রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাইজ চুরি
লিখেছেন লিখেছেন ছালসাবিল ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:২৯:২৫ সকাল
২৫শে মার্চ ২০০৪, বৃহস্পতিবার সকাল ১০:১৫ মিনিট। আর দশটা দিনের মত কর্মচাঞ্চল্যে মেতে উঠেছে শান্তিনিকেতন। যথারীতি ক্লাশ করেছে বিশ্ব ভারতীর ছাত্ররা। হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত খবরটা ছড়িয়ে পড়ল নোবেল চুরি হয়েছে। সবাই ছুটল রবীন্দ্রনাথের বাড়ি উত্তারায়নের দিকে। শুধু নোবেল কেন আরো অনেক রবীন্দ্র স্মৃতি থেকে শুরু করে কবি গুরুর অনেক ব্যাবহার্য জিনিসপত্র। এই উত্তরায়নই আজ রবীন্দ্র সংগ্রহ শালা।
সংগ্রহ শালার কর্মচারীরা যখন ভবনের দ্বার খুলে দেন তখনই সবার চোখে পরে ব্যাপারটা। শুরু হয় হৈ চৈ। ছুটে আসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাঃ সুজিত কুমার বসু সহ অরো অনেকে। চলে আসে পুলিশ। গোটা রবীন্দ্র ভবন ঘিরে ফেলে পুলিশ।
মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে খবর পৌছানোর সাথে সাথে তদন্তের নির্দশ দেন সি.আই.ডি কে। হতাশা প্রকাশ করেন বিশ্বভারতীর আচার্য ও প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাথে, আশ্বাস দেন সর্ব্বোচ্চ সহযোগিতার।
কি ভাবে চুরি হয়?
বুধবার ছিল শান্তিনিকেত এর ছুটির দিন। মঙ্গলবার দুপুর একটায় বন্ধ হয়ে যায় শান্তিনিকেতন। বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রভবন খুলতেই ধরা পরে চুরির ঘটনা। কিন্তু কি ভাবে চুরি হয় তা নিশ্চিত নয় পুলিশ। মঙ্গলবার বিশ্বভারতী বন্ধ হয়ে যাবার আগেই চোরেরা ভেতরে ঢুকে অবস্থান নেয়। সারা রাত ধরে মালপত্র সরাতে থাকে।
রবীন্দ্র ভবনের পেছেনের জানালা ভেঙ্গে ফেলে চোর, দেয়ালের নীচে পাওয়া যায় ভাঙ্গা গ্রীল। এই জানালা দিয়ে মালপত্র সরিয়ে নেয়। পুলিশ বলে চোর জানালা দিয়ে ঢোকেনি কারন সে ক্ষেত্রে জানালার পাল্লা ভেঙ্গে ফেলতে হত। উত্তরায়নের এই বিশাল এলাকা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল মাত্র দুজন এন.ডি.এফ কর্মী।
পাওয়া গেছে ২৮ জোড়া পায়ের ছাপ। তার মধ্যে আবার দু'জনের পায়ে চটি ছিল। তাই দেখে সি.আই.ডি আইজি ভুপেন্দর সিং বলেন চোর একজন না একাধিক, আর চটি প্রমান করে এরা স্থানীয়।
কি কি চুরি করল চোরেরা?
@ রৌপ্য পদক।
@ ওঁ লেখা সোনার আংটি।
@ জামার সোনার বোতাম।
@ কাফ লিঙ্ক।
@ মৃনালিনীদেবীর শাড়ি।
@ সোনা বাধানো নোয়া।
@ নোবেল পুরুস্কারের পদক।
@ রূপার রেকাবী।
@ রূপার কফি কাপ।
@ সামুরাই তরবারী।
@ কফি কাপ রাখার তেপায়া।
@ চৈনিক চামুচ।
@ কোবে শহর থেকে পাওয়া হাতির দাতের ঝাপি, সহ আরো ৩৭টি জিনিস।
বিশেষ ভাবে এখানে উল্লেখ্য যোগ্য কবির ৭০ তম জন্মদিনে ৪৯২ গ্রামের স্বর্নফলক দিয়ে ছিলেন রামেন্দ সুন্দর ত্রিবেদী। এর ডিজাইন করেছিলেন নন্দলাল বসু লিখে ছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ মুখার্জির মেয়ে কমলাদেবীর নামে ছিল স্বর্নপদক। সামুরাই তরবারীটি রবীন্দ্রনাথের ভাইপো সুরেন্দ্রনাথকে দিয়েছিল জাপানী শিল্পী কাকুজাও কাকুরা।
নোবেল চুরির খবর ছড়িয়ে পরার পর সারা ভারত জুড়ে উঠে ক্ষোভ। বিশ্বভারতী আচার্য ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবী করে। তৃনমূল কর্মীরা বৃহস্পতিবার অনশনে বসে। SFI মিছিল বের করে। প্রধান বিচারপতির আদালতে তিনটি আলাদা মামলা হয়। অমর্ত্য সেন, মহাশ্বতা দেবী, শঙ্খঘোষ সবাই ক্ষোভ আর অবিলম্বে উদ্ধারের দাবী জানান।
তৃনমুল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী এই চুরির দায়িত্ব বামফ্রন্টের উপর চাপিয়ে দেন আর ওদিকে কেন্দ্রীয় মানব উন্নয়ন মন্ত্রী ডঃ মুরালী বলে বলে তৃনমূল আর কমিউনিষ্টদের অশ্রদ্ধাই এই চুরির জন্য দায়ী। মুরালীর এই বক্তব্যর আবার তীব্র সমালোচনা করে সি.পি.আই (এম) এর রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস।
রাষ্ট্রপতি আবুল কালাম আজাদ উদ্বেগ প্রকাশ করে।
নোবেল যাতে গলিয়ে ফেলতে না পারে সেজন্য রাজ্য জুড়ে সকল স্বর্নকারদের অনুরোধ জানানো হয়। ওদিকে বীমা কোম্পানী ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কোম্পানী বলেছে তারা ১০ বছর আগেই বলেছে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা পর্যাপ্ত না।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুজিত কুমার বসু চোরদের কাছে আবেদন জানান, "ওরা ওই সব মূল্যাবান বস্তু আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিক ওদের ক্ষমা করে দেয়া হবে। ওদের পরিচয় গোপন রাখা হবে, এটা জাতীয় লজ্জা।"
এই চুরির অভিযোগে চোর জীবন বাগদির হাতের ছাপ নাকি মিলে গেছে। কিন্তু আসলে শেষ পর্যন্ত দেখা যায় জীবন বাগচি এতে জড়িত নয়। অন্যদিকে কোলকাতার বরাহ নগর বারই পাড়া লেনের একটি বাড়িতে হানা দিয়ে উদ্ধার হয় "রবীন্দ্র ১৯৩৮" লেখা ছবি সহ বেশ কিছু মুল্যবান সামগ্রী পরে প্রমানিত হয় ওগুলো শান্তিপুর রাজবাড়ী থেকে উদ্ধার কৃত চুরি যাওয়া মালপত্র।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সি.বি.আই তদন্ত শুরু করে ১লা এপ্রিল ওই দিন রাতেই তদন্ত কারী দল উদ্ধার করে চুরি যাওয়া একটি হাতির দাতের শিল্পকর্ম যা মিউজিয়ামের এক কোনে একটি কাপড়ের পুটুলিতে রাখা ছিল। এই উদ্ধারের পর সি.বি.আই নিশ্চিত এর সাথে রবীন্দ্র ভারতীর কেউ জড়িত।
জড়িত যেই হোক আজো ৯ বছর পরো এই নোবেল উদ্ধার হয়নি।
নোবেল চুরির ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সুইডেনের নোবেল কমিটি নোবেল কমিটির মুখপাত্র মাইকেল শ্যোলম্যান বলেন আমরা তো আর আসল নোবেল দিতে পারব না বড় জোর একটা ব্রোঞ্জ প্রতিরূপ দিতে পারি আর মানপত্রের তো প্রতিরূপ হয় না।
এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে পরিচালক সুমন ঘোষ একটি ছবি নির্মান করেন নাম “নোবেল চোর”।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রবী ঠাকুর, আশুতোষেরা চায়নি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হউক, ব্রিটিশ সরকার ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবে ঘোষনা দিয়া মুসিবতে পইড়া যায়। কলিকাতায় ১৯১৩ সালে ব্রিটিশ রানী আসিলে হিন্দুরা বিক্ষোভ দেখাইবে, হরতাল ডাকিবে বলিয়া হুমকি দিল।
এই মুসিবত হইতে উদ্ধারিতে ব্রিটিশ সরকার নোবেল কমিটিকে চাপ দিয়া পুরষ্কার টি রবী দাদাকে পাইয়ে দেয়। কলকাতারা দাদা বাবুরা খুশী হয়, তাহারা হরি হরি বইলা রানীর পদতলে লুটিয়া পড়িল। রবী ঠাকুরের সেই মহান কবিতা ধন্য হইল, 'ও আমার দেশের মাটি, তোমার পায়ে ঠোকরাই মাথা'।
যাউকগ্যা সেই পুরষ্কার লইয়া আমাদের আনন্দ-খুশী, বেজার-দুখী হইবার কুন কারণ নাই। কৃপনের ধন চোরে নিচে, এতটুকই শুধু বেশকম।
বছরখানেক আগে এই নোবেল পদকটি বাংলাদেশে পাচার হয়েছে বলে শোনা গিয়েছিল।
রবিন্দ্রনাথ এর মৃত্যুর আগে ও পরে তার প্রতি কিছু তথাকথিত রবিন্দ্রপ্রেমির আচরন নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। এই মুল্যবান জিনিসগুলি এমন হালাকা ভাবে কেন রাখা হয়েছিল সেটাও প্রশ্ন।
পুতুলআপপু স্টাইল
মন্তব্য করতে লগইন করুন