ভাড়াটিয়া বক্তা হেদায়েতের অন্তরায়

লিখেছেন লিখেছেন হোসাইন আহমাদ ১৮ আগস্ট, ২০১৫, ০৫:০৬:১২ বিকাল

ওয়াজ মাহফিল, তাফসীর মাহফিল, ইসলামী সম্মেলন, মহা সম্মেলন ইত্যাদি নামে দেশের প্রতিটি আনাচে কানাচে হরহামেশা সুললিত কন্ঠে হেদায়েতের বাণী প্রচার করা হচ্ছে। এতসব স্বত্বেও দেশের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান দিন দিন কমছে। মসজিদগুলো আলীশান হচ্ছে কিন্তু মুসল্লী শূন্য। এর কারণ কি? তবে কি ভাড়াটিয়া বক্তাই হেদায়েতের অন্তরায়? মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন শরীফে বলেছেন-তোমরা তাদের অনুস্মরণ কর যারা তোমাদের কাছে প্রতিদান চায় না অথচ তারা হেদায়েত প্রাপ্ত। এই হেদায়েতের বাণী প্রচার করার জন্য ১৯৮৯ সালে সন্দ্বীপে “ইসলাম প্রচার সংস্থা” নামে একটি সংগঠন করেছিলাম। ঔ সালেই পটিয়া মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলের সময় উপস্থিত সন্দ্বীপের সকল ছাত্রদেরকে নিয়ে প্রথম পরিকল্পনা করি। অতঃপর সন্দ্বীপ গিয়ে সারিকাইত দারুল উলুম মাদরাসায় বড় আকারে মিটিং করে সংস্থার জন্য কমিটি গঠন করা হয়, মাওলানা শফিক সাহেব ছিলেন সভাপতি আর আমি ছিলাম সেক্রেটারী । ১৯৯০ সালে শিবেরহাটে প্রথম ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আমাদের মাহফিলের প্রথম বক্তা ছিলেন পটিয়া মাদরাসার বর্তমান মহা পরিচালক আমার শ্রদ্দেয় উস্তাদ মাওলানা আব্দুল হালীম বোখারী (দাঃ বাঃ)। হযরতকে দাওয়াত দিয়েছিলাম, তিনি সাথে সাথে দাওয়াত গ্রহণ করেছেন এবং মাহফিলে উপস্থিত হয়েছেন ও এ জাতীয় উদ্দোগ গ্রহণ করার জন্য আমাদের অনেক উৎসাহ দিয়েছিলেন। পরবর্তী বছরের জন্যও উনাকে দাওয়াত দিয়েছি সেই সাথে হাটহাজারী মাদরাসার একজন উস্তাদকে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ওয়াত দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ডেট খালী নাই বলে দাওয়াত গ্রহণ করেন নাই। ঔদিন ঘটনাক্রমে ওনার দাওয়াত ছিল সন্দ্বীপের অন্য জায়গায়। কোন কারণবশতঃ সেখানে মাহফিল হয় নাই তাই তিনি দাওয়াত বিহিন আমাদের মাহফিলে এসে উপস্থিত হন। তিনি সুললিত কন্ঠে “উতলু মা ঊহিয়া” আয়াতের তাফসির পেশ করেন। আমাদের এলাকায় উনার নাম হয়েগিয়েছিল “উতলু মা” হুজুর। যাক তখন হাদিয়ার বিষয়ে কোন দরকষাকষি ছিল না। আমাদের কালেকশন ও ফান্ড অনুপাতে রাহ খরচ দিয়ে দিতাম। কাউকে ৮০০ টাকা আর কাউকে ৭০০ টাকা এভাবে দিতাম। দাওয়াত বিহিন ও অতিরিক্ত মেহমান ছিলেন বিধায় উতলু মা হুজুরকে ৬০০ টাকা দিয়ে ছিলাম। তিনি দীর্ঘদিন আমাদের সমালোচনা করেছেন যার কারণে আমরা উনার নাম আর মুখে আনি নাই। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ পর্য ন্ত আমি রাউজান এর অন্তর্গত ফতেহ মোহাম্মদ সিকদার বাড়ী জামে মসজিদের ইমাম ছিলাম। ১৯৯৩ সালে মসজিদের উদ্যোগে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হলে মুসল্লীরা বায়না ধরলো হাটহাজারীর উক্ত হুজুরকে দাওয়াত দিতে হবে। আমি গেলাম এবং উনার শর্তাবলী শুনে দাওয়াত না দিয়ে ফিরে এলাম। শর্তগুলো ছিলঃ চার হাজার টাকা ফি দিতে হবে। মাইক্রোবাসে করে নিতে হবে। আরও কিছু ছিল যা এখন আমার মনে নেই। তখনকার সময়ে এগুলো আমাদের জন্য অনেক বেশি ছিল। তথাপি শর্ত মেনে বক্তা নেওয়ার পক্ষে আমি ছিলাম না। তাই দাওয়াত দেই নাই। বিষয়টি নিয়ে তিনি সমালোচনার মুখে অনেক অজুহাত দাঁড় করিয়েছিলেন যা এখানে আমি বলতে চাই না। অনেকদিন পর্যন্ত আমি মসজিদ-মাদরাসা ও সংস্থার সাথে জড়িত নই, বর্তমানে আমি ব্যবসায়ের সাথে জড়িত এবং ঢাকায় অবস্থান করছি। কিছুদিন পূর্বে আমার ছোট ভাই মাওয়ালানা কেফায়েতুল্লাহ মদুনাঘাট জিয়াবাজার ইসলাম প্রচার সংস্থার জন্য ঢাকার এক বক্তাকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য বললে আমি তাহার মাদরাসায় গেলাম, জানলাম তিনি মাদরাসায় নাই এবং তিনি বৎসরে মাত্র একদিনেই সকল দাওয়াত তালিকাভুক্ত করেন তাহার হাদিয়াও অনেক বেশি। আমার ভাই অবশ্য হাদিয়ার ব্যাপারে ভীত নয়। অতঃপর অন্য একজন হুজুরকে দাওয়াত দিতে বললে আমি তাহার কাছে গেলাম, তিনি দাওয়াতে ফরম পূরণ করতে বললেন, সেখানে লেখা আছে- সম্ভাব্য হাদিয়া কত? অগ্রীম জমা কত? গাড়ী ভাড়া কত? আমি আমার ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী হাদিয়া লিখলাম বিশ হাজার টাকা, অগ্রীম জমা লিখলাম চার হাজার টাকা। গাড়ীভাড়া লিখলাম না, তখন খাদেমরা বললেন- কি লিখতেছেন-ঢাকার মধ্যেইতো হুজুরের হাদিয়া চল্লিশ হাজার টাকার উপরে, আর চট্টগ্রামতো তিনি বিমান ছাড়া যান না। আমি বললাম- আমি যা লিখার লিখেছি এবার হুজুর ভালো মনে করলে দাওয়াত গ্রহণ করবেন নয়তো তিনি বুঝবেন আর মাহফিল ওয়ালারা বুঝবেন। এই হলো বর্তমান বক্তাদের অবস্থা। হেদায়েত হবে কোথা থেকে? কোন এক সময় পটিয়ার বোয়ালী সাহেব হুজুর ওয়াজ মাহফিলে যেতেন এবং হুজুরের ওয়াজে আলাদা প্রভাব ছিল। কোন এক মাহফিলে বোয়ালী সাহেব হুজুর ওয়াজ করার জন্য যাচ্ছেন, পথিমধ্যে দেখলেন মাইকওয়ালা কাঁধে মাইক নিয়ে মাহফিলের দিকে যাচ্ছে। সে বোয়ালী সাহেব হুজুরকে চিনতো না। হুজুর বললেন ভাই আপনার কষ্ট হচ্ছে মাইক আমাকে দিন বলে কাঁধে মাইক নিয়ে নিলেন। তাহারা যখন ময়দানে উপস্থিত হলেন, আয়োজকরা দেখে হতভম্ভ হয়েগেলেন এবং মাইকওয়ালাকে বকাঝকা করতে শুরু করলেন যে আপনি হুজুরের কাঁধে কেন মাইক দিলেন? তখন হুজুর বললেন ওনার কোন দোষ নাই, ওনার কষ্ট হচ্ছিল তাই আমি নিজেই মাইক কাঁধে নিয়েছি। চট্টগ্রাম এমইএস কলেজের প্রভাসক শ্রদ্ধেয় মাওলানা আফম খালেদ হোসাইন সাহেব আমাদের সংস্থার মাহফিলে অনেকবার গেছেন। আল্লাহ উনাকে দীর্ঘ হায়াত নসীব করুক। কখনও হাদিয়া নিয়ে দরকষাকষি করেন নি। যারা ওয়াজ মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন করেন আমি তাদেরকে বলবো দয়াকরে হাইরেট ওয়ালা বক্তাদেরকে পরিহার করুন এবং পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াতের উপর আমল করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত নসীব করুক। উল্লেখ্যঃ হাটহাজারীর উক্ত বক্তা অবশ্যই মাওলানা শফি সাহেব নন, দয়াকরে কেউ ভুল বুঝবেন না।

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

336669
১৮ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:৫১
ইয়াফি লিখেছেন : আমাদের আলেমগণ দ্বীনের আলোকে সমাজকে পাল্টানোর ফরজ দায়িত্ব পালন না করে বরং সমাজের সাথে আপোষ করে চলেন।
336671
১৮ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১২
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : - এই হাদিয়া যদি ইমাম বুখারী গ্রহন করতেন, তাহলে ইসলামের অবস্থা কোথায় থাকত।
- নিজের বাপের টাকা চোখ বন্ধ করে যদি ইমাম আবু হানিফা খরচ না করতেন তাহলে দ্বীনের দশা কি হত?

অথচ নিজের পায়ে হেঁটে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দেবার কথা ছিল কিন্তু হলটা কি?


৯০ এর দশকে সোলায়মান, জাহাঙ্গীরের নামে নামে শিবের হাটের নাসির মেডিকেল হলের ঠিকানায় চিঠি লিখতাম। আমার ভাল বন্ধু ছিল। বিগত ত্রিশ বছর ধরে কোন খবর পাই না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
336692
১৮ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
শেখের পোলা লিখেছেন : বর্তমান এই হুজুর মহা হুজুর গনের জন্যই ইসলাম আজ অবহেলিত আর মুসলীমরা আকাশের নীচে নিকৃষ্ট প্রানী হয়ে বাস করছে৷তবে প্রকৃত দায়ী হুজুরও আছেন৷ কেননা দুনিয়া কখনই হাদীশূণ্য হবেনা৷ আপনাকে ধন্যবাদ৷
336706
১৮ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪০
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : কথা ঠিক যদি আল্লাহকে খুশি করার জন্যই দীনের দাওয়াতি কাজ করে থাকেন তবে কেন বায়না ধরবেন...! তাহারা অহংকারের বিরোধ্যে ওয়াজ করে অথচ তাদের মধ্যেই ওপেন অহংকার দেখা যায়...! আসলে তিনারা অজ্ঞাতেই তাদের আমল দুনিয়াতেই শেষ করছেন আখেরাতে তাদের আল্লাহর কাঠগড়ায় আসামি হয়েই দাড়াতে হবে আমার ধারনা...ধন্যবাদ জনাব।
336707
১৮ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ওয়াজ এর বেশিরভাগই তো থাকে ইসলামের মধ্যেই ভিন্নমত বিরোধিতা। এরজন্য এত টাকা!!
তবে পথ খরচ এবং ভাল থাকার ব্যবস্থা করা উচিত এবং এর জন্য আয়োজকদের চেষ্টা করা উচিত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File