বোধোদয়
লিখেছেন লিখেছেন তার কাটা ০৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:০১:০৪ রাত
পাখির গুঞ্জরণ, আজানের সুমধুর ধ্বনী, নদীর কলতান আর জান্নাতী বাতাসের মাঝে পূর্ব গগনে সূর্য মামার হাসিতে যেখানে সকালের আগমন ঘটে, সে আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ছোট্ট ভূখন্ডের এ দেশটি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে দীর্ঘ নয়টি মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে অবশেষে স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তানীদের থেকে আলাদা হওয়ার উদ্দেশ্য গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নিজেরা দেশটাকে স্বনির্ভর, উন্নত, শাষক গোষ্ঠীর নির্যাতন থেকে মুক্ত, ধনী-গরীবের ভেদাভেদ দূর করে বিশ্বের বুকে একটি শৃংখল জাতি হিসাবে নিজেদের তুলে ধরা।
এ দেশটা প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি মানব সম্পদে পরিপূর্ণ। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর ভাষায়, " আমাদের রয়েছে বিশাল মানব সম্পদ, এ দেশের পাচঁ কোটি মানুষের দশ কোটিঁ হাতকে কাজে লাগিয়ে দেশটাকে সোনার দেশে পরিনত করতে হবে।" আজ স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর শেষেও মানুষ শাষক গোষ্ঠীর নির্যাতন থেকে মুক্ত হয়নি, মানুষের অভাব-অভিযোগ কমেনি, দারিদ্রতা হ্রাস পায়নি, প্রতিনিয়ত খুন, ধর্ষণ, লুট-পাট বেড়েই চলছে। মসজিদে এখনো আজান হয় কিন্তু মানুষ পরিপূর্ণ ইসলাম এখনো বুঝেনি। যার কারণে শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে দিন দিন মাজারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। মন্দির ও গীর্জার সংখ্যাও বাড়ছে বহুগুনে। যার কারনে আজ স্বাধীন দেশ হয়েও মানুষ স্বাধীনতার নাগাল পাচ্ছে না।
আদরের সন্তানকে জ্ঞানার্জনের জন্য কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পাঠিয়ে বাবা-মাকে অপেক্ষা করতে হয় সন্তান কখন লাশ হয়ে ফিরবে? মা-বোনকে ঘরের বাইরে পাঠালে আশংকায় থাকতে হয় ইভটিজিং থেকে বাঁচতে পারে কিনা? টাকা-পয়সা, মোবাইল, লেপটপ সহ মূল্যবান কিছু নিয়ে যাতায়াত করলে ডাকাত ছিনতাইকারীর কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে কিনা? আজ বাংলাদেশে মানুষের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। কেউ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠলে তাকেই উল্টো রিমান্ড, জেলসহ নানাবিদ ষঢ়যন্ত্রের শিকার হতে হয়।
আজ গোটা দেশ জুড়ে চলছে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, বিরোধীদল দমনে রাজনৈতিক নিপীড়ন, ইসলাম প্রিয় ওলামাদের গ্রেপ্তার ও শারীরিক টর্চার, নিজস্ব সংস্কৃতির অবক্ষয়ে নগ্ন বেহায়াপনা, নীরব দূর্ভিক্ষ, দুর্বল ও অসহায় মানুষের উপর নির্যাতন, অসত্যকে সত্য, অন্যায়কে ন্যায় করা এবং মানবধিকারের বিচার করা হচ্ছে মানবঅধিকার লংঘন করে। মুসলমানদের তাহযীব - তামাদ্দুন ধ্বংস করার জন্য ইয়াহুদীদের দোসররা বিভিন্ন অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা ইমামদের সম্মেলনে অমুসলিম তরুন-তরুনীদের নগ্ন নিত্যপরিবেশন,আল্লাহর দেয়া আইন কে পরির্বতন, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ,সংবিধান থেকে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে তুলে দেয়া,আগামী প্রজম্মকে ইসলামশুন্য করে ইয়াহুদী-খ্রীষ্টানদের মতাবলম্বী বানাতে ধর্ম-নিরপেক্ষ শিক্ষানীতি প্রনয়নের মত কর্মসূচী বাস্তবায়ন, ধর্মীয় পোষাক নিষিদ্ধ এবং ধর্মের পক্ষে যারা কথা বলে ও কাজ করে তাদেরকে মৌলবাদী, জংগী, রাজাকার বিভিন্ন উপাদি দিয়ে গ্রেপ্তার, রিমান্ড, নির্যাতন এমনকি খুন করাতেও দ্বিধাবোধ করে না। ন্যায় বিচার আজ গুমড়ে কাঁদে,আদালতে আজ ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না। যিনি বিচারক তিনি অন্যায়ভাবে বিচারক হয়েছেন, তাই তার কাছ থেকে মানুষ ন্যায় বিচার আশা করতে পারেনা। দেশ প্রেমিক ও সৎ অফিসারদের ওএসডিতে পাঠানো, অযোগ্য ও অসৎ লোকদের হাতে প্রশাসন হস্তান্তর করে প্রশাসনে অবাধে দূর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে, দেশের ভূ-খন্ডকে বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য পরিকল্পিত ও সুক্ষ্মভাবে সামরিক শক্তিকে দুর্বল করতে সৎসাহসী ও দেশ প্রেমিক সেনা অফিসারদের নির্মমভাবে শহীদ করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে সীমান্ত এলাকায় প্রতিনিয়ত বেসামরিক বাংলাদেশী নাগরীককে নির্বিচারে পাখীর মত গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ভারতীয়রা বাংলাদেশের অভন্তরে মাছ ধরা, ধানকাটা ও কৃষকদের অপহরণ করে নিয়ে যায়, আহত করে, এমনকি হত্যা করে। ভারত এ দেশের গ্যাস দ্বারা উপাদিত বিদ্যুৎ এদেশের কাছে অধিক মূল্যে বিক্রি করে অথচ বাংলাদেশ সরকার এ দেশের পাঠ্য পুস্তক ভারতীয় কোম্পনীকে ছাপাতে দিয়েছে,তারা বেশী টাকা নিয়েও নিম্ন মানের বই দিয়েছে।
সত্যিকারের স্বাধীনতার যে স্বপ্ন দেখেছি আমরা, পনর কোটি মানুষের ত্রিশ কোটি হাতকে কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন করে বিশ্বের বুকে গৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার যে স্বপ্ন বুকে লালন করছি, আজ তা স্বপ্ন হয়েই আছে। অমরা যা পেলাম তা হলো, সারা বিশ্বে আমরা একটি নিকৃষ্ট ও অবহেলিত জাতি। আমার দেশের ত্রিশ কোটি হাত ভেংগে দিয়ে শ্রম বাজার দখল করেছে ভারত। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি দুর্বল হওয়ায় আজ আমরা বাংলাদেশী পরিচয় দিয়ে লাঞ্ছিত ও ধিকৃত হচ্ছি। বিশ্বের সকল দেশ থেকে বাংলাদেশী শ্রমিকদের নির্যাতন করে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। দূর্বল হয়ে পড়ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো। যখন বাংলাদেশের মানুষ অর্থের অভাবে না খেয়ে দিন কাটায়, বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরে, ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করে, তখন ভারত থেকে অশ্লীলতা আমদানী করে কোটি কোটি টাকা ভারতে প্রেরণ করা হয়। দেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের বিরাট অবদান ছিল, সে শিল্পও আজ ধ্বংষের মুখে। দেশের আইন শৃংখলা বিপর্যস্ত করা হচ্ছে সুপরিকল্পিত ভাবে। দেশের সার্বিক অবকাঠামো ধ্বংস প্রায়। জাতীয় গৌরব আজ লাঞ্ছনা আর দাসত্বের অতল গহবরে নিমজ্জিত। আমাদের এখনো সময় আছে ফিরে তাকানোর, আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জাতী, বাতিলের কাছে মাথা নত করার নই। যার প্রমান দিয়েছি ইংরেজদের বিরুদ্ধে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যু্দ্ধে।
জাতীয় গৌরব ও স্বর্নিভরতা ফিরিয়ে আনতে আমাদের বোধোদয় হওয়া উচিত। দেশটাকে ইসলামী আদর্শে গড়ে মানুষের মাঝে আল্লাহর ভয় তৈরী করে, শিরক, বিদায়াত, যিনা-ব্যবিচার, হত্যা-লুন্ঠন, যুলুম-নির্যাতন, দুর্নীতি-শোষণ, অহংকার এবং সকল প্রকার ভেদাভেদ দূর করে সকল নিরপরাধ ওলামায়ে কেরাম ও রাজবন্দীদের মুক্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলামী অবকাঠামোতে ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে জাতীকে নৈতিকতার অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে হবে। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশের প্রশাসন থেকে ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান ও বিদেশীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী অসৎ ও দূর্নীতিবাজদের বিতাড়িত করে, দেশ প্রেমিক, সৎ, যোগ্য ও আদর্শ ব্যক্তিদের ক্ষমতায় বসিয়ে, আবার বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াতে হবে। সকল ভেদাভেদ ভুলে ধনী-গরীব, উচু-নীচু একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রনান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো, সামাজিক উন্নয়ণন একযোগে এগিয়ে আসা সহ একটি শিক্ষিত জাতি গড়তে শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাস মুক্ত করে শিক্ষার পরিবেশ করে দিতে হবে। বিচার ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আইন শৃংখলা বাহিনী দেশপ্রেম ও সততার সাথে কারো গোলামী না করে মানুষের নিরাপত্তার পূর্ণ ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই মানুষ ফজরের আযানে ঘুম থেকে উঠে আবার এশার নামায পড়ে নিশ্চিন্তে ও শান্তিতে ঘুমোতে পারবে। সারা বিশ্ব আমাদের অনুসরণ করবে। আমরা হব গর্বিত জাতি। স্বার্থক হবে শহীদদের আত্মত্যাগ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অন্যায় জুলুম পায়ে দলে শান্তির পৃথিবী গড়ব।
অসাধারন লিখেছেন। টুডে ব্লগে স্বাগতম।
ধন্যবাদ ফেরারী মন আপু/ভাইয়া। (~~)
মন্তব্য করতে লগইন করুন