"আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমারো প্রাণ কোন সে বাঁধনে"
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাকছুদুর রহমান ১২ জুন, ২০১৫, ১০:৪৭:২৭ সকাল
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে
যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে আমাদের প্রজন্ম।
আমাদের সময়, আমাদের পরিবার, আমাদের
বন্ধন আর আমাদের চারপাশ! তথ্য প্রযুক্তিতে
থ্রি-জি, ফোর-জি এর জেনারেশন বদলের
চাইতেও দ্রুত বদলে যাচ্ছে আমাদের
জেনারেশন, তার "ইন্টারনাল টেকনোলজি"
আর ইভোলিউশন হচ্ছে অস্বাভাবিক
দ্রুতগতিতে।
আগে একটা সময়ে আমাদের প্রজন্মের আব্বা-
আম্মারা তাদের মধ্যে কথাবার্তা
‘মেলামেশা’ ছাড়াই বিয়ে-শাদী
করেছিলেন। সারাটা জীবন কাটিয়ে
দিয়েছেন। আমাদের দেখলে গলার কণ্ঠ
নামিয়ে তর্ক-ঝগড়া করতেন। কথায় কথায়
মায়েরা বাপের বাড়ি ‘যাও’, ‘যাবো’ বলতে
পারতেন না, বলতেন না… একাট্টা হয়ে দু’জনে
মিলে যুদ্ধ করে সংসার নামের নৌকাটার
হাল ধরতেন সংসার জীবনের চরম দুর্দিনেও…
পারস্পরিক সম্মান, অগাধ বিশ্বাস আর
দু’জনের মিলিত "কমিটমেন্টের" মাধ্যমে
তারা পাড়ি দিয়েছেন বিশাল পথ।
ভালোবাসা শব্দটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা
করতে দেখিইনা আমরা তাদেরকে!
অথচ আজ আমরা বিয়ের আগে ‘দেখাদেখি’
‘মিলামিলি’ আর ‘মিশামিশি’ ছাড়া কল্পনাই
করতে পারিনা বিয়েশাদী। আধুনিকা
মেয়েরা অচেনা ছেলেদের সাথে বিয়ে
করাকে "শুয়ে পড়া" বলে ‘ডিনোট’ করতে
পছন্দ করেন। এক বান্ধবীকে ক্লাসরুমে বিয়ে
নিয়ে বলতে শুনেছিলাম — "আব্বা-আম্মার
পছন্দের ছেলেটার সাথে ধুম করে শুয়ে পড়তে
পারবো না।" আর নিজ শব্দটা, ভাবের
প্রকাশটা ধাক্কার মত লেগেছিলো আমার।
বাবা-মা পছন্দ করতে গেলেই সেটাতে "শুয়ে
পড়া" প্রধান হয়। অথচ নিজেদের পছন্দ কেবল
সমাজের নিত্য-নতুন অবিন্যস্ততা বা কঠিন
ভাষায় অরাজকতাই এনে দিচ্ছে। আধুনিক
আমাদের পোলাপানরা ফেসবুকে দিনে
রাতে স্ট্যাটাস বদলে "সিঙ্গেল" থেকে "ইন
আ রিলেশনশিপ" আর "ইটস কম্পলিকেটেড"
বানায়……সম্পর্কগুলো কতনা সস্তা হয়ে
যাচ্ছে!
আমাদের মায়েরা "ক্ষ্যাত" ছিলো!
সারাজীবন আমাদের কোলেপিঠে মানুষ
করত, মাথার চুলটা আঁচড়ানোর সময় থুতনি
সমেত গাল দুইটা ধরত, স্কুলের টিফিনটা
বেঁধে দিতো নইলে পানির বোতলটা ভরে
দিতো। তাদের বান্ধবীদের সাথে হিন্দি
সিরিয়ালের আলাপ জুড়তো না ঘন্টার পর
ঘন্টা। সময় বদলে এখন কাজের মেয়ে
‘আনিসা’রা আমাদেরকে স্কুলে পাঠায়। আম্মু
সকালে অফিসে যাবার আগে খালি বলে
যান–"সুমন, খাবারটা খেয়ে নিয়ো, বাসায়
ফিরে পড়াশোনা করিও… "। সুমনরা বাসায়
ফিরে নেটে চ্যাট করে, লাল সাইটগুলোতে
বসে চোখ লাগায়, মোবাইল কানে ধরে
বিছানায় গড়াগড়ি খায়। এভাবেই বেড়ে
উঠতে থাকে আগামী যুগের কর্ণধারেরা…
আমরা তিন চারটা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড না
থাকলে ‘স্মার্ট’ হইনা। বিএফসি আর কেএফসি
তে না খেলে ‘ইশমার্ট’ হইনা। একবার
আমাদের এক বন্ধুকে অপর বন্ধু ‘টেক্সমার্ট’ না
চেনার অপরাধে তাচ্ছিল্য করেছিলো — সেই
ভাষাটা ভুলে যাবার মতন ছিলো না।
আমাদের সময়ের টিভির মডেল আপুদের দেখে
আমরা অনুপ্রাণিত হই। জীবনে ‘মুক্ত’ হইতে
পছন্দ করি। "কেমন ছেলে পছন্দ?" এই ধরণের
প্রশ্নের উত্তরে শোনা যায়– "কেয়ারিং
শেয়ারিং…… ইত্যাদি ইত্যাদি"– যার গূঢ়তম
অর্থ কী — বক্তার দল কোনদিনও ব্যাখ্যা
করতে পারবেন না। কারণ তারা জানেনই না!
তারা জানেন এগুলো কিছু বাক্য যেগুলো
স্মার্ট হলে বলতে হয়–ভাবতে হয়। তার
জাগতিক অবস্থান আছে কিনা সেগুলো
চিন্তার অধিক ব্যাপার-স্যাপার।
"আমি একটু ‘স্বাধীনচেতা’" মর্মে আমাদের
নব্য আধুনিকা আপুরা ঘোষণা দেন। অথচ তারা
জানেনই না এইটার মানে কি! স্বাধীন হতে
হতে অদ্ভূত একটা পরাধীনতার শিকলে আটকা
পড়ছেন সেটা টের পাচ্ছেন না। নিজেকে
"আকর্ষণীয়" করে উপস্থাপন না করলে, ‘খুল’
আর ‘হট’ না হলে পুরুষদের কাছে তারা
‘ইভ্যালুয়েটেড’ হবেন না বলে পার্লারের
সাথে, ফেসিয়াল, আই-ব্রো প্লাক, চুল
স্ট্রেইটিং, মেনিকিউর, পেডিকিউর এর
সাথে আজীবন বন্ধন করে ফেলছেন। অথচ এই
ভরা সৌন্দর্য আর সহজাত যৌবন চলে যাবার
পর তারা কী দিয়ে "পুরুষ"দের "বেঁধে"
রাখবেন — সেই চিন্তাটা মোটেই ভাবেননি
তারা — হলফ করে বলা যায়। এই "বাঁধন" খুবই
অবিবেচক, খুবই দুর্বল বাঁধন রে বোন —
এভাবে হয়না! অর্জন করতে না পারো,
নিজেকে লেলিয়ে দিয়ে পাশবিক অনুভূতির
পুরুষ দ্বারা নিজেদের ক্ষতিসাধন করিও না!
সেদিন একটা ফিচারে পড়ছিলাম — পশ্চিমা
বিশ্বে নাকি ৫০ শতাংশ ছেলেপিলে তাদের
বাবার পরিচয় জানে না! তথ্যের
অথেনটিকেশন জানিনা, তবে ঘটনা যেমন
জানি সেই হিসেবে নামলে অবস্থা এর
চাইতে খারাপ হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
আমাদের গন্তব্য কি অমনই কোন ঠিকানায়?
এই জগতের কোন নারী কোনদিন অস্বীকার
করতে পারবে না যে তারা একটা পুরুষের
জন্য মনের অনেক অনেক স্বপ্ন সযত্নে
সাজিয়ে রাখেন। সেই মানুষটা এসে তার
প্রতি আন্তরিক হবে, কথা শুনবে আর একসাথে
বন্ধু হয়ে জীবনটা কাটাবে– বেশিরভাগই এমন
চিন্তা করেন। যেইসব ‘ছেলেদের’ সাথে
আপুরা এখন সন্ধ্যাতে, গোধূলিবেলায় ঘুরে
বেড়ান– তারা তাদের ‘স্বপ্নপূরণে’ সচেষ্ট
হউক– প্রার্থনা করি। আহারে, তাও যদি
হতো!! শরীরের যাবতীয় "পাপ" নাকি ঝেড়ে
ফেলা যায়। একটা সময় প্রচলিত ছিলো
মেয়েরা কেবল "ভুক্তভোগী"। একজন শিক্ষিত
তরুণীকে বলতে শুনেছিলাম — ছেলেরা
"ঝেড়ে" ফেলতে পারলে মেয়েরাও পারে,
এইটা ব্যাপার না! আমি মনে মনে প্রার্থনা
করছিলাম — "যদি পারতা"! নিজেদের
অজান্তে নিজেদের প্রশ্রয় দিয়ে, ছেলেদের
প্রশ্রয় দিয়ে অনিশ্চিত জটিল একটা
ভবিষ্যতের আঞ্জাম দিচ্ছো বোন — সে যদি
অনুভব করতে পারতে!
এখন জীবনের বেশিরভাগ (পড়ুনঃ সমস্ত)
ইমোশোন বিয়ের আগেই শেষ। ফোনে,
রেস্টুরেন্টে, ধানমন্ডি লেকে গিয়েই মনের,
দেহের সব ‘চাওয়া’গুলা পূর্ণ হয়ে যায়।
টিএসসিতে, পার্কগুলো, রেস্টুরেন্টগুলোতে
ঘনসন্নিবিষ্ট হয়ে বসে দেহের উষ্ণতা
নেয়াটাই আমাদের ‘স্বাভাবিকতা’। এই
রামাদান মাসেও রিকসার মাঝে অদ্ভূত
সন্নিবিষ্টতার উদ্দাম তারুণ্যকে দেখেছেন —
এমন মানুষও কম নেই। অথচ এমন করেই একদিন
মিউচুয়াল "ব্রেক আপ" হয়ে যান’ আমাদের আপু
আর ভাইয়ারা… আবার শুরু হয় নতুন কারো
খোঁজ… অন্তহীন অক্লান্ত খোঁজাখুজি।
ফেসবুকে অনবরত প্রোফাইলে ভ্রমণ করে,
বন্ধুদেরকে ত্যক্ত-বিরক্ত করে অনুরোধ করে,
এয়ারটেলে কল করে হাবীবের গান "বলে
ওঠো আজ না বলা কথা" শুনে গিয়ে নতুন
ছেলে-মেয়েদের মাঝে বন্ধু খোঁজা,
গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড খোঁজা আমাদের
ভালোবাসা। তারপর, আবার সেই পুরোনো লুপ।
শেষ কোথায় হয় –কেইবা জানে!
সেদিন শুনলাম আমার ইংলিশ মিডিয়ামে
ক্লাস সেভেনে পড়া কাজিন (বোন)
বলতেসিলো তাদের মাঝে "ক্রেজি" নামক
খেলা আছে। কে কত বেশি ‘ক্রেজি’ কাজ
করতে পারবে। নির্দিষ্ট কয়েক ধাপের পর
যে ‘সিলেক্ট’ হবে, মোস্ট ক্রেজি কাজ হচ্ছে
বড় ভাইয়াকে গিয়ে একটা ‘অফার’ দিতে
হবে। শুনেই কান গরম হয়ে গিয়েছিলো আমার!
এটাই নাকি সিম্পল, এটাই নাকি গেম! কী
জানি বাপু, ১০ বছর আগে ফেলে আসা
বয়েসের খেলাধূলা তো এমন ছিলোনা!
আসলে, আমরা তো আধুনিক হচ্ছি। তাই, অমন
সহজেই কান উষ্ণ হওয়াটাও আমাদের কানের
আধুনিকতা।
আরো অনেক কিছুই আছে, বলতেও আর আগ্রহ
পাচ্ছিনা। পারলে অন্যসময় বলবো। তবে একটা
কথা না বললেই না — আমাদের এই তারুণ্যে,
এই যৌবনে, এই সমাজে আজ কিছু ক্ষত দেখা
দিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষততে ঘা হয়েছে। ভয়
হয়, এই ঘা যখন গ্যাংগ্রিনে পরিণত হবে —
তখন আমরা কোথায় যাবো। গোড়া থেকে
কেটে ফেলে কতটুকু কী রক্ষা করতে পারবো
জানিনা! সেদিনের আগেই যদি সচেতনতা না
আসে, সেদিনের আগেই যদি আমরা না বুঝি
আমাদের স্রষ্টা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা’আলা কর্তৃক যেই গাইডলাইন দেয়া
হয়েছিলো — তার মাঝেই "আলটিমেইট"
মুক্তি, তাহলে অনাগত ভয়াবহ দিনের
অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় এই
ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে আসে না।
এই সৃষ্টিজগতের জটিলতম সৃষ্টি মানুষ, শ্রেষ্ঠ
সৃষ্টি মানুষকে কীভাবে চলতে হবে, কী করে
চললে তার পারফরমেন্স হবে সবচাইতে
ভালো, সুস্থ আর সুন্দর তার যাবতীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন সেই মহান শিল্পী,
মহান স্রষ্টা। তাই দুনিয়া আর আখিরাত —
উভয় জগতের অনন্ত ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে
তার প্রদর্শিত পথে ফিরে যাবার মাঝেই
আছে সফলতা। আল্লাহ আযযা ওয়াজাল
আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।
ভালো লাগলে এই পিচ্চি পোলার ফ্যান পেজটি দেখে আসবেন https://m.facebook.com/profile.php?id=102627736743584
বিষয়: বিবিধ
১০৮৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাশাআল্লাহ! এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেলেছি..দারণ হয়েছে ব্রাদার..আপনাকে জানাই অন্তর থেকে শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন