জুমআর খুতবা আরবী না অনারবী ?

লিখেছেন লিখেছেন হোসাইন আহমাদ ১৮ মে, ২০১৫, ১১:৩৯:২৭ সকাল

(এই লেখাটি জামেয়া ইসলামিয়া রওজাতুল উলুম এর ওয়েবসাইট থেকে কপি করা)

ভূমিকা

الحمد لله وكفي وسلام علي عباده الذين اصطفي. اما بعد !

আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মত জুমআর নামাযও ফরয করেছেন। জুমআর নামাযের জন্য অতিরিক্ত কিছু শর্ত দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উপর ফযীলত দিয়েছেন। তন্মধ্যে একটি শর্ত হলো, নামাযের পূর্বে খুতবা দেয়া। খুতবা দেওয়ার নিয়ম ও তার ভাষা আরবীতে হওয়াই শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত। রাসূল স. এর যুগ থেকে অদ্যাবদি এ নিয়ম মেনেই আহলে হক উলামাগণ আমল করে আসছেন।

কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, ইসলামের এই ক্রান্তিলগ্নে কতিপয় চিহ্নিত মহল মীমাংসিত এই বিষয়টি নিয়ে মত পার্থক্য করে বলে বেড়াচ্ছে যে, অনরাবী ভাষায় খুতবা দেয়া যাবে। শুধু তাই নয়; বরং তারা ইমামগণের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বলছে, ইমাম মালেক র. ব্যতিত বাকী ইমামদের মতে অনারবী ভাষায় খুতবা দেয়া জায়েয। তাই মুসলিম জাতির সামনে খুতবার ভাষার শরয়ী হুকুম তুলে ধরার লক্ষ্যে আমার ক্ষুদ্র এ প্রয়াস।

খুতবা বলতে কী বুঝায় ?

খুতবা একটি পারিভাষিক শব্দ। শরীয়তের পরিভাষায় এর স্বতন্ত্র পরিচয় রয়েছে। শুধু আভিধানিক অর্থের মাধ্যমে এর পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয়। এটা শুধু খুতবাতে নয়; বরং ইসলামী পরিভাষায় ব্যবহৃত সকল শব্দের ক্ষেত্রে একই নিয়ম। যেমন- সালাত, যাকাত, সাওম ইত্যাদি।

সালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ দুআ। যদি কোন ব্যাক্তি পুরো দিনও দুআয় মগ্ন থাকে, তাহলে কেউ তাকে বলবে না যে, সে সালাত আদায় করছে; বরং শরীয়ত সালাত আদায়ের যে পদ্ধতি বাতলে দিয়েছে তা অবলম্বনেই একমাত্র সালাত আদায় সম্ভব।

যাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা। সাওম এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। কিন্তু এসব আভিধানিক অর্থ দ্বারা যাকাত ও সাওমের পরিচয় পাওয়া যায়না। শুধু পবিত্রতার মাধ্যমে যাকাত আদায়ের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়না। যে কোনো জিনিস থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে সাওমের দায়িত্ব পালিত হয় না। কেননা, আভিধানিক অর্থের বাহিরে এসব শব্দের নিজস্ব পারিভাষিক অর্থ ও পরিচয় আছে।

শরীয়তের পরিভাষায় এসব শব্দ বিশেষ কিছু ইবাদতকেই বুঝায়। যা তার নির্ধারিত নিয়ম কানুনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

এমনিভাবে খুতবার আভিধানিক অর্থ বক্তৃতা। কিন্তু এর মাধ্যমে খুতবার বাস্তবতা ও পরিচয় পাওয়া যায় না। শরীয়তের দৃষ্টিতে খুতবা সম্পাদিত হওয়ার জন্য শরীয়তের পক্ষ থেকে কিছু নিয়ম-কানুনের অনুসরণ করা অপরিহার্য। এসব নিয়ম-কানুন ও বৈশিষ্টাবলীর প্রতি লক্ষ্য করলে খুতবার শরয়ী তাৎপর্য স্পষ্ট হয়।

খুতবা দেওয়ার মাসনুন তরীকা

উপমহাদেশের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী র. তার রচিত মুয়াত্তায়ে মালেকের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মুসাফ্ফা’-তে লিখেন-

لما لاحظنا خطبة النبي (ص) وخلفائه (رض) وهلم جرا فنجد فيها وجود أشياء منها : الحمد والشهادتين والصلوة علي النبي (ص) والامر بالتقوي وتلاوة آية والدعا للمسلمين وللمسلمات وكون الخطبة عربية …………..الخ. (مصفي شرح موطأ: ১/১৫৩)

অর্থ: রাসূল স., খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কিরাম ও উলামায়ে দীনের খুতবা সমূহ লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, তাদের খুতবাতে নিম্নের বিষয়গুলো ছিলো। যথা:

আল্লাহ তাআলার হামদ্, শাহাদাতাইন (অর্থাৎ তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য) রাসূল স. এর প্রতি দরুদ, তাকওয়ার আদেশ মূলক কুরআন পাকের আয়াত, মুসলমানদের জন্য দুআ। তারা সকলেই আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন। মুসলিম বিশ্বের বহু অঞ্চলের ভাষা অনারবী হওয়া সত্ত্বেও গোটা বিশ্বে আরবী ভাষাতেই খুতবা দিয়েছেন। (মুসাফ্ফা-খ:১ পৃ: ১৫৪)

সুতরাং রাসূল স., খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনের খুতবার উপর ভিত্তিকরে ফুকাহায়ে কিরাম বলেন- খুতবাতে নিম্নের বিষয়গুলো থাকা সুন্নাত। যথা:

১. হামদ ২.সানা ৩.শাহাদাতাইন ৪.রাসূল স. এর উপর দরুদ ৫.তাকওয়ার আদেশ মূলক কুরআনের আয়াত ৬.আরবী ভাষায় ওয়াজ নসীহত ৭.দুই খুতবার মাঝে বসা ৮.দ্বিতীয় খুতবায় পুনরায় হামদ, সানা, শাহাদাতাইন ও দরুদ পাঠ করা। ৯.সকল মুসলমানদের জন্য দুআ করা। ১০.উভয় খুতবা নামাযের তূলনায় সংক্ষিপ্ত হওয়া ইত্যাদি।

ফিক্হ ও ফাতওয়ার গ্রন্থ থেকে উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রমাণ

আল্লামা কাসানী র. বলেন-

ক্স ينبغي أن يخطب خطبة خفيفة يفتتح فيها بحمد الله تعالى ويثني عليه ويتشهد ويصلي على النبي ويعظ ويذكر ويقرأ سورة ثم يجلس جلسة خفيفة ثم يقوم فيخطب خطبة أخرى يحمد الله تعالى ويثني عليه ويصلي على النبي ويدعو للمؤمنين والمؤمنات . (بدائع الصنائع: ১/৫৯১)

আল্লামা শামী র. বলেন-

ক্স قوله ( ويبدأ ) أي قبل الخطبة الأولى بالتعوذ سرا ثم بحمد الله تعالى والثناء عليه والشهادتين والصلاة على النبي والعظة والتذكير والقراءة قال في التجنيس والثانية كالأولى إلا أنه يدعو للمسلمين مكان الوعظ. (رد المحتار : ৩/২১)

وكذا في البحر الرائق: ১/২৫৮ ، فتح القدير : ২/৫৭ ،الفتاوي الهندية : ১/১৪৬-৪৭ ،حاشية الطحطاوي علي مراقي الفلاح : ص৫১৫.

খুতবার পরিমাণ

আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে সূরা জুমার ৯ম আয়াতে খুতবাকে ‘যিকির’ বলেছেন। এই যিকির নামক খুতবার পরিমাণ কতটুকু তা নিয়ে ইমাম আবু হানিফা র., ইমাম আবু ইউসফ র. ও ইমাম মুহাম্মদ র. এর মাঝে মত পার্থক্য রয়েছে।

ইমাম আবু হানিফা র. বলেন, খুতবাতে শুধু যিকির পাওয়া যাওয়াই শর্ত। অর্থাৎ কেউ যদি খুতবাতে শুধু যিকির করে অর্থাৎ শুধু আলহামদু লিল্লাহ বা সুবহানাল্লাহ বলে খুতবা শেষ করে, তাহলে তার নামায সহীহ হয়ে যাবে। তবে এটা মাকরূহ।

ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ র. বলেন, খুতবাতে লম্বা আলোচনা তথা: আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা, সানা, শাহাদাতাইন, রাসূল স. এর উপর দরুদ ইত্যাদি থাকা জরুরী। যার উপর খুতবা শব্দের প্রয়োগ করা যায়। তাঁরা আরো বলেন, খুতবা কমপক্ষে তাশাহহুদ পরিমাণ দীর্ঘ হওয়া জরুরী ।

আল্লামা শামী র. বলেন-

وكفت تحميدة أو تهليلة أو تسبيحة ) للخطبة المفروضة مع الكراهة وقالا لا بد من ذكر طويل وأقله قدر التشهد الواجب. (الدر المختار : ৩/২০)

অর্থ: ইমাম আবু হানিফা র.-এর মতে শুধু আলহামদু লিল্লাহ বা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা সুবাহানাল্লাহ বলার দ্বারাই খুতবার ফরযিয়্যাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এটা মাকরূহ। আর ইমাম আবু ইউসুফ র. ও ইমাম মুহাম্মদ র. বলেন, খুতবা তাশাহহুদ পরিমাণ দীর্ঘ হওয়া জরুরী।

আল্লামা কাসানী র. বলেন-

وصح الاقتصار في الخطبة علي ذكرخالص لله تعالي نحو تسبيحة أو تحميدة أو تهليلة او تكبيرة مع الكراهة لترك السنة عند الامام وقالا: لابد من ذكر طويل يسمي خطبة واقله قدر التشهد. (حاشية الطحطاوي: ص৫১৩، وكذا في البدائع: ১/৫৯০)

খুতবা আরবীতে দেয়াই উম্মাহর ধারাবাহিক আমল

খুতবার অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। তন্মধ্যে একটি বৈশিষ্ট হলো, আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া। চাই জুমার খুতবা হোক বা ঈদের খুতবা। খুতবা আরবী ভাষায় দেয়া সুন্নাতে মুতাওয়াতির অর্থাৎ রাসূল স. আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন। রাসূল স. এর পর লক্ষাধিক সাহাবায়ে কিরাম রা., তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনসহ যুগে যুগে সকল মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও ফুকাহায়ে কিরাম র. ধারাবাহিকভাবে আরবী ভাষাতেই খুতবা দিয়ে আসছেন। কাজেই আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুতবা দেয়া শরীয়ত পরিপন্থী ও বিদআত বলে বিবেচিত হবে। (আহসানুল ফাতওয়া: ৪/১৫৪)

খুতবা আরবী ভাষায় হওয়ার দলীল

কুরআন, হাদীসের আলোকে ফুকাহায়ে কিরাম খুতবাকে যিকির বলে সাব্যস্ত করেছেন। আর যিকির আরবী ভাষায়ই হয়। এখানে তার কয়েকটি দলীল উল্লেখ করা হলো-

১ম দলীল

কুরআনুল কারীমে খুতবাকে ‘যিকির’ বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ (سورة الجمعة: ৯)

অর্থ: হে মুমিনগণ! জুমআর দিন যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়; তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরীনে কিরাম লিখেন, এখানে ‘যিকির’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খুতবা। দেখুন-

ক্স والمراد بذكر الله الخطبة والصلوة. (روح المعاني: ১৩/৭০২)

ক্স الذكر هو الخطبة عند الاكثر من اهل التفسير. (تفسير الكبير: ৩০/৯)

ক্স ويدل علي ان المراد بالذكر ههنا هو الخطبة ان الخطبة هي التي تلي النداء وقد امر بالسعي اليه. (احكام القرأن للجصاص: ৩/৫৯৬)

২য় দলীল

عن ابي هريرة (رض) قال النبي (ص) ……..فاذا خرج الامام طووا صحفهم ويستمعون الذكر. (صحيح البخاري: ১/১২৭) (مسلم : رقم: ৮৫০) (نسائي: رقم: ১৩৮৬) (ابن ماجه: رقم: ১০৯২)

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসূল স. বলেন, যখন ইমাম সাহেব খুতবা দেয়ার জন্য বের হন তখন মসজিদের দরজায় দন্ডায়মান ফেরেশ্তারা রেজিস্টার বন্ধ করে খুতবা শ্রবণে মগ্ন হয়।

৩য় দলীল

ফুকাহায়ে কিরাম খুতবাকে ‘যিকির’ বলেন। যেমন, শামসুল আইম্মাহ সারাখছী র. বলেন- ولنا ان الخطبة ذكر. অর্থ: আমাদের নিকট খুতবা একটি বিশেষ যিকির। (আল-মাবসুত: ২/৪২)

যখন একথা প্রমাণিত যে, খুতবা একটি যিকির। আর যিকির আরবী ভাষাতেই হতে হয়, তাই খুতবাও আরবীতেই হতে হবে।

৪র্থ দলীল

সাহাবায়ে কিরাম রা., তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনসহ সকল উলামায়ে কিরাম ও ফকীহ আরবী ভাষাতেই খুতবা দিয়েছেন। (আল-মুসফ্ফা: ১/১৫৪)

৫ম দলীল

খুতবাকে দুই রাকাআত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। তাই নামায যেমন অনারবী কিরাতে আদায় করা যায় না, খুতবাও অনারবীতে দেয়া যাবে না।

আল্লামা ইবনে শাইবা র. উল্লেখ করেন-

حدثنا هشيم ، قال : أخبرنا هشام بن أبي عبد الله ، عن يحيى بن أبي كثير ، قال : حدثت عن عمر بن الخطاب أنه قال : إنما جعلت الخطبة مكان الركعتين. (مصنف ابن ابي شيبة: رقم: ৫৩৬৭)

অর্থ: হযরত উমর রা. বলেন, জুমার খুতবাকে দুই রাকাত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।

অপর বর্ণনায় আছে-

حدثنا وكيع ، عن الأوزاعي ، عن عمرو بن شعيب ، عن عمر بن الخطاب ، قال : كانت الجمعة أربعا، فجعلت ركعتين من أجل الخطبة. (مصنف ابن ابي شيبة: رقم: ৫৩৭৪)

অর্থ: হযরত উমর রা. বলেন, জুমআর নামায চার রাকাত ছিল। খুতবার কারণে দুই রাকাত করা হয়েছে।

এ দুই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, জুমার খুতবা দুই রাকাত নামাযের স্থলাভিষিক্ত। আর নামাযের তাকবীর, কিরাত, তাসবীহসহ সব কিছুই আরবী ভাষায় আদায় করতে হয়। তাই খুতবাও আরবী ভাষাতেই পাঠ করা আবশ্যক।

সুতরাং উপরোল্লিখিত দলীলসমূহ দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, খুতবা আরবী ভাষাতেই হতে হবে। বাংলা কিংবা অনারবী ভাষায় খুতবা দিলে তা পনিপূর্ণভাবে আদায় হবে না।

একটি সন্দেহ ও তার নিরসন

সন্দেহ: কেউ কেউ বলেন, মাতৃ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। তাদের ভাষ্য হচ্ছে- খুতবা শুধু একটি বয়ান বা বক্তৃতার নাম। আর বয়ান ও বক্তৃতা দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে শ্রোতারা তা বুঝা এবং উপদেশ গ্রহণ করা। যদি আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া হয়, তাহলে অনারবী শ্রোতারা তা থেকে কীভাবে উপকৃত হবে ? তাই মাতৃ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া যাবে না।

নিরসন: তাদের এই ধারণাটি সঠিক নয়। কেননা, খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়; বরং খুতবা হলো জুমআর নামাযের সংশ্লিষ্ট একটি ইবাদত, যা দুই রাকাত নামাযের স্থলাভিষিক্ত। খুতবা যে শুধু বক্তৃতার নাম নয়; বরং একটি বিশেষ ইবাদত এর স্বপক্ষে নিম্ন কয়েকটি প্রমাণ উল্লেখ করা হলো:

১. বক্তৃতাকে আরবীতে ‘তাযকীর’ বলা হয়, অথচ কুরআন ও হাদীসে খুতবাকে ‘যিকির’ বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ (سورة الجمعة: ৯)

অর্থ: হে মুমিনগণ ! জুমআর দিন যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও। (সূরা: জুমআ: ৯) এখানে যিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জুমআ।

২. সকল ফুকাহায়ে কিরাম জুমআর নামায সহীহ হওয়ার জন্য খুতবাকে শর্ত বলেছেন-

ويشترط لصحتها سبعة اشياء الرابع: الخطبة فيه. (الدر المختار: ৩/১৯)

وكونها شرطا لانعقاد الجمعة . (بدائع الصنائع: ১/৫৮৯) ( وكذا في فتح القدير: ২/৫৫) (حاشيةالطحطاوي: ص৫১৩)

যদি খুতবা দ্বারা ওয়াজ করাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে এটাকে জুমআর নামায সহীহ হওয়ার পূর্বশর্ত বলা অর্থহীন।

৩. জুমআর খুতবা জুমআর নামাযের ওয়াক্তে হওয়া শর্ত। যেমনটি ফুকাহায়ে কিরাম লিখেন-

فلو خطب قبله وصلي فيه لم تصح. (الدر الختار: ৩/১৯)

অর্থ: যদি জুমআর নামাযের ওয়াক্ত আসার পূর্বে খুতবা দেয়া হয়। আর ওয়াক্ত আসার পর নামায পড়ে তাহলে জুমআ সঠিক হবে না। (বাদায়ে: ২/২৫৬, হিন্দিয়া: ১/১৬৮)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, যদি খুতবা দ্বারা উদ্দেশ্য ওয়াজ বা বক্তৃতা হতো, তাহলে জুমআর নামাযের ওয়াক্ত হওয়া শর্ত করা হতো না; বরং যে কোন সময় কিছু ওয়াজ নসিহত করাই যথেষ্ট হতো। সময় নির্ধারণই প্রমাণ বহন করে এটি একটি ইবাদত। শুধুমাত্র ওয়াজ বা নসিহত নয়।

৪. জুমআর নামায সহীহ হওয়ার জন্য খুতবা পাঠ করা শর্ত। আর খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। তবে যদি উপস্থিত মুসল্লিদের সকলেই বধীর বা ঘুমন্ত থাকে এবং তাদের সামনে খুতবা দেয়া হয়, তাহলেও তা জুমআ আদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে। যেমন, আল্লামা শামী র. বলেন-

كونها قبلها بحضرة جماعة ينعقد الجمعة بهم ولو كانوا صما او نياما. (حاشية ابن عابدين: ৩/১৯، البحر الرائق: ২/১৫৭)

অর্থ: জুমআ বিশুদ্ধ হতে কম পক্ষে তিন জন লোকের সম্মুখে নামাযের পূর্বে খুতবা দেয়া শর্ত। যদিও মুসল্লিগণ বধীর বা ঘুমন্ত হোক। যদি খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতা-ই হতো তাহলে বধীর ও ঘুমন্ত লোকদের সামনে খুতবা দেয়ার কি অর্থ?

৫. খুতবা দেয়ার পর যদি খতীব সাহেব কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং তাতে দীর্ঘ সময় বিলম্ব হয়ে যায়, তাহলে পূনরায় খুতবা দিতে হবে। যদিও শ্রোতা প্রথম বারের শ্রোতারা-ই হোক না কেন ।

ولو خطب ثم رجع الي بيته فتغدي او جامع واغتسل ثم جاء استقبل الجمعة وكذا في المحيط. (البحر الرائق: ২/২৫৮)

যদি খুতবা দ্বারা ওয়াজ বা নসিহত করাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে একবার খুতবা দেয়ার পর বিলম্ব হওয়ার কারণে পূর্বের শ্রোতাদের সামনে পূনরায় খুতবা দেয়ার কি অর্থ ?

৬. খুতবা শুধু ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়। এর বড় প্রমাণ হলো, ইমাম আবু হানিফা র.-এর মতে শুধু আলহামদু লিল্লাহ বা সুবহানাল্লাহ পড়ার দ্বারা খুতবা আদায় হয়ে যায়।

واذا خطب بتسبيحة واحدة او بتهليل وبتحميد اجزائه لقول ابي حنيفة رح. (المبسوط: ২/৪৭)

অথচ ‘সুবহানাল্লাহ’ বা ‘আলহামদু লিল্লাহ’ কে কেউ ওয়াজ বা বক্তৃতা বলে না।

উপরোক্ত প্রমাণগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়; বরং একটি বিশেষ ইবাদত বা যিকির। তবে খুতবা নামক ইবাদতে আরবী ভাষায় ওয়াজ, নসিহত থাকা একটি স্বতন্ত্র সুন্নাত। সুতরাং যখন প্রমাণিত হলো, খুতবার উদ্দেশ্য ওয়াজ নসিহত নয়; বরং ইবাদত। তাই অনারবী শ্রোতাদের সামনে আরবী ভাষায় খুতবা দেয়ার দ্বারা কি ফায়দা ? এ ধরণের প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই। যদি কেউ এমন প্রশ্ন করে, তাহলে সর্ব প্রথম নামায ও কুরআনের ব্যাপারে করতে হয়। যখন কুরআন বা নামাযের ব্যাপারে এই ধরণের প্রশ্ন নেই। তাহলে খুতবার ব্যাপারে প্রশ্ন করাও অনর্থক।

খুতবা ও নামাযের মাঝে যে সব বিষয়ে মিল রয়েছে

১. নামযের সময় নির্ধারিত; খুতবার সময় ও নির্ধারিত।

২. নামায বিনা ওযরে দাড়িয়ে পড়তে হয়; খুতবাও দাড়িয়ে দিতে হয়।

৩. নামাযের পূর্বে ইকামত আছে, তেমনি খুতবার পূর্বে আযান আছে।

৪. নামাযের মধ্যে যেমন সালাম কালাম করা যায় না, তেমনি ভাবে খুতবাতেও সালাম কালাম করা যায় না।

৫. নামায ও খুতবার বিষয়বস্তু মৌলিকভাবে এক। নামাযে যেমন, সূরা ফাতেহা পড়া হয় যাতে আল্লাহ তাআলার হামদ আছে, এমনিভাবে খুতবাতেও আল্লাহ তাআলার হামদ থাকতে হয়।

৬. খুতবাতে রাসূল স. এর উপর দরুদ পাঠ করা হয়। নামাযেও রাসূল স. এর উপর দরুদ পাঠ করা হয়।

৭. খুতবাতে আল্লাহ তাআলার তাওহীদ ও রাসূল স. এর রিসালাতের সাক্ষ্য আছে, নামাযেও তাশাহহুদ আছে।

৮. খুতবায় কুরআনের তিলাওয়াত আছে, নামাযেও কুরআনের তিলাওয়াত করতে হয়।

৯. খুতবায় মুসলমানদের জন্য দুআ করা হয়, নামাযেও সালামের পূর্বে দুআ আছে।

১০. ইমাম আবু হানিফা র.ও মুহাম্মদ র. বলেন, খুতবা নামাযের স্থলাভিষিক্ত। খুতবাতে কারো হাঁচির উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা যাবে না। কারো সালামের উত্তর দেয়া যাবে না। (যেমনিভাবে নামাযে কারো হাঁচি ও সালামের উত্তর দেয়া যায় না।)

উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা খুতবা ও নামাযের সাদৃশ্যতা সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে। সুতরাং নামাযের তাকবীর, কেরাত, তাসবীহ, দুআ ইত্যাদি যেভাবে আরবী ভাষায় পড়া আবশ্যক, অন্য ভাষায় পড়া বা তরজমা করা জায়েয নেই। তদ্রুপ খুতবা আরবী ভাষায় পড়া আবশ্যক। অন্য ভাষায় পাঠ করা বা আরবীতে পাঠ করে নামাযের পূর্বে বাংলা বা অন্য ভাষায় তরজমা করা জায়েয নেই।

রাসূল স., সাহাবা ও তাবেয়ীগণের খুতবা

রাসূল স. এর জীবদ্দশায় তিনি নিজেই জুমআর নামাযের খুতবা দিতেন। রাসূল স. সবসময় আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন। অথচ রাসূলের সামনে রোম, পারস্যসহ বিভিন্ন অনারব দেশের শ্রোতা থাকতো। যারা আরবী ভাষা বুঝতো না। যদি খুতবার তরজমা করা জায়েয হতো, তাহলে রাসূল স. উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য জীবনে একবার হলেও অনারব শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে খুতবার অনুবাদ করতে বলতেন।

রাসূল স.-এর পর সাহাবাদের যুগে বহু অনারব দেশ বিজয় হয়ে মুসলমানদের কর্তৃত্বে এসেছিলো। তখন তাদেরকে দীন শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি অনেক বেশী প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু এমনটি ইতিহাসে পাওয়া যায়না যে, তাঁরা অনারব মুসলমানদের দীনি শিক্ষার জন্য আরবীর পরিবর্তে অন্য ভাষায় খুতবা দিয়েছিলেন বা নামাযের পূর্বে আরবীতে পঠিত খুতবার অন্য ভাষায় তরজমা করেছেন।

সুতরাং রাসূল স., সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈনের আমলে আমরা দেখতে পাই তাঁরা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেননি।

যদি কেউ মনে করে সাহাবায়ে কিরাম রা. অনারবী ভাষা না জানার কারণে আরবীতে খুতবা দিয়েছেন, তাহলে আমরা বলবো, কথাটি সঠিক নয়। কেননা, যায়েদ বিন সাবেত রা., সালমান ফারসী রা., বেলাল রা., সুহাইব রা.সহ বহু সাহাবা রা. ছিলেন, যারা একাধিক ভাষায় বক্তৃতা দিতেন। কিন্তু তারা কখনো জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দেননি।

সুতরাং আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেয়া বা আরবীতে খুতবা পাঠ করে নামাযের পূর্বে অন্য ভাষায় তরজমা করা বিদআত ও না জায়েয।

ولا شك في ان الخطبة بغير العربية خلاف السنة المتوارثة من النبي (ص) والصحابة (رض) فيكون مكروها تحريما. (عمدة الرعاية: ১/২০০، وكذا في الفتاوي المحمودية: ১২/৩৫৮، احسن الفتاوي : ৪/১৫০، جواهر الفقه: ১/৩৫৭)

খুতবার ভাষা নিয়ে ইমামগণের মন্তব্য

খুতবার ভাষা কি হবে, এ ব্যাপারে যদি আমরা চার মাযহাবের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাই যে, চার মাযহাব মতে জুমআর খুতবা আরবীতে দেয়া আবশ্যক।

মালেকী মাযহাব

মালেকী মাযহাবে জুমআ সহীহ হওয়ার জন্য সর্ববস্থায় উভয় খুতবা আরবী ভাষায় দেয়া শর্ত। যদি উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ আরবীতে খুতবা দিতে সক্ষম না হয়, তাহলে তারা অন্যান্য দিনের ন্যায় জুমআর দিনও যোহর নামায পড়বে। জুমআ পড়বে না।

মাওসুআ গ্রন্থে রয়েছে-

ذَهَبَ الْمَالِكِيَّةُ : إِلَى أَنَّهُ لاَ بُدَّ أَنْ تَكُونَ الْخُطْبَةُ بِاللُّغَةِ الْعَرَبِيَّةِ ، فَوُقُوعُهَا بِغَيْرِ الْعَرَبِيَّةِ لَغْوٌ ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْجَمَاعَةِ مَنْ يَعْرِفُ الْعَرَبِيَّةَ وَالْخَطِيبُ يَعْرِفُهَا وَجَبَتْ ، فَإِنْ لَمْ يَعْرِفِ الْخَطِيبُ الْعَرَبِيَّةَ لَمْ تَجِبْ ، وَلاَ بُدَّ أَنْ تَكُونَ جَهْرًا فَإِسْرَارُهَا كَعَدِمِهَا وَتُعَادُ جَهْرًا ، وَلاَ بُدَّ أَنْ تَكُونَ لَهَا بَالٌ. (الموسوعة الفقهية الكويت: ১৯/১৮০) وكذا في (كتاب الفقه علي المذاهب الاربعة: ১/৩৬৯، حاشية الدسوقي: ১/৩৮৭، حاشية شرح منح الجليل: ১/২৬০، جواهر الاكليل: ১/৯৫)

শাফেয়ী মাযহাব

নামাযে তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় আরবী ভাষায় খুতবা দেয়াও শর্ত। হ্যাঁ, উপস্থিত লোকদের কেউ যদি আরবী ভাষায় খুতবা দিতে না পারে এবং সময় স্বল্পতার কারণে আরবী খুতবা শিখতে না পারে, তাহলে উপস্থিত লোকদের কোন একজন স্বীয় ভাষায় খুতবা দিতে পারবে। আর যদি খুতবা শিক্ষা করা সম্ভব হয় তাহলে সবার উপর আরবী ভাষায় খুতবা শিক্ষা করা ওয়াজিব। যদি সুযোগ থাকা সত্তেও কেউ শিক্ষা না করে, তবে সবাই গুনাহগার সাব্যস্ত হবে। এমতাবস্থায় তাদের জুমআর নামায সহীহ হবে না; বরং যোহরের নামায আদায় করবে।

নিহায়াতুল মুহতাজ গ্রন্থে আছে-

ويشترط كونها اي الخطبة عربية لاتباع السلف والخلف ولانها ذكر مفروض فاشترط فيه ذلك كتكبيرة الاحرام. (نهاية المحتاج الي شرح المنهاج: ২/৩০৪، كتاب الفقه علي مذاهب الاربعة: ১/৩৬৯، زاد المحتاج: ১/৩২৭، اعانة الطالبين علي حل الفاظ فتح المعين: ২/ ৬৮)

হাম্বলী মাযহাব

হাম্বলী মাযহাবে আরবী ভাষায় খুতবা দিতে সক্ষম হলে অনারবীতে খুতবা দেয়ার অনুমতি নেই। যেমন, নামাযে অনারবীতে কেরাত পড়ার অনুমতি নেই। তবে উপস্থিত মুসল্লিদের কেউ যদি আরবী ভাষায় খুতবা দিতে সক্ষম না হয়, তাহলে অন্য ভাষায় খুতবা দিলে সহীহ হয়ে যাবে।

الحنابلة قالوا : لا تصح الخطبة بغير العربية ان كانوا قادرا عليها فان عجز عن الاتيان بها اتي بغيرها مما يحسنه. (كتاب الفقه علي مذاهب الاربعة: ১/৩৬৯)

ولا تصح الخطبة بغير العربية مع القدرة عليها بالعربية. (كشف القناع عن متن الاقناع: ২/৩৬، كباب الفروع: ২/১১৩)

হানাফী মাযহাব

হানাফী মাযহাব মতে আরবী ভাষায় খুতবা দিতে সক্ষম হলে অনারবী ভাষায় খুতবা দেয়া বা আরবী ভাষায় খুতবা পাঠ করে বাংলা বা অন্য কোন ভাষায় তরজমা করা মাকরুহে তাহরীমী ও না জায়েয।

وصح شروعه مع كراهة التحريم بتسبيح وتهليل وتحميد كما صح لوشرع بغير عربية. الدر المختار: ২/১৮২-১৮৩)

وعلي هذا الخلاف الخطبة وجميع اذكار الصلوة. (الدر المختار: ২/১৮৩، البحر الرائق: ১/৫৩৫)

ماذكر في التحفة والذخيرة والنهاية من ان الاصح انه يكره الافتتاح بغير الله اكبر عند ابي حنيفة (رح) فالمراد به الكراهة التحريم. (البحر الرائق: ১/৫৩৪، وفيه ايضا: وقالا لايجوز الا عند العجز وبه قالت الثلاثة. (البحر الرائق: ১/৫৩৫) وكذا (حاشية ابن عابدين: ২/১৮২، المبسوط للسرخسي: ১/১৩৬، الهداية: في هامشه: ১/১০১، حاشيةالطحطاوي: ص২৮০، المحيط البرهاني: ২৩৩، تاتار خانية: ২/৫২، عمدة الرعاية: ১/২০০، كفاية المفتي: ৩/২১৭، فتاوي محمودية: ১২/৩৬৮)

একটি সন্দেহ ও তার নিরসন

ইমাম আবু হানিফা র.-এর মতে আরবী ভাষা জানা সত্ত্বেও অনারবী ভাষায় খুতবা আদায় হয়ে যাবে। এর প্রকৃত মর্ম শুধু এটুকু যে, এর দ্বারা খুতবার অপরিহার্যতা আদায় হয়ে যাবে। আর ওই খুতবা দ্বারা জুমআ সহীহ হওয়ার শর্ত পূর্ণ হয়ে যায় বিধায় তা শরয়ীভাবে গ্রহণযোগ্য। তবে এমন খুতবার পর আদায়কৃত নামায মাকরুহের সাথে আদায় হবে।

কিন্তু এর মর্ম এই নয় যে, অনারবী ভাষায় খুতবা দেয়া ইমাম আবু হানিফা র. এর মতে জায়েয। বরং এর প্রকৃত মর্ম হলো, নামায ও তদসম্পর্কীয় যে সব যিকির-আযকারের ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা র. একথা বলেছেন যে, এগুলো অনারবী ভাষায় গ্রহণযোগ্য। এসবগুলোর ব্যাপারে একথা পরিষ্কার যে, এগুলো অনারবী ভাষায় আদায় করা মাকরুহে তাহরীমী ও না জায়েয।

সুতরাং যেখানে ওই যিকির গুলোকে ইমাম আবু হানিফা র. এর দিকে সম্বোধন করে অনারবী ভাষায় সহীহ ও নির্ভরযোগ্য বলা হয়েছে। সে সব ক্ষেত্রে মাকরুহে তাহরীমী হওয়ার কথা ও পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। যেমন:

وصح شروعه مع كراهة التحريم بتسبيح وتهليل وتحميد كما صح لوشرع بغير عربية. الدر المختار: ২/১৮২-১৮৩)

অর্থ: সুবহানাল্লাহ এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ দ্বারা নামায আরম্ভ করলে মাকরুহে তাহরীমীর সাথে আদায় হবে। যেমন খুতবা অনারবী ভাষায় আরম্ভ করলে মাকরুহে তাহরীমী হবে। (শামী: ২/১৮২-৮৩)

ফাতওয়ায়ে শামীতে আছে-

وعلي هذا الخلاف الخطبة وجميع اذكار الصلوة. (الدر المختار: ২/১৮৩، البحر الرائق: ১/৫৩৫)

এরূপ মতানৈক্য রয়েছে খুতবা এবং নামাযের অন্যান্য যিকিরের ব্যাপারে। (শামী: ১/১৮৩)

ماذكر في التحفة والذخيرة والنهاية من ان الاصح انه يكره الافتتاح بغير الله اكبر عند ابي حنيفة (رح) فالمراد به الكراهة التحريم. (البحر الرائق: ১/৫৩৪)

অর্থ: সুতরাং তুহফা, যখীরাহ এবং নিহায়া গ্রন্থে একথা বলা হয়েছে যে, বিশুদ্ধ মতানুযায়ী আল্লাহু আকবার ব্যাতীত অন্য কোনো বাক্য দ্বারা নামায আরম্ভ করা ইমাম আবু হানিফা র. এর মতে মাকরুহ। এর দ্বারা মাকরুহে তাহরীমী উদ্দেশ্য।

এমনিভাবে তাতার খানিয়া:২/৭৪, সিআয়া: ২/১৫৫, উমদাতুর রাআয়াসহ ফিকহে হানাফীর প্রায় সব কিতাবেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, আবু হানিফা র. এর মতে “অনারবী ভাষায় খুতবা জায়েয” দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মাকরুহে তাহরীমীর সাথে জায়েয।

সুতরাং উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, ইমাম আবু হানিফা র.-এর মতে আরবী ভাষা জানা সত্ত্বেও অনারবী ভাষায় খুতবা দেয়া জায়েয নেই। তথাপি যদি কেউ দেয় তাহলে মাকরুহে তাহরীমী হবে। ওই খুতবার মাধ্যমে নামায আদায়ের শর্ত পূর্ণ হয়ে যাবে এবং এরপর আদায়কৃত নামায মাকরুহ হবে।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল, এ ব্যাপারে চার মাযহাব একমত যে, আরবী ভাষায় খুতবা দিতে সক্ষম হলে অন্য ভাষায় খুতবা দেয়া জায়েয নেই। আরবী ভাষায় খুতবা দিয়ে বাংলা বা অন্য ভাষায় নামাযের পূর্বে তরজমা করাও জায়েয নেই।

খুতবার পূর্বে বয়ান

শুক্রবার জুমআর নামাযের পূর্বে বা পরে ওয়াজ নসিহত করাতে শরীয়ত কর্তৃক কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, বরং শরীয়ত সমর্থিত। কেননা, জুমআর নামাযের পূর্বে বয়ান করা সাহাবায়ে কেরাম রা. এর যুগেও ছিল।

أخبرنا أحمد بن سلمان الفقيه ثنا إسماعيل بن إسحاق القاضي ثنا أحمد بن يونس ثنا عاصم بن محمد بن زيد عن أبيه قال : كان أبو هريرة يقوم يوم الجمعة إلى جانب المنبر فيطرح أعقاب نعليه في ذراعيه ثم يقبض على رمانة المنبر يقول : قال أبو القاسم صلى الله عليه و سلم قال محمد صلى الله عليه و سلم قال رسول الله صلى الله عليه و سلم قال الصادق المصدوق صلى الله عليه و سلم ثم يقول في بعض ذلك : ويل للعرب من شر قد اقترب فإذا سمع حركة باب المقصورة بخروج الإمام جلس . هذا حديث صحيح على شرط الشيخين (مستدرك حاكم: ১/১৯০)

অর্থ: আসেম র. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, জুমআর দিন হযরত আবু হুরায়রা রা. জুতা খুলে মিম্বরের পাশে দাড়িয়ে মিম্বর ধরে বলতেন: আবুল কাসেম স. বলেন, মুহাম্মদ স. বলেন, রাসূল স. বলেন, সাদেকে মাসদুক স. বলেন……।

وفي رواية عن شقيق كان عبدالله بن مسعود يذكر الناس في كل خميس . (صحيح البخاري: ১/১৬২، مسلم: ৪/২১৭৩، سنن الترمذي: ৫/১৩০، مسند احمد : ১/৩৭৮)

অর্থ: হযরত শাকীক র. বলেন, হযরত ইবনে মাসউদ রা. প্রত্যেক বৃহস্পতিবার বয়ান করতেন।

উপরোল্লিখিত হাদীসদ্বয় দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, জুমআর দিন বয়ান করা সাহাবায়ে কিরাম রা.-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত। তাই জুমআর নামাযের পূর্বে বা পরে বয়ান করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। এ বয়ান খতিব সাহেব বা অন্য কেউও করতে পারেন। যেন শ্রোতাগণ উপকৃত হতে পারে। বর্তমানে মানুষ দীন থেকে গাফেল হয়ে আছে। তাই নামাযের পূর্বের সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে দীনের জরুরী বিষয় মুসল্লিদের সম্মুখে পেশ করা উচিত। খুতবার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বয়ানের মাঝে বলে দেয়া যেতে পারে।

মুসল্লিদের সাথে পরামর্শ করে বয়ানের সময় ঠিক করবে। তবে সহজ পদ্ধতি হলো, প্রথম আযানের পর বয়ান শুরু করবে, মুসল্লিগণ এসে চুপ করে বয়ান শুনবে। খুতবার দশ মিনিট পূর্বে তা শেষ করে মুসল্লিদের সুন্নাত পড়ার সুযোগ করে দিবে। এরপর খতিব সাহেব আযানের পর আরবী ভাষায় দুই খুতবা দিয়ে সাথে সাথে নামায পড়াবেন। (ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১২/৩৮৬-৩৯২)

উপসংহার

জুমআর নামাযের পূর্বে নবী স. দুটি খুতবা দিতেন। এগুলো জুমআ সহীহ হওয়ার পূর্ব শর্ত। দুই খুতবার মধ্যে অল্প সময় বসতেন এবং খুতবা দুটি দাড়িয়ে পাঠ করতেন। দুই খুতবা আরবী ভাষায় হওয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। হাদীস শরীফ দ্বারা তা প্রমাণিত। রাসূল স., সাহাবায়ে কিরাম, সুন্নাতে খুলাফায়ে রাশেদীন দ্বারা প্রমাণিত। তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীনসহ গোটা মুসলিম উম্মাহ সর্ব যুগে এ অনুযায়ী আমল করে আসছেন। সুতরাং আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া “আমলে মুতাওয়ারাসা” ধারাবাহিক অবিচ্ছিন্ন আমল। এ কারণেই আরবীতে খুতবা দেয়া “খুতবায়ে মাসনুনাহ”ও বলা হয়।

জুমআর দিন যেহেতু মসজিদে প্রচুর লোকের সমাগম হয়, তাই এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের কাছে দীনের দাওয়াত ও আমলের সংশোধনের লক্ষে কেউ যদি স্থানীয় ভাষায় নসিহত পেশ করে তা প্রসংশনীয়। কিন্তু এই বয়ান ও আলোচনা “খুতবায়ে মাসনুনাহ” বলে কোন ক্রমেই গন্য হবে না।

দেশ-বিদেশে বর্তমানে কিছু বন্ধুরা প্রথম খুতবা স্থানীয় ভাষায়, আর দ্বিতীয় খুতবা আরবী ভাষায় দেয়ার প্রথা চালু করেছে। কিন্তু খুতবার এই নিয়ম রাসূল স. এর কর্ম-শিক্ষা, সুন্নাতে খুলাফা ও সাহাবা পরিপন্থী। তাদের নিকট কিছু মনগড়া যুক্তির অবতারনা ছাড়া এ আমলের কোন প্রমাণ নেই। যেমনটি পূর্বে আলোচনা করা হলো।

আহলে হাদীস ভাইদের প্রতি কয়েকটি প্রশ্ন রাখলাম:

এক. স্থানীয় ভাষায় খুতবা দেয়ার মূল উদ্দেশ্য যদি কথা গুলো শ্রোতাদেরকে বোঝানোই হয় যা স্থানীয় ভাষা ছাড়া সম্ভব নয়, তাহলে একই কারণে দ্বিতীয় খুতবাও তো স্থানীয় ভাষায় হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এ বন্ধুরা তা করছেন কেন ?

দুই. রাসূল স. এবং সাহাবায়ে কিরাম এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন যে, তাদের অনেক শ্রোতা অনারব ছিলেন এবং ভিন্ন ভাষায় খুতবা দেয়ার মতো অনেক কারণও উপস্থিত ছিল। বয়ান, দাওয়াত তাদের স্থানীয় ভাষায় দেয়া হতো। তবুও তারা দুই খুতবা আরবী ভাষায় দিয়ে প্রমাণ করলেন যে, শ্রোতার প্রয়োজনেও এনিয়ম ভঙ্গ করার অবকাশ নেই।

সুতরাং সে যুগে অনারবী ভাষায় খুতবা দেয়ার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তা গৃহীত হয়নি, অথচ আজ আহলে হাদীস বন্ধুদের নিকট অনারবী ভাষায় খুতবা দেয়ার প্রয়োজন বিবেচিত হচ্ছে। এরা কি সাহাবা ও তাবেয়ীদের থেকেও দীনের ব্যাপারে কয়েকধাপ এগিয়ে আছেন ?

তিন. ইমাম যদি আরবী ভাষায় অক্ষম হয়, তাহলে স্থানীয় ভাষায় খুতবা দেয়া অনেক ইমামের নিকট বৈধ। যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্তও তাই। লা-মাযহাবী বন্ধুরা আরবীতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কার অনুকরণে অনারবীতে প্রথম খুতবা এবং আরবীতে দ্বিতীয় খুতবার নিয়ম চালু করলেন, বলবেন কি? এটা রাসূল স. এর আমল না সাহাবায়ে কিরামের আমল ? না এটা তাবেয়ীদের আমল? তাও না তাহলে এটা কি ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কায়্যিমের আমল ? না এটা চার মাযহাবের কোন ইমামের আমল ? বাস্তবতা হলো কারো আদর্শ না। তাহলে বলুন, আপনারা কাকে আদর্শ মানলেন ?

চার. আহলে হাদীস বন্ধুরা কুরআন-সুন্নাহ ও আসারে সাহাবা থেকে কোন দলিল প্রমাণ না পেয়ে অবশেষে ইমাম আবু হানিফা র.এর মত একটি দেখে নিজেদের দলিল খোজার অপচেষ্টায় লিপ্ত হলেন। আবু হানিফা র. বলেছিলেন যে, ফার্সী ভাষায় কেরাত পড়া জায়েয। তাই খুতবা ও অনারবীতে জায়েয।

অথচ ইমাম আবু হানিফা র. যে, এ মত থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন এবং ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ র. এর মত গ্রহণ করে নিয়েছেন তা স্বতঃসিদ্ধ। এ ব্যাপারে ‘اللآلي المصنوعة في رواية الموضوعة’ কিতাবের ১৮ নং পৃষ্ঠায় দেখুন। সুতরাং ইমাম আবু হানিফা র. এর বর্জিত মতের দ্বারা দলিল পেশ করার অর্থ দাড়ায় তার কথাকে স্বয়ং তার কর্মের বিপরীত ব্যাখ্যা করা। এতটুকু জ্ঞান যাদের নেই, তারা উম্মতের সর্ব সম্মত এ মতের বিপরীত কেমন করে নতুন নিয়ম চালু করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন?

পাঁচ. ইমাম আবু হানিফা র. এর বর্জিত মতটিও ওই ব্যক্তির বেলায় ছিল যে, আরবীতে কেরাত পড়তে অপারগ এবং আবু হানিফা র.আরবী খুতবা/কেরাত পাঠে সক্ষম ব্যক্তিকে কখনও অনারবীতে কেরাত ও খুতবা পাঠের অনুমতি দেননি। তাহলে খুতবা অনারবীতে দেয়ার প্রমাণ পেলেন কোথায় ?

ছয়. যদি বলেন, আরবীতে খুতবা দিলে মানুষ বুঝবে কি করে? এবং খুতবা দেয়ারই বা উপকারীতা কি?

তার জবাব হচ্ছে- এটা ইবাদত। এ পদ্ধতি নবীর সুন্নাত এবং তার উপকারিতাও তিনি ভাল বুঝতেন। প্রয়োজনেও তো তিনি কোন সাহাবীকে অনারবী ভাষায় খুতবা দিতে বলেন নি। তথাপিও যদি এ কথা বলেন, তাহলে প্রশ্ন জাগবে আযানের উদ্দেশ্য তো নামাযের ঘোষণা দেয়া। তাহলে তা আরবীতে দিবেন কেন? حي علي الصلوة ،حي علي الفلاح. না বলে “ নামাযের দিকে আস” “কল্যাণের দিকে এসো” বলেন না কেন? ফজরের নামাযের আযানে “আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম” বলবেন কেন ? কে বুঝে এর অর্থ ?

মূল কথা খুতবা হচ্ছে যিকির যা বহু দলিল দ্বারা পূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। যিকির যেমন অনারবীতে হয় না; বরং আরবীতেই করতে হয় যেমনি আযানও আরবীতে দিতে হয়। কেরাত ও আরবীতেই পড়তে হয়। ঠিক তেমনিভাবে খুতবাও আরবীতেই দিতে হয়। এটা জুমআর শর্ত। দু’রাকাত নামাযের স্থলে এদুই খুতবা প্রদান করা হয়েছে।

একথাগুলো আল্লাহর রাসূল স. জানতেন। তাই তিনি আরবীতে খুতবা দিতেন। সাহাবাদের শিখিয়েছেন তাই তারাও আরবীতে খুতবা দিতেন। তাবেয়ীন ও মুজতাহিদ ইমামগণ ও এসুন্নাত পালন করে আসছেন তাই কেউ খুতবা অনারবীতে দিতেন না।

আপনারা যে বিদআত আবিষ্কার করেছেন তা বর্জনীয়। এতে মুসলিম উম্মাহর ইবাদত বিনষ্ট হচ্ছে,তাই এনিয়ে ফিৎনা করা মুসলমানের কাজ নয়।

আল্লাহ পাক সর্বস্তরের মুসলমানদের সুন্নাহর পথে পরিচালিত করুন। আমীন ॥

বিষয়: বিবিধ

২২৩৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

320740
১৮ মে ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
হতভাগা লিখেছেন : আরবী ভাষায় খুতবা হওয়াতে দেখা যায় খুতবার সময় বেশীর ভাগ মানুষই দুনিয়ার গালগল্প করে ।

১৮ মে ২০১৫ দুপুর ১২:৩৫
261858
মেঘবালক লিখেছেন : আপনি যা বললেন এই কথাটা খুব বাস্তব। কিন্তু তারা ইবাদতের মানষিকতা নিয়ে আসেনা।ধন্যবাদ।
১৮ মে ২০১৫ দুপুর ১২:৪৯
261866
হোসাইন আহমাদ লিখেছেন : যারা খুতবার সময় গালগল্প করে তারা নামাযের কিরাতের সময়ও গালগল্প করতে পারে, তাই বলে নামাযের কিরাতও কি বাংলায় পড়তে হবে?
১৮ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:২৬
261921
হতভাগা লিখেছেন : নামাজের কিরাতের সময় গালগল্প করা ১০-১২ মাসজিদ খুঁজলেও পাওয়া যাবে না যেমনটা সব মাসজিদেই পাওয়া যায় খুতবার সময় গালগল্প করাটি।

সুরা কিরাত এসব যারা নামাজ পড়তে আসে তাদের প্রায় ৯৯%ই জানে । এবং বেশ কিছু সংখ্যক লোক জানে এসবের অর্থও । আর খুতবার সময়ে মাসজিদের কালেকশনও হয় এবং অনেকেই সুন্নত নামাজ পড়ে ।

ব্যাপারটা যে খুতবার অর্থ বুঝতে না পারার কারণেই হয় এটা বলাই বাহুল্য ।
320747
১৮ মে ২০১৫ দুপুর ১২:৩৬
মেঘবালক লিখেছেন : তথ্যবহুল পোষ্ট। শুভেচ্ছা নিবেন।
১৮ মে ২০১৫ দুপুর ১২:৫০
261867
হোসাইন আহমাদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
320769
১৮ মে ২০১৫ দুপুর ০১:৩২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ খুতবা দেওয়া সুন্নাত শুনা ওয়াজিব সুতরাং মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং বুঝতে হবে। খুতবা নামাজ নয় এটা বক্তব্য তথা জিকির বা দোয়া। রাসুলে করিম(সাHappyখুতবার মাঝকানে কথা বলেছেন নির্দেশ দিয়েছেন যে হে ফুলান তুমি কি দু'রাকায়াত নামাজ পড়েছো? দাড়াও দু'রাকায়াত নামাজ পড়ে নাও। খুতবা যে কোন ভাষায় হতে পারবে তবে এই শর্ত গুলো থাকতে হবে ১। হামদ ২।সানা ৩।শাহাদাতাইন ৪।রাসূল (সাHappyএর উপর দরুদ ৫।তাকওয়ার আদেশ মূলক কুরআনের আয়াত ৬।নিজেদের ভাষায় ওয়াজ নসীহত ৭।দুই খুতবার মাঝে বসা ৮।দ্বিতীয় খুতবায় পুনরায় হামদ. সানা. শাহাদাতাইন ও দরুদ পাঠ করা। ৯। সকল মুসলমানদের জন্য দুআ করা।
320778
১৮ মে ২০১৫ দুপুর ০১:৫২
সালাম আজাদী লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো। একবার বেহেশতী যেওরের একটি উর্দু নুসখা কিনেছিলাম। তাতে লেখা ছিলো মুহাক্বাক্ব ওয়া মুদাল্লাল। আনন্দচিত্তে কিনে দেখলাম সব দলিল গুলো বিভিন্ন ফিক্বহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি। এবং উলামায়ে কিরাম কখনো কখনো আইম্মায়ে ফিক্বহ গণের বক্তব্য। শক্ড হলেও ভেবেছি এটাও মুদাল্লাল।
আপনি সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন খুৎবা একটা পরিভাষা, কিন্তু সালাতের যেমন পারিভাষিক অর্থ আমরা কুতুব আলমুসতালাহাত এ পাই খুৎবাহের সে রকম অর্থ আপনি দিতে পারলে আমাদের মত সাধারণ পাঠকদের সুবিধে হত।
আপনি খুব সুন্দর ভাবে প্রমান করেছেন আরবি ভাষায় খুৎবাহ দেয়া সুন্নাহ। মুওয়াক্কাদাহ গায়রে মুওয়াক্কাদাহ নিয়ে আমি কম জানি। আমি জানতাম মুওয়াক্কাদাহ হতে হলে আমলি হাদীসের সাথে আরো সাপোর্টিভ ক্বওলী হাদীস লাগে। অথবা এমন কিছু। খুৎবাহের ব্যাপারে এমন কিছু আছে কিনা জানিনা। আপনি আনলে আমার জন্য খুব উপকার হতো।
যাই হোক, আপনার সুন্নাত প্রমান করিয়ে একটা লাভ অন্তত: হয়েছে যে খুৎবাহ আরবীতে হতেই হবে বা অজিব বা ফারদ্ব বলেননি। এটার জন্য আপনি আমার অভিবাদন গ্রহন করুন।
খুৎবাহের যেসব আরকানের কথা ইমাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ উল্লেখ করেছেন তা খুব ই অনুধাবন যোগ্য। মুফতী আমীমুল ইহসান (র) লিখেছেন যদি কেও ঐ পাঁচটি আরকান আরবিতে বলে তাহলে খুৎবাহ আরবিতে দেয়ার মাসনূনিয়্যাত আদায় হয়ে যায়। বাকিটা মাতৃভাষায় দিলে গুনাহ হবেনা।
বাকী থাকে আরেকটা বিষয়, তাহলো খুতবাহের সুন্নাহ আদায়ের পর কিছু অংশ মাতৃভাষায় দেয়া হলে, অথবা আরবি খুৎবাহের অনুবাদ মাতৃভাষায় দেয়া হলে গুনাহ হবেনা বলে অধিকাংশ আলিম মতামত দিয়েছেন। সেই অনুবাদ বা অংশটি কখন হতে পারে এব্যাপারে ভিন্ন মত আছে। আমাদের পাক ভারতে বায়ান নামে খুৎবাহের আগে যে আপদ টা এসেছে তা ঐ মতদ্বৈততার জন্যে। ফলে এখন জনগণ ৩টা খুৎবাহের সম্মুখীন হচ্ছেন। মানে একটা সুন্নাহ পালন করতে আরেক বিদআতকেও আমরা মেনে নেই।
মূর্খ হিসেবে আমি মনে করি খুৎবাহে যে যিকিরটা করছি বা করাচ্ছি তা বুঝাতে মাতৃভাষার ব্যবহার হলে কেও হারাম বলতে পারবেনা, এবং সেটা মেইন খুৎবাহের যে কো অংশেই তা হতে পারে। আর যেহেতে আরকানে খুৎবাহ আরবিতে দেয়া হয়েছে, কাজেই খুৎবাহে মাসনূনাহ ও হয়ে গেলো।
মাতৃভাষায় খুৎবাহ দেয়ার স্বপক্ষে যে যা বলেছেন আপনি হলে তার মধ্যে খুবই 'মুতাওয়াযিন' এবং ইনসাফকারী তা স্বীকার শুধু করছিনা, শুকরিয়াও আদায় করছি।
আসলে ব্যাপারটা আহলে হাদীস ও হানাফি নয়। তুর্কী খিলাফাতে হানাফী মাযহাব রাস্ট্রীয় মাযহাব ছিলো। সে সময় গ্রান্ড মুফতির পক্ষথেকে মাতৃভাষায় খুৎবাহদেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। সে সময়ে পাক ভারতের আহলে হাদীসরাই এর বিরোধিতা করে বলে একটা আর্টিকেলে পড়লাম।
সত্যি বলতে কি মাতৃভাষায় খুৎবাহ দেয়ার ক্ষেত্রে হানাফি মাযহাব ই বেশি লিবারেল। অন্যান্য মাযহাবে তো আরবীতেই দিতে হবে অন্যভাষায় নয়। ইমাম শাফেয়ী (র) তো আরবি ভাষা প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর জন্য ফারদ্বে আইন বলেছেন।
শুকরিয়া....
320864
১৮ মে ২০১৫ রাত ০৮:১৬
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার সমালোচনা মুফতী সাহেবাই করতে পারবেন৷ আমি শুধু বলব, খোৎবা কথাটার মধ্যে যদি বক্তৃতার সামান্য গন্ধও থেকে থাকে তবে তা শ্রোতাদের বোধগম্য হওয়া জরুরী,নয়ত মানুষ চীরদিন খোৎবার সময়টা ঘুমিয়েই কাটাবে৷ আর যদি আরবী ভাষায়ই হতে হবে যেমন সুরা কেরাত,তাহলে মোক্তাদীগনকে অবশ্যই তা বুঝবার উপযুক্তকরে গড়ে তোলাও ইমাম সাহেবকে নিতে হবে৷
320929
১৯ মে ২০১৫ রাত ০২:০৮
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : খুতবা যে কোন ভাষায় হতে পারে বলে মত দিয়েছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম ইসলামী লেকচারার ডাঃ জাকির নায়েক। তিনি বলেছেন কোরআনের আয়াত ও রসুল ( সাঃ ) হাদীস অবশ্যই আরবিতে বলতে হবে, অবশ্য এর অনুবাদও করতে পারে আরবিতে পড়ার পর।
১৯ মে ২০১৫ সকাল ১০:৫৪
262070
হোসাইন আহমাদ লিখেছেন : সুন্নাত খুতবা আরবীতেই পড়তে হবে, তবে দাওয়াতী দায়ীত্ব পালনের জন্য উক্ত খুতবার পূর্বে তা বাংলায় বা নিজ ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া বা দ্বীন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা ইমাম সাহেবের কর্তব্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File