ডাঙ্গায় ধর্ষণের ভয় আর সমুদ্রে মৃত্যু! কোথায় যাবে তারা???

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাকছুদুর রহমান ০১ জুন, ২০১৫, ০৬:৩১:০৭ সন্ধ্যা

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে অসহায় জাতি রোহিঙ্গা।

নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠী তাদের গোত্র ও

ধর্মের জন্যে মিয়ানমারের সংখ্যা গরিষ্ঠ বৌদ্ধ

সম্প্রদায় দ্বারা গণহত্যার বলি হচ্ছেন। তারা নাগরিক

অধিকার বঞ্চিত, জগতের সবচেয়ে লাঞ্চিত ও

ভাগ্যহত মানুষ। তাদের থেকে কেড়ে নেওয়া

হয়েছে উপার্জিত সব সম্পদের মালিকানা, নাগরিক

অধিকার, মানবিক অধিকার, এমনকি বেঁচে থাকার

অধিকারও। হত্যার ভয় আর ধর্ষণের আশংকা তাদের

উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে। এই বিশাল পৃথিবীটা

তাদের জন্যে এতটাই সংকীর্ণ হয়ে ওঠেছে

যে তাদেরকে নারী শিশুসহ সাগরে ভাসতে

হচ্ছে। মিয়ানমারের আচরণে মনে হচ্ছে

রোহিঙ্গারা মানুষ নয়। আধুনিক (!) মানুষ পশুকে যতটুকু

মূল্যায়ন করে তারা যেন ততটুকু মূল্যায়ন পাবারও

যোগ্যতা রাখেনা। রোহিঙ্গাদের দাসের মতো

বাধ্যতামূলক শ্রম প্রদান করতে হয়। এছাড়া হত্যা,

নির্যাতন ও ধর্ষণের স্বীকার হতে হয়। নিজ

দেশে তারা পরবাসী হয়ে এখন পরের দেশকে

আপন করে বেঁচে থাকতে সচেষ্ট রয়েছে।

রোহিঙ্গা নারীরা একদিকে মায়ানমারের

নিরাপত্তাবাহিনী ও রাখাইনদের হাতে ধর্ষণের

আতংকে থাকে অন্যদিকে নিরাপদ আশ্রয়ের

খোঁজে সমুদ্রপথে নেমেও

মানবপাচারকারীদের কবলে পরেন। গভীর

সমুদ্রেও যখন রোহিঙ্গা নারী পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য

হয় মানবতা তখন নিভৃতে কাঁদে। কোথায় যাবেন

রোহিঙ্গা নারীরা? মায়ানমারে পুলিশ ও রাখাইনদের

হাতে ধর্ষিত হওয়ার ভয় আর মানবপাচারকারীদের

কবলে পতিত হওয়া। জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তির

বিরোধিতাকারী পুরুষকে মানবপাচারকারীরা কখনও

হত্যা করে কখনও সমু্দ্রের জলে ফেলে দেয়

। কোথায় যাবে রোহিঙ্গা নারীরা? কিভাবে আশায়

বুক বাঁধবে? একমাত্র বেঁচে থাকাটাই যখন কোন

নারীর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়

তার জীবন তখন হয়ে ওঠে অর্থহীন ও

প্রাণহীন।

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম

জনগোষ্ঠীকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি

দিতে জাতিসংঘের আহ্বান প্রত্যাখান করে বলেছে,

নৌযানে করে সাগরে ভাসা অভিবাসন-প্রত্যাশীদের

নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এ দায় তাদের একার

নয়। রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্য নতুন নয়। ১৯৪২

সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, জাপানীরা হাজার

হাজার রোহিঙ্গাদের নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যা করে।

এসব নির্যাহতন ও নিপীড়ণের ফলাফল হয়েছে

ভয়াবহ। ড. শুয়ে লু মং ওরফে শাহনেওয়াজ খান The

Price of Silence: Muslim-Buddhist War of

Bangladesh and Myanmar – a Social Darwinist’s

Analysis বইতে লিখেছেন যে, আরাকান রাজ্যের

চারটি জেলাতে রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইন বৌদ্ধদের

সংখ্যিক অনুপাত প্রায় সমানই ছিল – কিন্তু ৩রা জুন, ২০১২

থেকে শুরু হওয়া রাখাইন বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের

নির্মূলাভিযানের কল্যাণে সেসব মুসলিম জনবসতি

এখন প্রায় জনশূণ্য।

রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়েছে সর্বহারা হয়ে, নি:স্ব

ও নিরুপায় হয়ে। ক্ষমতাসীনরা তাদেরকে নামাজ

আদায়ে বাধা দেয়, তাদের নারীদেরকে ধর্ষণ

করে, সম্পত্তি জোর করে কেড়ে নেয়,

বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করে, শিক্ষা-

স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে,

বিয়ে করায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, জাতিগত

পরিচয় প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেয়, বিভিন্ন

রকম অন্যায় ও অবৈধ কর চাপিয়ে দেয়, চলাচলের

স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, রাস্তার

কাজে ও সেনা ক্যাম্পে বাধ্যতামূলকভাবে

কোনো প্রকার পারিশ্রমিক ছাড়াই শ্রমিকের কাজ

করায়। রোহিঙ্গারা সরকারি অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ করতে

পারে না, জমির মালিক হতে পারে না। রোহিঙ্গাদের

জমি জবর-দখল করা, জোর-পূর্বক উচ্ছেদ করা, ঘর-

বাড়ি ধ্বংস করা খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়েছে।

সত্যি কি বিচিএ এই জগত! রোহিঙ্গারা শারীরিক ও

পাশবিক নির্যাতনের শিকার হবেন, বেচেঁ থাকার সব

অবলম্বন হারাবেন, জীবন নিয়ে কোনোরকমে

পালাবেন তবে কোথাও আশ্রয় পাবেন না। কারণ

তারা মানুষ নাকি মুসলমান তারচেয়েও বড়কথা (!) তারা

মালায় কিংবা বাঙালি নন। বিশ্বসম্প্রদায় নির্যাততিত,

নিষ্পেষিত ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের দু:খ কষ্ট

লাঘবের চেয়ে যদি নিষ্ঠুর ক্ষমতাবানদের পক্ষে

দাঁড়ায় তবে সেটা সন্দেহাতীতভাবে দু:খজনক

বৈকি! এটি খুবই বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক যে,

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে

দেশটির বিরোধীদলীয় নেত্রী অং সান সু

চিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে হয় তিব্বতের

আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামাকে।

আসলে কোন সভ্য সমাজই দারিদ্র্য ও রাষ্ট্রীয়

বৈষম্যের কারণে দেশ ছেড়ে যাওয়াকে সমর্থন

করতে পারেনা। শুধুমাত্র বাঁচার তাগিদে জীবনের

ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে যাত্রা বড়ই অনাকাংখিত। আমরা চাই

রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপনের অবসান

ঘটবে এবং মিয়ানমার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম

জনগোষ্ঠীকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি

দিতে জাতিসংঘের আহবানকে গ্রহণ করবে।

বিশ্বসম্প্রদায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আশু

পদক্ষেপ নিবে এটাই প্রত্যাশা।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

323913
০১ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৮
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : লেখাটায় কি মন্তব্য করা উচিত জানিনা। জাস্ট মন্তব্য করে পার পেয়ে যাবার লেখা মোটেও না এটা। আর জাস্ট তাদের পক্ষে দুচার লাইন সহানুভূতিমূলক কথা লিখেও দায়িত্ব শেষ করলে চলে না। মানুষগুলো মারা যাচ্ছে। ২০১২ থেকে যে ভয়াবহ গ্ণহত্যা শুরু হয়েছে এবং কিছুদিন আগে আবার শুরু হয়েছে তাকে পাশ কাটিয়ে যাবার কোন রাস্তা নেই। অনেকেই বলছেন সমাধান হিসেবে যুদ্ধের কথা কিন্তু তাতে বরং এ মানুষগুলোর উপর স হিংসতা বাড়বে। জঙ্গী দমনের নামে তখন মায়ানমার পশ্চিমাদের কাছ গণহত্যায় বৈধতা পেয়ে যাবে। মানুষগুলোকে বাচানোর কোন রাস্তা অবশ্যই বের করা উচিত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File