়ে বেশি জোরে মাটিতে খোচা দিলেন এবং বললেন, আমরা কি আপনাকে কাযী নিয়োগ করবো?
আল-আওযাঈ (রহ) বলেন, তখন আমি বললাম, আপনার পূর্বপুরুষগণ এ ব্যাপারে আমাকে কোন প্রকার কষ্ট দেননি। আর আমি চাই, যেভাবে তারা আমার প্রতি ইহসান করে কাজটি শুরু করেছে তা পূর্ণতা লাভ করুক।
তিনি বললেন, মনেহয় যেন আপনি বিরত থাকতে চাচ্ছেন?
তখন আমি বললাম, আমার দায়িত্বে রয়েছে কতগুলো পোষ্য। তাদের খাদ্য ও বস্ত্রের জন্য তারা আমার উপর নির্ভরশীল। আমার কারণে তাদের অন্তর অস্থির রয়েছে।
আল-আওযাঈ (রহ) বলেন, আমি অপেক্ষা করছিলাম কোন সময় যেন আমার মাথাটি আমার সামনে নিচে পড়ে যায়।
এরপর আমীর আমাকে চলে যাবার নির্দেশ দিলেন। আমি যখন বের হয়ে আসলাম তখন দেখি আমার পিছন দিক থেকে তার দূত আমাকে ডাকছে আর দেখি তার সাথে রয়েছে দু'শত দীনার। সে বললো, আমীর আপনাকে বলেছেন: এগুলো খরচ কর।
আল-আওযাঈ (রহ) বলেন, তারপর এগুলো আমি সাদাকা করে দিলাম। তবে এগুলো আমি ভয়ের কারণে গ্রহন করেছিলাম।
আল-আওযাঈ (রহ) বলেন, উক্ত তিন দিন আমি সিয়াম পালন করেছিলাম।
___________>
আল্লাহ আমাদেরকে ন্যায়নিষ্ট, নির্ভিক হিসেবে গঠন করুন। আমাদের অন্তর থেকে কাফেরদের ভয় দুর করুন আর কাফেরে অন্তরে আমাদের ভয় ঢুকিয়ে দিন। আমাদেরকে কাফেরদের বিরুদ্ধে জয়যুক্ত করুন। আল্লাহ হুম্মা আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৬ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনলাইনে আছে....
১। আলোকের কাফেলা
২। আলোর মিছিল
সম্ভবত তুমি নিজে আগেও পড়েছো।
উনাদের জীবনী পড়লে সত্যিকার মানুষদের পরিচয় জানা যায়!কি অসাধারন ছিলেন উনারা! আল্লাহর প্রতি ভয় এবং ইহাসান ছিলো যা আমাদের জন্য শিক্ষনীয় !
জাযাকাল্লাহু খাইর!
আপনাকে এইকথাটুকু লেখাকালে আমার চোখদিয়ে পানি পড়ছে। আমি সত্যি বলছি আমি আর কিছু চাই না। আমি অনেক কিছু পেয়েছি আল্লাহর কাছে। আলহামদুলিল্লাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন