গল্পঃ একজন ইভটিজার এবং একজন খুনী !
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাকছুদুর রহমান ২১ এপ্রিল, ২০১৫, ১২:০৬:২১ দুপুর
সীমি একটা লম্বা করে শ্বাস নিল । প্রত্যেকবার কাজ
টা করার সময় সে এরকম করে একটা লম্বা শ্বাস নেয়
। তখন মনে একটা সাহস আসে । অন্য কোন কিছু
চিন্তায় না এসে কেবল মুল বিষয়টার উপর ফোকাস
করতে পারে । ফলে রাগ টা আরেকটু বাড়িয়ে নিতে পারে
সামনে কিংবা পাশে বসা মানুষটার দিকে।
সীমি আরেকবার তাকালো লোকটার দিকে। বয়স কত
হবে?
চল্লিশের কাছা কাছি। বাসায় নিশ্চই বউ আছে । ছেলে
মেয়েও আছে। একটু সময় সীমি তাদের কথা ভাবতে
লাগলো। একবার ভাবলো মাফ করে দেই কিন্তু
পরক্ষনেই চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিল । এই ভাবে ক্ষমা
করে দেওয়ার মানে তাদের কে আরও লাই দেওয়া! লাই
পেলে সামনের দিনে আবারও ঠিক একই কাজ টা করবে
বদমাশ টা!
সীমি আরেকবার লম্বা নিঃশ্বাস নিল। তারপর নিজের
ব্যাগ থেকে লাল রংয়ের ছোট বাক্সটা বের করলো।
সেখানে থেকে একটা চিকন সুই বের করে হাত নিয়ে
আস্তে করে ফুটিয়ে দিল পাশে বসা লোকটার গায়ে।
এমন ভাবে কাজ টা করলো যেন বাসের ঝাকিতে সীমি
তার পাশের জনের উপর একটু সরে গিয়েছে । ব্যাপার
টা ইচ্ছা কৃত নয়!
লোকটা সীমির দিকে তাকিয়ে একটু দাঁত বের করে
হাসলো! যেন এমন ভাবে তার দিকে হেলে পড়াতে সে
খুবই খুশি হয়েছে । পাশের লোকটা একটা বারের মতও
ভাবলো না ঠিক এই মাত্র টার শরীরে মশার কাপড়ের
মত একটা একটা সুইয়ের মাধ্যমে মারাত্বক বিষ
প্রবেশ করানো হয়েছে। সে হাসতেই লাগলো!
সীমির মাঝে একটু চাঞ্চল্য দেখা দিল। যদিও খুব বেশি
তাড়াহুড়ার করার কোন কারন নেই । আষ্ট্রেলিয়া
থেকে আনানো এই বিষটা তার কার্যকারিতা দেখাতে
আরও মিনিট পয়তাল্লিশেক সময় নেবে। আর সীমির
স্টপেজ এখান থেকে খুব বেশি হলে মিনিট দশেরকের
পথ। সীমি নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো।
একটু সতর্কও হওয়ার চেষ্টা করলো। লোকটা
আবারও সেই কাজ করতে পারে যে কাজের জন্য তাকে
এতো বড় শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
সীমি জানে এখন থেকে ঠিক ৪৫ মিনিট পরে লোকটার
হঠাৎ করেই খুব গরম লাগা শুরু করবে। এতো গরম
যেন গায়ের গায়ের থাকা সব জামা কাপড় খুলতে ইচ্ছা
হবে। অনেকে আবার খুলেও ফেলে না থাকতে পেরে।
সেই সাথে খুব ঘাম হবে। এরপর এমন ভাবে বুকটা
লাফাতে শুরু করবে যেন বুক থেকে বেরিয়ে আসতে
চাইবে। সারা শরীরে যেন আগুন ধরে যাবে এমন মনে
হবে! এই উত্তেজনা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে
না। যত শক্ত হার্টের মানুষই হোক না কেন খুব বেশি
হলে ৫ মিনিট, তারপরেই ঠুস!
শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এমনই হবে । এই ৫ মিনিটেই
লোকটা নরক যন্ত্রনা ভোগ করবে । অবশ্য এটা
খুব কম শাস্তি । যে মানুষ গুলো মেয়েদেরকে বিব্রত
করে, তাদের সম্মান হানি করার চেষ্টা করে তাদেরকে
এরও বড় শাস্তি দেওয়া উচিৎ । কিন্তু এই দেশের
অসস্থাই এমন যে এখানে এসব যেন খুবই সাধারন
ঘটনা ! উল্টো মানুষের এমন একটা মনভাব যেন দোষ
আসলে মেয়েটারই । নিশ্চই মেয়েটার পোষাকে কোন
দোষ ছিল ! তার চালচলনে কোন দোষ ছিল !
প্রথম যেদিন এমন ঘটনা ঘটে তখন সীমি কেবল মাত্র
এসএসসিতে পড়ে । ওদেরই বাড়িওয়ালার ছেলে একদিন
লিফটের ভেতরে একা পেয়ে ওকে চেপে ধরে শরীরের
বিভিন্ন জায়গায় হাত দেয় ! সীমি প্রথমে কিছু ভেবে
উঠতেই পারে নি । ওর কাছে মানুষের এরকম আচরন
ছিল সম্পূর্ন নতুন ! কোন ছেলে যে তার সাথে এরকম
কিছু করতে পারে এটা তার ধারনার বাইরে ছিল !
বাসায় এসে মা কে বলতে যথারীতি বিচার নিয়ে যাওয়া
হল বাড়িওয়ালার বাসায় । ছেলেকে শাসন করবে কি
উল্টো সীমির নামেই উল্টো কথা বলতে শুরু করলো
। নিশ্চই সীমির চাল চলন ঠিক ছিল না । সেদিন রাতে
সীমির ঘুমই এল না । চোখ বুঝলেই কেবল লিফটের
দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে আসছিল । এরপর চলতে
ফিরতে এরকম পরিস্থির ভেতর পরতে হয়েছে ওকে !
সব ক্ষেত্রেই দোষ তার !
মানুষের কথা একটা সময় মনে হয়েছে হতো লোকে
কেবল ওর গায়েও হাত দেয় কিন্তু আসে পাশের আরও
অনেকেরই একম অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারে যে
এরকম প্রায় সবার সাথেই হয় ! দোষ কোন ভাবেই
তার নয় বরং দোষ ঐ জানোয়ার গুলোর !
কিছু বলার নেই, কেউ শোনার নেই । মাঝে মাঝে মরে
যেতে ইচ্ছে করতো ! সব সময় ভিড় এড়িয়ে চলতো ।
নিউমার্কেটে যাওয়াই বন্ধ করে দিল ! ওখানে সব
থেকে বেশি মানুষের ভিড় । আর সব সময় সতর্ক
থাকতো ! কিন্তু যতই ভিড় এড়িয়ে চলতে চাক না কেন
ঢাকার বাস গুলোতে ভিড় এড়ানো কোন ভাবেই
সম্ভব হত না । বিশেষ করে চাকরী শুরু করার পর
থেকে বাসের কোন বিকল্প সে খুজেই পেল না ।
সিএনজিতে চলাচল টা তার জন্য বড্ড বেশি বিলাশিতা
হয়ে যায় ।
আবারও এরকম ঘটনা ঘটতে থাকলো ! মুখ বুজে যখন
সহ্য করে যাচ্ছিলো তখনই এই মারাত্বক অদ্ভুদ
বিষের কথা জানতে পারে একটা ওয়াল্ড লাইফ
ম্যাগাজিন থেকে । মাত্র সুইয়ের আগা সমান বিষ
কারো শরীরে প্রবেশ করলেই তার মৃত্ব্য অবধারিত ।
এবং মরার আগে সে ভোগ অকল্পনীয় এক নরক
যন্ত্রনা ! অস্ট্রলিয়া পড়তে যাওয়া এক কাজিনের
মাধ্যমে মাঝের প্রায় অর্ধেক বেতন দিয়ে এক কৌটা
বিষ কিনে নিয়ে এলো।
এরপর সুই গরম করে তার সাথে বিষ মেশানোর কাজ
চলল কদিন । খুবই সবাধানে ছিল সে যাতে নিজের হাতে
কোন প্রকার না লাগে ! সব কিছু তৈরি হয়ে গেলে
একটা লাল কৌটায় এনে ভরে রাখলো । এরপর
কেবল অপেক্ষা পালা । অবশ্য খুব বেশি দিন অপেক্ষা
করতে হয় নি । দিন সাতেক পরেই প্রথম সুই টা
ব্যবহার করার সুযোগ চলে আসে ।
সেদিন অফিস থেকে বের হগতে একটু দেরিই হয়ে
গিয়েছিল । বাসে উঠতে উঠতে প্রায় সন্ধ্যা । মহিলা
সিটে সিট না পেয়ে কোন রকমে একটা কমন সিটে এসে
বসলো । পাশে এক বৃদ্ধমত লোক বসে ছিল । সীমি
মনে মনে একটু স্বস্থি বোধ করলো, বুড়ো মানুষেরা
এমন কাজ করে না । কিন্তু সেই ভুল ভাঙ্গতে খুব
বেশি দেরি হল না । বাস একবার ব্রেক করে ঝাকি
খেতেই সীমি অনুভব করলো ওর গায়ের স্পর্শ কাতর
জায়গায় একটা হাত এসে পরেছে । একে তো ভিড় তার
উপর বাস ব্রেক করেছে । কেউ কোন কিছু লক্ষ্যই
করে নি । কিন্তু সীমি ঠিকই লক্ষ্য করেছে কাজটা কে
করেছে । প্রথমে ওর ঠিক মত বিশ্বাসই হয় নি পাশের
বসা এই বুড়ো মত লোকটা কাজ টা করেছে । কিন্তু
পরের বার যখন আবার ঘটনা টা ঘটলো সীমি নিজের
মধ্যে একটা অবাধ্য ক্রোধ অনুভব করলো । তখনই
সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল কি করতে হবে ওকে । ব্যাগ থেকে
সুই বের করে খুব সাবধানে লোকটা কুনুইয়ে ফুটিয়ে
দিল ।
বৃদ্ধ লোকটা একটু আউ করে উঠলোও পরক্ষনে
হেসে উঠলো ওর দিকে তাকিয়ে । তারপর মিশমিশ
করে হাসতে লাগলো ! যেন তার ছেলেমানুষী কাজে খুব
মজা পেয়েছে ।
সীমি আর বসে নি । পরের স্টপেজেই নেমে গিয়েছে ।
রাগের মাথায় কাজটা করলেও বাস থেকে নামার পরে
সীমি বুঝতে পারলো সে কি এক ভয়ংকর কাজ করে
ফেলেছে । পুরো রাস্তায় আর বাসে উঠতে পারে নি
টেনশনে । রিক্সা করে বাসায় গেছে । এমন কি রাতে
ঠিক মত ঘুমাতেও পারে নি ।
পরদিন খবরের কাগজের এক কোনার ঠিকই খবর টা
বেরুলো !
বাসে অজ্ঞাত ব্যক্তির অদ্ভুদ মৃত্যু !
ছবি দেখে চিনতে একটুও অসুবিধা হল না সীমির ।
প্রত্যেক্ষ দর্শীদের বর্ণনা শুনেও বুঝতে অসুবিধা হল
না কি ঘটেছে । তীব্র এক অনুশোচনা বোধ ঘিরে
ধরলো ওকে । সিদ্ধান্ত নিল এমন কাজ আর করবে
না ! কিন্তু পরের সপ্তাহে যখন আবারও ঘটনা ঘটলো
তখন ওর সিদ্ধান্তের কথা আর মনে রইলো না !
এরপর চলতেই থাকলো ! যতবার কোন পুরুষ রূপী
জানোয়ার ওর সাথে কিংবা ওর চোখের সামনে অন্য
কারো সাথে এমন কোন কাজ করেছে ততবারই সে
এমন করে একটা সুইয়ের ব্যবহার করেছে !
সীমি পাশে বসা লোকটার দিকে আবারও তাকালো ।
লোকটা এমন একটা ভাব করছে যেন কিছুই হয় নি ।
অথচ এরই ভেতর সে দুদুবার অকাজ টা করে ফেলেছে ।
সীমি আর অপেক্ষা করলো না ! এখানে বসে থাকার
আর কোন মানে নেই । সির ছেড়ে উঠতে যেতেই
লোকটা আবারও ওর নিতরম্বে হাত দিয়ে চাপ দিল !
খুব কষ্টে রাগটা দমন করে সীমি লোকটার দিকে
তাকিয়ে বলল
"হ্যাপি জার্নি" !
এই বলে বাসের গেটের দিকে হাটা দিল !
লোকটা একটু অবাকই হল মনে হল ! এতোদিন ধরে
সে এই কাজ গুলো করে আসতেছে সুযোগ পেলঐ ।
যাদের সাথে এমন করে তারা কেমন চোখ তাকায়
কেবল । কিছু বলতে সাহস পায় না ! কিন্তু এমন করে
হ্যাপি জার্নি তো কেউ বলে না !
সীমি দরজার কাছে গিয়ে আবার ফিরে চাইলো
লোকটার দিকে । এমন একটা হসি দিল সেই হাসি দেখে
লোকটা কেন জানি পিলে চমকে উঠলো । এমন তো
হওয়ার কথা নয় ! মেয়েটার হাসির ভেতরে অদ্ভুদ কিছু
ছিল ।
লোকটা এই প্রশ্নের উত্তর খুজে পেল না ! অবশ্য
খুব বেশি সময়ই নেই তার হাতে !
[অন্তত এরকম ভয়ংকর অস্ত্র না হলেও মেয়েদের
সাথে প্রিপার স্পে, ব্যাটারী শকার কিংবা এন্টি কাটার
জাতীয় অস্ত্র তাদের ব্যাগে থাকা উচিৎ ! আর সব
থেকে বেশি যেটা থাকা উচিৎ যেটা হল প্রতিবাদ করার
সাহস ! কেউ যদি আপনার সাথে বেয়াদবী করে
সোজাসুজি তার গালে অন্তত একটা চড় লাগিয়ে দিন ।
এরা হচ্ছে সমাজের সব থেকে নংপুষক সম্প্রদায় ।
একবার চড় খেলে সামনে আর সাহস করবে না এরকম
কাজ করার ! লজ্জা কিংবা ভয় পেয়ে কোন লাভ নেই
। একটু সাহসী হন]
বিষয়: বিবিধ
১০৩৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধর্মীয় অনুশাসন ছেলে মেয়ে উভয় কেই মেনে চলা উচিৎ!
তবুও যারা ধর্মীয়/সামাজিক সীমালংঘন কারি,তাদের জন্যই এই পদ্ধতি উত্তম!
থেকে বেশি যেটা থাকা উচিৎ যেটা হল প্রতিবাদ করার
সাহস ! কেউ যদি আপনার সাথে বেয়াদবী করে
সোজাসুজি তার গালে অন্তত একটা চড় লাগিয়ে দিন ।
এরা হচ্ছে সমাজের সব থেকে নংপুষক সম্প্রদায় ।
একবার চড় খেলে সামনে আর সাহস করবে না এরকম
কাজ করার ! লজ্জা কিংবা ভয় পেয়ে কোন লাভ নেই
এটার জন্যও সাহস দরকার!
মানুষের বিবেক মরে গেছে!
শুকরিয়া!
মন্তব্য করতে লগইন করুন