কারান্তরীণ মুজাহিদকে বিয়ে করলেন এক মহিয়সী নারী!!!
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাকছুদুর রহমান ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:১৯:৩৬ রাত
মুক্ত অবস্থায় সাক্ষাৎ হলো বিয়ের ২০ বছর
পর। বলছি আমিনা কুতুবের কথা। যিনি
ইসলামী আন্দোলনের
অন্যতম পুরোধা মিসরের সাইয়্যেদ কুতুব
শহীদের আপন ছোট বোন।
২০ বছর বয়সে আমিনা বিয়ে করেন
‘কামাল আল- সানানিরী’ নামক ইখওয়ানের
এক প্রথম সারীর নেতাকে।কামাল ইখওয়ানের
শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হওয়ায় জামাল আব্দুল
নাসেরের সামরিক সরকার ১৯৫৪ সালে
তাঁকে গ্রেফতার করে ফাঁসির আদেশ
দেয়।
কিছুদিন পর কোনো এক অজানা কারণে তাঁর
ফাঁসির আদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন
কারাদন্ড দেয়া হয়।
কারাগারে তাঁর উপর চলে নির্যাতনের স্টীম
রোলার।পাঁচ বছরের ধারাবাহিক নির্যাতনে
মারাত্মক অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে
পাঠানো হয় ‘লিমান তুররা’ নামক কারা
হাসপাতালে।
সৌভাগ্যক্রমে তাঁর স্থান হয় সাইয়্যেদ
কুতুব শহীদের সাথে একই কেবিনে।
ভাই সাইয়্যেদ কুতুবের সাথে দেখা করতে
মাঝে মধ্যে কারা হাসপাতালে যেতেন বোন
আমিনা কুতুব।আমিনা
কুতুব সম্পর্কে এভাবে কিছুটা ধারণা
পান কামাল। একদিন সাহস করে সাইয়্যেদ
কুতুবের কাছে আমিনার
সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি।
সাইয়্যেদ কুতুবও খুশী হলেন, কারণ কামালের
যোগ্যতা নিয়ে
তাঁর সামান্যতমও সন্দেহ ছিলনা।তারপরও
ছোট বোনের
মতামত নেয়ার প্রয়োজনবোধ করলেন তিনি।
তিনি আমিনাকে ভাবার
ও ইস্তেখারা করার পরামর্শ দেন।
টানা কয়েকদিন ভেবে ও ইস্তেখারা করে
ইতিবাচক ইংগিত পেয়ে আমিনা বিয়ের
প্রস্তাবে সম্মতি দেন। কুতুব পরিবার ও
আমিনা কুতুব জানতেন যাবজ্জীবন
কারাদন্ড মানে ২৫ বছরের কারাবাস।এরপরও
কঠিন অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আল্লাহর উপর
ভরসা করে আমিনা কুতুব বিয়ে করেন
কারাবন্দী কামালকে। অত্যাচারের ভিন্ন
মাত্রা প্রদর্শনে কিছুদিন পর তাঁদেরকে
নিয়ে যাওয়া হয় ‘ক্বানা’ নামক কারাগারে।
কায়রো থেকে এটি ছিল বহু দূরের পথ।
একদিন আমিনা
তাঁর ননদসহ দেখা করতে আসেন
কামালের সাথে।কথা বলার ফাঁকে ননদ তাঁর
ভাইকে কারাগারে আসতে তাঁদের
দুর্ভোগের কথা শেয়ার করেন।এটি
শুনে কামাল খুব ব্যাথিত হন।আমিনাকে
কাছে ডেকে
বললেন,
"আমিনা ! অনেক দিন হয়ে যাচ্ছে, ছাড়া
পাচ্ছিনা, আর
কবে যে ছাড়া পাবো তারও কোন ঠিক
ঠিকানা নেই।
আমাদের বিয়ের সময় তোমাকে
বলেছিলাম, এই তো
কয়টা দিন, আমরা একত্রে থাকতে
পারব আর ক’দিন পরেই।কিন্তু এখনো বিশ বছর
আমাদের
অপেক্ষা করতে হবে ।
আমিনা ! আমার মনে হয়, এত কষ্ট
তোমাকে দেয়া ঠিক
হবেনা।কারাগারের এই কঠিন
প্রকোষ্ঠে আমার শেষ
নিঃশ্বাস ফেলতে হতে পারে।তাই,
আমিনা!আমি
বলি কি, তুমি জীবন পথে তোমার সাথে
চলতে পারে
এমন কাউকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ কর,
তোমার কষ্ট আর
সহ্য হচ্ছেনা আমার, তোমার সুখের কথা
ভেবে তোমার
পথ তুমি বেছে নাও।আমিনা !
স্বৈরাচার জামাল
আমাদের সাথে আলোচনা করেছে, বলেছে
আমরা যদি
তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেই,
তবে আমাদেরকে
মুক্তি দেবে।আমাদের প্রাপ্য সম্মান
বুঝিয়ে দেবে ।
আমিনা, আমি বলে দিয়েছি, আল্লাহ
চাইলে তোমরা
আমার সারা শরীর কেটে টুকরো টুকরো
করে ফেলতে
পারো, কিন্তু ওই রকম আশ্বাস আমার
কাছ থেকে তোমরা
পাবেনা।আমিনা ! এখন ভেবে দেখো,
আমি তোমাকে
সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিচ্ছি, তুমি ভেবে
দেখো।"
আমিনা কথা শুরু করার সাথে সাথেই
কারার লৌহ কপাট
বন্ধ করে দেয়া হয়। আমিনা বাড়ি ফিরে
স্বামীকে তার
সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে কবিতার
ভাষায় এক লম্বা
চিঠি লেখেন। তাঁর একটি অংশ ছিল -
“নিরন্তর পথ চেয়ে বসে আছি, শুধু
তোমার জন্য
না হয় সে পথ হোক জিহাদের, লাল পথ
ধরে
পায়ে পায়ে যাই চলো জান্নাতের দ্বারে
জান যায় যাক, সেই ওয়াদার খাতিরে
ভয় কি ? লজ্জা কি ? কিসের বা বেদনা
আমার” ?
দীর্ঘ বিশ বছর কারা ভোগ করে কামাল
মুক্তি পায় ১৯৭৩
সালে।সে তো আর মুক্তি ছিলনা, ছিল
ধুলার ধরায় স্বর্গ
রচনার নির্মল প্রয়াস।আমিনা ও
কামাল শুরু করে
তাঁদের প্রতিক্ষিত জীবন।তবে তাঁরা
এক মুহুর্তের জন্যও
ভূলে থাকেননি তাঁদের আন্দোলনের
কথা ! তাঁদের
দায়িত্ববোধের কথা ! দিন রাত ছুটে
বেড়িয়েছেন
আন্দোলনের কাজে । এভাবে কিছুদিন
চলার পর ১৯৮১
সালের এক সন্ধ্যায় স্বামী কামালকে
আবারো বন্দি
করে সরকার । তার বিরুদ্ধে মিথ্যা
অভিযোগ দায়ের করা
হয় । অল্প ক'দিনের মধ্যেই সামরিক
কোর্টে কামালের
বিচার শুরু হয় । বিচারে কামালের
আত্মপক্ষ সমর্থনের
কোন সুযোগ না দিয়েই সরকার তাকে
ফাঁসির কাষ্ঠে
ঝুলিয়ে শহীদ করে । ১৯৮১ সনের ৬ই
নভেম্বর ভোর বেলা
থেকে আবারো শুরু হয় আমিনা কুতুবের
নিঃসঙ্গ জীবন ।
আর এই নিঃসঙ্গ জীবনের চির
পরিসমাপ্তি ঘটে ২০০৭
সালের ৭ই জানুয়ারী সন্ধ্যায় । অবসান
হয় এক মহিয়সী
নারীর বিপ্লবী ও সংগ্রামী জীবনের
ঐতিহাসিক
অধ্যায় ।
আল্লাহ আমিনা কুতুবকে কবুল করুন ।
এই আন্দোলনকে
কবুল করুন । ত্যাগ ও কুরবানীর এই
মহান শিক্ষা
আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সকলের
জীবনে
পরিপুর্ণভাবে বাস্তবায়নের তৌফিক
দিন। আমিনা কুতুবের মতো মহিয়সী নারী
প্রতিটি ঘরে উপহার দিন।আমীন
বিষয়: বিবিধ
১২৪৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
লেখাটা আপনি কপি পেইস্ট করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু একটু এডিট করলে এবং সূত্র দিয়ে দিলে ভাল হতোনা????
মন্তব্য করতে লগইন করুন