নীরব ধর্ষণ,,,
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাকছুদুর রহমান ২৪ জুন, ২০১৫, ০৯:৩৬:৫৮ সকাল
মিমি, এবার S.S.C দিচ্ছে। ওর বাবা রহিম
মিয়া মাছ বিক্রেতা। ফরমালিন যুক্ত মাছ
বিক্রি করে। কি করবে?? অন্য সবাই যে করে।
তাই উনিও করে। তবে কেউ যদি কিছু
জিজ্ঞাস করলে ফ্যাল ফ্যাল করে হেসে
বলে, না স্যার ফরমালিন একদম নাই। নদীর
টাটকা মাছ।
মাছ বিক্রি করে বিকেলের দিকে রহিম
মিয়া তার মেয়ে মিমির জন্য টাটকা ফলমুল
কিনতে যাচ্ছে। তার মেয়ের পরীক্ষা চলছে
অথচ ভাল মন্দ খাওয়াতে পারে না। তাই আজ
কিছু ফলমুল আর দুধ কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
মিমির আপেল খুবই পছন্ধের। বাবা তার জন্য
আপেল এনেছে আজ। তার হাসি আর কে
দেখে। মিমির মুখে হাসি থাকলেও মায়ের
মুখে নাই। তার মায়ের কথা এত টাকা খরচ
করে কেন ফলমুল আনা হলো!!
রাত নয়টা মিমি পড়ছে আর এক কামড় আপেল
খাচ্ছে। মেয়েটা দেখতে শ্যামলা হলে কি
হবে, চোখ দুটো অনেক সুন্দর। আর্মি অফিসার
হওয়ার ইচ্ছা। সামনে আয়না রাখা। একটু পর
পর নিজের চেহারা আয়নায় দেখে ও। অনেক
পড়া বাকি ওর। একটা মাইকের শব্দ ওর ঘর
থেকে শুনা যাচ্ছে। এটা নতুন কিছু না।
বেশকিছুদিন হল এইগ্রামে একজন পীর
এসেছে। উনি দিনে কারো সাথে কথা বলেন
না, দেখাও করেন না। রাতে দেখা করেন।
তার ভক্তরা তাই রাতের দিকে আসে।
অনেকের সমস্যা দুর হয়েছে। তাই নারি পুরুষ
সবাই উনার দরবারে যায়। একজন একজন করে
ভিতরে যেতে হয়। তাপর সমস্যা বলতে হয়। আর
উনি চিকৎসা করেন।
মিমি পরীক্ষা দিতে যাবে, রেডি হয়ে বের
হবে। হঠাৎ দেখতে পেল কোট টাই পরা কিছু
ভদ্রলোক ওর মায়ের সাথে কথা বলছে।
মিমির দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই সে চলে গেল।
কিন্তু এরা কারা মিমির খুব জানতে ইচ্ছা
করছে।
মিমির মা ছালেহা বেগম কথা বলছেন
এনজিওর লোকেদের সাথে। এদের কাছে
টাকা রাখলে তিন বছরে ২ গুন ফেরত দিবে। ১
লাখ রাখলে ৩ লাখ ফেরত পাবে। ছালেহা
বেগম উনাদের পরের মাসে আসতে বললেন।
রাতে রহিম মিয়াকে সব খুলে বলেন ছালেহা
বেগম। রহিম মিয়ার মন কিছুতেই সাই দিচ্ছে
না। আবার লোভও সামলাতে পারছে না।
তারপর যখন শুনল পাশের বাড়ির আবুল মিয়া ১
লাখ রেখেছে তখন রহিম মিয়াও রাজি
হলেন। কিন্তু এত টাকা পাবে কোথায়??
ছালেহা বেগম তার মায়ের দেওয়া সোনার
গহনা বিক্রি করে দিবে। আর রহিম মিয়ার
কিছু জমানো টাকা। আর প্রয়জনে কিছু ধার
নেওয়া যাবে। এই সব পরিকল্পনা চলল রাত
ভর।
মিমির পরীক্ষা শেষ। ভাল পরীক্ষা দিয়েছে
ও। বিছানায় শুয়ে আছে। জ্বর জ্বর লাগছে
ওর। শুয়ে থেকেই বুঝতে পারলো বাড়িতে
কারা যেন এসেছে। বাবা আর মা তাদের
সাথে কথা বলছে। বুঝতে পারলে সেদিনের
সেই লোক গুলো এসেছে।
রহিম মিয়া এনজিওর লোকদের হাতে ১ লাখ
টাকা তুলে দিলেন। এনজিওর লোকেরা বলল
তিন বছর পর আপনারা ৩ লাখ টাকা পাবেন।
রাত ১০ টা মিমি খুব ছট ফট করছে। ভিষন জ্বর
ওর। ওর মা মাথায় পানি ঢালছে। তবুও কিছুতে
কিছুই কিছুই হচ্ছেনা। ওর মা, মিমিকে পীর
সাহেবের কাছে নিয়ে যেতে বলল। রহিম
মিয়া মেয়েকে কোলে করে নিয়ে পীরের
দরবারে গেল। রাত বেশি হওয়ার মানুষ বেশি
নেই, ৭/৮ ছিল। রহিম মিয়ার মেয়ের এই
অবস্থার জন্য পীরের সহকারি তার মেয়েকে
আগে ভিতরে নিল। আর কিছুক্ষন পর বের হয়ে
সব রুগীদের চলে বলল। কারন এই মেয়ের
চিকিৎসা করতে অনেক সময় লাগবে। তাকে
নাকি জিনে ধরেছে। রহিম মিয়া বাইরে
দাড়িয়ে ছিল। পীরের সহকারী তাকে
ভিতরে নিয়ে গেল। ভিতরে যেয়ে তিনি
দেখতে পেলেন তার মেয়েকে মেঝেতে
শুইয়ে রেখে দুপাশে আগর বাতি জালিয়ে
ধুয়া দেওয়া হচ্ছে।
আর পীর সাহেব বিড় বিড় করে কি যেন
পড়ছে। পীর সাহেব চোখ খুলে খুব নরম গলায়
বললেনঃ আপনার মেয়েকে জিনে আছর
করেছে। আমি এখন জিনের আছর ছাড়াব।
আপনি বাইরে অপেক্ষা করুন। আর কোন
চিৎকার শুনলে ভয় পাবেন না। জিন
ছাড়ানোর সময় রোগী কিছুটা চিৎকার
চেঁচামিচি করে। এটা ভাল লক্ষন।
রহিম মিয়া বাইরে দাড়িয়ে মেয়ের জন্য দুয়া
করছে। ভিতরে মিমি শুয়ে আছে। ও কিছুটা
ঘোরের ভিতর আছে। আগর বাতির গন্ধে ওর
বমি বমি ভাব আসছে। পীর সাহেব সেটা
বুঝতে পেরে আগরবাতি নিভিয়ে দিলেন।
মিমি বুঝতে পারছে তার কপালে একটা
ঠান্ডা হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেটা কার
হাত বুঝতে পারছে না। আস্তে আস্তে মিমি
আরো ঘোরের ভিতর চলে যাচ্ছে। সারা শরির
যেন অবস হয়ে গেছে। ও অনেক ঘামছে।
হঠাৎ
ও কি যেন বুঝতে পারল চিৎকার দিয়ে বাবা
কে ডাকল। কিন্তু এর পর আর চিৎকার দিতে
পারল না। কারন তার মুখে হাত দিয়ে রাখা
হয়েছে। অনেক চেষ্টা করছে এখান থেকে
পালাতে। কিন্তু পারছে না। চোখ দিয়ে
অঝরে পানি পড়ছে মিমির...
বিষয়: বিবিধ
১০৯৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ বোঝা গেল যে পীর সাহেব কি মিশন নিয়ে গ্রামে এসেছিলেন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন