তিন সন্তানকে নিয়ে অসহায় লালবড়–র পথে পথে জিবিকা নির্বাহ ॥ শেষ সম্বল পৈত্রিক ভিটাটিও ভুমিদস্যুর দখলে
লিখেছেন লিখেছেন কারিমা সামিয়া ০৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:৫৪:২৯ বিকাল
তিন সন্তানকে নিয়ে অসহায় লালবড়–র পথে পথে জিবিকা নির্বাহ ॥
শেষ সম্বল পৈত্রিক ভিটাটিও ভুমিদস্যুর দখলে
তরিকুল ইসলাম:
তিন সন্তানকে নিয়ে যখন পথে পথে ঘুড়ে জিবিকা নির্বাহ করছেন অসহায় লালবড়– ঠিক এমনই একটা মুহুর্তে ভুমি দস্যু প্রভাবশালী খলিল খাঁন দখল করে নিলেন লালবড়–র শেষ সম্বল পৈত্রিক ভিটাবাড়িটুকু।কারও অন্তরের ব্যাথা অন্য কেউ অনুভব করে না, বুঝে না ,বুঝতেও চায় না। প্রতিটি মানুষই তার অবস্থানে দাড়িয়ে ভাবে শুধুই নিজের কথা। ব্যাথিত জনের কথা ভাবার সময় টুকু নেই যেন কারও। বাঁচার তাগিদে হাজারো মানুষের ভিড়ে সবাই কিছু না কিছু পেশায় নিয়োজিত। সেই সব পেশার মধ্যে একটি পেশা ভিক্ষা বৃত্তি। দাতার অনুগ্রহে লভ্য বস্তু। এমন কিছু মানুষ আছে যারা প্রতিনিয়ত অসহনীয় জ্বালা যন্ত্রনা ভোগ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। আমাদের সমাজে অনন্যপায় হয়ে শেষ অবস্থানে পৌঁছে যখন আর কোন অবলম্বন না থকে তখন শুরু করে ভিক্ষা বৃত্তি। মনের এবং কায়িক শ্রমের দিক থেকে ভিক্ষাবৃত্তি অত্যন্ত কঠিন কাজ। একজন মহিলা তার সন্তানদেরকে কোলে পিঠে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা বৃত্তিতে জীবিকা নির্বাহ করে এমন সময় কেমনে মানুষ রুপি পশুরা শেষ আশ্রয়টুকু দখল করে নেয়। সভ্য সমাজে এ দৃশ্য কতটা হৃদয় বিদারক এবং লজ্জাকর একবার ভাবুন তো ? ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের স্বীকার তেমনি একজন অসহায় নারী , নাম তার লালবড়–। বয়স ৪৫ বছর। স্বামী মৃত্যু মোকলেচ মৃধা। বাড়ী বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের মেনিপাড়া গ্রামে। কোলে পিঠে সন্তানদের বোঝা বহন করে চলছে যেনো ২০বছর ধরে। এ চলার শেষ নেই, নেই এর শেষ ঠিকানা। এই পথ চলার মাঝেই করুন আকুতি জানিয়ে তার স্বরে বলছে “স্যার একটা টাহা দ্যান, আমার মাইয়্যাডারে বিয়া দিমু”। ঘর্মাক্ত কলেবরে দেশের বিভিন্ন স্থানের অলিগলির দোকান গ্রাম গঞ্জের হাট বাজার গুলোতে দিনের পর দিন ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ায় লালবড়–।কতদিন কতটা পথ অতিক্রম করতে হবে তা তার জানা নেই। লালবড়– তার জীবনের করুন কাহিনী বলতে বলতে এক সময় কেঁদে ফেলেন। ঝালোরের প্রতি পলকে মুক্তার মত বিন্দু বিন্দু অশ্রু সজল নয়নে তিনি বলতে থাকেন, আমার বাড়ী মেনিপাড়া গ্রামে। আমার স্বামী মোকলেচ মৃধা ১৬ বছর পূর্বে মারা যায় তার পর থেকেই তিনটি সন্তানকে কোলে পিঠে নিয়ে তাদের ভরন পোষন লেখা পড়া করাচ্ছেন এই মহিলা ।তিনি জানতেননা তার শেষ আশ্রয়টকু পৈত্রিক ভিটাটি তার হাত ছাড়া হবে।তিনি জানান,অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ২০বছর পুর্বে চট্টগ্রামের পাহারি এলাকা হিলট্রাকসে যান ওখানে গিয়ে কাজ কর্ম করে জিবিকা নির্বাহ করবেন এটাই তাদের ইচ্ছা ছিল কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস স্বামীর অকাল মৃত্যুতে ভেঙ্গে পরেন লালবড়–।সেই থেকে বাঁচার তাগিদে ভিক্ষা করে বেড়াই। প্রতিদিন ভিক্ষা করে ১০০/১৫০ টাকা পাই তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে কোন মতে আমার সন্তানদের নিয়ে বেঁচে আছি। কোন দিন খাই আবার কোন দিন না খেয়ে থাকি। এ ছাড়া যে আমার অন্য কোন উপায় নেই।
কে এই খলিল সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়,ভাড়া মটর সাইকেল চালায় তিনি।খলিল তালতলী উপজেলার মেনিপাড়া গ্রামের নাজির খাঁনের ছেলে । এ যাবত প্রায় ৫টিরও বেশি বিয়া করেছেন।স্ত্রীদের বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক নেয়া যৌতুক না দিলে তাদেরকে শারিরিক ভাবে নির্যাতন করাসহ অভিযোগের শেষ নেই তার বিরুদ্ধে।কেহ তার প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ভয়ভিতি দেখান হয় বলে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান।তিনি গত ইউপি নির্বাচনে নিশানবাড়িয়া ইউপি সদস্য পদে প্রতিদন্দিতা করে হেরে যান। গত কয়েক দিন পূর্বে তিনি তার প্রতিবেশি অসহায় লালবড়–র পৈত্রিক বাড়িটি দখল করে নেয়।তার প্রতিবেশি আপন চাচা আরোজ আলী খানের পুকুর দখল করে এবং যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়।আরোজ আলী খাঁনের ছেলে দুলাল মিয়া জানান,আমাদের পুকুর খলিল দখল করে নেয় । একই এলাকার মোর্শেদা বেগম বলেন,আমাদের বাড়ির গাছ ও পুকুর দখল করে নেয় খলিল এতে আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারিনা ।
নিশানবাড়িয়া ইউপি সদস্য মস্তোফা হাওলাদার জানান,খলিল যে বাড়িটি দখল করেছে সেটি লালবড়–র গত কয়েক বছর পূর্বে ঘরে আগুন দিয়ে লালবড়–কে তাড়িয়ে দেয় খলিল।লালবড়– পথে পথে ঘুরে ভিাবৃত্তি করে জীবন চালায় ।
নিশান বাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী বলেন,আমি চেষ্টা করছি যাতে লালবড়– তার পৈত্রিক বাড়িটি ফেরত পায়।
এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই সৌভাগ্য নিয়ে জন্ম গ্রহন করেনা। প্রকৃতির দেয়া ভাগ্য নিয়েই জন্ম নেয় প্রত্যেক মানুষ। ভাগ্যের আবর্তে দুখের পরে সুখ, সুখের পরে দুঃখ নিয়েই এই জগৎ সংসারে প্রতিটি মানুষ বেঁচে আছে। এই ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। আমাদের সমাজে লালবড়–র মত অনেকেই আছেন যাদের দু’মুঠো অন্নের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। না খেয়ে কাতর ধ্বনিতে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে বেড়ায়। আবার এমন শ্রেনীর মানুষ আছেন যাদের একটি পোষা কুকুরের ভরন পোষনে গোটা একটি পরিবার চলতে পারে। সভ্যতাই যদি আমাদের একমাত্র নিদর্শন হয়ে থাকে তাহলে সমাজের নিঃস্ব অসহায় এইসব লালবড়–র পাশে দাড়িয়ে আমরা একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।
বিষয়: বিবিধ
১২৩০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লিখাটি পড়লাম। ভালো লেগেছে। ভালো লাগা রেখে গেলাম। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন