জীবনের চেয়ে কোনো পরীক্ষা/রেজাল্ট ইমপর্টেন্ট নয়!!! =================================
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাকছুদুর রহমান ২৯ মে, ২০১৫, ১১:২৩:৪০ সকাল
এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন রাতের
বেলা মুকুল বাড়ির এগারো তলার ছাদে একদম
কিনারে দাঁড়িয়ে।
অঝোরে পানি পড়ছে ওর চোখ দিয়ে!
'এতো চেষ্টা করলাম তারপরো রেজাল্ট ভালো
হলোনা! আমি তো চেষ্টা করেছিলাম,
হলোনা তাতে আমার কি দোষ! বাবা তাই
বলে আমাকে এত্তো বকবে!
বললো আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা!
রিকশা চালাতে বললো! আমার কি দোষ!
আমি তো রাত জেগে জেগে পড়েইছিলাম! তখন
তো সবাই বলেছে আমি ফ্যামিলির মুখ উজ্জ্বল
করবো! আর এখন সবাই আমাকে বকছে! আম্মাটাও
মুখ ভার করে বসেছিলো!
বাবাকে আটকাচ্ছিলোনা!
কি হতো আম্মা যদি তখন একটু আমার পক্ষ নিতো!
সবাই শুধু আমাকে বকে! কেউ আমাকে
ভালোবাসেনা!
আমি না থাকলে কারো কিছু যাবে আসবেনা!
কেউ আমাকে বোঝেনা, সবাই শুধু আমার রেজাল্ট
বোঝে! থাকবোনা আর আমি!' -
ভাবতে ভাবতে চোখ মোছে মুকুল।
সুপারম্যান টিভি সিরিজটা তার অনেক প্রিয় ছিলো।
উড়তে তো পারবেনা, তাই পাইলট হবার
খুব ইচ্ছে ছিলো মুকুলের।
ইচ্ছে ছিলো জীবনে একবার অন্তত
প্লেনে চড়বে। তা আর হলো কই!
বুকে প্রচন্ড অভিমান নিয়ে লাফ দিলো মুকুল,
বলতে গেলে নিজেকে হাওয়ার উপর ছেড়ে
দিলো।
এক সেকেন্ড পর বাড়ির সামনের বাগানে ধুপ
করে কিছু পড়ার শব্দ হলো। তারপর সব চুপ! কেউ
শুনলোনা সে শব্দ! একটু পর মুকুলের বাবা আলম
সাহেব এশার
নামায পড়ে বাসার সামনে এসে দাড়ালেন। বাগানে
বস্তামতো কি যেন একটা পড়ে আছে!
রাতের
বেলা চশমা ছাড়া ঠিকমতো দেখতে পান
না উনি। চশমাটা চোখে লাগালেন উনি।
ভালো করে তাকালনে! মুকুউউউউউউউল!!!! বিকট
চিৎকারে বাড়ি কেপে উঠলো! সবাই শুনলো আলম
সাহেবের সেই চিৎকার। শুধু
শুনতে পেলনা একটা অভিমানী বাচ্চা! যার
রেজাল্ট একটু খারাপ হয়েছিলো! মুকুল
মারা যাবার পর
সবচেয়ে বেশি কেদেছিলেন মুকুলের বাবা!
এখনো কাদেন! ছেলের প্রবেশপত্র বুকে
জড়িয়ে ধরে কাদেন! যে মুকুল
ভেবেছিলো সে না থাকলেও তার ফ্যামিলির
কিছু যাবে আসবেনা, সেই মুকুলের ফ্যামিলি আজ
জীবন্মৃত। বাড়ির সবচেয়ে চঞ্চল ছেলেটাই
তো আজ নেই! সারা বাড়ি দুষ্টুমি-হাসি-চ
িৎকার-চেচামেচিতে আর ভরে থাকেনা! মুকুলদের
বাড়ির কেউ আর হাসেনা! মুকুলের
খাবারের প্লেটটায় খাবার ওঠেনা! মুকুলের
মা খালি প্লেটটার
দিকে নিঃশব্দে চেয়ে থাকেন। কখন যে
চোখের
পানিতে ওনার গাল ভিজে ওঠে টেরও পান
না উনি! কেউ জানেনা এখানে কারো কোন
দোষ ছিলোনা!
মুকুল শুধু বুঝতে শেখেনি সে তার পরিবারের
কাছে কতো গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কেউ এটা
স্বপ্নেও
ভাবেনি মুকুলকে এটা বোঝানো উচিৎ।
মুকুল কাল শিক্ষক হতে পারতো, পাইলট
হতে পারতো হয়তো প্লেনেও চড়তে
পারতো! তার কিছুই হলোনা! আগামীকাল এস এস সি
২০১৫'এর
রেজাল্ট, পাবলিষ্ট হবে। যারা পরীক্ষা দিয়েছো তাদের জন্যে বলি,যদি কারো রেজাল্ট খারাপ হয়,তাতে হতাশার কিছুই নেই। সাবধান! তোমার কিছু
হলে তোমার পরিবারের অবস্থা এর চাইতেও
ভয়াবহ হবে গ্যারান্টি আমি নিতে পারি। যেকোন
অবস্থাতেই তুমিই তোমার পরিবারের
জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষণিকের ভূল
বোঝাবুঝিতে এমন কিছু কখনোই করে বসোনা।
আর
যাদের আপনজনেরা পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের
প্রতি একটাই অনুরোধ বিপদে প্রিয় মানুষটির
পাশে থাকুন। তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনি
পাশে থাকলে সে এবার
যা করতে পারলোনা, পরের যেকোন সময় তার
ডাবল করে পুষিয়ে দেবে, এর
গ্যারান্টি আমি নিচ্ছি, শুধু আপনি তার
পাশে থাকুন। আমাদের সবার একটাই
কামনা রেজাল্টের দুদিন পর পত্রিকার পাতায় আর
কোন ছোট
ভাইবোনের আত্মহত্যার খবর যেন আমারদের
আর
পড়তে না হয়!
মনে রাখতে হবে,
সামান্য পরীক্ষার রেজাল্ট তোমার মুল্যবান জীবনের চেয়ে অনেক অনেক ক্ষুদ্র, এটা জীবনের একটা ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র,জীবন এর চেয়ে অনেক বড়! তাই ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ের জন্য অভিমান করে আমরা যেনো এমন কোনো কাজ না করি, যা আমাদের 'জীবন' কে নিঃশেষ করে দিবে!
অবশেষে সকলের জন্য রইলো শুভ কামনা!
বিষয়: বিবিধ
১২০২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ছেলে মেয়ের রেজাল্ট ভালো করা যেনো অন্য বাইকে বলে বেড়ানোর জন্য আর এজন্যই বলে ফ্যামিলির মুখ উজ্জল হবে! এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। বাচ্চাদের আগেই শিক্ষা দেয়া উচিত পার্থিব কোন কারনেই কোন ভাবেই আত্নহত্যার পথ বেছে না নেয়া!
শুকরিয়া!
মন্তব্য করতে লগইন করুন