নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টি, পুরুষ মন-মানসিকতা, লজ্জা এবং ওহে নারী

লিখেছেন লিখেছেন নুমান আলী খান কালেকশন বাংলা ২০ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:১৮:৪৯ রাত

আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে কোন মেয়ের দিকে তাকানোর প্রতি, অশালীনভাবে তাকানোতে, অর্থাৎ আপনি তারদিকে সম্মানের সাথে তাকাচ্ছেন না, আপনি যেন তাকে পশু বা মাংসপিণ্ড মনে করছেন, যদি এই আপনার মনোভাব হয়, তার মানে এই যে, আপনার নিজের মায়ের প্রতি, নিজের বোনের প্রতি, নিজের স্ত্রীর প্রতি, নিজের কন্যার প্রতি আপনার কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই। তারাও নারী। আপনি কখনই চাইবেন না যে মানুষ তাদের দিকে অশোভন ভাবে তাকাক। আর আপনি যার দিকে তাকাচ্ছেন তিনিও কারো কন্যা, কারো বোন বা কারো মা। তাই সাবধান হউন। এমনকি উনাদের যদি নিজেদের জন্য শ্রদ্ধা নাও থাকে, কখনও অমুসলিম নারীদের নিজেদের প্রতি সম্মানবোধ থাকেনা, তাই তারা কখনো কখনো ‪#‎অশালীন‬ পোশাক পরে, এমনকি মুসলিমরাও অশোভন পোশাক পরে থাকে। কিন্তু আপনারতো নিজের প্রতি এবং আপনার পরিবারের নারীদের প্রতি সম্মানবোধ আছে, তাই আপনি নিজের দৃষ্টিকে নত করুন। অবশ্যই করুন।

আর এটা খুবই ঘৃণ্য ব্যাপার যে, পুরো পরিবারে সবাই একসাথে বসে মুভি দেখে, আর যখন কোন আপত্তিকর দৃশ্য আসে, তখন মা আর মেয়ে তাদের স্বামী আর ভাইদের সাথে একসাথে তা দেখে – “ওহ, এইটা মাত্র একটা খারাপ দৃশ্য, এইটা এমন কিছু না”। এটা খুবই ন্যাক্কারজনক, এটা কোন মুসলিম পরিবারের আচরণ হতে পারেনা। এই ধরণের অশ্লিলতায় আমাদের বিরক্তি হওয়া উচিৎ। আমাদের এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এটা আমাদের সমাজের একটা বিশাল সমস্যা, আমাদের সমাজে অনেক ভাল ব্যাপার আছে, অনেক অনেক ভাল দিক আছে। কিন্তু এটা এমন একটা ব্যাপার যা আমাদের তরুণদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। অশ্লিলতার অতিরিক্ত প্রকাশ। কোন এক মেয়ে যদি আপনাকে মেসেজ পাঠায়, “আমি তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ড হতে চাই”। ঠিক আছে। কিন্তু আমি চাইনা। না। যাও তোমার ভাইয়ের সাথে ফ্রেন্ডশিপ কর। তোমার কি বাবা নেই? সে কি তোমার সাথে বন্ধুভাবাপন্ন নয়? তোমার কেন অন্য বন্ধু দরকার?

আমি খুব গুরুত্ব দিয়ে বলতেসি, আমি খুবই জোর দিচ্ছি, আপনারা এটাকে মজা মনে করবেন না। “ওহ, কি সুন্দর ছবি...” – এইটা আপনার জাহান্নামেরও টিকেট। আপনি আপনার চরিত্র নষ্ট করছেন। আপনি কি এমন কোন মেয়ে কে বিয়ে করবেন যার সাথে আর ১০০ ছেলের যোগাযোগ আছে। “হ্যাঁ, ও দেখতে বেশ সুন্দর, ওহ, তুমি অই মেয়েকে বিয়ে করেছ, আচ্ছা, আচ্ছা বেশ ভাল”। আপনার পরুষত্ব কোথায়? মুসলিমদের লজ্জাশীলতা থাকা উচিৎ, পুরুষ ও নারী উভয়েরই। এবং আমাদের নারীদের, কারও আপনার স্ত্রীর দিকে তাকানোর কথা না, কে ছাড়া?- আপনি। তার সৌন্দর্য আপনি ছাড়া আর কারও উপভগ করার কথা না। আপনার বিরক্ত হওয়া উচিৎ যদি কেউ আপনাকে এসে বলে “মাশাল্লাহ, আপনার স্ত্রী খুবই সুন্দর দেখতে”। এটাতে আপনার বিরক্ত লাগবে – তাই না? আমাদের এমন বিরক্তিই লাগা উচিৎ যখন আমরা মাহ্রাম নয় এমন কারও দিকে তাকাব। আমাদের মধ্যে লজ্জাশীলতা থাকতে হবে। আমি জানিনা এইটা কোথায় গেল। আজকাল এইটা মনে হয় ছুটি কাটাচ্ছে। অনেক মুসলিমের জন্যই সত্যি যে, তাদের শালিনতাবোধ ছুটি কাটাচ্ছে।

নিজের লজ্জাশীলতাকে ফিরিয়ে আনুন। এটা খুবই জরুরি, নাহলে আপনার পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। আপনার বিয়ে সুখকর হবেনা, আর নিশ্চিতভাবেই আপনার বাচ্চারাও ভালভাবে গড়ে উঠবে না, যদি আপনার মধ্যে শালীনতাবোধ না থাকে। আপনার মাঝে অবশ্যই ‪#‎লজ্জাশীলতা‬ বা ‪#‎শালীনতাবোধ‬ থাকতে হবে।

আর টেলিভিশন এ যে নোংরা জিনিষ দেখান হয়, যা আপনারা দেখে থাকেন, আপনারা জানেন যে, মহানবী (সাঃ) আমাদের সাবধান করেছেন যে, তারা এমন কাপড় পড়ে যেন মনে হয় তারা কোন কাপড় পড়েনাই (শালীনভাবে), তিনি আমাদের এমন সময়ের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। “ওহ এইটা শুধু পিজি-১৩ মুভি, ঠিক আছে আমরা এইতাতে যেতে পারি, এটা শুধুই পিজি-১৩। অথবা এইটাতে শুধু একটা খারাপ দৃশ্য আছে, এইটা এমন খারাপ কিছু না”। “আপনি কি চান? আমরা কি করি? আমরা কি মুভিও দেখতে পারবনা? আমার বাবা আর মা আমাকে কিছুই করতে দেয়না”। “আমার জীবন এ দুঃখ ছাড়া কিছুই নেই, কারন আমি এইটা দেখতে পারিনাই ...... যাইহোক”। তাইনা? নিজের উপর নিয়ন্ত্রন আনুন। নিজেকে সবসময় বিনোদনের মধ্যে রাখার উপর নিয়ন্ত্রন আনুন। আপনি একজন মুক্ত মানুষ। টেলিভিশন আর মুভি এর বাইরেও জীবন আছে । আর who.com বা বিভিন্ন ওয়েবসাইট এর বাইরেও আছে। এইসব কিছুর বাইরেও জীবন আছে। এখনও বাইরে অক্সিজেন আছে, আপনার জীবন বেঁচে থাকবে, আমার কথা বিশ্বাস করুন। আপনি এইসব বাদ দিয়েও বেঁচে থাকবেন, বরং সুখেই থাকবেন।

আর যেহেতু আমি আপনাকে বলছি আপনি কি করবেন না, তাহলে আমাকে এটাও বলতে হবে যে আপনি কি করবেন, তাই না? মানে আপনি যদি এসব কিছু না করেন, তাহলে আপনি কি করবেন? খেলাধুলার জন্য সময় বের করুন। বাইরে যান, জগিং বা এরকম কিছু করুন। স্বাস্থ্যকর কোন অভ্যাস করুন, আমি বলছি না যে আপনাকে ধর্মীয় কোন কাজ করতে হবে, আমি এই মুহুরতে আপনাদের কাছ থেকে তা আশাও করিনা, কিন্তু আমি এটা আশা করি যে আপনি এমন কিছু করছেন যা আপনাকে খারাপ মানুষে পরিনত করছেনা। আপনারা কি বুঝতে পারছেন যে আমি কি বলতে চাচ্ছি? কমপক্ষে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকুন। কমপক্ষে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকুন।

আর এইখানে যারা বয়স্ক আছেন তাদের কে বলছি। আপনাদের থেকে একটু সময় নিচ্ছি। যদি এমন হয় যে আমাদের তরুনেরা মসজিদে আসছে, কিন্তু তারা ইসলাম নিয়ে কিছুই শিখছে না, তারা এইখানে শুধু বসে আছে, পিজা খাচ্ছে বা এমনি কথা বলছে, হয়ত কোন ভিডিও গেম নিয়ে কথা বলছে। আমি খুবই আনন্দিত যে তারা এটা করছে, কারন তারা যদি এইখানে এইটা না করত, খুব সম্ভবত বাসায় তারা আর খারাপ কিছুই করত। তাই দয়াকরে এমন বলবেন না যে, “এই, বাচ্চারা এইখানে কি করছে?” দয়া করে এমন বলবেন না। তাদের কে এইখানে থাকতে দিন। কারন এখানে না থাকলে তারা আরও খারাপ কিছুই করবে। অন্তত তারা কোন ক্ষতি করছে না। তারা বাইরে অন্য যে কিছুর চেয়ে এইখানে ভাল আছে। আপনারা কি বুঝতে পারছেন আমার কথা? আমাদের তরুণদের কাছ থেকে সবচেয়ে ভাল আচরণ আশা করবেন না, কারন আপনারাই তাদের সেভাবে গড়ে তোলেননি। তাই, আপনারা কিভাবে তাদের থেকে এটা আশা করেন? আপনারা তাদের পাবলিক স্কুলে পাঠিয়েছেন, তারা নিজে থেকে যায়নি। আপনারা পাঠিয়েছেন, তাদেরকে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে অশালীন পরিবেশে ছেড়ে দিয়েছেন, আর যখন তারা এমন আচরণ করেনা, যেমন তাবিইন রা করতেন, তখন আপনি বলেন, “তারা কিভাবে এইটা করতে পারল?”। আপনি কিভাবে এইটা চিন্তা করেন? বাস্তবে আসুন, বাস্তবিক ভাবে চিন্তা করুন। এটাই বাস্তবতা। আমি নিবেদিতভাবে সমাজের বয়স্কদের বলছি, মসজিদে তরুণদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন। তাদেরকে ভালভাবে গ্রহন করুন, তাদেরকে বের করে দিবেন না।

আর আমি নিবেদিতভাবে তরুণদের বলছি, আমার শেষ পরামর্শ শালীনতা নিয়ে, তারপর আমি শেষ করব ইনশাল্লাহ। আমি কথা দিচ্ছি, এটাই শেষ। সত্যি সত্যি বলছি। বন্ধুত্ব করার জন্য আরও ভাল মানুষ খুজে বের করুন। আপনার বন্ধুরা যদি অশালীন হয় তাহলে আপনিও অশালীন হবেন। আর যদি আপনার বন্ধুদের মাঝে শালীনতা আর ভদ্রতা থাকে তাহলে আপনার মধ্যেও শালীনতা আর ভদ্রতা থাকবে। যদি আপনার বন্ধুরা খারাপ হয়, তাহলে তারা তাদের সাথে আপনাকেও দোজখে টেনে নিয়ে যাবে। আপনি মনে করছেন যে তারা খুব cool, কিন্তু একদিন এমন সময় আসবে যখন আপনি দেখবেন তারা আসলে খুব hot (জাহান্নামের আগুনের মত)। তখন আর এটাকে cool মনে হবেনা। আমি দোয়া করি ইনশাল্লাহ আপনারা এই পরামর্শগুলো গুরুত্তের সাথে নিবেন, আমি এত কিছু নিয়ে বলতে চাইনি, কিন্তু বলতেই হল।

আমার মনে হয় যে আমি যথেষ্ট সময় ও সুযোগ পাইনা তরুণদের পরামর্শ দেয়ার জন্য। খুব সহজে বলতে গেলে, অশ্লীলতা পরিহার করুন, নিজের ভিতরের খারাপ প্রবৃত্তির মোকাবিলা করুন, ইনশাল্লাহ আপনার লজ্জাশীলতা ফিরে আসবে। আমি দোয়া করি যেন আপনারা এই দ্বীনের নেতৃত্ব দিতে পারেন, আর এর বার্তা বহন করতে পারেন আর যখন সময় আসবে তখন শক্তিশালী, স্বাস্থ্যকর মুসলিম পরিবার গঠন করতে পারেন। আপনারাই আমাদের নেতা। আপনারা এটা চান আর না চান। আগামি দশকে আপনারাই আমাদের সমাজের নেতা হবেন। আপনারা মিলেই এই সমাজ, আপনারা মিলেই ইসলাম ইনশাল্লাহ। এই দায়িত্ব আপনাদেরই। আল্লাহ আপনাদের কে এই দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালনের তৌফিক দান করুন ইনশাল্লাহ, আর আল্লাহ আপনাদের পিতামাতাদের আপনাদেরকে সঠিক ভাবে গড়ে তোলার সুযোগ দান করুন। আল্লাহ আপনাদেরকে ভাল বন্ধু পেতে সাহায্য করুন, আর খারাপদের থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করুন। আল্লাহ আপনাদের খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করুন, আর অশালিনতার থেকে দূরে রাখুন। পিতামাতার সাথে কথা বলার সময় নিজের জিহ্বা সতর্ক করুন, সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন, সালাতে নিয়মিত হউন।

আমি যদি ভাল আর সত্যি কিছু বলে থাকি তাহলে তা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নিয়ামত। আর যদি কোন ভুল করে থাকি, তাহলে তার দায় আমার নিজের।


বিষয়: বিবিধ

২২১৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

316048
২০ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৩৭
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : নুমান আলী খান একজন আলেম আর আলেমরা এমনই হন। তারা মুসলিমদের নিয়ে চিন্তা করেন। মুসলিম নারী-পুরুষকে একই প্লাটফর্মে এনে দাড় করানোর চেষ্টা করেন। তারা উম্মাহ এর আদর্শ তারা সমস্যাকে চিন্তা করেন ও বিশ্লেষন করেন কোরান হাদিস ও প্রজ্ঞা দিয়ে নিজেদের পুরুষ মানষিকতা ও চাপিয়ে দেয়ার মনোভাব থেকে নয়। একজন নারী আলেমও ঠিক এই কথাগুলোই বলবেন কারম তিনি নারীসুলভ মানষিকতা পরিহার করে কোরান-হাদিস থেকেই সমস্যার ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
316061
২০ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১১:২৮
আবু জান্নাত লিখেছেন : মা শা আল্লাহ, হৃদয় ছোঁয়া উপদেশগুলো অনেক ভালো লাগলো। জাযাকাল্লাহ খাইর
316130
২১ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৩
হতভাগা লিখেছেন : পুরুষদেরকে চিন্তা করতে হবে কোন মেয়েকে তার মা বা বোনের সাথে । নারীদের সে চিন্তা না করলেও হবে ।

কারণ পুরুষেরা নারী জাতির গর্ভ থেকেই আসে আর নারীরা আসে সরাসরি আসমান থেকে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File