নাস্তিকদের নাস্তিকতার নেপথ্যে

লিখেছেন লিখেছেন সোহাণ চৌধুরী ০৯ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:৫৭:৪০ রাত

কয়েকদিন আগে লন্ডনে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, নাস্তিক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন এবং আরো কয়েকজনের একটি ভিডিও আলাপ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে যে ঘটনাটি বড় ধরনের এক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে তা হলো এই চন্দ্রাহতরা বিশেষ করে তসলিমা নাসরিন এবং আসিফ মহিউদ্দিন অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে পবিত্র কোরআন শরীফের উপর তাদের এঁটো চায়ের পেয়ালা রেখেছে (নাউজুবিল্লাহ বিন জালিক)। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ন্যক্কারজনক কাজের তীব্র নিন্দা করছি এবং আল্লাহ তায়ালা এই সমস্ত অপকৃষ্ট ইতরদের এহেন ধৃষ্টতার জন্য এদের সমূলে ধ্বংশ করুন। ভিডিও ক্লিপটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে যে কেউ বুঝতে পারবে পবিত্র কোরআন শরীফ এমনভাবে রাখা হয়েছে যাতে সবার চোখে পরে যে কোরআন শরীফের উপরই তারা তাদের চায়ের কাপ রেখেছে। এই ভিডিও ক্লিপটি স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং দেশের মানুষদের খেপিয়ে তুলেছে। ব্লগার শাফিউর রহমান ফারাবী ইতিমধ্যেই ফেসবুকে এ নিয়ে দুই একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেনা এবং সেখানে এক পর্যায়ে সে দেশের একটি পত্রিকার সম্পাদককে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার হুশিয়ারী দিয়েছেনা! ওই সম্পাদকের অপরাধ সে বিতর্কিত তসলিমা নাসরিনের লেখা তার পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।

এ বিষয়ে আমি যেটা বলতে চাই তা হলো এই ফারাবী বা এরকম আরো যারা লেখক, ব্লগার আছেন তাদেরকে এভাবে পাবলিকলি সোশাল মিডিয়ায় হত্যার আহবান জানানো থেকে সরে আসতে হবে। ফারাবীদের বুঝতে হবে যে এ ধরনের হত্যার হুমকি ধামকি দেয়া মোটেও সমাজ ও রাষ্টের জন্যে ভালো ফল বয়ে আনবে না। ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তিও এতে ক্ষুন্ন হয়। এত গেল ফারাবীদের প্রসঙ্গ। কিন্তু তসলিমা নাসরিনরা?

এই তসলিমা নাসরিন এবং আর সব নাস্তিক নামধারীরা আসলে কি চায়? তারা আসলে কে? কি এদের পরিচয় বা কি এদের মূল উদ্দেশ্য সেটা আমাদের অবশ্যই বোঝার এবং জানার প্রয়োজন রয়েছে।

প্রথমত, এই তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার গংরা নাস্তিকও না, ধর্ম বিদ্বেষীও না। তবে ধর্ম তথা ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ বিদ্বেষী একটি শক্তিশালী চক্রের দালাল। এই চক্রটি বহু আগে থেকেই একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ ও বিভিন্ন মুসলিম দেশসমূহে কাজ করছে। দেশের কিছু রাজনৈতিক, সামাজিক ও এনজিও সংগঠন এই চক্রটিকে সহায়তা করে যাচ্ছে। এইসব দাউদ হায়দার, তসলিমা নাসরিন, ইত্যাদি বিভিন্ন নাস্তিক নামধারী ব্লগাররা স্রেফ ওই চক্রের মিশন বাস্তবায়নে নাস্তিক কিংবা কখনো মানবতাবাদী সেজে ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।

বিনিময়ে তসলিমা নাসরিনরা পাচ্ছে মোটা অর্থ, স্কলারশিপ ও ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে রেফিউজি হিসেবে আজীবন থাকা খাওয়ার সুযোগ। আসিফ মহুদ্দিনের মত অশিক্ষিত বা দেশের অপেক্ষাকৃত খারাপ স্টুডেন্ট কিংবা যারা দেশে নিজেদের কোনো ভালো ভবিষ্যত দেখতে পায়না, সেই সব ছেলে মেয়েদেরই ওই চক্রটি রিক্রুট করছে। আসিফ মহিউদ্দিনের ন্যায় অনেকেই আজকাল টাকা এবং বিদেশে ভিসা, স্কলারশিপ পাবার লোভে এখন নাস্তিক সেজে অনলাইন ও বিভিন্ন জায়গায় ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করার দু: সাহস দেখাচ্ছে। আর এসব কিছুর আড়ালে ছড়ি ঘোরাচ্ছে ওই ইসলাম বিরোধী চক্রটি।

আবারো বলছি এই তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দারদের মত তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা নাস্তিক, ফাস্তিক কিছুনা বরং এরা মহল বিশেষের দ্বারা রিক্রুটেড। এদেরকে যে হত্যার আহবান জানানো হলো ফারাবীর পক্ষ থেকে, তসলিমারা ঠিক সেটাই চেয়েছিল। যে যত বেশি ধর্ম অবমাননা করে লিখে হত্যার হুমকি পাবে ততই তাদের লাভ। আর যে মহল বিশেষ তসলিমাদের রিক্রুট করে তাদের মূল লক্ষই হলো বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদীদের দেশ হিসেবে প্রমান করা। এই ফারাবীদের বদৌলতে তারা সেটা করতে সক্ষমও হচ্ছে।

অন্যদিকে, ফারাবীর মত যারা নাস্তিকদের হত্যা করবার হুমকি দেয়, সেটা প্রকারন্তরে নাস্তিকদের জন্যে বড় ধরনের সুবিধেই করে দেয়। ইসলাম ধর্মের কটুক্তি করে এহেন হত্যার হুমকি লাভ করাটা ওইসব নাস্তিকদের জন্যে রীতিমত আশীর্বাদ। আর কোনোভাবে যদি কথিত ইসলামিস্ট দের হামলা টামলার স্বীকার হতে পারে কিংবা কিছুটা আহত হতে পারে তাহলে ওই নাস্তিক নামধারীদের বিদেশ যাবার দরজা অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে যায়। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আসিফ মহিউদ্দিনদের মত ধান্দাবাজ ও সুযোগসন্ধানীদের রীতিমত আত্মত্যাগী বুদ্ধিজীবী বানিয়ে ছেড়ে দিতে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখছে সাফিউর ফারাবীদের মত ওই হত্যার হুমকি ধামকি প্রদর্শনকারীরাই! উন্নত দেশে স্কলারশিপ ও আজীবন রেফিউজি হিসেবে থাকার সুযোগও ওরা পেয়ে যাচ্ছে অতিউত্সাহী ইসলামপন্থীদের এহেন হুমকি ধামকির কারণে। আবার এমনও দেখা যাচ্ছে যে ইসলামপন্থীরা হত্যা করতে এগিয়ে না আসলেও নাস্তিক নামধারীরা নিজেরাই নিজেদের উপর হামলার নাটক সাজিয়ে নিচ্ছে আর সারা দুনিয়াকে দেখাচ্ছে তারা মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত এবং বাংলাদেশ মৌলবাদীদের ডেরায় পরিনত হয়েছে।

তাদেরকে হত্যার হুশিয়ারী দেবার জন্যেও বিপক্ষ থেকে শক্তিশালী লেখক, ব্লগার ও ধর্মীয় সংগঠন আসিফ মহিউদ্দিনদের খুবই প্রয়োজন। এলেবেলে কেউ লিখলে বা বললে হবেনা। এই পুরো প্রক্রিয়ায় তসলিমা, আসিফদের মত অনেকে তাদের কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ করে বিদেশে ভিসা পেয়ে যাচ্ছে। তাদের এই খেলায় আবার অনেক উচ্চাকাংখী ব্লগার(থাবা বাবা) বলির পাঠা হয়ে খুন হচ্ছে। আর মূল বেনিফিশিয়ারী হচ্ছে সেই অদৃশ্য মহলটি যারা এই কথিত নাস্তিকদের রিক্রুট করছে। কিন্তু বড় ক্ষতিটা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তির।

সর্বশেষে, আমি শুধু এটুকুই বলব যারা ধর্ম তথা ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখি ও মিথ্যাচার করছেন তাদের কেউই এ দেশের এমন কোনো দায়িত্বশীল অবস্থানে নেই বা তারা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়। কতগুলো সুযোগসন্ধানী, চোর, ব্যশা যারা নিতান্তই পথের ভিখারী তাদের কথায় কি ইসলাম ধর্ম শেষ হয়ে যাবে? একদম না। আগেই বলেছি এরা সুযোগের সন্ধানে কখনো নাস্তিক কখনো মানবতাবাদী আবার কখনো নারীবাদী সেজে ইসলামের ধর্মের ব্যাপারে উল্টাপালা কথাবার্তা লিখছে। যদি রাষ্ট কিংবা দেশের কোনো দায়িত্বশীল পদে নিয়জিত কেউ কিছু বলতেন তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু এইসব নাস্তিকবাজ দুর্বৃত্তদের তো সমাজে কোনো অবস্থানই নেই। তারা কি বললো না বললো সেগুলো ধর্তব্যের মধ্যে না নেওয়াই শ্রেয়।

বিষয়: বিবিধ

১১৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File